মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১
ঝড়ের বলি ৭২ প্রাণ

সর্বনাশা আম্পানে লন্ডভন্ড পশ্চিমবঙ্গ

ক্ষতির পুরো চিত্র পেতে ৩-৪ দিন লাগবে :মমতা করোনার চেয়েও বেশি ক্ষতি করেছে আম্পান
যাযাদি ডেস্ক
  ২২ মে ২০২০, ০০:০০
সর্বগ্রাসী ঘূর্ণিঝড় 'আম্পান'র তান্ডবে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে কলকাতাসহ পশ্চিমবঙ্গের সমুদ্র উপকূলবর্তী বিভিন্ন অঞ্চল। এলাকার পর এলাকা ধ্বংস হয়ে গেছে। ভেঙে পড়েছে যোগাযোগ ব্যবস্থা। লাখ লাখ মানুষকে সরিয়ে নিয়েও মৃতু্য এড়ানো যায়নি। ১৭৩৭ সালের পর আবার এমন ভয়ংকর ঝড় দেখল পশ্চিমবঙ্গবাসী। আম্পানের তান্ডবে কলকাতার রাস্তায় ভেঙে পড়েছে বৈদু্যতিক খুঁটি -পিটিআই/আউটলুক ইনডিয়া

ভারতে সর্বনাশা ঘূর্ণিঝড় 'আম্পান'র তান্ডবে লন্ডভন্ড হয়ে গেছে কলকাতাসহ পশ্চিমবঙ্গের সমুদ্র উপকূলবর্তী বিভিন্ন এলাকা। বৃহস্পতিবার বিকাল পর্যন্ত পাওয়া তথ্য অনুযায়ী ৭২ জনের মৃতু্যর খবর পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছেন রাজ্যটির মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তবে মৃতু্য আরও বাড়তে পারে বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন তিনি। সেই সঙ্গে আম্পান-পরবর্তী রাজ্যের পরিস্থিতি খতিয়ে দেখার জন্য প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকেও আহ্বান জানিয়েছেন মমতা। সংবাদসূত্র : এনডিটিভি, এবিপি নিউজ

মমতা বলেন, 'সব হিসাব উল্টে গেছে। কারও ভবিষ্যদ্বাণী মিলল না। পুরোটা পশ্চিমবঙ্গের ওপর দিয়েই গেল। করোনার জন্য অর্থনীতির অবস্থা শেষ। এরপর এই দুর্যোগ। কোনো রোজগার নেই। পুনর্গঠন করতে অনেক টাকা লাগবে।' এরপরই তিনি বাংলার এই পরিস্থিতির জন্য দেশবাসীর কাছে সাহায্যের আর্জি জানান। সঙ্গে কেন্দ্রের কাছেও সহযোগিতা চান। বিপর্যয়ের বিবরণ দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, 'এলাকার পর এলাকা ধ্বংস। যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন। প্রশাসন পাঁচ লাখ মানুষকে সরাতে পেরেছে। ১৭৩৭ সালে এমন ভয়ঙ্কর ঝড় হয়েছিল। ওয়ার রুমে বসে আছি আমি। নবান্নে (মুখ্যমন্ত্রীর কার্যালয়) আমার অফিস কাঁপছে। একটা কঠিন পরিস্থিতির যুদ্ধকালীন মোকাবিলা করলাম।'

বুধবার দুপুর আড়াইটার দিকেই ঘূর্ণিঝড়টি স্থলভূমিতে ঢুকে পড়তে শুরু করে। সন্ধ্যায় দক্ষিণ ২৪ পরগনার সুন্দরবন উপকূলে আছড়ে পড়ে আম্পান। কলকাতায় ঘণ্টায় প্রায় ১৩৩ কিলোমিটার বেগে বয়ে যায় ঝড়ো হাওয়া। এর জেরে লন্ডভন্ড হয় কলকাতাসহ দুই ২৪ পরগনা এবং পূর্ব মেদিনীপুর। হাওড়া, হুগলি এবং পশ্চিম মেদিনীপুরেরও হাজার হাজার কাঁচা ঘরবাড়ি এবং গাছপালা ভেঙেছে। ক্ষয়ক্ষতি আরও বাড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।

হাওড়ার শালিমারে ঝড়ে উড়ে যাওয়া টিনের আঘাতে মারা গেছে ১৩ বছরের এক কিশোরী। মিনাখাঁয় মাথায় গাছ পড়ে মৃতু্য হয়েছে এক নারীর। বসিরহাটে বাড়ির উঠানে গাছ ভেঙে পড়ে মারা গেছে ২০ বছরের এক তরুণ।

ক্ষয়ক্ষতির পুরো চিত্র পাওয়া না গেলেও শক্তিশালী এই ঘূর্ণিঝড়ে হাজার হাজার ঘরবাড়ি ধ্বংস হয়েছে। করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব নিয়ে চাপে থাকা পশ্চিমবঙ্গ ঘূর্ণিঝড়ের কারণে আরও গভীর সংকটে পড়ল। ফলে ভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকি এড়িয়ে ক্ষয়ক্ষতি কাটিয়ে ওঠা ও দুর্গতদের মাঝে ত্রাণ কার্যক্রম পরিচালনার উদ্যোগ নিতে হবে রাজ্য প্রশাসনকে। আম্পান করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাব থেকেও বেশি ক্ষতি করেছে এবং মোট ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ এক লাখ কোটি রুপি ছাড়িয়ে যেতে পারে বলে মন্তব্য করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা।

পশ্চিমবঙ্গের উপকূলীয় এলাকা থেকে পাঁচ লাখের বেশি লোককে আগেই নিরাপদ স্থান সরিয়ে নেওয়া হয়েছিল। ওড়িশায় সরানো হয় এক লাখ লোককে। এতে বহু মৃতু্য এড়ানো গেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। অব্যাহত বৃষ্টি ও যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ায় সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলোতে তাৎক্ষণিকভাবে পৌঁছানো যায়নি বলে মমতা জানিয়েছেন।

ভারতীয় আবহাওয়া বিভাগের ডেপুটি ডিরেক্টর জেনারেল (পূর্বাঞ্চল) সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, বুধবার রাত ১০টা পর্যন্ত কলকাতায় ২৪৪ দশমিক ২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। এর আগে মে মাসে একদিনে কলকাতায় এত বৃষ্টি আর হয়নি। ভয়ঙ্কর ঘূর্ণিঝড়টি কলকাতায় তান্ডব চালানোর পর উত্তর-পূর্বে নদিয়া ও মুর্শিদাবাদের দিকে গেছে বলে সে সময় জানিয়েছিলেন সঞ্জীব।

এদিকে, কলকাতা শহরে প্রায় তিন শতাধিক গাছ ভেঙে পড়েছে ও বহু এলাকা বিদু্যৎবিহীন রয়েছে বলে সিটি করপোরেশন জানিয়েছে। সুন্দরবনে ভারতীয় বন দপ্তরের বিভিন্ন ক্যাম্প জলোচ্ছ্বাসের পানিতে পস্নাবিত হয়েছে। জেটি ভেঙে যাওয়ায় সাগরদ্বীপ মূল ভূখন্ড থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনার নামখানা, গোসাবা, পাথরপ্রতিমা, ভাঙড় ও বসিরহাটসহ বহু এলাকায় প্রচুর ঘরবাড়ি এবং ক্ষেতের ফসল নষ্ট হয়েছে। উত্তর ২৪ পরগনার বসিরহাট জেলায় প্রায় ১০ হাজার বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

উপকূলীয় সুন্দরবন, দিঘাসহ দক্ষিণ ২৪ পরগনার বহু এলাকা, মন্দারমণি, শংকরপুর, তাজপুর, কুলপি, পাথরপ্রতিমা, নামাখানা, বাসন্তী কুলতলি, বারুইপুর, সোনারপুর, ভাঙড়, কাকদ্বীপ মিনাখাঁ, রাজারহাট, বনগাঁ, বাগদা, হাবড়া, হিঙ্গলগঞ্জ, সন্দেশখালি, হাসনাবাদ, হাওড়ায়াসহ উত্তর ২৪ পরগনা, পূর্ব মেদিনীপুর জেলার বিস্তীর্ণ অংশ ঝড়ে বিধ্বস্ত হয়েছে।

পানির তোড়ে ভেসে গেছে সড়ক, সেতু ও বাড়িঘর। ভেঙে গেছে বহু নদীর বাঁধ, নষ্ট হয়েছে চাষের জমি। আম্পানের প্রভাবে সমুদ্রে জলোচ্ছ্বাস বেড়েছে। ঝড়ের দাপট বিকালের পর থেকে বেড়ে যায়। সকাল থেকেই ঝড়ো হাওয়ার সঙ্গে বৃষ্টি শুরু হয়েছিল পশ্চিমবঙ্গে।

বিভিন্ন জায়গা থেকে এখনো ক্ষয়ক্ষতির খবর আসছে। বেশির ভাগ জায়গাই বিপর্যস্ত হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বলেন, 'ক্ষয়ক্ষতির পুরো চিত্র পেতে তিন থেকে চার দিন লাগবে। একদিনে এই ক্ষয়ক্ষতি পরিমাপ করা সম্ভব নয়। দক্ষিণবঙ্গের প্রায় ৯৯ শতাংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলেও জানিয়েছেন তিনি।

রাজ্যটির মানুষ গত ৫০ বছরে এমন ভয়াবহ ঝড় দেখেনি। শহরের অন্তত ৩০টি জায়গায় গাছ ভেঙে পড়েছে। শত শত গাছ ও বিদু্যতের খুঁটি ভেঙে পড়ায় যোগাযোগ কার্যত বন্ধ। বিদু্যৎহীন হয়ে পড়েছে গোটা শহর।

বৃহস্পতিবার সকালেও রাজ্যের অনেক জায়গায় ১১৫-১৩০ কিলোমিটার বেগে ঝড় বয়ে গেছে। নদিয়া, মুর্শিদাবাদ, উত্তর ২৪ পরগনায় ঘূর্ণিঝড় তার অস্তিত্ব জানান দিয়েছে। পূর্ব-পশ্চিম মেদিনীপুর, বর্ধমান, হুগলিতেও প্রবল বৃষ্টিপাত হয়েছে। উত্তরবঙ্গের মালদা, উত্তর দিনাজপুরে সকাল থেকেই বৃষ্টি বেড়ে যায়। এরপর ধীরে ধীরে কমে ঝড়ের গতিবেগ।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<100310 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1