শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১
একাদশ সংসদ নিবার্চন

ভোটারদের কেন্দ্রে নেয়ার কৌশল খুঁজছে বিএনপি

ভোটারদের কেন্দ্রে আসা-যাওয়ার নিরাপত্তা নিশ্চিত করার টাগের্ট প্রতিটি কেন্দ্রে এজেন্ট দিয়ে জালিয়াতি ঠেকানোর প্রস্তুতি প্রচার-প্রচারণার মাঠে সংঘাত সহিংসতা এড়িয়ে চলার নিদের্শ তরুণ ভোটারদের ভোটদানে উদ্বুব্ধ করতে নানা পরিকল্পনা
সাখাওয়াত হোসেন
  ২১ ডিসেম্বর ২০১৮, ০০:০০

হামলা-মামলাসহ নানামুখী প্রতিবন্ধকতায় নিবার্চনী প্রচার-প্রচারণার মাঠে নামতে না পারলেও ভোটের দিন সাধারণ ভোটারদের কীভাবে ভোটকেন্দ্রে নেয়া যায়, এর কৌশল খুঁজছে বিএনপি। দলীয় হাইকমান্ড মনে করে, সুষ্ঠু পরিবেশে ভোটাররা কেন্দ্রে যেতে পারলে দলের সিংহভাগ প্রাথীর্রই বিজয় সুনিশ্চিত; এ ক্ষেত্রে ক্ষমতাসীনদের কোনো অপকৌশল কাজে লাগবে না। তবে এই টাগের্ট পূরণে তারা ব্যথর্ হলে দেশজুড়ে ব্যাপক জালভোট পড়বে। এমনকি প্রকাশ্যে ভোট ডাকাতিরও সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে। তাই নিবার্চনকেন্দ্রিক সব ধরনের সংঘাত-সহিংসতার পাশ কাটিয়ে ভোটকেন্দ্রে ভোটারদের উপস্থিতি বাড়ানোর ব্যাপারে তৃণমূল নেতাদের সবোর্চ্চ গুরুত্ব দিতে বলা হয়েছে। বিএনপির শীষর্ স্থানীয় নেতারা জানান, নিবার্চনী মাঠের যে পরিসংখ্যান তাদের হাতে রয়েছে, এতে সাধারণ ভোটারদের একটি বিশাল অংশ নিজের ভোটাধিকার প্রয়োগে ব্যাকুল হয়ে আছে। বিশেষ করে তরুণ ভোটাররা এ ব্যাপারে রীতিমতো প্রতীক্ষার প্রহর গুণছে। যদিও নিবার্চনী প্রচার-প্রচারণাকে কেন্দ্র করে চলমান সংঘাত-সহিংসতার ঘটনা তাদের অনেকটা ভীতসন্ত্রস্ত করে তুলেছে। এ অবস্থায় অনেকে ভোটকেন্দ্রে যাওয়া নিয়ে দ্বিধা-দ্ব›েদ্ব ভুগছে। তাই ভোটকেন্দ্রে ভোটারদের উপস্থিতি নিশ্চিত করাই এখন বিএনপির জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। এই টাগের্ট পূরণে তারা সক্ষম হলে ক্ষমতাসীনদের ভঙ্গুর অবস্থান সহজেই প্রমাণ করা যাবে বলে মনে করেন দলের শীষর্ নেতারা। দলীয় সূত্রে জানা গেছে, ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে উপস্থিতি বাড়াতে তারা একগুচ্ছ পরিকল্পনা নিয়ে মাঠে কাজ করছে। এরমধ্যে নিবার্চনী সহিংসতা রোধের ব্যাপারে সবোর্চ্চ গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। বিএনপির হাইকমান্ড মনে করে, প্রচার-প্রচারণার মাঠে ক্ষমতাসীন দলের নেতাকমীর্রা যেভাবে আক্রমণাত্মক ভ‚মিকায় নেমেছে, এতে পাল্টা প্রতিরোধ গড়ে তোলার চেষ্টা করা হলে রক্তক্ষয়ী সংঘষর্ বেঁধে যাবে। এতে জনমনে আতঙ্কের মাত্রা ভীষণভাবে বাড়বে। সাধারণ ভোটাররা ভোটের দিন কেন্দ্রে যাওয়ার আগ্রহ হারিয়ে ফেলবে। অন্যদিকে বিএনপি প্রচার-প্রচারণার মাঠে পুরোপুরি নিষ্ক্রিয় থাকলে নেতাকমীর্-সমথর্কদের মধ্যে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। পাশাপাশি সাধারণ ভোটারদের কাছেও দলের অবস্থান সম্পকের্ ভুল বাতার্ যাবে। তাই দু’ক‚ল রক্ষা করে যে কোনো পরিস্থিতিতেই দলের নেতাকমীের্দর প্রচার-প্রচারণার মাঠে টিকে থাকার নিদের্শনা দিয়েছে বিএনপি হাইকমান্ড। দলের দায়িত্বশীল একাধিক সূত্র জানায়, ভোটের দিন ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে নেয়ার কৌশল হিসেবে দলীয় প্রাথীর্ ও নেতাকমীর্ প্রচার-প্রচারণার মাঠে অযথা শক্তিক্ষয় কিংবা প্রদশর্ন না করার জন্য সতর্ক করা হয়েছে। কেননা, নিবার্চনী প্রচার-প্রচারণার চেয়ে ভোটের দিন ভোটকেন্দ্রগুলোর নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখা এখন তাদের জন্য সবচেয়ে বেশি জরুরি। পাশাপাশি ভোটাররা ভোট দিতে এসে যাতে কোনো সংঘাত-সহিংসতার শিকার না হন, সেটা নিশ্চিত করার বিষয়টিও গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনায় রাখছে বিএনপি। দলীয় হাইকমান্ড মনে করে, প্রচার-প্রচারণার মাঠে যাই হোক না কেন, ভোটের দিন ভোটাররা তাদের জানমালের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত না হলে দলে দলে কেন্দ্রে ছুটে আসবে। এতে ক্ষমতাসীনদের ভোট জালিয়াতির সুযোগ কমবে। এমনকি তারা অন্য কোনো অপকৌশল প্রয়োগ করতেও ভয় পাবে। যা বিএনপির জন্য ইতিবাচক ফল বয়ে আনবে বলে মনে করে বিএনপি হাইকমান্ড। দলের দায়িত্বশীল একজন নেতা জানান, ভোটকেন্দ্রের পাশাপাশি ভোটারদের আসা-যাওয়ার পথের নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে ছক তৈরির জন্য তৃণমূল নেতাদের আগাম নিদের্শনা দেয়া হয়েছে। স্থানীয় পরিবেশ-পরিস্থিতি বুঝে তারা এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে। এ ব্যাপারে তারা থানা-পুলিশসহ নিবার্চনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্বে নিয়োজিত অন্যান্য বাহিনীর সহযোগিতা নেয়ার সবোর্চ্চ চেষ্টা চালাবে। তবে প্রশাসনের পক্ষপাতদুষ্টু কারও অসহযোগিতার মুখেও ভোটারদের নিরাপত্তা যাতে অটুট রাখা যায়, সে ব্যাপারে তৃণমূল নেতাদের সতকর্ করা হয়েছে। এদিকে সব ধরনের বাধা-বিপত্তি এড়িয়ে তরুণ ভোটারদের যাতে কেন্দ্রে নেয়া যায়, সে বিষয়টিতে বিশেষ গুরুত্ব দেয়ার জন্য তৃণমূল নেতাদের তাগিদ দেয়া হয়েছে। বিএনপি হাইকমান্ড মনে করে, দুই কোটির ওপর যে নতুন ভোটার রয়েছে, তারা সহজেই নিবার্চনের মোড় ঘুরিয়ে দিতে পারেন। তাই তরুণ ভোটারদের কাছে টানতে বিএনপি তার নিবার্চনী ইশতেহারে প্রথম তিন বছরে দুনীির্তমুক্ত ব্যবস্থায় মেধা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে সরকারি চাকরিতে দুই লাখ মানুষকে চাকরি দেয়া এবং ভ্যাটবিরোধী, কোটা সংস্কার ও নিরাপদ সড়ক আন্দোলনে ক্ষতিগ্রস্ত ছাত্রছাত্রীদের বিরুদ্ধে আনা সব মামলা প্রত্যাহারসহ চমকদার বিভিন্ন অঙ্গীকার করেছে, যেটা তরুণদের কেন্দ্রে নেয়ার অন্যতম ‘বাতার্’ হিসেবে দঁাড় করাতে দলীয় হাইকমান্ড থেকে তৃণমূলে নিদের্শনা দেয়া হয়েছে। বিএনপির নীতি-নিধার্রকদের আশঙ্কা, দেশে সুষ্ঠু ভোট হলে আওয়ামী লীগের নিশ্চিত পরাজয় হবে জেনে তারা ভোটারদের কেন্দ্রে আসার পথে নানা বাধা সৃষ্টির যড়যন্ত্র করছে। যা প্রতিহত করতেও বিএনপিকে কঠোর প্রস্তুতি নিতে হবে। এ ছাড়া দেশের প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে বিএনপিসহ শরিকদলের পোলিং এজেন্ট নিশ্চিত করার বিষয়টিতে গুরুত্ব দেয়ার তাগিদ দিয়েছেন দলীয় নীতি-নিধার্রকরা। তাদের ভাষ্য, প্রতিটি কেন্দ্রে দলীয় এজেন্ট থাকলে আওয়ামী লীগের ক্যাডারদের পক্ষে ভোট ডাকাতি করা যেমন কঠিন হবে, তেমনি সাধারণ ভোটাররা কেন্দ্রে আসার আগ্রহ বাড়বে। কেননা, স্থানীয় নিবার্চনগুলোতে ভোটাররা দীঘর্ সময় লাইনে দঁাড়িয়ে থেকে ব্যালট পেপার নিতে গিয়ে তাদের ভোট জালিয়াতি হওয়ার কথা জানতে পেরেছে। এতে তাদের ভোটদানের আগ্রহ কমেছে। তাই ভোটারদের কেন্দ্রে নেয়ার ক্ষেত্রে এই ইস্যুটি বিশেষভাবে গুরুত্বপূণর্ বলে বিএনপি হাইকমান্ড মনে করছে। এ প্রসঙ্গে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদ আহমদ বলেন, দেশের জনগণ সরকারের ওপর এতটাই বীতশ্রদ্ধ যে, ৩০ ডিসেম্বর ভোট দেয়ার সুযোগ তারা পেলেই ধানের শীষ জয়ী হয়ে আসবে। তাই ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ভোটারদের কেন্দ্রে যাওয়া ঠেকাতে নানা প্রতিবন্ধকতা তৈরির ষড়যন্ত্র করছে। তাই এর প্রতিরোধ করতে হবে। এ ছাড়া বিএনপির অন্য কোনো বিকল্প নেই। এ জন্য ভোটের অধিকার নিশ্চিত করতে ভোটারদের বোঝাতে হবে, যত অসুবিধা হোক না কেন, যত হুমকি-ধামকি থাকুক না কেন, ভোটকেন্দ্রে যেতে হবে। ভোটের মাধ্যমে এই সরকারের সব অপকমের্র উত্তর দিতে হবে। বিএনপির জোটসঙ্গী নাগরিক ঐক্যের আহŸায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ভোটারদের বোঝাতে হবে- লড়াইটা বিএনপি কিংবা জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের একার নয়, ১০ কোটি ভোটারের। যত বড় বিপদ হোক, গ্রেপ্তার-নিযাির্তত যা-ই হোক কেন, মানুষকে একবার গিয়ে বলতে হবে- এটাই শেষ সুযোগ। এই ভোট যদি দিতে পারেন, তাহলেই কেবল আওয়ামী লীগের দুঃশাসন থেকে মুক্ত হওয়া যাবে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে