বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

বিএনপিতে নিবার্চনী প্রস্তুতি

দশম জাতীয় নিবার্চনের মতো একাদশ সংসদ নিবার্চন বজের্নর পথে হঁাটতে চায় না বিএনপি ইশতেহার হচ্ছে ভিশন ২০৩০ আদলে। এ নিয়ে ১২-১৩ জনের টিম কাজ করছে নানা ফরমেটে প্রাথীর্ বাছাই চলছে। প্রাথমিক একটি তালিকাও প্রস্তুত ভোটের দিন ভোটকেন্দ্র নিয়ন্ত্রণে রাখতে সদূরপ্রসারী পরিকল্পনা করছে দলটি
হাসান মোল্লা
  ০৯ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ০০:০০
আপডেট  : ০৯ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ০০:১৭

দশম জাতীয় সংসদ নিবার্চনের মতো একাদশ সংসদ নিবার্চন বজের্নর পথে হঁাটতে চায়না বিএনপি। সুষ্ঠু নিবার্চনের পরিবেশ তৈরির অনিশ্চয়তা থাকলেও আগে থেকেই সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করে রাখতে চাচ্ছে দলটি। নিবার্চনকালীন সরকার গঠনের দিন থেকে আন্দোলনে নামার ভাবনার পাশাপাশি দ্রæত সময়ের মধ্যে নিবার্চনের প্রস্তুতিও সম্পন্ন করার পরিকল্পনা করা হয়েছে। বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, আসন্ন জাতীয় সংসদ নিবার্চনে অংশ নেয়ার সিদ্ধান্ত প্রায় চূড়ান্ত। নিবার্চনকে ঘিরে সব প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। পরিস্থিতি তৈরি না হলে আন্দোলনে নাও যেতে পারে বিএনপি। বিএনপির নীতিনিধার্রণী ফোরামের এক নেতা জানান, চেয়ারপারসনের নিদের্শনা অনুযায়ী আন্দোলনের পাশাপাশি নিবার্চনের প্রস্তুতি নেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এর অংশহিসেবে শুরুতেই নিবার্চনকালীন সরকারের রূপরেখা দিতে দলের মধ্যে গুটিকয়েক নেতার একটি প্রস্তাবনা থাকলেও তা চ‚ড়ান্ত নয়। তবে নিবার্চনকালীন সরকার গঠনের দিন থেকে চ‚ড়ান্ত আন্দোলনে নামার প্রাথমিক সিদ্ধান্ত আছে। তবে আন্দোলনের ভবিষ্যৎ যা হোক না কেন নিবার্চনী প্রস্তুতি থেমে থাকবে না। ইশতেহার তৈরি, প্রাথীর্ বাছাই এবং নিবার্চনের দিনে কেন্দ্র নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রাখাসহ সব ধরনের প্রস্তুতি চলছে। দ্রæত সময়ের মধ্যে তা সম্পন্নও করা হবে। সূত্রমতে, খালেদা জিয়ার মুক্তি, নিবার্চনে অংশগ্রহণ, প্রস্তুতি ও আন্দোলনের বিষয়ে চলতি সপ্তাহেই চ‚ড়ান্ত একটি সিদ্ধান্তে যাবে বিএনপি। এ সব বিষয়ে করণীয় ঠিক করতে দলের বিভিন্ন সারির নেতাকমীের্দর সঙ্গে বেঠক করছে বিএনপির স্থায়ী কমিটি। এসব বৈঠকে নেতাদের মতামত ও পরামশর্ শুনছে বিএনপির নীতিনিধার্রণী ফোরাম। এরই অংশহিসেবে দলের ভাইস-চেয়ারম্যান ও উপদেষ্টাদের বৈঠক হবে আগামী ১০ ও ১১ সেপ্টেম্বর। এরপর যুগ্ম-মহাসচিব ও বিভিন্ন সম্পাদকের সঙ্গে এবং চলতি সপ্তাহে ২০ দলীয় জোটের শীষর্ নেতাদের সঙ্গে বৈঠক হবে। এ সব বৈঠকে নেতাদের কাছ থেকে পাওয়া পরামশর্ ও মতামত শুনে তা লন্ডনে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন তারেক রহমানকে জানানো হবে। পরে তার সঙ্গে আলোচনা করে পরবতীর্ করণীয় নিধার্রণ করবে বিএনপি। বিএনপির সিনিয়র একাদিক নেতা জানান, এখনই আন্দোলনের জন্য নেতাকমীের্দর চাপ থাকলেও হুট করে আর কোনো সিদ্ধান্ত নিতে চায় না বিএনপি। এ জন্য আন্দোলন নয় সবচেয়ে বেশি জোর দেয়া হচ্ছে নিবার্চনের প্রস্তুতির ওপর। কারণ বিএনপি আসন্ন নিবার্চনে প্রস্তুতি কোনো ঘাটতি রাখতে চায় না। ইশতেহার তৈরি, প্রাথীর্ বাছাই এবং নিবার্চনের দিনে কেন্দ্র নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রাখসহ সব ধরনের প্রস্তুতি চলছে। ইশতেহার : গত বছর ১০ মে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া নিবার্চনী ইশতেহারের আদলে ২৫৬ অনুচ্ছেদের ভিশন-২০৩০ শিরোনামে দেশ, রাজনীতি ও আথর্-সামাজিক বিষয়ের একটি প্রস্তব উপস্থাপন করেছিলেন। ভিশন-এ থাকা বিষয়গুলোর সংক্ষিপ্তসার ইশতেহারে যুক্ত করা হবে। এ নিয়ে ইতোমধ্যে ১২-১৩ জনের একটি টিম কাজ করছে। ইশতেহারের খসড়া প্রস্তুত প্রক্রিয়ায় চিন্তাবিদ, বুদ্ধিজীবী, পরিকল্পনাবিদ, গবেষক এবং বিভিন্ন শ্রেণি-পেশা ও অঙ্গনে কমর্রত শীষর্স্থানীয় ও বিশিষ্ট ব্যক্তিদের সম্পৃক্ত করা হয়েছে। নিবার্চনের প্রস্তুতি ও ইশতেহারের বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, গণতান্ত্রিক দলের নিবার্চনি প্রস্তুতি সব সময়ই থাকে। বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তির পাশাপাশি সুষ্ঠু নিবার্চনের পরিবেশ তৈরি হলে বিএনপির নিবার্চনে না যাওয়ার কোন কারণ নেই। নিবার্চনের ইশতেহারের বিষয়ে ভিশন ২০৩০-এ বলা হয়েছে। নিবার্চনের আগে বিষয়গুলো ইশতেহারে আসবে। প্রাথীর্ বাছাই : একাদশ জাতীয় সংসদ নিবার্চনে অংশগ্রহণ নিয়ে বিএনপিতে দ্বিমত থাকলেও সম্ভাব্য প্রাথীর্ বাছাইয়ের কাজ অনেকটা এগিয়ে নিয়েছে বিএনপি। দেড় বছর আগেই ৩০০ আসনে ৯০০ প্রাথীর্ থাকার কথা ঘোষণা দেয় দলটি। প্রাথমিক পযাের্য় প্রাথীের্দর একটি তালিকাও তৈরি করা হয়। এরপর সম্ভাব্য প্রাথীর্ বাছাইয়ের কাজ করেছে বিএনপির একটি বড় গবেষণা ও জরিপ দল। গবেষণা ও জরিপ দলে রাজনীতিবিদ, সাবেক আমলা, সাবেক সেনাসদস্যসহ বিএনপিপন্থি বুদ্ধিজীবীরা কাজ করছেন। বিএনপির একটি সূত্র জানায়, প্রাথীর্ বাছাইয়ে তিনটি বিষয় সামনে রেখে এগুচ্ছে দলটি। এক. এর আগে একাধিকবার সংসদ সদস্য নিবাির্চত হয়েছেন এমন প্রাথীের্দর খেঁাজ নেয়া হয়েছে। তারা গত ১০ বছর দলের সংকটে সক্রিয় ছিলেন কিনা বা দল বিরোধী কোনো কাজ করেছেন কিনা তা বিবেচনায় রাখা হচ্ছে। দুই. একেবারে নবীন প্রাথীর্ যারা আছেন তারা কিভাবে নিজেকে যোগ্য দাবি করছেন তা নিজেদের মতো করে অনুসন্ধান করা। তিন. ২০০৮ সালের নিবার্চনে মনোনয়ন পেয়ে যৌক্তিক কারণে যারা হেরেছেন তাদের বতর্মান অবস্থার খেঁাজ নেয়া হচ্ছে। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের ঘনিষ্ঠ একটি সুত্রমতে, নিবার্চনের প্রাথীর্ ঠিক করতে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান একাধিক জরিপ চালিয়েছেন। জরিপে এগিয়ে থাকা প্রাথীর্, প্রাথীর্র বিগত নিবার্চনগুলোর ফল এবং রাজনৈতিক অবস্থা বিবেচনা করে অনেকে এরই মধ্যে সবুজ সংকেতও পেয়েছেন। যে সব আসনে প্রাথির্তা নিয়ে বড় ধরনের ঝামেলা নেই, সেখানেই আপাতত ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের সবুজ সংকেত যাচ্ছে। প্রাথীর্ বাছাইয়ের বিষয়ে বিএনপি মহাসচিব মিজার্ ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, বিএনপির যোগ্য প্রাথীর্র কোনো অভাব নেই। একটি আসনে একাদিক যোগ্য প্রাথীর্ আছে। সুষ্ঠু নিবার্চনে পরিবেশ তৈরি হলে, দল নিবর্চনে অংশগ্রহণের সিদ্ধান্ত নেয়ার পরে প্রাথীর্ বাছাইয়ের বিষয়টি আসবে। এ নিয়ে কোনো সমস্যা হবে না। একটি আসনে একাদিক প্রাথীর্ থাকলেও দল যাকে মনোনয়ন দেবে সবাই তার সঙ্গে কাজ করবে। ভোটকেন্দ্রের নিয়ন্ত্রণ : স্থানীয় পযাের্য়র একাধিক নিবার্চনে ভরাডুবির কারণ খঁুজে বের করেছে বিএনপি। এরমধ্যে প্রধান কারণ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে ভোটকেন্দ্রে শেষ পযর্ন্ত দলীয় এজেন্ট ও নেত্কামীর্ থাকতে না পারা। এ জন্য জাতীয় নিবার্চনে সুষ্ঠু ভোট নিশ্চিত করতে সারাদশের সব কেন্দ্রে পাহারা বসানোর পরিকল্পনা করেছে বিএনপি। বিএনপি সূত্রমতে, নিবার্চনকে কেন্দ্র করে সারাদেশে প্রস্তুত করা হচ্ছে দলের নেতাকমীের্দর। ভোটের দিনে কেন্দ্রে কেন্দ্রে পাহারা দিতেই কেন্দ্রভিত্তিক কমিটি করা হচ্ছে। যতগুলো কেšদ্র প্রতিটির জন্য কমিটি করা হবে। দলের হাইকমান্ড থেকে এ সব কমিটি গঠনের কাজ তদারকি করা শুরু করেছেন। বিএনপির নীতিনিধার্রণ পযাের্য়র একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নিবার্চন প্রতিরোধে যে আন্দোলন হয়েছে, সেই অভিজ্ঞতা থেকে এবার প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে। কেন্দ্রভিত্তিক কমিটি গঠনের পাশাপাশি ইউনিয়ন, ওয়াডর্ ও থানার ভিত্তিতে বিএনপির অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনগুলোরও কমিটি গঠনে সংশ্লিষ্টদের নিদের্শ দেয়া হয়েছে। এরই মধ্যে কেন্দ্রভিত্তিক ৪০ হাজার কমিটি গঠনের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে