মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

’৭১ এখনো তাড়া করছে জামায়াতে ইসলামীকে

ক্ষমা প্রাথর্না, দল বিলুপ্ত ও দলের নাম পরিবতর্নসহ নানা বিকল্প নিয়ে বিতকর্
যাযাদি ডেস্ক
  ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ০০:০০

মুক্তিযুদ্ধের সময় জামায়াতে ইসলামীর যে ভূমিকা ছিল, তা এখনো দলটির ভবিষ্যৎ নিধার্রণে বাধা হয়ে দঁাড়াচ্ছে। অস্তিত্ব রক্ষার সংকটে পড়া দলটি এখন অতীতের উত্তরাধিকার থেকে বেরিয়ে আসতে নাম পরিবতর্নসহ নানা বিকল্প বিবেচনা করছে। জামায়াতের নেতারা বলছেন, বতর্মান সংকটজনক পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসতে দলের নাম পাল্টানোসহ বিভিন্ন প্রস্তাব নিয়ে তাদের মধ্যে আলোচনা হচ্ছে। নাম পাল্টানো ছাড়াও অন্য যে বিকল্পের কথা বিবেচনায় আছে তা হলো ‘রাজনৈতিক কমর্কাÐ কমিয়ে দিয়ে সামাজিক সংগঠন হিসেবে বেশি করে সক্রিয় হওয়া।’ জামায়াতের কেন্দ্রীয় নেতা ডা: সৈয়দ আব্দুল্লাহ মো: তাহের জানান, নানা বিকল্পের মধ্যে দলটির নাম পরিবতর্ন করে একটি সামাজিক প্ল্যাটফমর্ তৈরির প্রস্তাব পেয়েছেন তারা। তিনি বলেন ‘আমাদের নাম পরিবতর্ন বা কিছু কমের্কৗশল পরিবতের্নর বিষয়ে এবং নতুন করে অন্য কোনো সামাজিক বা স্বেচ্ছামূলক প্রতিষ্ঠান করা যায় কিনা ইত্যাদি বিষয়ে আমাদের নানা সাকের্ল থেকেই পরামশর্ আসছে। পক্ষে-বিপক্ষে নানা যুক্তি আসছে।’ বিশ্লেষকরা বলছেন, ৩০ ডিসেম্বরের নিবার্চনের পর পরিস্থিতি মূল্যায়ন এবং ভবিষ্যৎ করণীয় ঠিক করতে গিয়ে সিদ্ধান্তহীনতা বা দ্বিধাদ্ব›েদ্ব ভুগছে জামায়াত। বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট থেকে বেরিয়ে আসা না আসার প্রশ্নে আলোচনাতেও দলটির অতীত প্রাধান্য পাচ্ছে। এই বিশ্লেষকরা বলছেন, যদিও মুক্তিযুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের দায়ে জামায়াতের শীষর্ নেতাদের বিচার এবং সাজা হয়েছে, কিন্তু তারপরও ১৯৭১ সাল এখনো তাড়া করছে জামায়াতে ইসলামীকে। দলটি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরোধিতা করলেও পরবতীর্কালে বাংলাদেশের বাস্তবতা মেনে নেয়ার কথা বলে থাকে। কিন্তু তারা মুক্তিযুদ্ধকালীন সেই ভূমিকার জন্য এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে ক্ষমা চায়নি। ১৯৭১-এর সেই ভূমিকার জন্য ক্ষমা চাওয়ার প্রশ্নে জামায়াতে বিভিন্ন সময় আলোচনা হলেও তারা কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি। দলটিতে নতুন করে এই ইস্যু আলোচনায় এলেও এখনো পক্ষে-বিপক্ষে বক্তব্য আসছে বলে জানিয়েছেন জামায়াতের সিলেট মহানগরীর আমির এহসানুল মাহবুব জুবায়ের। তিনি বলেন, ‘এ বিষয়টা এখন সেটেল হয়ে গেছে। এরপরও পরামশর্ আসছে, এ বিষয়ে জামায়াতের কোনো বক্তব্য দেয়া উচিত কিনা, এটা নিয়ে আলোচনা, পযাের্লাচনা, পক্ষে-বিপক্ষে অনেক কথাবাতার্ হচ্ছে।’ এমন প্রেক্ষাপটে জামায়াত সাংগঠনিকভাবে ক্যাডারভিত্তিক দল হিসেবে বাংলাদেশের রাজনীতিতে একটা অবস্থান তৈরি করেছে, কিন্তু ব্যাপক জনসমথর্ন তাদের মিলছে না। গত ১০ বছরে জামায়াতের এই সমস্যা এখন অস্তিত্বের সংকটে পরিণত হয়েছে। নিবার্চন কমিশনে জামায়াতের নিবন্ধন বাতিল হয়েছে। তারা দলীয় প্রতীক হারিয়েছে। অনেকটা গোপন দলের মতো তাদের কাজ করতে হচ্ছে। এই পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসতে সম্প্রতি জামায়াতের নিবার্হী কমর্পরিষদ এবং শূরার বৈঠক হয়েছে। এসব বৈঠকে জামায়াতের নাম পাল্টিয়ে নতুন নাম নিয়ে এবং নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার যুক্তি দিয়ে দলটির অনেকে প্রস্তাব এনেছেন। কিন্তু সব প্রস্তাবের ক্ষেত্রেই সিদ্ধান্ত নেবার ক্ষেত্রে বাধা হয়ে দঁাড়িয়েছে দলটির অতীত। এ প্রসঙ্গে ডা. আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেন, নাম পরিবতের্নর কথা দলের ভেতরে অনেকেই বলছেন। ‘কেউ ভাবছে, নাম পরিবতর্ন করলেই ভালো হবে নতুন প্রজন্মের জন্য। আবার কেউ দীঘির্দনের জামায়াতের যে ইতিবাচক ভূমিকা বা এই নাম নিয়ে জনগণের সাথে যে সম্পৃক্ততা বা গ্রহণযোগ্যতাÑএসব নিয়েই আবার কারও কারও মত হলো এটাই কল্যাণকর হবে। এ রকম এক ধরনের ক্রিটিক্যাল আলোচনা চলছে। যদিও দলটির নেতাদের অনেকে ভাবছেন, জামায়াতে ইসলামী নাম নিয়ে তাদের সব সময় বিতকর্ বা চাপের মধ্যে থাকতে হয়, ফলে তা পরিবতর্ন করা প্রয়োজন। কিন্তু যুদ্ধাপরাধের দায়ে জামায়াতের শীষর্ নেতা যাদের ফঁাসি হয়েছে বা বিচার হয়েছে, তাদের পরিবারগুলোর আবেগের বিষয়কেও বিবেচনায় নিয়ে অন্য অনেকে ‘দলের পুরোনো নাম বহাল রাখার পক্ষেই যুক্তি তুলে ধরছেন।’ বিএনপির সাথে জামায়াতের জোট নিয়েও নানা প্রশ্ন এদিকে বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট থেকে বেরিয়ে আসার বিষয় নিয়েও জামায়াত আলোচনা করেছে। গত ৩০ ডিসেম্বরের সংসদ নিবার্চনে জামায়াত, বিএনপির ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে নিবার্চনে অংশ নিয়েছিল। এরপরও দলটির অনেক নেতা মনে করেন, বিএনপি জামায়াতকে যথাযথ মূল্যায়ন করেনি। এ ব্যাপারে ডা: সৈয়দ আব্দুল্লাহ মো: তাহের বলেন, ওই জোট এখন প্রাসঙ্গিক নয় বলে তারা মনে করেন। তিনি বলেন, ‘জামায়াত যেটা এখন মনে করে যে, বিএনপি যেহেতু আরেকটা ফ্রন্টে এখন সক্রিয়, সেদিক থেকে ২০ দলীয় জোটকে আমরা এখন অনেকটাই অকাযর্কর দেখছি। এরকম একটা অকাযর্কর জোটে থাকা না থাকার ব্যাপারে আমরা খুব আগ্রহ দিতে চাই না।’ তবে নয়া দিগন্ত পত্রিকার নিবার্হী সম্পাদক সালাহউদ্দিন বাবর মনে করেন, জামায়াত একলা চলতে চাইছে এবং সেভাবেই এগোবে। একই সাথে তারা জোট ভাঙার দায় নিতে চায় না। তিনি বলেন, এখন বিএনপি মনে করে যে, তারা জামায়াতকে আশ্রয় দিচ্ছে। এ বিষয়টি জামায়াত গ্রহণ করে না। এ জন্য জামায়াত এখন চাচ্ছে, বিএনপি যদি জামায়াতকে ভার মনে করে, তাহলে তারা সেই ভার মুক্ত করে দিক। বিএনপির একটা অংশ জামায়াতকে অ্যালাজির্ মনে করে, সেই অনুভূতি জামায়াত অসম্মানজনক মনে করে। জামায়াত একলা চলতে চায়। এদিকে জামায়াতের সাথে সম্পকের্র কারণে বিএনপিকেও দেশের ভিতরে এবং আন্তজাির্তক সম্প্রদায়ের কাছে সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছে। এবার নিবার্চনে বিপযের্য়র পর বিএনপির নেতাকমীের্দর একটা বড় অংশ জামায়াতের সঙ্গ ছাড়ার পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। তবে বিএনপিও সিদ্ধান্তহীনতায় রয়েছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষক অধ্যাপক দিলারা চৌধুরী বলেন, জামায়াত জোট থেকে বেরিয়ে গেলে বিএনপির জন্য লাভ লোকসান দু’টিই আছে। তিনি বলেন, ‘বিএনপির একটা ভাবমূতির্ আছে যে তারা জামায়াতের সাথে জোট করেছেÑযারা স্বাধীনতার বিরুদ্ধে কাজ করেছে। সেই যে একটা খারাপ ইমেজ সেটা অনেকাংশে কমে যাবে। কিন্তু ভোটের হিসাব-নিকাশে বিএনপি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তবে জামায়াত নেতারা বলছেন, এখন তাদের ভবিষ্যৎ নিধার্রণে যেসব বিষয় আলোচনায় এসেছে, সেগুলোতে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে তাদের অনেক সময় প্রয়োজন হবে। বিবিসি বাংলা

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে