শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

বিএনপির মানববন্ধনের সময় আটক ৪৯ জন রিমান্ডে

যাযাদি রিপোটর্
  ১১ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ০০:০০
আপডেট  : ১২ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ০০:০০

তিন ছেলেকে নিয়ে দোহারে বসবাস করেন সাহিদা বেগম। স্বামী মিজানুর রহমান ফকিরাপুলে থেকে প্রিন্টিংয়ের ব্যবসা করেন। সোমবার সন্ধ্যায় তিনি খবর পান তার স্বামীকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে। বড় ছেলে সোহেবকে নিয়ে ছুটে আসেন ঢাকায়। থানায় স্বামীর দেখা না পেয়ে মঙ্গলবার বিকালে আসেন ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে। স্বামীকে দেখার পর আদালতের বারান্দায় হাউমাউ করে কঁাদতে থাকেন। স্বামীর একদিন রিমান্ড হওয়ার আদেশ শোনার পর সাহিদা বেগম বলেন, তার স্বামী কোনো রাজনীতি করে না। অথচ পুলিশ তার স্বামীকে রাস্তা থেকে ধরল। এখন বলছে, স্বামী নাকি তার স্বেচ্ছাসেবক দলের কমীর্।

দোহারের মিজানুর রহমানকে রমনা থানার পুলিশের কাজে বাধা দেয়ার মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। মঙ্গলবার তাকেসহ (মিজানুর) ১৭ জনকে আদালতে হাজির করে দশদিন রিমান্ডে নেয়ার আবেদন করে রমনা থানা পুলিশ। ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালত তাদের প্রত্যেকের একদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে।

আদালত সূত্র বলছে, এ ছাড়া মতিঝিল, পল্টন, শাহজাহানপুর, রামপুরা, বাড্ডা ও ভাটারা থানার পৃথক ছয়টি মামলায় গ্রেপ্তার আরও ৩২ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে রিমান্ডে নেয়ার অনুমতি দিয়েছে আদালত। আর শাহবাগ থানার মামলায় গ্রেপ্তার ২২ জনকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। এদের মধ্যে ৪ জনকে পঁাচদিন রিমান্ডে নেয়ার আবেদন করা হয়। আগামী বৃহস্পতিবার রিমান্ড শুনানির জন্য দিন ঠিক করেছেন আদালত। আসামিদের বিরুদ্ধে সরকারি কাজে বাধা, পুলিশের ওপর হামলার অভিযোগ আনা হয়েছে মামলায়।

তিতুমীর কলেজের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র শরীফুল ইসলাম। তাকে রমনা থানার মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। পুলিশ বলছে, শরীফুল ছাত্রদল কমীর্। তার আইনজীবী জয়নাল আবেদিন আদালতকে বলেছেন, রাজনীতির সঙ্গে তিনি জড়িত নন। তার পরীক্ষা চলছে। আগামী ১৬ সেপ্টেম্বর পরীক্ষার দিন রয়েছে। শরীফুলের পক্ষে আদালতে পরীক্ষার রুটিন জমা দেয়া হয়েছে।

ভাটারা থানার মামলায় গ্রেপ্তার মাহবুবুর রহমানের আইনজীবী আবুল কাশেম আদালতকে বলেন, তার মক্কেল কোনো রাজনীতির সঙ্গে জড়িত না। হয়রানি করার জন্য পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করেছে।

গ্রেপ্তার সুমনের মা হাসিনা বেগম বলেন, তার ছেলে কঁাচামালের ব্যবসা করে। অথচ রাস্তা থেকে পুলিশ তাকে ধরে নিয়ে আসল।

আসামিপক্ষের কয়েকজন আইনজীবী জানান, বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতাকমীর্র পাশাপাশি পুলিশ নিরীহ সাধারণ মানুষকেও গ্রেপ্তার করে আদালতে তুলেছে।

মঙ্গলবার আদালতে দেখা যায়, গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের দুপুরের দিকে প্রিজন ভ্যানে করে আদালতের হাজতখানায় আনে পুলিশ। যাদের রিমান্ড চাওয়া হয় তাদের হাজতখানা থেকে আদালতে তোলা হয়। রিমান্ড শুনানি শেষে যখন ফের হাজতখানায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল তখন গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের স্বজনদের কেউ কেউ হাউমাউ করে কঁাদতে থাকেন। দুপুরের পর থেকে সন্ধ্যা পযর্ন্ত গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের স্বজনরা আদালত ও হাজতখানার সামনে ভিড় করেন।

বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সুচিকিৎসা ও মুক্তির দাবিতে সোমবার জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে দলটির মানববন্ধন চলাকালে ও শেষে ধরপাকড় করে পুলিশ। সোমবার দলটির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভী সাংবাদিকদের জানান, ঢাকার মৎস্য ভবন, কাকরাইল মোড়, পল্টন মোড়, সেগুনবাগিচা ও হাইকোটর্ মোড় থেকে পুলিশ বিএনপির নেতাকমীের্দর গ্রেপ্তার করে আতঙ্ক সৃষ্টির চেষ্টা করছে। গাজীপুরসহ বেশকিছু জায়গায় বিএনপির মানববন্ধন কমর্সূচিতে পুলিশ অতকিের্ত হামলা ও ‘গুলি’ চালিয়েছে।

মানববন্ধন ঘিরে পুলিশ কিছুটা কৌশলী পথ বেছে নেয়, যার কারণে গণমাধ্যমের কমীর্ ও বিএনপির নেতাকমীর্রা পুলিশের আটকের বিষয়টি সেভাবে বুঝতে পারেননি।

মানববন্ধন চলার সময় সাদাপোশাকে থাকা গোয়েন্দা পুলিশের সদস্যরা বিএনপির নেতা-কমীের্দর হ্যঁাচকা টেনে ধরে নিয়ে যান। এ সময় কেউ কেউ পালাতে সক্ষম হন, আবার কোনো কোনো দলের সদস্যরা তাদের আটক সদস্যকে ছাড়িয়ে নিয়ে যান। মানববন্ধন ঘিরে ঢাকার পঁাচটি থানার পুলিশ ও গোয়েন্দা পুলিশের সদস্যরা প্রেসক্লাব এলাকায় অবস্থান নেন। মানববন্ধনস্থলের পাশে পুলিশের এপিসি, জলকামান ও প্রিজনভ্যান রাখা ছিল।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<12058 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1