শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

সন্ধানী ও ৪৩ বছরের একটি আন্দোলন

৫ ফেব্রম্নয়ারি মেডিকেল ও ডেন্টাল শিক্ষার্থীদের পরিচালিত স্বেচ্ছাসেবী জাতীয় প্রতিষ্ঠান 'সন্ধানী'র ৪৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। স্বেচ্ছায় রক্তদান ও মরণোত্তর চক্ষুদানকে একটি সামাজিক আন্দোলনে রূপদান করা স্বাধীনতা পদকপ্রাপ্ত একমাত্র ছাত্রসংগঠন 'সন্ধানী'র ৪৩ বছরের পথচলার গল্প লিখেছেন- ডা. মনির হোসেন শিমুল
নতুনধারা
  ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ০০:০০

৪৪ বছর ধরে দেশের হাসপাতালগুলোতে প্রয়োজনীয় রক্তের চাহিদা পূরণ ও অন্ধের চোখে আলো ফিরিয়ে দেওয়ার লক্ষ্যে স্বেচ্ছায় রক্তদান ও মরণোত্তর চক্ষুদানকে একটি সামাজিক আন্দোলনে রূপদান করেছে মেডিকেল ও ডেন্টাল শিক্ষার্থীদের দ্বারা পরিচালিত স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠান সন্ধানী। ১৯৭৭ সালে হঠাৎ একদিন ঢাকা মেডিকেল কলেজের এক বন্ধু সন্ধানীর সদস্যদের কাছে ছুটে এসে বললেন, 'বাবার অপারেশন করতে হবে, জরুরি ভিত্তিতে রক্ত প্রয়োজন।' পেশাদার রক্তদাতাদের অনিরাপদ রক্ত গ্রহণের ভয়ে শিক্ষার্থীরা সিদ্ধান্ত নিলেন নিজেরাই রক্ত দেবেন। যার ফলশ্রম্নতিতে ২ নভেম্বর ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের বস্নাড ব্যাংকের অধ্যাপক ডা. আবদুল কাদেরের সহায়তায় বাংলাদেশের প্রথম 'স্বেচ্ছায় রক্তদান কর্মসূচি'র আয়োজন করে সন্ধানী। সন্ধানীর অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ইদ্রিস আলী মঞ্জু সবার আগে রক্তদান করেন। মেয়েদের রক্তদান কার্যক্রমে যুক্ত করতে প্রথম রক্ত দিলেন তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী হোসনে আরা লাকী। সবার সহযোগিতায় ঐতিহাসিক ঐদিনে ২৭ ব্যাগ রক্ত সংগ্রহ হলো। এই মহতী উদ্যোগের স্বীকৃতি সরূপ এবং স্বেচ্ছায় রক্তদান ও মরণোত্তর চক্ষুদান কর্মসূচিকে সামাজিক আন্দোলনে রূপদানের লক্ষ্যে ১৯৯৫ সালে দিনটিকেই 'জাতীয স্বেচ্ছায় রক্তদান ও মরণোত্তর চক্ষুদান দিবস' হিসেবে প্রতিবছর সরকারিভাবে পালন করার ঘোষণা দেয় সরকার।

এদিকে অন্যান্য মেডিকেল কলেজের আড্ডায়, বন্ধুদের চায়ের দোকানের আলাপে সন্ধানীর কার্যক্রমের গল্প ছড়িয়ে পড়ল। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হাজারো ছাত্রছাত্রীর মাঝে রক্তদান কর্মসূচিকে ছড়িয়ে দিতে শিক্ষার্থীদের সহযোগিতায় ১৯৭৯ সালের ১৭ জানুয়ারি অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে দ্বিতীয় রক্তদান কর্মসূচির আয়োজন করা হয়। ঢাকা মেডিকেলের চক্ষুবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ডা. হারুন উর রশিদ কর্মসূচিতে স্বেচ্ছায় অংশ নিয়ে রক্তদানে কোনো ভয় নেই এই বিশ্বাসটি প্রতিষ্ঠা করলেন। আরো অনেকের মধ্যে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ডা. আবুল কালাম আজাদও রক্ত দিলেন সেদিন। শহিদ মিনার, বইমেলা, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের গণজমায়েতে রক্তের গ্রম্নপ নির্ণয় ও উন্মুক্ত রক্তদান কর্মসূচির মাধ্যমে প্রথম বছরে সন্ধানী ২০৭ ব্যাগ রক্ত সংগ্রহ করেছিল। সংগঠনটির কেন্দ্রীয় পরিষদের রোগী কল্যাণ সম্পাদক মাসুম বিলস্নাহ জানান, সন্ধানীর পক্ষ থেকে এখন ২৪টি মেডিকেল ইউনিট ও ৯টি ডোনার ক্লাবের মাধ্যমে বছরে ১১৫০০০ হাজার ব্যাগ রক্ত সংগ্রহ করা হয়।

সন্ধানী কেন্দ্রীয় পরিষদের সভাপতি তানভীর হাসান ইকবাল জানান কিভাবে রক্ত সংগ্রহ করে সন্ধানী। তিনি জানান, 'আমরা মেডিকেল কলেজগুলো ও বিভিন্ন দিবসে সাধারণ মানুষের মধ্যে নিয়মিত রক্তদান ও রক্তদানে উদ্বুদ্ধকরণ কর্মসূচির আয়োজন করি। রক্তদানের মাধ্যমে শরীরে এইডস, ম্যালেরিয়া, সিফিলিস, হেপাটাইটিস বি ও সিসহ সংক্রামক ও ঘাতক ব্যাধি রয়েছে কি না, তা বিনা খরচে জানা যায়।

কিভাবে রোগীর কাছে রক্ত পৌঁছে সে সম্পর্কে কেন্দ্র্র্রীয় পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মির্জা মিনহাজুল ইসলাম বলেন, 'আমাদের ইউনিটগুলোর মাধ্যমে প্রতিটি হাসপাতালে জরুরি রক্তের প্রয়োজনে যোগাযোগের জন্য মোবাইল নম্বরের তালিকা টাঙিয়ে দেওয়া হয়, এমনকি ওয়ার্ডগুলোতেও রক্তের প্রয়োজনে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগের জন্য অনুরোধ করা থাকে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে