বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

সুরে সুরে বেবীর চার দশক

চার দশক ধরে গান করছেন ‘বø্যাক ডায়মন্ড’খ্যাত জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী বেবী নাজনীন। দীঘর্ সংগীতজীবনে দেশি-বিদেশি অসংখ্য পুরস্কারে ভ‚ষিত হয়েছেন তিনি। বতর্মানে নতুন গান, স্টেজ শো ও নতুন অ্যালবাম নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন তিনি...
ম মাসুদুর রহমান
  ২৮ জুন ২০১৮, ০০:০০
বেবী নাজনীন

চার দশক ধরে গান করছেন ‘বø্যাক ডায়মন্ড’খ্যাত জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী বেবী নাজনীন। দীঘর্ সংগীতজীবনে দেশি-বিদেশি অসংখ্য পুরস্কারে ভুষিত হয়েছেন তিনি। বতর্মানে নতুন গান, স্টেজ শো ও নতুন অ্যালবাম নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন তিনি। সম্প্রতি তারার মেলার মুখোমুখি হয়েছিলেন এই সংগীতশিল্পী। বতর্মান কী নিয়ে ব্যস্ত রয়েছেন? এমন প্রশ্নের জবাবে বেবী নাজনীন বলেন, মূলত গান নিয়েই আমার ব্যস্ততা চলছে। দেশে, দেশের বাইরে স্টেজ শোর পাশাপাশি সম্প্রতি সাউন্ডটেকের ব্যানারে বেশ কিছু গান করেছি। আহমেদ রিজভীর কথায় গানগুলোর সুর করেছেন নাজির মাহমুদ। জিয়া খানের সুরে দুটি গান রেকডর্ হয়েছে। কবির বকুলের কথা ও সুরে ইমরানের সঙ্গে একটি দ্বৈত গানও করেছি, যা এবারের ঈদে প্রকাশ পেয়েছে। নীহার আহমেদের লেখা প্লাবন কোরেশীর সুরে দুটি গান করেছি। এ ছাড়া সময় সুযোগ বুঝে স্টেজ শো করছি। ইতালিপ্রবাসী বাঙালিদের আয়োজনে ঈদ পুনমির্লনী এক অনুষ্ঠানে অংশ নেয়ার কথা রয়েছে।

একজন শিল্পীর জন্য স্টেজ শো কতটুকু গুরুত্বপূণর্ বলে মনে করেন আপনি? বেবী জানান, ‘রেকডির্ংয়ের বাইরে একজন শিল্পী নিজেকে মেলে ধরার মূল প্ল্যাটফমর্ হচ্ছে স্টেজ। হাজার হাজার মানুষের সামনে গান করলে বোঝা যায় শিল্পী হিসেবে নিজের অবস্থান কোথায়। একজন শিল্পীর জনপ্রিয়তার মাপকাঠিটা আসলে স্টেজেই প্রমাণ করার জায়গা। নিজের গানের পাশাপাশি একজন শিল্পীকে শ্রোতা এবং দশর্কদের অনুরোধের নানা রকম গান করতে হয়। যে কারণে শিল্পীকেও সেভাবেই তৈরি হতে হয়। ক্যারিয়ারের জন্য এটি চচার্রও বিষয়।’

বেবী নাজনীন এ পযর্ন্ত ৫০টি আধুনিক গানের একক অ্যালবাম প্রকাশ করেছেন। পাশাপাশি ক্ল্যাসিক্যাল থেকে শুরু করে নজরুল, রবীন্দ্র, ফোকসহ সব ধরনের গান করেন তিনি। অচিরেই নিজের ৫১তম অ্যালবাম নিয়ে হাজির হবেন। বেবীর ভাষ্য, ‘আসলে অডিওর অ্যালবামের বাজার এখন আগের মতো নেই। শ্রোতারা এখন আর অ্যালবামের জন্য অপেক্ষা করেন না। সময়ের পরিবতর্ন হয়েছে। এখন বিভিন্ন মাধ্যমে গান প্রকাশ পায়। ৫১ তম একক অ্যালবামের কাজে হাত দিয়েছি বেশ আগেই কিন্তু এখনও কাজ শেষ হয়নি। আশা করি শিগগিরই এর কাজ শেষ হবে।’ গানের ক্ষেত্রে মিউজিক ভিডিও কতটুকু গুরুত্বপূণর্ বলে মনে করেন? এমন প্রশ্নের জবাবে বেবী বলেন, সময়ের গতিতে মিউজিক ভিডিওর গুরুত্ব আছে। আগে গান শুধু শোনা যেত এখন দেখাও যায়। গানের মান সম্পন্ন মিউজিক ভিডিও গানকে আরও তাড়াতাড়ি শ্রোতা দশর্কদের কাছাকাছি নিয়ে আসে।

বতর্মানে সংগীতাঙ্গন প্রযুক্তিনিভর্র হয়ে পড়েছে বলে মনে করেন বেবী। বিষয়টিকে ইতিবাচকভাবেই দেখছেন তিনি। তবে অতিরঞ্জিত কোনো কিছু ভালো নয় বলে তিনি মনে করেন। এই প্রসঙ্গে এই গায়িকা বলেন, ‘প্রযুক্তির কারণে মানুষের ধ্যান-ধারণা অনেক পাল্টা গেছে। এর প্রভাব আমাদের সংগীত অঙ্গনেও পড়েছে। আমি মনে করি, অডিও ইন্ডাস্ট্রিতে শিক্ষিত মানুষরা যত বেশি আসবে ততই উত্তরণ করবে। আগের মতো ভালো লেখক, সুরকারের যেমন অভাব রয়েছে, তেমনি সুরেলা কণ্ঠের শিল্পীও খুব কম তৈরি হচ্ছে। আগে দেখতাম একটি গানের জন্য এক-দুই সপ্তাহ থেকে একমাস পযর্ন্তও পরিশ্রম করা হতো। লেখক, সুরকার ও শিল্পীরা গানের পেছনে প্রচুর সময় দিতেন। এ জন্য সেসময়ের গানগুলো হৃদয়ে গেঁথে যেত। যুগের পর যুগ সেই গানগুলো এখনো মানুষের মনে আছে। কিন্তু এখন তা হয় না। একটি গানের পেছনে এত সময় কেউ দিতে চান না। হুটহাট করে প্রকাশের চিন্তায় থাকেন।

নতুনদের গান নিয়ে প্রত্যাশা কী জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘নতুনদের অনেকেই ভালো করছে। তাদের নিয়ে আশাবাদী আমি। তবে একজন শিল্পীকে একটু সময় নিয়ে কাজ করতে হবে। ভালো শিল্পী হতে চাইলে তাকে গানের সাধনায় লেগে থাকতে হবে। সাধনা ছাড়া শিল্পী হওয়া যায় না। চচার্র কোনো বিকল্প নেই।’

নিজের অসংখ্য গানের মাঝে প্রিয় গানগুলো প্রসঙ্গে বেবী বলেন, ‘আমার সব গানই আমার কাছে অবশ্যই প্রিয়। এক নজর না দেখিলে বন্ধু দুনিয়া আন্ধার হয়, এলোমেলো বাতাসে উড়িয়েছি শাড়ির অঁাচল, কাল সারারাত ছিল স্বপনেরও রাত, দু’চোখে ঘুম আসে না, আমার ঘুম ভাঙাইয়া গেল রে মরার কোকিলে, মানুষ নিষ্পাপ পৃথিবীতে আসে, বন্ধু তুমি কই কই রেÑ এরকম অনেক গান শ্রোতাদের কাছে প্রিয়। পেছনের কথাÑ নীলফামারীর সৈয়দপুরে বেবী নাজনীনের জন্ম। বাবা মনসুর সরকার বাংলাদেশ রংপুর বেতারের একজন যন্ত্রশিল্পী ছিলেন। পরে বাংলাদেশ বেতারে যোগ দেন। গানের হাতেখড়ি বাবার কাছেই। প্রথমত, বাবাই তার গানের অনুপ্রেরণা। এরপর আশা ভোশলে, লতা মুঙ্গেশকরের মতো অনেক শিল্পী আছেন, যাদের কাছ থেকে ভালো গানগুলো নিজের মধ্যে নেয়ার প্রেরণা পেয়েছেন। বাবা ছাড়াও বিভিন্ন ওস্তাদের কাছে তালিম নিয়েছেন তিনি। শিশু বয়সেই স্থানীয়, আঞ্চলিক, জাতীয় অনুষ্ঠান এবং রেডিও-টিভিতে গান করে অনেক পুরস্কার অজর্ন করেন। এমনকি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারও পেয়েছেন। গান গাওয়ার পাশাপাশি গান এবং কবিতাও লেখেন বেবী নাজনীন। তার ভাষ্য, কবিতা শখের বশে লিখি। গানও তাই। আমার অনেক অ্যালবামে আমার নিজের লেখা এবং সুরারোপিত গান আছে। ভালো লাগে। কিছু হয় কি-না ভক্ত-শ্রোতারা বলতে পারবেন। কবিতা লিখতে ভালোবাসি। আমার তিনটি কবিতার বই প্রকাশিত হয়েছেÑ সে, ঠেঁাটে ভালোবাসা এবং প্রিয়মুখ শিরোনামে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে