শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

অটল বিহারি বাজপেয়ীর প্রয়াণ

আমরা শোকাহত
নতুনধারা
  ১৭ আগস্ট ২০১৮, ০০:০০
আপডেট  : ১৭ আগস্ট ২০১৮, ১৯:০৯

মৃত্যু মানুষের অলঙ্ঘ্য নিয়তি। সম্প্রতি এই নিয়তিকে বরণ করে না ফেরার দেশে চলে গেলেন ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী অটল বিহারি বাজপেয়ী। বৃহস্পতিবার বিকালে নয়াদিল্লির অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অব মেডিকেল সায়েন্সেস (এইমস) হাসপাতালে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। জানা যায়, নয় সপ্তাহ ধরে হাসপাতালে থাকা ৯৩ বছর বয়সী বাজপেয়ীর স্বাস্থ্য মঙ্গলবার থেকে খারাপ হতে শুরু করে। কিডনিতে সংক্রমণ, বুক ধড়ফড় ও প্রস্রাবজনিত সমস্যা নিয়ে ১১ জুন হাসপাতালে ভতির্ হয়েছিলেন ভারতের দশম প্রধানমন্ত্রী অটল বিহারি বাজপেয়ী।

এই রাজনীতিক জন্মেছিলেন ১৯২৪ সালের ২৫ ডিসেম্বর মধ্যপ্রদেশের গোয়ালিয়রে। ভারতীয় রাজনীতির দুনিয়ায় অটল বিহারি একজন সুবক্তা হিসেবে খ্যাতি লাভ করেছিলেন। তিনি ছিলেন একজন অসামান্য বাগ্মী। যুক্তি আর অসাধারণ বক্তৃতার জন্য দলমত নিবিের্শষে সবার সমীহ ও শ্রদ্ধার পাত্র হয়েছিলেন। ছিলেন একজন তুখোড় সংসদ সদস্য, কবি ও গণতন্ত্রের অতন্দ্র প্রহরী। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে, তার জন্মদিন ২৫ ডিসেম্বর, এই দিনটি ভারতে এখন ‘গুড গভনর্্যান্স ডে হিসাবে’ উদযাপিত হয়। অটল বিহারি বাজপেয়ীর কিশোর বয়সে ১৯৪২-১৯৪৫ সালের ‘ভারত ছাড়ো’ আন্দোলনে সক্রিয় অংশগ্রহণের মাধ্যমে প্রত্যক্ষ রাজনীতিতে হাতেখড়ি হয়। ব্রিটিশ সরকারবিরোধী ওই আন্দোলনে যোগদানের ফলে তাকে কারাদÐও ভোগ করতে হয়। রাজনৈতিক জীবনের গোড়ায় কমিউনিস্ট মতবাদের প্রতি আগ্রহী হলেও কিছু দিনের মধ্যে তিনি রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘ (আরএসএস) এবং জন সঙ্ঘের কাজকমের্র সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন।

বাজপেয়ী গোয়ালিয়রের সরস্বতী শিশু মন্দির থেকে পড়াশোনা করেছেন। পরে গোয়ালিয়রের ভিক্টোরিয়া কলেজে পড়েন। হিন্দি, ইংরেজি এবং সংস্কৃতে ডিস্টিংশন নিয়ে পাস করেন। এরপর রাষ্ট্রবিজ্ঞানে প্রথম শ্রেণিসহ স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নেন কানপুরের ডিএভি কলেজ থেকে। এমনকি আইন পড়ার সময় আরএসএসের পত্রিকা প্রকাশের কাজে সম্পূণর্ নিয়োজিত হওয়ার জন্য ল’ স্কুলে পড়াশোনার পাঠ মাঝপথেই ছেড়ে দেন। বলা দরকার, অটল বিহারি বাজপেয়ী প্রথম অ-কংগ্রেসি নেতা, যার সরকার পঁাচ বছরের মেয়াদ পূণর্ করতে সফল হয়েছিল। লাগাতার চার দশক লোকসভায় বিরোধী আসনে বসার পর ১৯৯৬ সালে তিনি প্রথমবার ভারতের প্রধানমন্ত্রী হন। যদিও প্রথম দফায় মাত্র ১৩ দিন ক্ষমতায় ছিলেন তিনি। আস্থা ভোটে যথেষ্ট সংখ্যক আসন সংগ্রহে ব্যথর্ হওয়ায় ক্ষমতাচ্যুত হয় তার সরকার। ১৯৯৮ সালে দ্বিতীয়বার দেশটির প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পান অটল বিহারি বাজপেয়ী। কিন্তু সেবারও ১৩ মাস পর জোট শরিক জয়ললিতার এআইএডিএমকে সমথর্ন তুলে নেয়ার ফলে মেয়াদ ফুরায় তার শাসনকালের। ১৯৯৯ সালে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে পুননিবাির্চত হন অটল বিহারি বাজপেয়ী। জোট শক্তিশালী হওয়ার ফলে পঁাচ বছরের শাসনকাল সম্পূণর্ করতে তিনি সফল হন।

বলার অপেক্ষা রাখে না যে, অটল বিহারি বাজপেয়ীর মৃত্যুতে একটি বণার্ঢ্য যুগের অবসান হলো। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেছেন, একুশ শতকে একটি শক্তিশালী, সমৃদ্ধ ও অন্তভুির্ক্তমূলক ভারতের ভিত্তি স্থাপন করার ক্ষেত্রে এই নেতার দৃষ্টান্তমূলক নেতৃত্বের কথা। এ ছাড়া বিরোধী দল কংগ্রেসের প্রেসিডেন্ট রাহুল গান্ধী বলেছেন, ‘সাবেক প্রধানমন্ত্রী অটল বিহারি বাজপেয়ী হাজার হাজার মানুষের নিকট অত্যন্ত শ্রদ্ধেয় ব্যক্তিত্ব ছিলেন।’ আমরা উল্লেখ করতে চাই, অটল বিহারি বাজপেয়ী এতটাই সুবক্তা ছিলেন যে, ১৯৫৭ সালে পালাের্মন্টে তার অভিষেক বক্তৃতায় তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু বলেছিলেনÑ এই তরুণ রাজনীতিক একদিন প্রধানমন্ত্রী হবে। যা পরে সত্য হয়। বাজপেয়ী ছিলেন দূরদৃষ্টি সম্পন্ন একজন রাজনীতিক। তিনি প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে সম্পকোর্ন্নয়নেও গুরুত্বারোপ করেছেন। অটল বিহারি বাজপেয়ীর মৃত্যু স্বাভাবিকভাবেই অত্যন্ত বেদনার। আমরা এই মৃত্যুতে গভীরভাবে শোকাহত। তার বিদেহ আত্মার প্রতি রইল আমাদের বিনম্র শ্রদ্ধা।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<8316 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1