শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

মেয়র কত ফুটওভার ব্রিজ করবেন?

আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের প্রশ্ন
যাযাদি রিপোর্ট
  ২১ মার্চ ২০১৯, ০০:০০
বাসচাপায় শিক্ষার্থী আবরার আহমেদের নিহত হওয়ার প্রতিবাদে বুধবারও সড়কে অবস্থানরত বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীদের অবরোধ তুলে নেয়ার অনুরোধ করেন ঢাকা উত্তর সিটি মেয়র আতিকুল ইসলাম -যাযাদি

পদচারী-সেতু নয়, নিরাপদ সড়ক চান বলে জানিয়েছেন বিক্ষোভরত শিক্ষার্থীরা। বাসচাপায় আববার নিহত হওয়ার ঘটনায় উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম পদচারী-সেতু তৈরির কথা জানানোর প্রতিক্রিয়ায় শিক্ষার্থীরা বলেছেন, 'মেয়র কত ফুটওভার ব্রিজ করবেন?' মঙ্গলবার সকালে রাজধানীর বসুন্ধরায় যমুনা ফিউচার পার্কের সামনে নর্দা এলাকায় সুপ্রভাত পরিবহনের একটি বাসের চাপায় নিহত হন বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালসের (বিইউপি) ছাত্র আবরার আহমেদ চৌধুরী। এ ঘটনার পর রাস্তায় নামেন শিক্ষার্থী ও এলাকাবাসী। তারা সেখানে সড়ক অবরোধ করে রাখেন। তারা ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও দায়ী ব্যক্তিদের বিচার দাবি করেন। বুধবারও সকাল ১০টা থেকে রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার প্রবেশমুখে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করেন বিইউপিসহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কয়েকশ শিক্ষার্থী। বেলা ১১টার দিকে সেখানে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলতে যান মেয়র আতিকুল ইসলাম। সেখানে শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, নিহত ছাত্র আবরারের নামে সেখানে একটি পদচারী-সেতু নির্মাণ করা হবে। পরে ঢাকার পুলিশ কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া এবং বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালসের (বিইউপি) উপাচার্য মেজর জেনারেল মো. ইমদাদ-উল-বারিকে সঙ্গে নিয়ে সেখানে একটি ফুটব্রিজের ভিত্তিফলকও উন্মোচন করেন তিনি। সড়ক দুর্ঘটনায় আবরারের মৃতু্যকে অনাকাঙ্ক্ষিত একটি ঘটনা হিসেবে বর্ণনা করে মেয়র আতিকুল বলেন, 'এই ঘটনা আমিও মেনে নিতে পারি নাই। এটা মেনে নেয়ার ঘটনাও না।' তিনি বলেন, আবরারের নামে এই ফুটব্রিজ নির্মাণের কাজ দুই মাসের মধ্যে শেষ করা হবে। আবরারের বাবাকে অনুরোধ করা হয়েছে, তিনি যেন দুই মাস পর এই সেতু উদ্বোধন করেন। শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে সে সময় মেয়রের কাছে কিছু দাবিও তুলে ধরা হয়। এর মধ্যে রয়েছে- আবরারকে চাপা দেয়া বাসের চালককে ১০ দিনের মধ্যে ফাঁসি দিতে হবে, সুপ্রভাত বাসের রুট পারমিট বাতিল করতে হবে, সিটিং সার্ভিস বন্ধ করতে হবে, চালকদের ছবি ও লাইসেন্স গাড়িতে ঝোলানোর ব্যবস্থা করতে হবে, বসুন্ধরা গেটে ফুটব্রিজ নির্মাণ করতে হবে, প্রতিটি জেব্রা ক্রসিংয়ে সিসি ক্যামেরা বসাতে হবে এবং ট্রাফিক পুলিশের দুর্নীতি বন্ধ করতে হবে। শিক্ষার্থীদের দাবির বিষয়ে মেয়র বলেন, 'দাবি যেগুলো করা সম্ভব সেগুলো করা হবে। বাকিগুলো ধীরে ধীরে করা হবে।' মেয়রের আগে ঢাকার পুলিশ কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া বলেন, 'কোমলমতি শিক্ষার্থীদের এই দাবি যৌক্তিক। আমরা জান বাজি রেখে সড়কে শৃঙ্খলা আনতে প্রাণান্তকর প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।' সড়কের শৃঙ্খলা নিশ্চিত করতে একন 'অনেক অগ্রগতি' হলেও নানা কারণে পুরোপুরি সাফল্য আসেনি বলে মন্তব্য করেন তিনি। ডিএমপি কমিশনার বলেন, 'এখন আমরা কঠোর আইনে যাচ্ছি। পালস্না দিলে, একটা বাসের আগে আরেকটা বাস রেখে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করলে; শক্ত ব্যবস্থা নিতে আমরা বদ্ধপরিকর।' এই বিক্ষোভের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে বুধবার বেলা ১১টার দিকে সায়েন্স ল্যাব মোড়ে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করেন সিটি কলেজ, ধানমন্ডি গভর্নমেন্ট বয়েজ স্কুল, গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজ, ড্যাফোডিল বিশ্ববিদ্যালয়, সরকারি বিজ্ঞান কলেজসহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা। বিক্ষোভরত শিক্ষার্থীরা বলেন, পদচারী-সেতু নয়, নিরাপদ সড়ক চান তারা। 'নিরাপদ সড়ক চাই', 'উই ওয়ান্ট জাস্টিস'সহ নানান স্স্নোগান দিচ্ছেন তারা। দিদারুল ইসলাম নামের এক শিক্ষার্থী বলেন, 'মেয়র কত ফুটওভার ব্রিজ করবেন? আমরা তো ব্রিজ চাইনি, নিরাপদ সড়ক চেয়েছি। আগের আন্দোলনে প্রশাসনের টনক নড়েনি। আমাদের আবারও রাস্তায় নামতে হলো।' এর আগে গত বছরের ২৯ জুলাই রাজধানীর বিমানবন্দর সড়কে বাসচাপায় দুই শিক্ষার্থীর মৃতু্যর প্রতিবাদে নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলনে নামেন শিক্ষার্থীরা। সারা দেশেই তা ছড়িয়ে পড়ে। ২৯ জুলাই থেকে ৮ আগস্ট পর্যন্ত চলে ওই আন্দোলন। সেই আন্দোলনে অংশ নিয়েছিলেন নিহত আববারও। নিরাপদ সড়কের দাবিতে পস্ন্যাকার্ড নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা ছবি নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে পোস্ট করেছিলেন তিনি।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে