শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১
সড়কে শৃঙ্খলা নিশ্চিত করুন

ছাত্রবিক্ষোভে উত্তাল ঢাকা

নতুনধারা
  ২১ মার্চ ২০১৯, ০০:০০

রাজধানীতে আবারও চালকের বেপরোয়া গতিতে বাস চালনার কারণে জেব্রা ক্রসিংয়েই এক শিক্ষার্থীর মর্মান্তিক মৃতু্য ঘটেছে। 'সুপ্রভাত' পরিবহনের বাসের চাকায় পিষ্ট নিহত ওই শিক্ষার্থীর নাম আরবার আহমেদ চৌধুরী। তিনি বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালসের (বিইউপি) ২০১৮-১৯ বর্ষের শিক্ষার্থী। অপরদিকে শিক্ষার্থী নিহতের এ ঘটনায় ছাত্রবিক্ষোভে ফের উত্তাল হয়ে উঠেছে রাজধানী ঢাকা। মঙ্গলবার সকাল থেকেই ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে। এ সময় বাসে অগ্নিসংযোগ এবং বেশ কয়েকটি যানবাহন ভাংচুরের ঘটনা ঘটে। এতে রাজধানীজুড়ে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। শিক্ষার্থী বিক্ষোভের এ ঘটনা বুধবারও দেখা গেছে। আট দফা দাবি আদায়ে বুধবার রাজধানীসহ সারাদেশের শিক্ষার্থীরা ক্লাস বর্জন করে সড়কে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে। গত বছরের ২৯ জুলাই রাজধানীর বিমানবন্দর সড়কে বেপরোয়া গতির বাসের চাপায় শহীদ রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের দুই শিক্ষার্থীর মর্মান্তিক মৃতু্যর পর দেশব্যাপী কঠোর আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে সরকারের আইন সংস্কারসহ বেশকিছু পদক্ষেপে সড়কে আগের তুলনায় কিছুটা শৃঙ্খলা ফিরে এসেছে মনে করা হলেও সড়ক যে এখনো কতটা অনিরাপদ- এ ঘটনা তারই দৃষ্টান্ত। গণমাধ্যমের খবরে জানা যায়, সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে ঢাকা মহানগর পুলিশের ট্রাফিক সপ্তাহ চলছে। পুলিশের এই কর্মসূচি চলাকালে দুই বাসের চালক কীভাবে সড়কে রেষারেষি করতে পারে তাও নানান প্রশ্নের জন্ম দেয়। আবার এটাও জানা যায় যে, মঙ্গলবারের মৃতু্যর ঘটনার দায় শিক্ষার্থীদের ওপর চাপাতে একটি মহল মরিয়া। ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীদের সড়ক অবরোধ ও বিক্ষোভ চলাকালে অজ্ঞাত দুই ব্যক্তি একটি বাসে অগ্নিসংযোগ করে পালাতে চেষ্টা করে। শিক্ষার্থীরা এদের একজনকে ধরে পুলিশে সোপর্দ করে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, শাস্তির অভাবে সড়ক দুর্ঘটনা কমছে না। পাশাপাশি এক গণমাধ্যমে প্রকাশিত এক পরিসংখ্যানে জানা যায়, দেশের সড়কগুলোতে পালস্না দিয়ে বাড়ছে সড়ক দুর্ঘটনা। আর ২০১৮ সালে সারাদেশে সড়ক দুর্ঘটনায় সাড়ে সাত হাজার মানুষের মৃতু্য ঘটেছে। আর এসব দুর্ঘটনায় প্রায় ১৬ হাজার মানুষ আহত হয়েছেন। সড়ক দুর্ঘটনার এই চিত্র কতটা উদ্বেগের, তা বলাইবাহুল্য। দুঃখজনক হলেও সত্য যে, একটি স্বাধীন দেশে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বা জীবন বাজি রেখে যাতায়াত করতে হচ্ছে জনগণকে। এর চেয়ে পরিতাপের আর কি হতে পারে। সড়ক দুর্ঘটনায় অকালে ঝরছে প্রাণ। প্রিয়জন হারানোর কান্নায় বাতাস ভারি হচ্ছে প্রতিদিন। রাষ্ট্রেরও প্রচুর ক্ষতি হচ্ছে। সংশ্লিষ্টদের কাছে আমাদের প্রশ্ন, এর কি কোনো প্রতিকার নেই? সড়ক দুর্ঘটনাগুলো বিশ্লেষণ করে নানান কারণ সামনে এসেছে। চালকদের অসচেতনতা, ট্রাফিক আইন না মানা, গাড়ি চালানোর সময় মোবাইল ফোন ব্যবহার করা, অসহিষ্ণু প্রতিযোগিতা ও ওভারটেকিং, বাস মালিক-শ্রমিকের অধিক ব্যবসায়ী মনোভাব, সরু-ভাঙা রাস্তা, ফিটনেসবিহীন গাড়ি, অদক্ষ-লাইসেন্সবিহীন ড্রাইভার, রাস্তায় ডিভাইডার না থাকা ইত্যাদি। অনেক বাস মালিক ড্রাইভারকে পর্যাপ্ত বিশ্রামের সুযোগ না দিয়ে ঘনঘন দূরপালস্নার গাড়ি চালিয়ে থাকেন। এটা অমানবিক। এটাও সড়ক দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ। জানা গেছে, গত বছর দেশব্যাপী বৃহত্তর গণআন্দোলনের পর বাস কোম্পানিগুলো দৈনিক মজুরি ভিত্তিতে নিয়োগ না দেয়ার নিয়ম চালু করলেও এই সুপ্রভাত বাস কোম্পানি তা করেনি। যে কারণে বেশি যাত্রী ও বেশি ট্রিপ দেয়ার জন্য এই কোম্পানির বাসগুলো প্রতিযোগিতায় নামে। 'নিষিদ্ধ' চুক্তিতেই চলছে এই পরিবহন। আমরা মনে করি, এসব বিষয়েও সংশ্লিষ্টদের খতিয়ে দেখে কার্যকর উদ্যোগ নেয়া আবশ্যক। সর্বোপরি বলতে চাই, সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ে কম কথা বলা হয়নি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনারও সুস্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে। ফলে যে কোনো মূল্যে সড়ক নিরাপদ করতে হবে সংশ্লিষ্টদেরই। গাড়িচালকদের বেপরোয়াভাবে গাড়ি চালনা বন্ধ করতে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। রাস্তা থেকে ত্রম্নটিপূর্ণ যানবাহন অপসারণ করতে হবে। চালকদের সুনির্দিষ্ট পরীক্ষার মাধ্যমে ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রদান করতে হবে। মনে রাখা দরকার, সড়কে লাশের মিছিল কেউ দেখতে চায় না। এর জন্য সর্বাগ্রে সচেতনতা জরুরি আর ক্ষেত্র বিশেষে সংশ্লিষ্টদের বিবেক জাগ্রত হওয়া দরকার। সরকার-জনগণ-পরিবহন কর্তৃপক্ষের ত্রিপক্ষীয় উদ্যোগ সড়ক দুর্ঘটনা কমাতে কার্যকর ভূমিকা রাখবে। নিরাপদ সড়ক গড়ে তুলতে সংশ্লিষ্টরা কঠোর উদ্যোগ নেবে বলেই আমাদের প্রত্যাশা।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে