মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১
কোরবানির পশু

চড়া দামে এখনো সাড়া নেই ক্রেতার

হাট সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বেচাকেনা জমে ওঠার আগে এ ধরনের ‘ফঁাকাফঁাকি’ দাম চাওয়ার রেওয়াজ রয়েছে। তবে ক্রেতারা কোরবানির পশু কেনা শুরু করলে বেপারীরা স্বাভাবিক দরে নেমে আসবে
যাযাদি রিপোটর্
  ১৯ আগস্ট ২০১৮, ০০:০০
আপডেট  : ১৯ আগস্ট ২০১৮, ০০:২৩
কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে গরু আসতে শুরু করলেও এখনো জমে উঠেনি রাজধানীর কোরবানির হাটগুলো । ছবিটি শনির আখড়া হাট থেকে শনিবার তোলা Ñযাযাদি

গত কয়েক বছরের মতো এবার ভারত থেকে পযার্প্ত গরু আমদানি না হলেও দেশে কোরবানিযোগ্য পশুর কোনো সংকট নেই। বরং চাহিদার তুলনায় দেশে গরু-ছাগলের যোগান বেশি। তাই রাজধানীর কোরবানির পশুর অস্থায়ী হাটগুলোতে আনুষ্ঠানিকভাবে বেচাকেনা শুরুর আগেই প্রতিটি হাট গরু-ছাগল-মহিষ ভেড়ায় কানায় কানায় ভরে উঠেছে। অথচ বেপারীরা ছোট-বড়-মাঝারি সব সাইজের পশুরই আকাশ ছেঁায়া দাম হঁাকছে। এ অবস্থায় বেশিরভাগ ক্রেতাই দর শোনার পর কোনো কথা না বলেই সরে পড়ছেন। আবার কেউ কেউ ক্ষুব্ধ হয়ে বেপারীদের গালমন্দও করছেন। তবে হাট সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বেচাকেনা জমে ওঠার আগে এ ধরনের ‘ফঁাকাফঁাকি’ দাম চাওয়ার রেওয়াজ রয়েছে। তবে ক্রেতারা কোরবানির পশু কেনা শুরু করলে বেপারীরা স্বাভাবিক দরে নেমে আসবে। এর আগে তারা বাজার পরিস্থিতি বুঝে দেখার চেষ্টা করছে। আর এ কারণেই চড়া দর হঁাকছে। হাট ইজারাদারদের ধারণা, রোববার সারাদিন একই পরিস্থিতির থাকবে। তবে রাতে এ অবস্থার পরিবতর্ন ঘটবে। এরইমধ্যে বেপারীরা আরও বিপুল সংখ্যক গরু-ছাগল নিয়ে ঢাকায় ঢুকবে। ভারতীয় গরুর সরবরাহও কিছুটা বাড়বে। সবমিলিয়ে রাজধানীর হাটগুলোতে বেচাকেনার পরিবেশ তৈরি হবে। গতবারের মতো এবারও স্বাভাবিক দরে কোরবানির পশু বেচাকেনা হবে বলে আশাবাদী ইজারাদাররা। তবে বেপারীদের আশা, এবার গরু-ছাগলের পাশাপাশি মহিষ-ভেড়াও চড়া দরে বিক্রি করতে পারবেন তারা। এ ব্যাপারে তাদের যুক্তি, ভারতীয় গরুর আমদানি নেই বললেই চলে। তাই ক্রেতারা দেশি গরুই কিনতে বাধ্য হবে। গো-খাদ্যের উচ্চমূল্য হওয়ায় কৃষক কিংবা খামারিদের কম দামে গরু বিক্রির সুযোগ নেই। তবে হাট জমে ওঠার আগে যতটা চড়া দর চাওয়া হচ্ছে, তা কিছুটা কমবে বলে মনে করেন কোরবানির পশুর বেপারীরা। শনিবার দুপুরে রাজধানীর মেরাদিয়া হাট ঘুরে দেখা গেছে, কুষ্টিয়া, ঝিনাইদহ, ফরিদপুর, টাঙ্গাইল, সিরাজগঞ্জ, নওগঁা, নাটোর ও রাজশাহী থেকে গরু নিয়ে এসেছেন বেপারীরা। এর মধ্যে কুষ্টিয়া থেকে আনা গরুর সংখ্যাই বেশি। এসব গরুর বেশিরভাগই হৃষ্টপুষ্ট এবং সাইজে মাঝারি কিংবা বড়। তাদের চালানে ছোট গরু নেই বললেই চলে। মাঝারি আকারের গরু এক থেকে সোয়া লাখ এবং বড় আকারের গরু দেড় থেকে পৌনে দুই লাখ টাকা দর হঁাকছেন বেপারীরা। ঝিনাইদহ থেকে আনা বেশকিছু ছোট আকারের গরুর দাম চাওয়া হচ্ছে ষাট থেকে পঁচাত্তর হাজার টাকা। অথচ গত বছরও এসব গরু ৪৫ থেকে ৫০ হাজার টাকায় দেদার বিক্রি হয়েছে। সিরাজগঞ্জের বেপারী তানজিল হোসেন জানান, তিনি স্থানীয় খামার থেকে গড়ে ৭০ হাজার টাকা করে ১৮টি মাঝারি সাইজের গরু কিনেছেন। কয়েকদিনের গো-খাদ্য এবং ট্রাক ভাড়াসহ প্রতি গরুতে আরও ৬/৭ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। সবমিলিয়ে গড়ে ৮০ হাজার টাকার নিচে এসব গরু বিক্রি করলে তাকে লোকসানের মুখে পড়তে হবে। এ অবস্থায় তিনি এক লাখ টাকা করে গরুর দাম চাচ্ছেন। অথচ ক্রেতারা কেউ ৭০ হাজার টাকার উপর উঠছেন না। তানজিলের আশা রোববার থেকেই ক্রেতারা কেনার দিকে ঝুঁকবেন। তখন অন্তত ৯০ হাজার টাকা করে এসব গরু নিশ্চিন্তে বিক্রি করতে পারবেন। তাই সে সময়ের জন্য অপেক্ষা করছেন তিনি। যদি এই দাম না পান, তাহলে গরু বিক্রি না করে বাড়ি ফিরিয়ে নিয়ে যাবেন বলেও জানান তিনি। তবে হাট সংশ্লিষ্টরা তাদের অভিজ্ঞতার কথা জানিয়ে বলেন, বেপারীদের গরু ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়ার নজির নেই বললেই চলে। কেননা তাতে তাদের লোকসানের বোঝা আরও ভারি হওয়ারই শঙ্কা থাকে। তাই কিছুটা কমবেশি করে তারা গরু বেচেই ঘরে ফেরেন। তবে খামারি ও কৃষকরা অনেক সময় ন্যায্য দাম না পেলে গরু-ছাগল বাড়ি নিয়ে যান। শনিবার সকালে রাজধানীর বছিলা হাটে গিয়ে দেখা যায় পুলিশ আবাসনের জন্য নিধাির্রত খালি জায়গা পশুতে ভরে উঠেছে। পাশে রায়েরবাজার কবরস্থান নিমাের্ণর জন্য অধিগ্রহণকৃত ক্ষতিগ্রস্তদের আবাসনের জন্য নিধাির্রত জায়গাতে গরু-ছাগল জড়ো করা হচ্ছে। আশপাশের খালি জায়গা ও সড়কের পাশের খালি জায়গাতেও বিপুল সংখ্যক পশু বাধা রয়েছে। এলাকাবাসী আশঙ্কা, রোববারের মধ্যে মোহাম্মদপুর বেড়িবঁাধ থেকে বছিলা ব্রিজ পযর্ন্ত গোটা সড়ক কোরবানির পশুতে ভরে যাবে। হাট ইজারাদার ও পশু ব্যবসায়ীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, বেপারীরা এরই মধ্যে মোহাম্মদপুর বছিলার পুলিশ লাইন হাটে অন্তত দুই লাখ গরু জড়ো করেছে। গত দুইদিন কিছু বেচাবিক্রিও হয়েছে। তবে সংখ্যার বিবেচনায় খুবই নগণ্য। রোববার থেকে পুরোদমে বিক্রি শুরু হবে। কুষ্টিয়ার থেকে আসা গরুর বেপারী আব্দুল কাদের বছিলা হাটে ১৮টি গরু নিয়ে এসেছেন। তিনি জানান, গরুগুলো হাজারীবাগ হাটের জন্য নিয়ে এসেছিলেন। কিন্তু বেড়িবঁাধ হয়ে যাওয়ার সময় বছিলা হাটের ইজারাদারের লোকেরা তাদের জোর করে এ হাটে নিয়ে এসেছেন। তার আনা গরু গড়ে ৮০ থেকে ৯০ হাজার টাকায় বিক্রি হবে বলে আশা করছেন তিনি। এদিকে রাজধানীর তেজগঁাও পশুর হাটে প্রায় ১০ হাজার পশুর ধারণ ক্ষমতা থাকলেও শনিবার দুপুর পযর্ন্ত সেখানে মাত্র হাজার তিনেক গুরু এসেছে বলে জানান হাট সংশ্লিষ্টরা। হাটের ইজারাদারের এক প্রতিনিধি জানান, এখনো অনেক ট্রাক হাটে ঢোকার অপেক্ষায় আছে। বিকালের দিকটায় বেচাকেনা বেশি হয়। শুক্রবার বিকালেও বেশ ভালো বেচাকেনা হয়েছে। শনিবার দুপুরে সরেজমিন হাটে গিয়ে দেখা গেছে, হাটের মূল গেটের পাশের রাস্তায় ট্রাক দঁাড় করিয়ে গরু নামাচ্ছেন বেপারীরা। গেটের উল্টো পাশের ফুটপাতে ছাগল নিয়ে দঁাড়াতে দেখা গেছে কয়েকজন বেপারীকে। তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, হাটের ভেতরে শুধুমাত্র গরু রাখতে বলা হয়েছে। এই ফুটপাতটি ছাগল রাখার জন্য নিধার্রণ করে দেয়া হয়েছে। ৩০টি খাসি নিয়ে কুষ্টিয়া থেকে আসা এক বেপারী জানান, গত দুই দিন গাড়িতে ছিলেন। তার খাসিগুলো দেখতে অনেক দুবর্ল মনে হচ্ছে। তাই দরদাম না করে আগে খাওয়া-দাওয়া করিয়ে সেগুলো হৃষ্টপুষ্ট করে তুলছেন। তার কাছে ১০ হাজার টাকা থেকে শুরু করে ৪০ হাজার টাকা দামের খাসি আছে বলে জানান ওই খাসির বেপারী। একই গাড়িতে করে ১৫টি খাসি নিয়ে এসেছেন হুরমত আলী। বড় সাইজের একটি খাসি দেখিয়ে তিনি বলেন, ‘এটি গ্রাম থেকে ৩২ হাজার টাকা দিয়ে কিনেছি। এখন ৫৫ হাজার টাকা দাম চাচ্ছি। তবে ৪০/৪৫ হাজার টাকা দর উঠলেই তা বিক্রি করে দেব।’ ঝিনাইদহ থেকে নিজের পালা দুটি গরু নিয়ে এসেছেন মো. আশরাফ। তিনি জানান, বড় আকারের গুরু দুটির দাম হঁাকাচ্ছেন ৪ লাখ ও সাড়ে চার লাখ টাকা। তবে দুটি গরু মোট ৭ থেকে সাড়ে ৭ লাখ টাকা দাম উঠলেই বিক্রি করে দেবেন। শনিবার পযর্ন্ত একটি গরুর দর সবোর্চ্চ আড়াই লাখ টাকা পযর্ন্ত উঠেছে বলে জানান তিনি। এদিকে ঝিগাতলা হাজারীবাগ হাট বেড়িবঁাধ ছাড়িয়ে কোম্পানিঘাট পযর্ন্ত বিস্তৃত হয়েছে। এ হাটে শনিবার পযর্ন্ত প্রায় এক লাখ গরু উঠেছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ী ও ইজারাদাররা। জামালপুর সদরের বাসিন্দা গরুর বেপারী সলেমান মিয়া বলেন, ‘প্রতি বছর এ হাটে গরু আনি। এবার ভেতরে হাট কিছুটা ছোট করায় বেড়িবঁাধে হাট সম্প্রসারিত হয়েছে। এখন পযর্ন্ত হাটে প্রায় এক লাখ গরু উঠেছে। ক্রেতা কম, দামাদামি কম হচ্ছে। যারা দামাদামি করছেন, তাদের মধ্যে প্রকৃত ক্রেতা কম। তাই বিক্রেতারা দাম কিছুটা বাড়িয়ে বলছে।’ রোববার থেকে পুরোদমে বেচাকেনা জমে উঠলে দাম অনেকটাই পড়বে বলে মনে করেন তিনি। খেঁাজ নিয়ে জানা গেছে, রাজধানীর অন্যান্য হাটগুলোরও প্রায় একই অবস্থা। স্থায়ী দুটিসহ ২৬টি পশুর হাট কোরবানিযোগ্য পশুতে ভরা। শনির আখড়া সংলগ্ন দনিয়া কলেজ মাঠে শনিবার সন্ধ্যা পযর্ন্ত প্রায় এক লাখ গরু উঠেছে। এ হাটে স্বল্প পরিসরে বিক্রিও শুরু হয়েছে। শ্যামপুর বালুর মাঠ পশুর হাটে বেপারী ও খামারিরা প্রায় ৫০ হাজার গরু-ছাগল জড়ো করেছেন। এখনো এ হাটে ট্রলার-ট্রাক ভরে পশু আসছে। গোলাপবাগ মাঠে সন্ধ্যা পযর্ন্ত ৩০ হাজার কোরবানি পশু উঠেছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ী ও হাট ইজারাদাররা। মিরপুর ১২ নম্বর হাট আয়তনে খুবই ছোট। শনিবার সন্ধ্যা পযর্ন্ত প্রায় দেড় হাজার গরু উঠেছে বলে জানিয়েছেন হাট সংশ্লিষ্টরা। এ হাটেও স্বল্প পরিসরে গরু বিক্রি শুরু হয়েছে। উত্তরা দিয়াবাড়ী হাটে অন্তত ২ লাখ কোরবানি পশু উঠেছে। আর খিলক্ষেত বনরূপা হাটে প্রায় লক্ষাধিক গরু আনা হয়েছে বলে জানান হাট সংশ্লিষ্টরা।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে