মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১
বাংলাদেশ গত ১০ বছরে ‘উন্নয়নের মহাসড়কে’ যে পথ পাড়ি দিয়েছে, তাকে ‘অসাধ্য সাধন’ বলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বৃহস্পতিবার গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ২০ জেলায় ৩৩টি প্রকল্পের উদ্বোধন করে প্রধানমন্ত্রী এমন মন্তব্য করেন। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের অধীনে বাস্তবায়িত সাতটি সেতু, একটি জেটি, নয়টি উপজেলা পরিষদের সম্প্রসারিত প্রশাসনিক ভবন ও হলরুম এবং ছয়টি নগর মাতৃসদন ভবন ও ১০টি নগর স্বাস্থ্যকেন্দ্র উদ্বোধন করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জাতির পিতার আদশর্ বুকে ধারণ করে নিজের জীবনকে উৎসগর্ করেছি।’ তিনি বলেন, ২০০৮ সালে নবম জাতীয় সংসদ নিবার্চনের পর আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার ক্ষমতায় এসে দেশের উন্নয়নে ব্যাপক কমর্সূচি বাস্তবায়ন শুরু করে। সব দিক থেকে মানুষ যেন ভালোভাবে বঁাচতে পারে, সেই চেষ্টা তার সরকার করছে। এ অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী দিনাজপুরের কান্তজিউর মন্দির সড়কে ডেপা নদীর ওপর ২২৮ মিটার দীঘর্ সেতু, জামালপুরে ব্রহ্মপুত্র নদের ওপর ৫৬০ মিটার দীঘর্ ‘শহীদ লেফটেন্যান্ট শেখ জামাল সেতু’ ও ‘শহীদ মেজর জেনারেল খালেদ মোশাররফ বীর উত্তম সেতু’, টাঙ্গাইলে ধলেশ্বরী নদীর ওপর ৫২০.৬০ মিটার দীঘর্ ‘দেশরতœ জননেত্রী শেখ হাসিনা সেতু’, শ্রীপুর উপজেলায় ৩১৫ মিটার দীঘর্ সেতু, মাদারীপুরে আড়িয়াল খঁা নদের ওপর ৬৮৬.৭৫ মিটার দীঘর্ ‘শেখ লুৎফর রহমান সেতু’ এবং নড়াইলে চিত্রা নদীর ওপর ‘শেখ রাসেল সেতুর’ উদ্বোধন করেন। এ ছাড়া টেকনাফ-মিয়ানমার ট্রানজিট ঘাটে নিমির্ত ৫৫০ মিটার দীঘর্ জেটিরও উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী। অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, ‘আমি জানি না, পৃথিবীতে কোনো দেশ এত অল্প সময়ে এত উন্নতি সাধন করতে পারে কিনা। কিন্তু আমরা সেই অসাধ্য সাধন করতে পেরেছি।’ এ অনুষ্ঠান থেকে প্রধানমন্ত্রী ঢাকার মিরপুর এক নম্বর সেকশনে, গাজীপুরের দক্ষিণ কোলার বাজারের ধীলাশ্রমে, রংপুরের পূবর্ খাসবাগে, কিশোরগঞ্জের হারুয়ায়, কুষ্টিয়ার মিলের পাড়ায় ও গোপালগঞ্জ পৌরসভায় ছয়তলা নগর মাতৃসদন এবং গাজীপুরের নীলের পাড়ায়, কুমিল্লার কমলাপুর, বাউবন্দ ও রসুলপুরে, রংপুরের এরশাদ নগর ও জুমাপুড়ায়, কুষ্টিয়ার বারাদি ও বড়খাদায়, কিশোরগঞ্জের নুরানী ও তারাপাশায় তিনতলা নগর স্বাস্থ্যকেন্দ্রের উদ্বোধন করেন। তিনি বলেন, ‘গত ১০ বছরে জনগণের জীবনমানের উন্নয়ন হয়েছে এবং দিনবদলের যাত্রা শুরু হয়েছে।’ নীলফামারীর ডোমার, নওগঁার আত্রাই ও রানীনগর, নাটোরের সিংড়া, সিরাজগঞ্জের তাড়াশ, কিশোরগঞ্জের সদর উপজেলা, মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া, যশোরের শাশার্ এবং নোয়াখালীর সদর উপজেলায় ‘উপজেলা পরিষদের সম্প্রসারিত প্রশাসনিক ভবন ও হলরুম’-এর উদ্বোধন করেন শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রী এসব প্রকল্পের উদ্বোধন করে এগুলোর রক্ষণাবেক্ষণে সংশ্লিষ্ট কতৃর্পক্ষকে যতœবান হতে বলেন। ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে মাদারীপুর, কুমিল্লা, নওগঁা, ময়মনসিংহ এবং গাজীপুরে সরকারি বিভিন্ন কমর্সূচির উপকারভোগীদের সঙ্গেও কথা বলেন তিনি। ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ এখন স্প্যানিশ ভাষায় স্প্যানিশ ভাষায় জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আত্মজীবনী ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ প্রকাশিত হয়েছে। বৃহস্পতিবার গণভবনে এক অনুষ্ঠানে বইটির মোড়ক উন্মোচন করেছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বাংলাদেশ স্পেনের রাষ্ট্রদূত, সেদেশের সরকার ও জনগণকে ধন্যবাদ জানিয়ে বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, ‘এটা আমাদের জন্য গৌরবের; খুবই আনন্দের।’ বইটির অনুবাদ ও সম্পাদনার সঙ্গে যুক্ত সবার প্রতিও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন শেখ হাসিনা। বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনী পড়ে তার জীবন ও এই উপমহাদেশের রাজনীতি সম্পকের্ জানা যাবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, পরিবার ও বাবা-মার প্রতি তার ভালোবাসা প্রকাশ পেয়েছে। বঙ্গবন্ধুর ‘কারাগারের রোজনামচা’ বইটিও স্পানিস ভাষায় অনুবাদ হয়া উচিত বলেও মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী। বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে পাকিস্তান গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনের ওপর ভিত্তি করে সম্প্রতি প্রকাশিত বইটির কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘পৃথিবীর কোনো নেতার বিরুদ্ধে রিপোটর্ করলে সেটা প্রকাশিত হয় না। স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুত্থানের ইতিহাস এই বই থেকে জানা যাবে।’ বাবার কথা স্মরণ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘তিনি বলতেন, স্প্যানিশ ভাষা সব থেকে মিষ্টি ভাষা।’ অনুষ্ঠানে স্পেনের রাষ্ট্রদূত ড. আলভারো ডি সালাস গিমেনেজ ডি আজকারাতে বলেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে স্প্যানিশ দ্বিতীয় সবোর্চ্চ ব্যবহৃত ভাষা। এই বই প্রকাশের ফলে বিশ্বের প্রায় ৪৩ কোটি ৭০ লাখ স্প্যানিশ ভাষাভাষী জনগোষ্ঠী বঙ্গবন্ধুর গৌরবময় জীবন ও কমর্ সম্পকের্ জানতে পারবেন। সুবিধাবঞ্চিত, নিযাির্তত মানুষের জন্য বঙ্গবন্ধুর আপসহীন সংগ্রাম ও আত্মত্যাগ, তার গৌরবময় জীবন স্প্যানিশ ভাষাভাষী মানুষ জানতে পারবেন। ২০১২ সালের ১৮ জুন অসমাপ্ত আত্মজীবনী মূল বাংলা ভাশর্ন প্রকাশিত হয়। এ পযর্ন্ত বাংলা, ইংরেজি, হিন্দি, চীনা, জাপানি, ফরাসি, উদুর্, আরবি ও স্প্যানিশসহ ১০ ভাষায় প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়া রুশ ভাষাসহ বেশ কয়েকটি ভাষায় অনুবাদের কাজ চলছে। এ সময় অন্যদের মধ্যে সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা গওহর রিজভী, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার ও বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল ট্রাস্টের সদস্য সচিব শেখ হাফিজুর রহমান উপস্থিত ছিলেন। সঞ্চালনা করেন মুখ্য সচিব মো. নজিবুর রহমান।
Google News ফিড অনসরণ করুন
