শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

নিরাপদ খাদ্য এবং আমাদের দায়িত্ব

নতুনধারা
  ০৪ নভেম্বর ২০১৯, ০০:০০

বেঁচে থাকার জন্য খাদ্য জরুরি হলেও তার চেয়ে বেশি জরুরি নিরাপদ খাদ্য। টেকসই জীবন ও সুস্বাস্থ্যের জন্য নিরাপদ ও পুষ্টিকর খাবারের বিকল্প নেই। অনিরাপদ খাদ্য শুধু স্বাস্থ্যের ঝুঁকিরই কারণ নয়, বরং দেহে রোগের বাসা বাঁধারও অন্যতম কারণ। আধুনিক জীবনে শিল্পজাত খাদ্য একটি স্বাভাবিক ব্যাপার। এ খাদ্যকে স্বাভাবিক এবং ভেজাল ও অন্যান্য দূষণ থেকে নিরাপদ অবস্থায় বিতরণ এখন একটি বিশ্ব সমস্যা। অসাধু ব্যবসায়ীদের কারসাজি ছাড়াও নানা কারণে খাদ্য দূষিত হতে পারে। খাদ্য উৎপাদন, প্রক্রিয়াজাতকরণ, পরিবহণ, খাদ্যগ্রহণ প্রক্রিয়ার যে কোনো পর্যায়ে শিল্পায়িত খাদ্য খাদ্যের অনুপযোগী হয়ে যেতে পারে। খাদ্য উৎপাদন থেকে শুরু করে ভোক্তার দ্বার পর্যন্ত খাদ্যের গুণগত মান নিশ্চিত রাখা একটি বড় সরকারি ও বেসরকারি দায়িত্ব। নিরাপদ খাদ্যের বিষয়টি বর্তমানে বেশ আলোচিত। নানাভাবে খাদ্যে ভেজাল ও কীটনাশক ব্যবহৃত হচ্ছে। মানুষ এ খাবার গ্রহণ করছে। পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন ধরনের স্বাস্থ্য সমস্যায় ভুগছে। মানুষের সুস্থ জীবনের জন্য নিরাপদ খাদ্যের কোনো বিকল্প নেই। অর্থনীতি, নিরাপদ খাবার ও উপযুক্ত পরিবেশ যে কোনো উন্নয়নের উপাত্ত বৃদ্ধি করে, এগুলো এড়িয়ে টেকসই উন্নয়ন ঝউএ অর্জন আদৌ সম্ভব নয়। কাজেই সময় থাকতে সুস্থ, সবল, সমৃদ্ধ দেশ ও জাতি গঠনে পরিস্থিতির আলোকে যা যা করণীয় তা করতে কালক্ষেপণ করা মানেই উন্নত দেশের মর্যাদা লাভে হেঁয়ালিপনা। বাংলাদেশ বর্তমানে খাদ্য উৎপাদন যথেষ্ট বৃদ্ধি পেয়েছে, পাশাপাশি জনসংখ্যাও তিনগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। কিন্তু খাদ্যের গুণগত পুষ্টিমান ও খাদ্যের নিরাপত্তার বিষয়টি অনেকটাই উপেক্ষিত রয়ে গেছে। মাঝেমধ্যে অভিযান চললেও জরিমানা আদায়ের মাধ্যমেই তা থেমে যায়। বর্তমানে পৃথিবীর প্রতিটি দেশেই নিরাপদ খাদ্যকে ভোক্তার অধিকার হিসেবে গণ্য করা হয় এবং এর ব্যত্যয় দেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এ ক্ষেত্রে আমাদের দেশও ব্যতিক্রম নয়। আমাদের দেশে ২০০৯ সালে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন প্রণীত হয় এবং ২০১৩ সালে নিরাপদ খাদ্য আইন প্রণীত হয়। কিন্তু এর সুষ্ঠু আইন প্রয়োগ না হওয়ায় এবং আমাদের সচেতনতার অভাবে অনিরাপদ খাদ্যের বেড়াজালে পড়তে হচ্ছে আমাদের। নিরাপদ খাদ্যের নিশ্চয়তা বিধান করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কারণ এখন খাদ্যদ্রব্য উৎপাদন, সংরক্ষণ, বাজারজাতকরণের প্রত্যেকটি ধাপেই খাদ্যে ক্ষতিকর রাসায়নিক মেশানো হয়ে থাকে। যে কোনো রাসায়নিক মানেই বিষ। এসব বিষযুক্ত খাবার খেয়ে প্রতি মুহূর্তেই আমরা ক্যান্সারসহ নানা জটিল রোগ-ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়ে পড়ছি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য মতে, প্রতি বছর প্রায় ৬০ কোটি মানুষ দূষিত খাবার খেয়ে অসুস্থ হয়। এ কারণে প্রতি বছর মারা যায় ৪ লাখ ৪২ হাজার মানুষ। এ ছাড়া ৫ বছরের চেয়ে কম বয়সী শিশুদের ৪৩ শতাংশই খাবারজনিত রোগে আক্রান্ত হয়, মধ্যে প্রতি বছর প্রাণ হারায় ১ লাখ ২৫ হাজার শিশু। জানা গেছে, ১৯৯৪ সালে কেবল যুক্তরাষ্ট্রেই স্যালমোনেলা জীবাণু বহনকারী আইসক্রিম খাওয়ার ফলে ২ লাখ ২৪ হাজার মানুষ রোগে আক্রান্ত হয়। ১৯৮৮ সালে দূষিত শামুক ও গলদা চিংড়ি খেয়ে চীনে প্রায় ৩ লাখ মানুষ রোগাক্রান্ত হয়। ২০০৮ সালে চীনে তৈরি কয়েকটি কোম্পানির গুঁড়ো দুধ পান করে বহু শিশু রোগাক্রান্ত হয়। ওই দুধে মেলামাইনের মাত্রা বেশি ছিল।

নিরাপদ খাদ্য যেমন আমাদের অধিকার, তেমনি নিরাপদ খাদ্য লাভের জন্য আমাদের কিছু দায়িত্বও রয়েছে। নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করতে হলে সরকারি, বেসরকারি খাতসহ সব শ্রেণি-পেশার মানুষকে এগিয়ে আসতে হবে। আমাদের সমাজ ও দেশ যদি এই ব্যাপারে সচেতন ও সজাগ দৃষ্টি রাখে তাহলে নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করা কঠিন কিছু নয়। নিরাপদ খাদ্য সম্পর্কে সর্বস্তরের তথা তৃণমূল পর্যায়ে ব্যাপক গণসচেতনতা বাড়ানো অতীব জরুরি হয়ে পড়েছে। কারণ মানুষ নিরাপদ খাবার খেয়ে বেশিদিন বাঁচতে চায়। কিন্তু অধিকাংশ মানুষ জানে না দৈনন্দিন জীবনে সে যা খাচ্ছে তা কি আদৌ নিরাপদ খাবার? কোন খাবার নিরাপদ, কোন খাবার নিরাপদ নয় তা চিনবে কীভাবে? তবে মানুষ অনিরাপদ খাবারের প্রতিকার কামনা করে। দেশের জনগণ মনে করে এটা সরকারেরই দায়িত্ব। তবে দুঃখজনক হলেও বাস্তব সত্য, কোনো কোনো দেশের অধিকাংশ মানুষই জানে না নিরাপদ খাদ্য আইন কাকে বলে। তারা এও জানে না, নিরাপদ খাদ্যবিষয়ক কর্তৃপক্ষ কারা। তা ছাড়া খাদ্যের উদ্দেশ্যই হলো শরীরকে সুস্থ রাখা, পুষ্টিমান নিশ্চিত করা, রোগ-প্রতিরোধ করা, আয়ু বৃদ্ধি করা সর্বোপরি ক্ষুধা ও দরিদ্রতা দূর করা। এমন নিরাপদ খাদ্যকে মুনাফাখোরদের কারণে পরিকল্পিতভাবে কেমিক্যাল মিশ্রিত করে অখাদ্যে পরিণত করা এখন ওপেন সিকরেট। তাই আমাদের খাদ্য আইন, ভোক্তা অধিকার আইন সম্পর্কে জানা ও নিজে আইন মান্য করা এবং অমান্যকারীদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে সোপর্দ করতে সহায়তা করা। সর্বোপরি আমাদের সবার উচিত নিরাপদ খাদ্য সম্পর্কে সচেতন থাকা। প্রাণিজগতে নিরাপদ পুষ্টিমান সম্পন্ন খাদ্যপ্রাপ্তির অধিকার নিশ্চিতকরণে একটি দক্ষ ও কার্যকর কর্তৃপক্ষ প্রতিষ্ঠা করে খাদ্য উৎপাদন, প্রক্রিয়াজাতকরণ, আমদানি-রপ্তানি, মজুদ, সরবরাহ ও বিপণন বিষয়ে নিরাপদ খাদ্য আইন ২০১৩ সালে প্রণীত আইনের যথার্থ প্রয়োগ ও বাস্তবায়ন করা হলে সুস্থ-সবল সমৃদ্ধ জাতি গঠনের সফলতা ও চেতনার মাত্রা অসাধারণভাবে সফল হতে পারে। এ বিষয়ে আন্তর্জাতিক ও জাতীয় পর্যায়ে রাষ্ট্রের কর্ণধারদের এগিয়ে আসার বিকল্প নেই বলে অভিজ্ঞমহল ও ভুক্তভোগীমহলের ধারণা। নিরাপদ খাদ্য যেমন সবার জন্য প্রয়োজন, তেমনি নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করতে সবাইকে সচেতনতার সঙ্গে স্বীয় দায়িত্ব পালন করতে হবে। নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করার জন্য পণ্য উৎপাদন, সংরক্ষণ, সরবরাহ ও বিপণন প্রতিটি পর্যায়ে সচেতনতা প্রয়োজন। সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করা সম্ভব।

আমজাদ হোসেন

শিক্ষার্থী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<74038 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1