টপদার্র গø্যামারাস মডেল ও অভিনেত্রী তানজিন তিশা এখন বেশ ধীরস্থির। কিন্তু ক্যারিয়ারের শুরুর দিকে এমনটি ছিলেন না তিনি। র্যাম্প শো, মডেলিং, অভিনয় সবই করতেন। কিন্তু কোথাও স্থির হতে পারছিলেন না। তার মানসিকতা এখন অনেকটাই পরিবতর্ন হয়েছে। বয়স, সময়, জীবনের কিছু অভিজ্ঞতা তিশাকে এই পরিপক্বতা এনে দিয়েছে। তিনি এখন বেশ ভালো বোঝেনÑ কোনদিকে তার ঝেঁাক বেশি, কোন কাজে কি ফল পাবেন বা কোন কাজটি তিনি বেশি উপভোগ করছেন। সেসব হিসাব কষে বের করলেন অভিনয়টাই মন দিয়ে করবেন তিনি। হতে পারে সেটা ছোটপদার্ কিংবা বড়পদার্। যে কাজে নিজেকে প্রমাণের সুযোগ পাবেন সেই কাজটিকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নেবেন।
এই ভাবনা ইতিমধ্যে কাজে রূপান্তরিত করার চেষ্টা করছেন তিশা। গত প্রায় এক বছর ধরে তিনি অভিনয় নিয়ে খুবই সাবধানি। যেনতেন গল্পের নাটক খুব বেশি করছেন না। গল্প, চরিত্র, পরিচালক, সহশিল্পী বেছে কাজ করছেন। বেছে ভালো কাজগুলো করার ফলে নিজের অভিনয় দক্ষতাও আগের চেয়ে অনেক বাড়িয়েছেন এই মডেল ও অভিনেত্রী। গেল দুই ঈদে প্রচুর নাটক প্রচার হয়েছে তিশার। কিছু নাটক দশর্ক দারুণভাবে গ্রহণ করেছেন।
এ ঈদে তিশা অভিনীত মাবরুর রশিদ বান্নাহ পরিচালিত অপূবর্র বিপরীতে ‘আমার পক্ষে তোমাকে রাখা সম্ভব না’, আফরান নিশোর বিপরীতে ‘ছেলেরাও কঁাদে’ এবং ‘লালাই’, ইরফান সাজ্জাদের বিপরীতে ‘বেডসিন’, ‘মিতু তোমার জন্য’, ‘ফুল হাতা হাফ শাটর্’ ও ‘বাইকার’, রুবেল হাসানের পরিচালনায় অপূবর্র বিপরীতে ‘প্রেমছবি’ ও ইরফান সাজ্জাদের বিপরীতে ‘বৃষ্টি হয়ে তুমি এলে’, রাহাত মাহমুদ পরিচালিত তৌসিফ মাহবুবের বিপরীতে ‘ছোট গল্পের শেষ পৃষ্ঠা’, মাহমুদুর রহমান হিমি পরিচালিত তাহসানের বিপরীতে ‘বাড়ি ফেরা’সহ বেশকিছু নাটক প্রচার হয়েছে গেল কোরবানির ঈদে। এর মধ্যে ইরফান সাজ্জাদের বিপরীতে করা বেডসিন নাটকটি দারুণ সাড়া পেয়েছে। এ প্রসঙ্গে তিশা বলেন, ‘এ নাটকের শিরোনাম শুনলে একটু অন্য রকম মনে হতে পারে। কিন্তু গল্প সম্পূণর্ ব্যতিক্রম। বিবাহিত জীবনের সূ² কিছু বিষয় উঠে এসেছে নাটকটিতে।’
তিশা সাধারণত খÐ নাটক ও টেলিছবিতে অভিনয় করে থাকেন। তবে সম্প্রতি তিনি একটি ধারাবাহিক নাটকে অভিনয় শুরু করেছেন। জাকারিয়া সৌখিনের ‘তোমার গল্পে আমি’ নামের ধারাবাহিকটি দুই বোনের গল্প নিয়ে। ফের ধারাবাহিক নাটকে অভিনয় কেন করলেন, জানতে চাইলে তিশা বলেন, ‘এর গল্পে কিছুটা ভিন্নতা পেয়েছি বলে কাজটি করছি। নাটকে আমার বোনের চরিত্রে থাকছেন মম আপু। প্রথমবার তার সঙ্গে কাজ করছি।’
নাটকের বাইরে অনেকদিন পর নতুন মিউজিক ভিডিওতেও পাওয়া গেছে মিষ্টি এই মডেল তারকাকে। জনপ্রিয় গায়ক ইমরানের ‘আমার এ মন’ গানটির ভিডিওতে মডেল হয়েছেন তিনি। এ প্রসঙ্গে তিশা বলেন, ‘এর আগে ইমরানের ‘বলতে বলতে চলতে চলতে’ এবং ‘শেষ সূচনা’ গান দুটির ভিডিওতে মডেল হয়েছিলাম। দুটিই তুমুল দশর্কপ্রিয়তা পায়। তারপরও গত তিন বছর আমাদের একসঙ্গে কাজ করা হয়নি। তবে বরাবরই ভক্তদের অনুরোধ পেয়ে আসছিলাম, আমি যেন ফের ইমরানের গানে মডেল হই। অবশেষে তার ‘আমার এ মন’ শিরোনামের একটি গানের ভিডিওতে মডেল হয়েছি। গানটি লিখেছেন রবিউল ইসলাম জীবন, সুর-সংগীত ইমরান নিজেই করেছেন। গানচিলের ব্যানারে এটির ভিডিও নিমার্ণ করেছেন তানিম রহমান অংশু। ঈদে গানচিল মিউজিকের ইউটিউব চ্যানেলে মিউজিক ভিডিওটি প্রকাশ হয়েছে। প্রচুর রেসপন্স পাচ্ছি দশের্কর। অবশেষে মনে হয়েছে কষ্ট সাথর্ক হলো।’
আসলেই নতুন এই মিউজিক ভিডিও করতে গিয়ে তিশাকে অনেক কষ্ট করতে হয়েছে। সেই অভিজ্ঞতা শোনা যাক নিজের মুখেই, ‘এ মাসের ১ থেকে ৩ তারিখ ভারতের জম্মু-কাশ্মীর রাজ্যের লাদাখ অঞ্চলে আমরা শুটিং করেছি। বেশিরভাগ কাজ হয়েছে সেখানকার পাহাড়ে। লোকেশন ছিল দেখার মতো। চোখে লেগে আছে এখনও। তবে অক্সিজেনের প্রচুর সংকট ছিল। অক্সিজেনের অভাবে আমি আর ইমরান অসুস্থ হয়ে পড়ি। পরে অক্সিজেন মাস্ক পরে স্বাভাবিক হই। সব মিলিয়ে ভয়ঙ্কর সুন্দর একটা অভিজ্ঞতা হয়েছে। আমাদের আগের দুটি ভিডিওর চেয়েও এটি বেশি প্রশংসিত হবে বলে আশা করি।’
এদিকে, সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক নিয়ে বেশ বিপাকে পড়েছেন তিশা। তিশা জানান, ঈদের আগে থেকে তার নামে একটি ফেক ফেসবুক আইডি খোলা হয়েছে। এই আইডি থেকে পরিচিত অপরিচিত সবাইকে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠানো হচ্ছে। এমনকি আসল আইডিতে যে ছবি প্রোফাইল হিসেবে ব্যবহার করছেন তিশা, ভুয়া আইডিতেও একই ছবি ব্যবহার করা হয়েছে। যে স্ট্যাটাস দিচ্ছেন তিনি, ফেক আইডি থেকেও একই স্ট্যাটাস বা আপডেট দেওয়া হচ্ছে। এতে সবাই মনে করছেন এটা তার নতুন আইডি। কিন্তু বাস্তবে সেটি তিশার আইডি নয়। কে বা কারা তিশাকে বিব্রত করতে এমনটি করছে। তিশা জানান, বিষয়টি তাকে খুব বিব্রতকর অবস্থায় ফেলেছে।
সবশেষে বড়পদার্য় তিশাকে কবে দেখা যাবে সে প্রসঙ্গ তুলতেই তিশা বলেন, ‘চলচ্চিত্র নিয়ে আমার সঙ্গে যখনই কথা সেটা ফলপ্রসূ হওয়ার আগেই নিউজ হয়ে যায়! আজব না? তবে ‘ভবঘুরে’ নামের ছবিটিতে কাজ করতাম এটা সত্যি। দেশের বাইরে শুটিংয়ের কথা ছিল। কিন্তু ভিসা জটিলতায় সবকিছু গোলামাল পাকিয়ে গেছে। আর কলকাতায় গিয়ে ফেসবুকে চেকইন দিলেই অনেকেই ভাবে আমি বোধহয় জাজ মাল্টিমিডিয়ার ছবি করতে যাচ্ছি! কিন্তু না, আমি রেগুলার কলকাতা যাই।’
তিনি আরও বলেন, ‘জাজ মাল্টিডিয়ার সঙ্গে আমার কথা হয়েছিল। কলকাতার নিমার্তা রাজ চক্রবতীর্র সঙ্গে দুটি ছবি নিয়ে আলাপ ও দেখা করতে গিয়েছিলাম। একটা ছবির গল্প আমার কাছে ভালো লাগেনি, সেজন্য ওই মিটিংয়ে বসেই না করেছিলাম। জাজের আজিজ ভাই, রাজ চক্রবতীর্ সবাই ওখানে বসা ছিল। আর একটা কথা পরিষ্কার করে বলতে চাই, জাজ মাল্টিমিডিয়ার সঙ্গে আমার কোনো চুক্তি নেই। কখনো কোনো চুক্তি ছিলও না। আগামীতে কোনো চুক্তি হবে কি-না জানিও না। যেটা বললাম এটা গত বছর ঘটনা। তারপরেই আমি গ্যাপ নিয়েছিলাম।’