শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

আবারও দুই ছাত্রী নিহত

সড়ক দুঘর্টনা কি আদৌ থামবে
নতুনধারা
  ১৪ অক্টোবর ২০১৮, ০০:০০
আপডেট  : ১৪ অক্টোবর ২০১৮, ১৭:৫৪

নিরাপদ সড়কের দাবিতে দেশব্যাপী বৃহত্তর গণআন্দোলন এবং আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে সড়কের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সরকারের নানামুখী পদক্ষেপ নেয়ার পরও সড়ক দুঘর্টনা রোধ না হওয়া অত্যন্ত পরিতাপের। চালকের বেপরোয়া গতির লাগাম কেন টেনে ধরা যাচ্ছে না, এমন প্রশ্নও সবর্স্তরে। বাস্তবতা হলো, এত কিছুর পরেও প্রতিদিন সড়কের কোথাও না কোথাও প্রাণ যাচ্ছে মানুষের। দেশের জন্য এর চেয়ে ভয়াবহ পরিস্থিতি আর কী হতে পারে! সম্প্রতি জানা গেছে, বেপরোয়া ঘাতক বাস আবারও দুই ছাত্রীর প্রাণ কেড়ে নিয়েছে। মমাির্ন্তক এ ঘটনাটি শনিবার দুপুরে ঘটেছে ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের গোয়ালন্দ এলাকায়। দুই ছাত্রী নিহত হওয়ার ঘটনায় বিক্ষুব্ধ শিক্ষাথীর্ ও এলাকাবাসী মহাসড়ক অবরোধ করে যানবাহন ভাঙচুর ও বাসে অগ্নিসংযোগ করে। এ সময় একজন চালক গুরুতর আহতও হন। অন্যদিকে যশোর থেকে ঘাতক বাসের চালককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে পুলিশ জানিয়েছে।

গণমাধ্যমের তথ্যে জানা যায়, গোয়ালন্দে নিহত দুই শিক্ষাথীর্ হচ্ছে চঁাদনী আক্তার ও জাকিয়া সুলতানা কেয়া। দুজনই দৌলতদিয়া মডেল হাইস্কুলের নবম শ্রেণির ছাত্রী। প্রত্যক্ষদশীর্রা গণমাধ্যমে জানিয়েছেন, মূল্যায়ন পরীক্ষায় অংশ নেয়ার উদ্দেশে বিদ্যালয়ের সামনে ঢাকা-খুলনা সড়ক পারাপারের সময় ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা ফরিদপুরগামী গোল্ডেন লাইন পরিবহনের একটি বাস বেপরোয়া গতিতে এসে তাদের চাপা দেয়। গুরুতর আহত অবস্থায় এলাকাবাসী তাদের উদ্ধার করে গোয়ালন্দ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কতর্ব্যরত চিকিৎসক চঁাদনীকে মৃত ঘোষণা করেন। দুঘর্টনায় মুমূষুর্ জাকিয়া সুলতানাকে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তরের সময় তার মৃত্যু ঘটে। ফলে এমন মমাির্ন্তক মৃত্যুতে নিহতদের সহপাঠী এবং এলাকাবাসীর বিক্ষোভে ফেটে পড়াও অস্বাভাবিক নয়।

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক দাবি করেছেন, স্কুলের সামনে প্রায়ই ছোট-বড় দুঘর্টনা ঘটে থাকে। বিদ্যালয় কতৃর্পক্ষ দীঘির্দন ধরেই এখানে নিরাপত্তার জন্য প্রশাসনের কাছে দাবি জানিয়ে আসছেন। তিনি মনে করেন, যথাযথ উদ্যোগ নেয়া গেলে জাকিয়া ও চঁাদনীর মমাির্ন্তক মৃত্যু দেখতে হতো না। রোববার সকালেও এ ঘটনার প্রতিবাদে এবং মহাসড়কে নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দাবিতে স্কুলের সামনে মানববন্ধন কমসূির্চ পালিত হয়। বলার অপেক্ষা রাখে না, সরকার সড়ক নিরাপত্তা আইন সংস্কারের পরও দেশব্যাপী দুঘর্টনা যেমন থেমে নেই, তেমনিভাবে সড়কে চালকের বেপরোয়া গতিও বৃদ্ধি পেয়েছে। এ সংক্রান্ত খবরও এসেছে গণমাধ্যমে। বিশেষজ্ঞরা বারবার বলে আসছেন, সড়ক দুঘর্টনা নিছকই সড়ক দুঘর্টনা নয়, এটাকে হত্যাকাÐ হিসেবে বিবেচনা করে সে অনুযায়ী দায়ীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে। চালকের খামখেয়ালিপনা ও বেপরোয়া গতির কারণে প্রতিনিয়ত সড়কে প্রাণহানি ঘটবে, পঙ্গুত্ববরণ করতে হবে মানুষকে, এটা কিছুতেই হতে দেয়া উচিত নয়।

দেশে প্রতিনিয়ত যে হারে সড়ক দুঘর্টনা ঘটছে, তাতে ভেবে দেখতে হবে আসলে এগুলো কি শুধুই দুঘর্টনা, নাকি আমাদের যোগাযোগব্যবস্থার অদক্ষতা? এটাও ঠিক যে, সড়ক দুঘর্টনা একেবারেই রোধ করা সম্ভব নয়। তবে সংশ্লিষ্টদের কাযর্কর উদ্যোগ থাকলে তা শূন্যের কোটায় নামিয়ে আনাও অসম্ভব নয়। বহুবারই সামনে এসেছে, সড়ক দুঘর্টনার অন্যতম কারণ প্রশিক্ষিত চালকের অভাব। এর ওপর আছে চলাচলের অনুপযোগী লক্কড়ঝক্কড় গাড়ি। ফিটনেসবিহীন কত যানবাহন যে দেশের সড়কপথে চলাচল করছে, তার সঠিক পরিসংখ্যান দেয়া সম্ভব নয়। এসব গাড়ি কীভাবে সড়ক-মহাসড়কে চলাচল করে, তা যেমন দেশের মানুষের জানা, তেমনি বৈধ লাইসেন্স ছাড়াই চালকের আসনে বসে বছরের পর বছর যানবাহন কেমন করে চালানো যায়, তা-ও কারও অজানা নয়। আবার খুনি চালকদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তিরও তেমন নজির নেই। বড় বড় দুঘর্টনা ঘটার পরও নীতিনিধার্রক মহলে পরিলক্ষিত হয় চিরাচরিত শৈথিল্য। আমরা মনে করি, প্রশাসন তথা সংশ্লিষ্টদের নতজানু নীতি দুঘর্টনা রোধের পথে অন্তরায়। সবোর্পরি বলতে চাই, আইনের যথাযথ প্রয়োগের পাশাপাশি সততা, সদিচ্ছা ও দায়বোধ থেকে সড়ক দুঘর্টনার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে না নামলে সড়ক-মহাসড়কে গাড়ির চাকায় হত্যাযজ্ঞ বন্ধ হবে না।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<17475 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1