শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১
ক্যাশ মেমো পাচ্ছেন না ক্রেতা

কর ফঁাকি দিচ্ছে বাণিজ্য মেলার অধের্ক প্রতিষ্ঠান!

নতুনধারা
  ২৩ জানুয়ারি ২০১৯, ০০:০০
রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে আন্তজাির্তক বাণিজ্যমলায় পছন্দের জিনিস দেখছেন ক্রেতা-দশর্নাথীর্রা। ছবিটি মঙ্গলবার বিকালে তোলা Ñযাযাদি

যাযাদি রিপোটর্ ঢাকা আন্তজাির্তক বাণিজ্যমেলায় অংশ নেয়া ৫০ শতাংশের বেশি প্রতিষ্ঠান মূল্যসংযোজন কর (ভ্যাট) ফঁাকি দিচ্ছে। বড় প্রতিষ্ঠানগুলো সঠিকভাবে ভ্যাট দিলেও ছোট স্টল ও বিদেশি প্যাভিলিয়নের স্টলগুলো ভ্যাট দেয়ার প্রক্রিয়া মানছে না। মেলা প্রাঙ্গণের বিভিন্ন স্টল ঘুরে এবং ব্যবসায়ী ও ক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ছোট স্টল ও বিদেশি প্যাভিলিয়নের স্টল থেকে ক্রেতাদের পণ্য ক্রয়ের বিপরীতে কোনো ক্যাশ মেমো দেয়া হচ্ছে না। শুধু টাকার বিনিময় ক্রেতাদের হাতে পণ্য ধরিয়ে দেয়া হচ্ছে। ফলে প্রতিষ্ঠানগুলোতে কী পরিমাণ বিক্রি হচ্ছে, এর কোনো সঠিক প্রমাণই থাকছে না। প্রতিষ্ঠানগুলো বিক্রির বিষয়ে নিজেদের মনগড়া হিসাব দিচ্ছে। অনেক প্রতিষ্ঠান ভালো বিক্রি করলেও বিক্রি নেইÑ এমন কথা বলছে। আর বিক্রির সঠিক হিসাব না রাখায় সঠিকভাবে ভ্যাটও পরিশোধ করছে না প্রতিষ্ঠানগুলো। মেলার আয়োজক প্রতিষ্ঠান রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্যানুযায়ী, এবার মেলায় প্রিমিয়ার প্যাভিলিয়ন, সাধারণ প্যাভিলিয়ন, মিনি প্যাভিলিয়ন, প্রিমিয়ার স্টল, সাধারণ স্টল এবং খাবারের দোকানসহ মোট ৬০৫টি স্টল অংশ নিচ্ছে। এর মধ্যে রয়েছে প্যাভিলিয়ন ১১০টি, মিনি-প্যাভিলিয়ন ৮৩টি এবং রেস্তোরঁাসহ অন্যান্য স্টল ৪১২টি। বাংলাদেশ ছাড়াও বিশ্বের ২৫টি দেশের ৫২টি প্রতিষ্ঠান মেলায় অংশ নিচ্ছে। দেশগুলো হলো থাইল্যান্ড, ইরান, তুরস্ক, শ্রীলংকা, মালদ্বীপ, নেপাল, চীন, মালয়েশিয়া, ভিয়েতনাম, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ভারত, পাকিস্তান, হংকং, সিঙ্গাপুর, মরিশাস, দক্ষিণ কোরিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা, জামাির্ন, সুইজারল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া ও জাপান। মেলার প্রধান ফটক দিয়ে প্রবেশ করে একটু পশ্চিম দিকে গেলেই চোখে পড়বে থাই প্যাভিলিয়ন। প্যাভিলিয়নটিতে গিয়ে দেখা যায়, ছোট ছোট বেশ কয়েকটি স্টল রয়েছে। এসব স্টল থেকে নারীদের সামগ্রী, খেলনা, শোপিসসহ বিভিন্ন পণ্য বিক্রি করা হচ্ছে। তবে প্যাভিলিয়নটির কোনো স্টল ক্রেতাদের ক্যাশ মেমো দিচ্ছে না। ক্যাশ মেমো না দেয়ার বিষয়ে শোপিস বিক্রেতা জিসান বলেন, আমাদের শোপিস বিক্রির বিপরীতে ক্যাশ মেমো দেয়ার দরকার নেই। আমাদের পণ্যের মান ভালো, তা ক্রেতারা জানেন। তাই ক্রেতারাও আমাদের কাছে ক্যাশ মেমো চান না। প্যাভিলিয়নটির এক স্টল থেকে পণ্য কেনা রিতু নামের একজন বলেন, সামান্য একটা শোপিস কিনে এর জন্য ক্যাশ মেমো চাওয়া কেমন দেখায়। এ ছাড়া আমি তো এই পণ্য আর পরিবতর্ন বা ফেরত দিতে আসব না। তাই ক্যাশ মেমো নেয়ার প্রয়োজন মনে করিনি। মেলার ভিআইপি গেট দিয়ে প্রবেশ করে সামনে এগিয়ে গেলে চোখে পড়বে হাই গ্যালারি। এখানে থাইল্যান্ডের বিভিন্ন খাদ্যপণ্য বিক্রি করছেন ব্যবসায়ীরা। তবে পণ্য বিক্রির বিপরীতে ক্রেতাদের ক্যাশ মেমো দিচ্ছেন না ব্যবসায়ীরা। ক্যাশ মেমো না দেয়ার বিষয়ে কায়েস নামের একজন বলেন, আমরা খাদ্যপণ্য বিক্রি করছি। এটা অনেকটা মুদি দোকানের মতো। মুদি দোকানদার কি ক্যাশ মেমো দেয়? আমাদের কাছ থেকে ক্রেতারা অল্প কয়েক টাকার পণ্য কিনেন। এত কম টাকার পণ্যের বিপরীতে ক্যাশ মেমোর কি দরকার। শুধু থাই পণ্য নয়, মেলায় বসা ছোট স্টলের সিংহভাগ প্রতিষ্ঠান ক্রেতাদের কোনো ক্যাশ মেমো দিচ্ছে না। ক্যাশ মেমো না দেয়ার বিষয়ে জুয়েলারি পণ্য বিক্রেতা রাশেদুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা ক্রেতাদের কাছে অল্প টাকার পণ্য বিক্রি করি। আমাদের কাছে থেকে কেউ ৫-১০ হাজার টাকার পণ্য কেনে না। বড়জোর ৪০০-৫০০ টাকার মাল কেনে। তাই ক্যাশ মেমো দেয়ার প্রয়োজন পড়ে না। ক্রেতারাও আমাদের কাছে ক্যাশ মেমো চান না। এ জন্য আমরাও ক্যাশ মেমোর ব্যবস্থা রাখিনি।’ তাহলে ভ্যাট কিভাবে পরিশোধ করেনÑ জানতে চাইলে এই ব্যবসায়ী বলেন, ‘আমাদের একটি নিদির্ষ্ট অঙ্কের ভ্যাট দিতে বলা হয়েছে। আমরা সেই ভ্যাট দিয়ে দেব। ভ্যাট দিতে ক্যাশ মেমোর দরকার নেই।’ এ বিষয়ে মেলার আয়োজক প্রতিষ্ঠান রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) উপসচিব ও মেলার সদস্যসচিব মোহাম্মদ আবদুর রফ বলেন, ‘পণ্য বিক্রির বিপরীতে ক্যাশ মেমো দেয়ার জন্য প্রত্যেকটি প্রতিষ্ঠানকে নিদের্শ দেয়া হয়েছে। যদি কোনো প্রতিষ্ঠান ক্যাশ মেমো না দেয়, বিষয়টি ভ্যাট কমর্কতার্রা দেখবেন। মেলার মাঠে দুই থেকে আড়াইশ ভ্যাটের লোক কাজ করছেন।’

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে