শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১
এক দিনে সর্বোচ্চ মৃত্যু

মৃতু্যর মিছিলে বেসামাল যুক্তরাষ্ট্র

দেশটিতে আক্রান্তের সংখ্যাও ৫ লাখ ছাড়িয়ে গেছে বড় বিপদে পড়বে যুক্তরাষ্ট্র হুঁশিয়ারি বিল গেটসের
যাযাদি ডেস্ক
  ১২ এপ্রিল ২০২০, ০০:০০
আপডেট  : ১২ এপ্রিল ২০২০, ১০:৫০

মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়া কোভিড-১৯ করোনাভাইরাসে যুক্তরাষ্ট্রে শুক্রবার এক দিনেই রেকর্ড দুই হাজারের বেশি মানুষের মৃতু্য হয়েছে। দেশটিতে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যাও পাঁচ লাখ ছাড়িয়ে গেছে। এদিকে, মৃতু্যর মিছিল প্রতিদিনই বাড়তে থাকায় বেসামাল হয়ে পড়েছে যুক্তরাষ্ট্র। সংবাদসূত্র : রয়টার্স, বিবিসি, সিএনএন আন্তর্জাতিক জরিপ সংস্থা ওয়ার্ল্ডোমিটারের মতে, ডিসেম্বরের শেষ দিকে চীনের উহানে আবির্ভূত হওয়া করোনাভাইরাস সাড়ে তিন মাসের মধ্যেই বিশ্বজুড়ে লাখো মানুষের প্রাণ কেড়ে নিয়েছে। আক্রান্ত শনাক্ত হয়েছে ১৭ লাখের বেশি। এর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রেই সবচেয়ে বেশি। শনিবার পর্যন্ত দেশটিতে আক্রান্তের সংখ্যা পাঁচ লাখ পেরিয়ে গেছে। মৃতের সংখ্যা ১৮ হাজারের বেশি। কোভিড-১৯ এ মৃতু্যর সংখ্যায় সবার ওপরে থাকা ইতালিকেও দেশটি প্রায় ধরে ফেলেছে। শনিবার পর্যন্ত ইতালিতে করোনাভাইরাসে ১৮ হাজার ৮৪৯ জনের মৃতু্য হয়েছে। এক দিনে রেকর্ড দুই হাজার ১০৮ জনের মৃতু্য হলেও হোয়াইট হাউসের কোভিড-১৯ সংক্রান্ত টাস্কফোর্সের বিশেষজ্ঞরা বলছেন, লকডাউন ও নানা বিধিনিষেধের ফলে যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে আক্রান্তের হারের ঊর্ধ্বগতি ঠেকানো সম্ভব হয়েছে। দেশটির প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, করোনাভাইরাসের কারণে যুক্তরাষ্ট্রে মৃতের সংখ্যা আগের ধারণার চেয়ে অনেক কম হবে। শুরুর দিকে প্রাণঘাতী এই ভাইরাসে যুক্তরাষ্ট্রে এক থেকে দুই লাখ মানুষের মৃতু্য হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হয়েছিল। কয়েক দিনের তথ্য উলেস্নখ করে নিউইয়র্কের গভর্নর অ্যান্ড্রু কুমো বলেন, আক্রান্ত-মৃতের গ্রাফকে 'সরল রৈখিক করতে' সক্ষম হয়েছেন তারা। যুক্তরাষ্ট্রে করোনাভাইরাস যত জনের প্রাণ কেড়ে নিয়েছে, তার প্রায় অর্ধেকই নিউইয়র্কের। হোয়াইট হাউসের টাস্ক ফোর্সের অন্যতম সদস্য ড. ডেবোরাহ বার্ক্স বলেন, সংক্রমণের হার স্থিতিশীল হওয়ার লক্ষণ মিললেও যুক্তরাষ্ট্র এখনো আক্রান্তের 'সর্বোচ্চ শিখরে' পৌঁছায়নি। বিশেষজ্ঞদের ধারণা, ১৭ এপ্রিল যুক্তরাষ্ট্রের মৃতু্যর পরিমাণ সর্বোচ্চ শিখরে পৌঁছাবে, এরপর কমতে শুরু করে মে মাসের ১ তারিখের দিকে ৯৭০ এর কাছাকাছি পৌঁছাবে। অর্থনীতি ফের সচল করতে ওই দিন থেকেই দেশটির বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যে দেওয়া বেশকিছু নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার চিন্তা চলছে। টাস্কফোর্সের আরেক সদস্য ড. অ্যান্থনি ফাউচি 'আগামী দিনগুলোতে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা স্থিতিশীল ও ধীরে ধীরে নেমে আসতে দেখা যাবে' বলে মন্তব্য করেছেন। সংক্রমণের বিস্তৃতি ঠেকাতে 'সামজিক দূরত্বের' মতো নির্দেশনাগুলো আরও কিছুদিন রাখা উচিত হবে বলেও সুপারিশ তার। যুক্তরাষ্ট্রে সবচেয়ে বেশি মানুষ মারা গেছে নিউইয়র্ক সিটিতে, পাঁচ হাজার ৮২০ জন। এরপর নাসাউতে ৭২৩, ওয়েনে ৬০৯, সাফোল্কে ৪১৪, কুক শহরে ৩৯৯, বারজেনে ৩৯০ ও ওয়েস্টচেস্টারে ৩৮৯ জন করোনায় প্রাণ হারিয়েছে। দেশটিতে আক্রান্তদের মধ্যে এ পর্যন্ত সুস্থ হয়ে হাসপাতাল ছেড়েছে ২৯ হাজারের বেশি মানুষ। অন্যদিকে, করোনাভাইরাসজনিত মহামারি পরিস্থিতির মধ্যে কাজকর্ম বন্ধ থাকায় খাদ্য সংকটে পড়েছে যুক্তরাষ্ট্রের শ্রমজীবী মানুষ। নতুন করে অনেক মানুষ এখন সরকারি খাদ্য সহায়তা চেয়ে আবেদন করছে। আপাতত তাদের মাঝে বিনামূল্যে নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী বিতরণের জন্য বেশ কিছু উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে। সেসব স্থানে লোকজনের উপচেপড়া ভিড় দেখা যাচ্ছে। দীর্ঘক্ষণ ধরে লাইনে দাঁড়িয়ে খাদ্যদ্রব্য সংগ্রহ করছে তারা। বড় বিপদে পড়বে যুক্তরাষ্ট্র হুঁশিয়ারি বিল গেটসের এদিকে, মার্কিন ধনকুবের এবং মাইক্রোসফটের সহ-প্রতিষ্ঠাতা বিল গেটস হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছেন, 'ব্যাপকভাবে করোনাভাইরাসের পরীক্ষা চালানোর ব্যবস্থা না করলে বড় সমস্যায় পড়বে পৃথিবীর শীর্ষ অর্থনীতির দেশ যুক্তরাষ্ট্র।' মার্কিন সংবাদমাধ্যম 'সিএনবিসি'র সঙ্গে আলোচনার সময়ে এ হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন তিনি। তিনি বলেন, 'করোনা পরীক্ষায় দক্ষিণ কোরিয়ার মতো একটি একক পদ্ধতি গ্রহণে আগ্রহী নয় মার্কিন সরকার। করোনাভাইরাস চিকিৎসার ক্ষেত্রে এখনো পুরোপুরি ভুল অগ্রাধিকার দিয়ে চলেছে যুক্তরাষ্ট্র। এই ধনকুবের বলেন, 'দক্ষিণ কোরিয়ার মতো একই পদ্ধতি গ্রহণ করাই ছিল যুক্তরাষ্ট্রের জন্য স্বাভাবিক। কিন্তু মার্কিন ফেডারেল সরকারের মধ্যে এ কাজে কোনো আগ্রহই দেখা যায়নি। তিনি আরও বলেন, '৯৫ শতাংশের বেশি সেরে উঠবে, করোনা চিকিৎসায় অলৌকিক এমন কিছুর অপেক্ষা করছে মার্কিন সরকার কিংবা ব্যাপকভাবে ব্যবহারযোগ্য টিকার অপেক্ষায় রয়েছে তারা।' এর আগে, পিবিএসকে দেয়া আরেক সাক্ষাৎকারে ৬৪ বছর বয়সি গেটস বলেছিলেন, আগামী বছরের আগে হয়ত করোনার হাত থেকে যুক্তরাষ্ট্র পুরোপুরি নিরাপদ হবে না।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে