শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

গুরুত্ব হারাচ্ছে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন

নতুনধারা
  ২৩ জানুয়ারি ২০১৯, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক ‘ধূমপান মৃত্যু ঘটায়’-তিন শব্দের ছোট্ট এ বাক্যটি কমবেশি সবারই জানা। কিন্তু এরপরও আইন করে বন্ধ করা যায়নি তামাকের অবাধ ব্যবহার। ২০০৫ সালের মাচের্ বাংলাদেশে তামাক নিয়ন্ত্রণে আইন তৈরি হয়। ২০১৩ সালে সংশোধিত হয়েছে। বিধিমালা চূড়ান্ত হয়েছে ২০১৫ সালে। কিন্তু বিধি থাকলেও বাস্তবায়ন নেই! আইন তৈরি করার পরও কঠোরভাবে তা প্রয়োগের উদ্যোগ নেই। আর প্রয়োগের শিথিলতায় মাহাত্ম্য হারাচ্ছে ‘তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন’। প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ধূমপান থেকে শিশুসহ অধূমপায়ীদের রক্ষায় কঠোর বিধান থাকলেও এখানে আইন ভাঙা যেন নিয়মেই পরিণত হয়েছে। এতে মূল উদ্দেশ্য থেকে গেছে তিমিরেই। প্রয়োগের অপযার্প্ততায় আইনটাই ভুলতে বসেছেন ভঙ্গকারীরা। বিশেষ করে বিভাগীয় শহরগুলোতে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন লঙ্ঘনের উৎসব চলছে। অপকাÐ থেকে বাদ যাচ্ছে না রাজশাহীও। মহানগর এলাকায় সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, প্রায় সব গুরুত্বপূণর্ স্থানেই তামাক পণ্যের বিক্রয়কেন্দ্র রয়েছে। সেখানে গ্রাহকদের তামাক পণ্য সেবনে আকৃষ্ট করতে ব্রিটিশ আমেরিকান টোবাকো কোম্পানি, জাপান টোবাকো (পূবের্র ঢাকা টোব্যাকো কোম্পানি) এবং আবুল খায়ের টোবাকো কোম্পানি কতৃর্ক বিজ্ঞাপনসংবলিত শোকেস, ফেস্টুন, চায়ের কাপ, ছাতা ইত্যাদি দেয়া হয়েছে। এ ছাড়া টিভি, ফ্রিজ, ডিনার সেট, বাল্টি, মগ ইত্যাদি পুরস্কার ঘোষণা করে গত অক্টোবর থেকে প্রচারণা চালাচ্ছে আবুল খায়ের টোবাকো কোম্পানি। অথচ তামাকজাত দ্রব্যের বিজ্ঞাপন ও প্রচারণা নিষিদ্ধ এবং পৃষ্ঠপোষকতা নিয়ন্ত্রণ সম্পকির্ত বিধান ৭ এর ৫ এর ক, খ, গ উপ-ধারায় বলা হয়েছে কোনো ব্যক্তি প্রকাশিত কোনো বই, লিফলেট, হ্যান্ডবিল, পোস্টার, ছাপানো কাগজ, বিলবোডর্ বা সাইনবোডের্ বা অন্য কোনোভাবে তামাকজাত দ্রব্যের বিজ্ঞাপন প্রচার করতে পারবেন না। তামাকজাত দ্রব্য কিনতে প্রলুব্ধকরণের উদ্দেশে তার কোনো নমুনা, বিনামূল্যে বা স্বল্পমূল্যে, জনসাধারণকে দেয়া বা এর প্রস্তাব করতে পারবেন না। এ ছাড়া তামাকজাত দ্রব্যের বিজ্ঞাপন প্রচার বা তা ব্যবহার, উৎপাদন বাড়ানোর উদ্দেশে কোনো পুরস্কার, বৃত্তি প্রদান বা কোনো অনুষ্ঠানের ব্যয়ভার বহন করতে পারবেন না। আইনে সরকারি-বেসরকারি কাযার্লয়সহ ২৪ ধরনের স্থানকে পাবলিক প্লেস ঘোষণা দিয়ে সেসব জায়গায় ধূমপান সম্পূণর্ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। কিন্তু কাজীর গরু, কেতাবে থাকলেও গোয়ালে নেই। দায়িত্ব গ্রহণের পর গত বছরের ১৪ মাচর্ অনুষ্ঠিত এক সভায় রাজশাহী জেলা প্রশাসক তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের অধিকতর প্রয়োগে মাসে অন্তত একবার মোবাইল কোটর্ পরিচালনা করার ঘোষণা দিয়েছিলেন। শুধু তাই নয়, অন্য কোনো মোবাইল কোটর্ পরিচালনাকালেও যদি দেখা যায় সেখানে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন লঙ্ঘন হচ্ছে, তবে সেখানেও আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলেছিলেন। এরপর রাজশাহীতে কিছু মোবাইল কোটর্ও পরিচালিত হয়। কিন্তু তারপর বিভিন্ন ইস্যুতে বরাবরের মতো এ উদ্যোগটিও সময়ের স্তূপে চাপা পড়ে। তামাকবিরোধী কাযর্ক্রম পরিচালনাকারী বেসরকারি প্রতিষ্ঠান এসিডির এক গবেষণা প্রতিবেদনের তথ্যানুযায়ী, ওই ঘোষণার পর গত বছর রাজশাহী মোবাইল কোটের্র সংখ্যা দঁাড়িয়েছিল ১৬টি। তবে কেবল এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বর পযর্ন্ত মোবাইল কোটের্র হিসাব এটি। এর আগে এবং পরে রাজশাহী মহানগর বা উপজেলা পযাের্য় আর কোনো তামাকবিরোধী মোবাইল কোটর্ পরিচালনা করা হয়নি। এ ছাড়া বছরের মধ্যভাগের ওই সময়ে মোবাইল কোটর্ পরিচালিত হলেও জরিমানার পরিমাণ ছিল কম। ১৬টি মোবাইল কোটের্ মাত্র ৯ হাজার ৬৫০ টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছে। জরিমানার গড় হার ৫০ থেকে ১০০ টাকা। কেবল ৯ সেপ্টেম্বর রাজশাহীর চারঘাট উপজেলা এলাকায় পরিচালিত তামাকবিরোধী একটি মোবাইল কোটের্ ৬ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করা হয়। অথচ তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন অনুযায়ী ক্ষেত্র বিশেষে সবির্নম্ন ৫০ টাকা থেকে সবোর্চ্চ এক লাখ টাকা পযর্ন্ত জরিমানার বিধান রয়েছে। একাধিকবার আইন ভাঙলে জরিমানার হারও পযার্য়ক্রমে দ্বিগুণ হওয়ার কথা রয়েছে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে