আগের মতো নাটক, বিজ্ঞাপন ও নাচে ব্যস্ত হতে চান ছোটপদার্র প্রিয়মুখ মেহবুবা মাহনুর চঁাদনী। সম্প্রতি নিজের ফেসবুকে কিছু নতুন ছবি পোস্ট করেছেন এই তারকা। তাতে চঁাদনী স্নিগ্ধরূপে ধরা দিয়েছেন। এতে তাকে সেই আগের মতো গø্যামারাস ও প্রাণবন্ত লাগছে। অনেকেই তার এই নতুনরূপে আবিভাের্ক চমকে গিয়েছেন। মিডিয়ার অনেকেই তার নতুনরূপের প্রশংসা করেছেন। একইসঙ্গে চঁাদনী যে মিডিয়ায় নতুনভাবে নিজেকে মেলে ধরতে যাচ্ছেন তারও ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে। এ প্রসঙ্গে চঁাদনীর ভাষ্য, ‘আমি একজন শিল্পী। সেই সঙ্গে তারকাও। ফলে তারকা ইমেজ বজায় রাখা আমার কতর্ব্য। সম্পূণর্ নিজের ভালোলাগা থেকেই এই ফটোশুট করেছি। তবে এই ফটোশুটের মাধ্যমে আমাকে নিয়ে অনেকের ভুল ধারণা প্রমাণিত হয়েছে। আমি এখনো আগের মতো করেই কাজ করতে পারি তার একটি পদক্ষেপ এই ফটোশুট। ইদানীং মিডিয়ায় নানা ধরনের কাজের বেশকিছু প্রস্তাব পেয়েছি। ব্যাটে বলে মিলে গেলে অচিরেই কাজ শুরু করব।’
তবে সদা হাস্যোজ্বল, প্রাণবন্ত আর উচ্ছ¡ল চঁাদনী ইদানীং বেশ বদলে গেছেন। ব্যক্তিগত জীবনের টানাপড়েন অথবা প্রিয়জন হারানোর শোকই হয়ত তাকে কিছুদিনের জন্য একটু বদলে দিয়েছে। সারাদিন বকবক করতে থাকা মেয়েটি এখন বেশ কম বলেন। মনে মনে কি যেন ভাবেন সারাক্ষণ!
চঁাদনীর পরিচিত যে কেউ তার এই বদলে যাওয়ার বিষয়টি অঁাচ করতে পারবেন। এমনকি তার ভক্তরাও বুঝতে পারবেন তাদের প্রিয় তারকা এখন ঠিক আগের মতো নেই।
এই আকস্মিক বদলে যাওয়ার কারণ জানতেই চঁাদনীর কাছাকাছি যাওয়া। কিন্তু চঁাদনী এই অভিযোগ মানতে নারাজ। তার ভাষ্য, ‘মানুষ সব সময় এক রকম থাকে না। বয়সের সঙ্গে সঙ্গে মানুষের এক ধরনের পরিপক্কতা আসে। এ ছাড়া জীবনের অনেক ঘটনা মানুষকে একটু হলেও বদলে দেয়। তবে আমার এই বদল আজীবনের জন্য নয়। সবার কাছে দোয়া চাই, যেন এই শোক আমি কাটিয়ে উঠতে পারি। আমি চাই আবার আগের মতোই সবার মাঝে ফিরে আসতে।’
কি সেই শোক যা চঁাদনীকে বদলে দিয়েছে? জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সম্প্রতি আমি বাবা হারিয়েছি। এখনো সেই শোক কাটিয়ে উঠতে পারিনি। বিশেষ করে মা খুব ভেঙে পড়েছেন। তাই তাকে প্রচুর সময় দিতে হয়। এখন আমিই মা আর আমার মা মেয়ে হয়ে গেছেন। বাবা হঠাৎ করে চলে গেলেন। তাই মেনে নিতে খুব কষ্ট হচ্ছে। বাবা সরকারি চাকরিজীবী ছিলেন। তার সঞ্চিত অথর্ সরকারি নিয়মে সংগ্রহ করাটা খুব কষ্টসাধ্য হয়ে উঠেছে। এখন এই নিয়েই দৌড়াদৌড়ি করছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘বাবা মারা যাওয়ার পরও যেন আমাদের সঙ্গেই আছেন। মা হঠাৎ বলে ওঠেন- জানিস চঁাদনী তোর পা দুটি ঠিক তোর বাবার মতো। আবার একদিন বলে উঠেছেন- তুই চুপচাপ বসে থাকলে ঠিক তোর বাবার মতো দেখায়। এরকম নানা ঘটনার মধ্য দিয়ে বাবাকে মিস করছি প্রতিনিয়ত। এ জন্য খুব কষ্টও হয়। সেই কষ্ট তো বাইরের মানুষের সামনে দেখানোর কোনো মানে নেই। তাই এখন আমি বাইরে কম বের হচ্ছি। সব ঠিক হয়ে গেলে আবারও আগের চঁাদনী হয়ে যাব।’
চঁাদনীর উত্তরে যুক্তি আছে। কিন্তু চঁাদনীর এই মনকষ্টের কারণ অন্যকিছু হবে বলেই সবাই ধারণা করতে পারেন। আর তা হলো সংগীত তারকা বাপ্পা মজুমদারের সঙ্গে এই তারকার সাম্প্রতিক বিবাহবিচ্ছেদ।
এ প্রসঙ্গে আসলে চঁাদনী খুব সিরিয়াস ভঙ্গিতে বলেন, ‘আপনারা যাকে বিচ্ছেদ বলছেন আমি তাকে বিচ্ছেদ বলছি না। কারণ একজন মানুষকে ভালোবাসতে গেলে শুধু কি তার কাছেই থাকতে হবে? এমন তো কোনো কথা নেই। দূরে থেকেও মানুষকে ভালোবাসা যায়। ভক্তি, শ্রদ্ধা করা যায়। আমি সেই কাজটিই করে যাব।’
তিনি আরও বলেন, ‘কাগজে কলমে আমাদের বিচ্ছেদ হওয়ার পর লোকে তা জানতে পেরেছে। কিন্তু আমি তারও অনেক আগে থেকেই আলাদা থাকি। তাই বলে আমার ভালোবাসার কোনো কমতি ছিল না। এখনো নেই। ভালোবাসা বা সম্পকর্ হলো মনের ব্যাপার। মন থেকে যদি ভালোবাসা যায় তাহলে তার জন্য কাছে থাকা, অধিকার দেখানো বা কথা আদান প্রদানের কোনো প্রয়োজন হয় না। আমি মনে করি আল্লাহতায়ালা আমার ভালোবাসার পরীক্ষা নিচ্ছেন। আমি যদি এই পরীক্ষায় উত্তীণর্ হই তাহলে অবশ্যই আমার ভালোবাসা ফিরে পাব। আর আমি অকৃতকাযর্ হলে তার ফলও আমাকেই ভোগ করতে হবে।’
অনেক তো হলো ব্যক্তিজীবনের গল্প। এবার আসা যাক চঁাদনীর তারকা জীবনের গল্পে। এখনো চঁাদনীকে নাচের মঞ্চে কখনো কখনো দেখা যায়। কিন্তু অভিনয়ে একদমই নেই তিনি। এ নিয়ে চঁাদনী বলেন, ‘মাঝের কিছুটা সময় ব্যক্তিগত কাজে প্রায়ই বিদেশে যেতে হতো। তাই অভিনয়ে একটা বিরতি ছিল। তখন দেখা যেত আমি দেশে থাকলেও মিডিয়াতে প্রচার হয়ে গেছেÑ চঁাদনীতো দেশে থাকে না। ফলে অভিনয়ের প্রস্তাব কমতে থাকে। আর এখন তো আমি দেশেই আছি। নিয়মিত অভিনয়ও করতে চাই। কিন্তু এখনকার নিমার্তারা হয়ত আমাকে চেনেন না। তাই অভিনয়ের প্রস্তাব খুব একটা পাই না।’
এদিকে, সম্প্রতি মাত্র একদিনের প্রস্তুতিতে পুরো একটি নৃত্যনাট্যের কেন্দ্রীয় চরিত্র রূপদান করেছেন মেধাবী এই নৃত্যশিল্পী। চঁাদনী বলেন, ‘কিছুদিন আগেই আমাদের নৃত্যগুরুমাতা রাহিজা খানম ঝুনু না ফেরার দেশে চলে গেছেন। আমি তার কাছে সরসারি নাচ শিখেছি। তার দ্বারা পরিচালিত বাফার একেবারে শেষ ব্যাচের ছাত্রী আমি। তাই তাকে উৎসগর্ করে গত মাসে শিল্পকলা একামেডিতে নৃত্যনাট্য ‘নকশি কাথার মাঠ’ মঞ্চস্থ হয়। মনিরুল ইসলাম মনি স্যারের নাচের স্কুল থেকে এটি করা হয়। নিদের্শনায় ছিলেন গুরুমাতাকন্যা ফারহানা চৌধুরী বেবী। তারা জানতেন আমার বাবা মারা গেছে সম্প্রতি, তাই আমার মানসিক অবস্থা ভালো নয়। এজন্য প্রথমে তারা আমাকে এই নৃত্যনাট্যের জন্য ভাবেননি। কিন্তু এতো অল্প সময়ে প্রধান নায়িকার চরিত্র করতে কেউ রাজি হচ্ছিল না। অবশেষে আমাকেই অনুরোধ করা হয়। আমি রাজি হয়ে যাই, কারণ আমার বাবা প্রায়ই বলতেন- বাফার নৃত্যনাট্যে তোমাকে নায়িকা করা হয় না কেন? বাবার সেই ইচ্ছা পূরণ করতেই মাত্র একদিনে পুরো নৃত্যনাট্য আত্মস্থ করে মঞ্চে উঠি। কিন্তু দশর্ক সেটা বুঝতে পারেননি। এটাই আমার সাথর্কতা।’