শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

বাংলাদেশের স্বাধীনতা

বাংলাদেশের স্বাধীনতার ক্ষেত্রে আমরা শুধু জাতির জনকই পাইনি, পেয়েছি জাতির জনকের পরিবারও। যে পরিবার দেশের স্বাধীনতার জন্য আমৃতু্য লড়াই করে গেছেন। যে পরিবারের জন্ম না হলে বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জন এত সহজে সম্ভব হতো না। বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও বঙ্গবন্ধু পরিবার দুটি একই সূত্রে গাঁথা। একটি বাদ দিয়ে অপরটি ভাবা যায় না।
সুধীর বরণ মাঝি
  ২১ মার্চ ২০১৯, ০০:০০

পৃথিবীতে কোনো মানুষ বিখ্যাত হয়ে জন্মগ্রহণ করেন না। সব বিখ্যাত ও জগদ্‌খ্যাত মহান ব্যক্তিরা আপন কর্ম মহিমা ও দক্ষতার দ্বারা আলোকিত করে পৃথিবীকে ও সমগ্র জাতিকে। ঘোর অন্ধকার রাতে একটুকরো আলো যেমন পথ চলতে সাহস জোগায়। বঙ্গবন্ধু পরিবার বাংলাদেশের স্বাধীনতায় তেমনি একটি নাম, একটি ভাস্কর্য এবং একটি ইতিহাস। বিকৃত ইতিহাস চিরস্থায়ী হয় না এবং বিকৃতকারীরা নিক্ষিপ্ত হয় ইতিহাসের আস্তাকুঁড়ে। আমাদের স্বাধীনতার সঙ্গে যে নামটি এবং যে পরিবার অঙ্গাঅঙ্গিভাবে জড়িত তা হলো বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং তার পরিবার। বঙ্গবন্ধু পরিবার ও বাংলাদেশের স্বাধীনতা একই মুদ্রার দুটি পিঠ। পৃথিবীর নানান দেশের ইতিহাস পড়েও জানা যায়নি কোনো দেশের স্বাধীনতার জন্য এত ত্যাগ তিতিক্ষার কথা। যা শুধু বাংলাদেশের স্বাধীনতার ক্ষেত্রেই দেখা যায়। বাংলাদেশের স্বাধীনতায় বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারের ধৈর্য, ত্যাগ ও সাহসের কথা। নিজের বুক দিয়ে দেশের স্বাধীনতা এবং দেশের আপামর জনসাধারণকে আগলে রাখার সাহস, দেশের স্বাধীনতায় বঙ্গবন্ধু পরিবার হিমালয় পাহাড় সমান সাহস ও ত্যাগ। তাই জাতি হিসেবে আমরা বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য চিরঋণী, চিরকৃতজ্ঞ বঙ্গবন্ধু পরিবারের কাছে। একটি স্বাধীন দেশের জন্ম দিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তার কাজে তাকে সাহস জুগিয়েছেন, পাশে থেকেছেন তার পরিবার। পৃথিবীর বুকে বাংলাদেশ নামে একটি স্বাধীন দেশ জেগে উঠেছে। বাঙালি জাতিকে তিনি একটি স্বাধীন রাষ্ট্রের নাগরিক করেছেন। যার চেতনায় সমগ্র বাঙালি উজ্জ্বীবিত হয়েছিলেন। স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের পেছনে রয়েছে গৌরবময় ইতিহাস। আমরা আজীবন লড়াই করেছি। আর যার পরিবার থেকে লড়াই করার প্রেরণা পেয়েছি এবং আজও পাচ্ছি। বঙ্গবন্ধুর পরিবার আমাদের লড়াই সংগ্রামের প্রেরণার উৎস। আমরা কখনো আপস করিনি। ভাষা আন্দোলন থেকে আমরা শুরু করেছি। আমরা সেই সময়েই জানিয়েছি, আমরা কীভাবে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র গড়তে চাই, কীভাবে একটি স্বাধীন রাষ্ট্রে থাকতে চাই। সেই যে শুরু একাত্তরে পেলাম সেই স্বপ্নের স্বাধীনতা, স্বপ্নের স্বাধীন রাষ্ট্র। জন্ম হলো স্বাধীন বাংলাদেশের। এ জন্মের নেতৃত্বে ছিলেন একমাত্র ব্যক্তি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং তার সঙ্গে ছিলেন তার পরিবার ও সমগ্র দেশপ্রেমিক বাঙালি। আমাদের যে কত ভাবেই আঘাত করা হয়েছে। কিন্তু বঙ্গবন্ধু পরিবার সক্রিয়ভাবে দায়িত্ব নিয়ে, আপস না করে আমাদের পাশে দাঁড়িয়েছেন, বাংলাদেশকে স্বাধীন করেছিলেন। আমাদের জন্য স্বাধীনতা এনে দিয়েছিলেন। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তার পরিবার খুব বেশি সময় পাননি। প্রায় চার বছরের মাথায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তার পরিবারকে হত্যা করা হয়। আমরা সৌভাগ্যবান যে তার পরিবারের দুইজন সদস্য শেখ হাসিনা ও শেখ রেহেনাকে জীবিত অবস্থায় পেয়েছি। আর শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আমরা বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারের খুনিদের বিচার করতে পেরেছি, শাস্তি দিতে পেরেছি। পৃথিবীর অনেক দেশের মধ্যে বাংলাদেশও একটি যে দেশের জন্মদাতাকে মেরে ফেলা হয়েছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলেন এদেশ জাতির দীর্ঘ ইতিহাসের স্র্রষ্টা। একটি রাষ্ট্রের জন্ম দিয়ে তিনি আমাদের ইতিহাসের উত্তরসুরি করে তুলেছেন। আজ আমরা যে সময় অতিবাহিত করছি এ সময় বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারের প্রয়োজন অপরিসীম। স্বাধীনতার পূর্ণাঙ্গতা পেতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের চিন্তা-প্রজ্ঞা ও আদর্শ আমাদের আলোর দিশা দেখাতে পারে। বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবার বাংলাদেশের স্বাধীনতার অহঙ্কার। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তার পরিবারের জীবন দর্শনের সামগ্রিক দৃষ্টি থেকে শিল্প-সাহিত্যের জায়গাটিকে গভীর সমগ্রতায় ধারণ করেছিলেন। বঙ্গবন্ধু ও পরিবার দুঃখী মানুষদের রাজনীতির পাটাতন প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন। বঙ্গবন্ধু পরিবার সারা জীবন জনগণের জন্য, দেশের জন্য দেশের জনগণকে নিয়ে সংগ্রাম করেছেন এবং বঙ্গবন্ধু পরিবার প্রজন্ম এখনো সংগ্রাম করছে দেশের স্বাধীনতা রক্ষার জন্য, দেশের অর্থনৈতিক মুক্তির জন্য। বঙ্গবন্ধু ১৯৭৪ সালের ফেব্রম্নয়ারি মাসে বাংলা একডেমি আয়োজিত আন্তর্জাতিক সাহিত্য সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের ভাষণে বলেছিলেন, "আপনারা মাটি ও মানুষের জীবনের প্রতিচ্ছবি দিয়ে সাহিত্য রচনা করুন। স্বাধীন জাতি হিসেবে বিশ্বদরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে হলে দেশের শিল্প-সাহিত্যকে দেশ-বিদেশে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে।" এভাবেই বঙ্গবন্ধু পরিবার জাতির স্বপ্নদ্রষ্টা। বাঙালি, বাংলাভাষা ও বাংলাদেশের জীবন দর্শনের স্বরূপকে আলোকিত করেছিলেন। তাকে আমরা ইতিহাসের পাতায় হাজার বছরের শ্রেষ্ট বাঙালি হিসেবে অমর করে রেখেছি। বঙ্গবন্ধু পরিবার অসাধারণ প্রজ্ঞার মানুষ এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতার উজ্জ্বল নক্ষত্র। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মাত্র ৫৫ বছরের জীবন তার; কিন্তু এত কম বয়সে কত বড় কাজ করে গেছেন তিনি। দীর্ঘ আন্দোলন সংগ্রামের মধ্য দিয়ে ঐক্যবদ্ধ বাঙালিকে স্বাধীনতার স্বর্ণদ্বারে পৌঁছে দিয়েছেন। পৃথিবীর বুকে প্রতিষ্ঠিত হলো বাঙালি প্রথম জাতিরাষ্ট্র- স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ। কৃতজ্ঞ জাতি সঙ্গতভাবেই তাকে স্বীকৃতি দেয় জাতির পিতা হিসেবে, বাংলাদেশের স্থপতি হিসেবে। আর বাংলার মানুষ ভালোবেসে তাকে অভিহিত করেন 'বঙ্গবন্ধু' হিসেবে। অসাম্প্রদায়িকতা ছিল বঙ্গবন্ধুর চরিত্রের এবং বঙ্গবন্ধুর পরিবারের বিশেষ গুণ। ১৯৪৬ সালে যখন কলকাতায় ভয়াবহ দাঙ্গা হলো, তখন বঙ্গবন্ধু দাঙ্গা পীড়িত এলাকায় গিয়ে কাজ করছেন। পাকিস্তান অন্দোলন করলেও তিনি কখনো সাম্প্রদায়িক রাজনীতি করেননি। হিন্দু-মুসলমান উভয় সম্প্রদায়ের মানুষকে নিরাপদে যেতে সহায়তা করেছেন। ১৯৫৩ সালে পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগের নাম থেকে মুসলিম শব্দটি বাদ দেয়া এবং ১৯৫৫ সালে আওয়ামী মুসলিম লীগের কাউন্সির অধিবেশনে দলের নাম থেকে মুসলিম শব্দটি প্রত্যাহারের মধ্য দিয়ে সেটা আবারও প্রমাণিত হয়েছে। আমরা অনেকেই অসাম্প্রদায়িক চেতনার কথা বলি; কিন্তু জীবনাচরণে তার উল্টোটা লক্ষ্য করি। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির জন্য তার নির্র্র্র্র্ভীক ভূমিকা ও পরিবারের সমর্থন উলেস্ন্যখযোগ্য। ১৯৬৪ সালে পাকিস্তানি শাসকেদের মদদে পূর্ব পাকিস্তানে বিশেষ করে ঢাকায় একটি সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা হয়। বঙ্গবন্ধু দাঙ্গায় আক্রান্ত সংখ্যালঘু কয়েকটি পরিবারকে নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য ধানমন্ডির ৩২ নাম্বারে নিজ বাড়িতে নিয়ে আসেন এবং নিরাপদ আশ্রয়ে রাখেন। বেগম মুজিব পরম যত্নে সবার খাবার-দাবারের ব্যবস্থা করেছেন। এই যে বিপদে এগিয়ে আসা। সাম্প্রদায়িক দাঙ্গাকারীদের সাহসের সঙ্গে মোকাবেলা করা, কে'জন নেতা এ কাজটি করেছেন। অসাম্প্রদায়িক চেতনা লালন করার কারণেই বঙ্গবন্ধু পরিবার এ কাজটি করেছেন। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি রেসকোর্স ময়দানের ভাষণে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন,"আমি স্পষ্ট ভাষায় বলে দিতে চাই, বাংলাদেশ একটি আদর্শ রাষ্ট্র হবে। আর তার ভিত্তি বিশেষ কোনো ধর্মভিত্তিক হবে না। রাষ্ট্রের ভিত্তি হবে গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র ও ধর্ম নিরপেক্ষতা।" তাই স্বাভাবিকভাবেই স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশের সংবিধানে জাতীয় মূলনীতি হিসেবে জাতীয়তাবাদ, গণতন্ত্র ও সমাজতন্ত্রের সঙ্গে ধর্মনিরপেক্ষতাকে যুক্ত করা হয়েছিল। ব্যক্তিগতভাবে বঙ্গবন্ধু এবং পারিবারিকভাবে বঙ্গবন্ধু পরিবার ধার্মিক ছিলেন কিন্তু সাম্প্রদায়িক ছিলেন না। তাই স্বাধীনতার যুদ্ধে তার পরিবারের অসামান্য অবদান দেখতে পাই। বঙ্গবন্ধুর লালিত স্বপ্ন বাস্তবায়নে বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিরলস পরিশ্রম করে তার মেধা ও যোগ্যতা দিয়ে বাংলাদেশকে আজ উন্নয়নের মহাসোপানে উন্নীত করেছেন। লক্ষ্য করা গেছে যে, ক্ষেত্রেই উন্নয়ন করা হচ্ছে বঙ্গবন্ধু তার দূরদৃষ্টি দিয়ে সবক্ষেত্রেই কাজের সূচনা করে গেছেন, স্বপ্নের বীজবপন করে গেছেন। ভেবে বিস্মিত হতে হয়, সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশকে গড়ে তোলার সময়েই কল্পনা করেছিলেন, একদিন বাংলাদেশ একটি আদর্শ রাষ্ট্র হবে। তাই কল্যাণকর সব ক্ষেত্রেই শুভ সূচনা করেছিলেন। কিন্তু নিষ্ঠুর ঘাতকরা তাকে সুযোগ দিল না। তার স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ে তোলার। এভাবে যে কিছু বিপদগামী বাঙালির হাতে যে সপরিবারে জীবন দিতে হবে- এটা তিনি যেমন কোন দিন কল্পনা করেননি, আমরাও তা ভাবতে পারিনি। কারাগারের বন্দি জীবনের একাকিত্বের মাঝে একের পর এক গণমানুষের মুক্তির ছবি আঁকেন মনে মনে। তার অন্তর দৃষ্টি ছুটে বেড়ায় বাংলার এ প্রান্ত থেকে সে প্রান্তে। নিজের মাতৃভূমি এবং সঙ্গে বিশ্ব রাজনীতির গতি প্রকৃতিও প্রবলভাবে নাড়া দেয় তার অন্তরকে। স্বপ্নের জাল বুনেন ভবিষ্যতের। মানুষের কষ্ট, হাহাকারে বেদনায় আক্রান্ত হন। মুহূর্তেই কষ্টের গভীরতায় মুক্তির পথ খুঁজেন। বঙ্গবন্ধু পরিবার ও বাংলাদেশের স্বাধীনতা এক অবিচ্ছেদ্য নাম। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সিঁড়ি বেয়ে বাংলাদেশ আজ উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা অর্জন করেছে। স্বাধীনতা লাভের মাত্র সাড়ে তিন বছরের মধ্যে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে বাংলাদেশ চরম দারিদ্র্যের দেশ থেকে স্বল্পোন্নত দেশে পা বাড়াতে সক্ষম হয়। কিন্তু ১৫ আগস্টের মর্মান্তিক হত্যকান্ড বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলার বাস্তব রূপায়নকে স্তব্দ করে দেয়। সত্যের জয়কে প্রলম্বিত করা যায় কিন্তু আটকে রাখা যায় না। আজ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার দৃঢ় প্রত্যয় নিয়ে এগিয়ে চলছে উন্নত ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে। বাংলাদেশ আজ বিভিন্ন উন্নয়ন সূচকে এক বিস্ময়ের নাম। খাদ্যে আত্মনির্ভশীল, মাথাপিছু আয়বৃদ্ধি, বৈদেশিক মুদ্রার রেকর্ড সঞ্চয়, বিদু্যৎ উৎপাদন বৃদ্ধি, দারিদ্র্যসীমা হ্রাসকরণ, জীবনযাত্রার মানোন্নয়ন, নারীর ক্ষমতায়নে বাংলাদেশ বিশ্বে নতুন মর্যদায় অভিষিক্ত। বাংলাদেশের প্রতিটি গণআন্দোলন সংগ্রামে বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবার একটি অনুপ্রেরণার নাম। বঙ্গবন্ধু কোনো দিন অন্যায়ের কাছে মাথানত করেননি আর এই শিক্ষা তিনি পেয়েছেন পরিবারের কাছ থেকে। পাকিস্তানি হনাদার বাহিনীর শাসন- শোষণ, বৈষম্য আর অত্যাচার থেকে চিরমুক্তি চেয়েছিল। আর ঠিক তখনই গর্জে উঠে, এবারের সংগ্রাম, মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম। বাংলাদেশের প্রতিটি আন্দোলন সংগ্রামে বঙ্গবন্ধু একটি অনুপ্রেরণার নাম। তিনি কখনো বাংলাদেশকে পূর্ব পাকিস্তান বলেনি। স্বাধীনতার পূর্ব পর্যন্ত তিনি বাংলাদেশকে পূর্ব বাংলা বলতেন। উগ্র সাম্প্রদায়িক দর্শনভিত্তিক পাকিস্তান রাষ্ট্রের বিপরীতে মহান মুক্তিযুদ্ধ উদার অসাম্প্রদায়িক মানবিক মূল্যবোধ চেতনার বাংলাদেশ রাষ্ট্রের জন্ম দেন। তিনি শোষণহীন সমাজ ও রাষ্ট্র গড়ার স্বপ্ন দেখতেন। সমাজ ও রাষ্ট্রের কোনো সংকট দেখা দিলে তখন আমরা জাতির জনককে স্মরণ করি এবং তার জীবন দর্শনের, আন্দোলন-সংগ্রামের ইতিহাসকে উদাহরণ হিসেবে উলেস্নখ করি। বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক নেতৃত্বের ও আন্দোলন সংগ্রাম জীবনের আরেকটি বৈশিষ্ট্য হলো অন্যের প্রতি, মানুষের প্রতি শ্রদ্ধাশীল দৃষ্টিভঙ্গি। বঙ্গবন্ধু পরিবারের গভীর দেশপ্রেম, মানুষের প্রতি দায়বদ্ধতা আমাদের স্বাধীনতাকে তরান্বিত করেছিল। আমাদের স্বাধীনতার মূলশক্তি মূলত বঙ্গবন্ধু পরিবার, স্বাধীনতার নেতৃত্বেও ছিল তার পরিবার। বঙ্গবন্ধু পরিবারের সবাই দেশের স্বাধীনতার জন্য মুখিয়ে ছিল। তাদের দূরদৃষ্টি চিন্তাচেতনা, কার্যকর সিদান্ত, জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করতে, স্বাধীনতার পক্ষে গণজাগরণ সৃষ্টি করতে বঙ্গবন্ধু পরিবার অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন। তাদের অক্লান্ত পরিশ্রমের ফসলই হলো আমাদের কাঙ্ক্ষিত স্বাধীনতা। বঙ্গবন্ধুর পরিবার আমাদের স্বাধীনতার স্বপ্নদ্রষ্টা। লড়াই সংগ্রামের মূলমন্ত্র হলো আপসহীন নেতৃত্ব। বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনে আমরা এই আপসহীন নেতৃত্ব দেখতে পাই বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারের মধ্যে। এই নেতৃত্বের পথ ধরেই আমরা অর্জন করি আমাদের স্বাধীনতা। যুদ্ধের সময় যখন বঙ্গবন্ধুকে পাকিস্তানের জেলখানায় আটক করা হয় এবং তার জন্য কবরখুঁড়া হয় তখন বঙ্গবন্ধু বলেন, 'আমার মৃতু্য হলেও আপত্তি নেই, তবুও আমি আমার দেশের স্বাধীনতা চাই, জনগণের মুক্তি চাই। তিনি আরো বলেন, আমার মৃতু্য হলে আমার লাশটা দেশে পাঠিয়ে দিও।' দেশে এবং দেশের মানুষের প্রতি প্রবল ভালোবাসা থাকলেই কেবল এই আত্মপ্রত্যয়ী বক্তব্য দেয়া সম্ভব। আমাদের স্বাধীনতার প্রতিটি পদক্ষেপে বঙ্গবন্ধু পরিবারের নিখুঁত ভূমিকা দেখতে পাই। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের স্বাধীনতার ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখতে পাই প্রত্যেক দেশেই একজন স্বাধীনতার জনক থাকে কিন্তু বাংলাদেশের ক্ষেত্রে এর ব্যতিক্রম। বাংলাদেশের স্বাধীনতার ক্ষেত্রে আমরা শুধু জাতির জনকই পাইনি, পেয়েছি জাতির জনকের পরিবারও। যে পরিবার দেশের স্বাধীনতার জন্য আমৃতু্য লড়াই করে গেছেন। যে পরিবারের জন্ম না হলে বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জন এত সহজে সম্ভব হতো না। বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও বঙ্গবন্ধু পরিবার দুটি একই সূত্রে গাঁথা। একটি বাদ দিয়ে অপরটি ভাবা যায় না। সুধীর বরণ মাঝি: শিক্ষক ও কলাম লেখক

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে