বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১
১২ মানববন্ধনের কর্মসূচি

এখন ভালোবাসা মমত্ব তিরোহিত: ফখরুল

খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে ঢাকায় ১২ দিন মানববন্ধনের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বিএনপি। দলের বিভিন্ন অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন এসব মানববন্ধন করবে
যাযাদি রিপোর্ট
  ১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ০০:০০
রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বৃহস্পতিবার দলের অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের সঙ্গে যৌথ সভায় বক্তৃতা করেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর -যাযাদি

বিএনপি নেতাদের বিরুদ্ধে মামলার পরিসংখ্যান তুলে ধরে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, গ্রামের 'দুষ্ট মোড়লদের' মতো মামলা দিয়ে বিরোধী রাজনীতিকদের ঘায়েল করা হচ্ছে। ক্ষমতাসীনদের এই কৌশলের কারণে এখন দেশ থেকে ভালোবাসা, মানুষের প্রতি মানুষের মমত্ব তিরোহিত হচ্ছে বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি। বৃহস্পতিবার নয়াপল্টনে দলীয় এক বৈঠক শেষে সংবাদ সম্মেলনে ফখরুল আগের দিন সংসদে দেয়া প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য নাকচ করে সরকারের বিরুদ্ধে বিরোধীদের বিলীন করে দেয়ার পরিকল্পনা হাতে নেয়ার অভিযোগ করেন। তিনি বলেন, 'প্রধানমন্ত্রী সংসদে বলেছেন, আওয়ামী লীগ প্রতিহিংসার রাজনীতি করে না, করলে বিএনপির অস্তিত্ব থাকত না। এই কথাটা বলতে উনি (প্রধানমন্ত্রী) কী এটাই বুঝাতে চেয়েছেন যে, আসলে তারা অস্তিত্ব না রক্ষা করার জন্যই কাজ করে যাচ্ছেন। শুধু বিএনপি নয়, বাংলাদেশে যাতে বিরোধী দল না থাকে, ভিন্নমত না থাকে, বিলীন হয়ে যায় তারই জন্য অত্যন্ত সুপরিকল্পিতভাবে কাজ করছেন।' এ প্রসঙ্গে ইতিহাসের স্মরণ নেন সত্তরোর্ধ্ব ফখরুল- 'যারা আমরা বয়স্ক মানুষ এদেশের ইতিহাস প্রথম থেকে দেখে এসেছি যে, ১৯৭৫ সালে একদলীয় শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল। একইভাবে আজকে ভিন্ন কায়দায় একদলীয় শাসন ব্যবস্থা প্রবর্তন করা হচ্ছে, প্রতিষ্ঠা করা হয়ে যাচ্ছে।' খালেদা জিয়ার জামিন না হওয়ার জন্য সরকারকে দায়ী করে বিএনপি মহাসচিব অন্যান্য বিভাগের মতো বিচার বিভাগের ওপরও সরকারি হস্তক্ষেপের অভিযোগ করেন। তিনি বলেন, 'এখানে রাষ্ট্রের সমস্ত প্রতিষ্ঠানগুলোকে তারা দলীয়করণ করেছে, করে ফেলা হয়েছে। এই যে আদালতের কথা বলা হচ্ছে- নিম্ন আদালতে কোনো সিদ্ধান্ত হয় না আইন মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত ছাড়া। এখন উপরের দিকে আমাদের আস্থা ছিল এভাবে যদি আমরা একটা একটা ঘটনা দেখি জনগণের আস্থা সেখান থেকে আস্তে আস্তে কমে আসছে, আসা শুরু করেছে।' বিএনপি নেতাদের বিরুদ্ধে মামলার পরিসংখ্যান তুলে ধরে মির্জা ফখরুল বলেন, 'দুই মাস আগের একটা পরিসংখ্যান দিচ্ছি- ২৬ লাখ আসামি করা হয়েছে, এক লাখের ওপরে মামলা, ৫০০ এর ওপরে নেতাকর্মী গুম, তার মধ্যে এমপি, কমিশনার থেকে শুরু করে সবাই আছে এবং কয়েক হাজার মানুষকে হত্যা করা হয়েছে।' 'আজকে বিএনপির স্থায়ী কমিটি থেকে শুরু করে একজনও নেই যাদের বিরুদ্ধে ৪০-৫০-১০০টা মামলা নেই। আমরা ঠিক বুঝি না- এটাকে কীভাবে আপনি গণতান্ত্রিক স্টেট বলবেন? কোনো সুযোগ নেই কথা বলার। পৃথিবীর ইতিহাসে কি এমন কোনো গণতান্ত্রিক দেশ আছে যেখানে বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে ৫০-৬০-১০০টা মামলা এবং দলের চেয়ারপারসন তার বিরুদ্ধে ৩৬টা মিথ্যা মামলা। 'গ্রামের দুষ্ট মোড়ল থাকে কিছু, যারা কোনো দিনও জনগণের ভোটে চেয়ারম্যান-টেয়ারম্যান নির্বাচিত হতে পারে না, তাদের একটাই কাজ হচ্ছে প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করে মিথ্যা মামলা দিয়ে, এত সুন্দর করে সাজিয়ে টাজিয়ে দেয় যেটাকে উল্টানো খুব কঠিন হয়ে পড়ে। আজকে এখান থেকে শান্তি তিরোহিত হচ্ছে, ভালোবাসা তিরোহিত হচ্ছে, মানুষের প্রতি যে মমত্ববোধ সেটা তিরোহিত হচ্ছে।' রাজনৈতিক বিভাজনের তীব্রতা সামাজিক সম্পর্কেও প্রভাব ফেলছে বলে মনে করেন মির্জা ফখরুল। তিনি বলেন, 'আমরা ছাত্রজীবনে আমি এক রাজনীতি করেছি আর আমার বাবা আরেক রাজনীতি করেছেন। কখনো সমস্যা হয়নি, না আমার বাবার হয়েছে, না আমার হয়েছে। এখন তো আপনার ছেলে তো বিপদে পড়ে যাবে তার বাবা যদি আওয়ামী লীগ করে থাকেন, আর যদি ছেলে বিএনপি অথবা ছাত্রদল করে থাকে তাহলে বাবার বিপদ হবে।' 'আজকে গোটা বাংলাদেশ ও সমাজকে বিভক্ত করে ফেলা হয়েছে। ডিভাইডেড সোসাইটি। দেখবেন যে, এমন একটা অবস্থা হয়েছে যে, এখন কেউ কারও বাসায় যেতে চায় না একজন আরেক ভিন্ন দল করলে। ছেলেমেয়েদের বিয়ে তো দূরের কথা। দাওয়াত-টাওয়াত দিলে যেতে চায় না এবং গেলে ভাবে যে, কী যেন আবার দেখে ফেলবে তার আবার চাকরি-টাকরি চলে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।' 'একই ভীতি সরকারি কর্মচারী ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে সব জায়গায়। এভাবে একটা রাষ্ট্রকে ভীতি ও ত্রাসের মধ্যে নিয়ে যাওয়া-এটা হচ্ছে ফ্যাসিস্টদের কাজ, এই ফ্যাসিবাদ তারা চালু করেছে।' ওই সব গাড়ির মালিক কারা? সড়ক দুর্ঘটনার লাগাম টানতে না পারার জন্য সড়ক পরিবহনমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের সমালোচনা করেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, 'আমাদের সেতু ও সড়ক মন্ত্রী মহোদয় খুব সুন্দর সুন্দর কথা বলেন। তিনি বলেন, এখন সড়ক খুব নিয়ন্ত্রণে আছে। প্রতিদিন আপনার ১০-এর নিচে বোধ হয় নেই যে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ যাচ্ছে। কারণটা কি কেউ খেয়াল করে দেখেছেন? বেশিরভাগ বলা হয়-চালকদের সমস্যা। কেন?' 'আমি যেটা জানি, দূরপালস্নার যে কোচগুলো যায় নিয়ম হচ্ছে একটা গাড়িতে দুইজন ড্রাইভার থাকবে। ১০ ঘণ্টার পথ হলে একজন ৫ ঘণ্টা, আরেকজন ৫ ঘণ্টা চালাবে। এখন ঢাকা-ঠাকুরগাঁও রোডে যদি যায় এক ড্রাইভারই যাচ্ছে এবং সে আবার ওই রাতে ফেরত আসে। অর্থাৎ নির্ঘুম। এটা নিয়ে এখন পর্যন্ত সরকারের তরফ থেকে কোনো কিছু করা হয়নি। সরকারের তরফ থেকে এই সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ন্ত্রণে আনার কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।' 'কয়েক দিন আগে একটি পরিবারের তিনজন দুর্ঘটনায় মারা গেছেন। প্রথম দিন একজন, পরের দিন দুইজন। মা-মেয়ে একসঙ্গে দুর্ঘটনায় মারা যাচ্ছে। ফুটপাতের ওপর দাঁড়িয়ে আছে ওখানে গিয়ে মেরে দিচ্ছে। খোঁজ নিয়ে দেখেন এই গাড়ির মালিকানা সমস্ত সরকারদলীয় লোকজনদের অথবা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর লোকজনের।' ফখরুল বলেন, 'এই একটা অবস্থা চলছে-কোথাও কোনো আইন নেই, কোথাও কোনো বিচার নেই, কোথাও কোনো গভার্নেন্স নেই। সব কলাপস হয়ে গেছে। সেই কারণে তারা (সরকার) আজকে যতই চিৎকার করুক, উন্নয়ন, উন্নয়ন উন্নয়ন। এই উন্নয়ন একটা জোকস। এটা একটা গল্প। রূপকথার গল্প তৈরি করে করে ছাড়ে তারা। ভেতরে সত্যিকার অর্থে তারা জানেন, এটা কখনোই এভাবে হতে পারে না।' বুধবার মহিলা দলের নেত্রী রাজিয়া আলীমকে গ্রেপ্তারের নিন্দা জানান বিএনপি মহাসচিব। সংবাদ ব্রিফিংয়ে দলের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন, কেন্দ্রীয় নেতা তাইফুল ইসলাম টিপু, মুনির হোসেন, অঙ্গ সংগঠনের সালাউদ্দিন টুকু, হারুনুর রশীদ, আবদুস সালাম, রিয়াজুল ইসলাম রিজু, হাছিন আহমেদ, সুলতান সাদেক আহমেদ খান, আবদুল হালিম, সুলতানা আহমেদ, রফিকুল ইসলাম মাহতাব, শাহ নেছারুল হক, নজরুল ইসলাম মজুমদার, মোস্তাফিজুল করীম মজুমদার, আবুল কালাম আজাদ, মজিবুর রহমান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। খালেদার মুক্তির দাবিতে ১২ মানববন্ধনের কর্মসূচি খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে ঢাকায় ১২ দিন মানববন্ধনের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বিএনপি। দলের বিভিন্ন অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন এসব মানববন্ধন করবে। নয়াপল্টনে দলের কার্যালয়ে বৃহস্পতিবার সকালে সংগঠনগুলোর এক যৌথসভা শেষে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর কর্মসূচি ঘোষণা করেন। ১৫ সেপ্টেম্বর মৎস্যজীবী দল, ১৬ সেপ্টেম্বর মুক্তিযোদ্ধা দল, ১৭ সেপ্টেম্বর তাঁতী দল, ১৮ সেপ্টেম্বর অ্যাসোসিয়েশন অব ইঞ্জিনিয়ার্স (এইবি), ১৯ সেপ্টেম্বর ডক্টরস অ্যাসোসিয়েন অব বাংলাদেশ (ড্যাব), ২০ সেপ্টেম্বর যুবদল, ২১ সেপ্টেম্বর ওলামা দল, ২২ সেপ্টেম্বর মহিলা দল, ২৪ সেপ্টেম্বর কৃষক দল, ২৫ সেপ্টেম্বর শ্রমিক দল, ২৭ সেপ্টেম্বর এগ্রিকালচারিস্ট অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (এ্যাব) ও ২৮ সেপ্টেম্বর স্বেচ্ছাসেবক দল মানববন্ধন করবে বলে জানান তিনি। তবে এসব কর্মসূচির স্থান এবং সময় জানাননি ফখরুল। খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে বুধবার জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এক ঘণ্টা মানববন্ধন করে বিএনপি।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে