বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১
করোনা নিয়ন্ত্রণ

বহু পথ যেতে হবে যুক্তরাষ্ট্রকে

যাযাদি ডেস্ক
  ৩১ মে ২০২০, ০০:০০
আপডেট  : ৩১ মে ২০২০, ১০:৩০
একজনকে হাসপাতালে নেওয়া হচ্ছে

যুক্তরাষ্ট্র এক ভয়াবহ মাইলফলক পার করছে। কারণ নভেল করোনাভাইরাসে মৃতু্য এক লাখ ছাড়িয়েছে। অনেক মার্কিন নাগরিকই ভাবছেন, তাদের প্রেসিডেন্ট মহামারি পরিস্থিতি খুব জঘন্যভাবে নিয়ন্ত্রণ করছেন। কারণ এক লাখের কাছাকাছি মৃতু্য আর কোনো দেশে ঘটেনি। এটিকে সবসময়ই ভিয়েতনাম যুদ্ধে ৬০ হাজার মার্কিনির মৃতু্যর সঙ্গে তুলনা করা হচ্ছে। এমনকি টাইমস স্কোয়ারে 'ট্রাম্প ডেথ ক্লক' স্থাপন করা হয়েছে, যেখানে প্রেসিডেন্টের অদক্ষতায় কতগুলো প্রাণহানি হচ্ছে, তার সংখ্যা দেখানো হচ্ছে। তবে ট্রাম্পের অদক্ষতার কারণেই যুক্তরাষ্ট্র করোনা নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়েছে, এটি এখনই নিশ্চিত ধরে নেয়া যায় না। দেশটির সরকারি হিসাবে মৃতু্যর হার ইউরোপীয় দেশগুলোর প্রায় সমান। সেখানেও অনেক মৃতু্য হয়েছে, তবে কম অস্থির নেতা এবং সর্বজনীন স্বাস্থ্যসেবা রয়েছে তাদের। ইতালির লোম্বার্দি শহরের মতোই আক্রান্ত হয়েছে নিউইয়র্ক, ক্যালিফোর্নিয়া দ্রম্নত ব্যবস্থা নেয়ায় তাদের অবস্থা অনেকটা জার্মানির মতো, গ্রামীণ রাজ্যগুলোও অনেকটা মধ্য ইউরোপের মতো সবচেয়ে ভয়াবহ অবস্থা থেকে বেঁচে গেছে। এ ক্ষেত্রে দুটি বিষয় পরিষ্কার হয়ে উঠেছে। প্রথমত, করোনা সংক্রমণ যখন প্রথম শুরু হলো, তখন রাষ্ট্রপ্রধানদের মধ্যে এ নিয়ে পরিকল্পনায় উদাসীনতা লক্ষ্য করা গেছে। এটি যখন নিউইয়র্ক, লন্ডন, প্যারিসের মতো বড় ও ঘনবসতিপূর্ণ শহরগুলোতে ছড়িয়ে পড়েছে, তখন সেখানকার লোকজন কেয়ারহোম, কসাইখানায় দলবদ্ধভাবে ঘুরেছে, এমনকি কারাগারেও গাদাগাদি করে রাখা হয়েছে। সেই সময় যুক্তরাষ্ট্রসহ অনেক দেশেই করোনা পরীক্ষা ছিল অপ্রতুল। করোনায় চীনে যা ঘটেছে, তা দেখে তাইওয়ান, সিঙ্গাপুর, ভিয়েতনামের মতো ট্রাম্পও দ্রম্নত ব্যবস্থা নিতে পারতেন। সংকটকালে সুস্পষ্ট সরকারি নির্দেশনা জারি বা কেন্দ্রীয়ভাবে সব ব্যবস্থার সমন্বয় করার মতো প্রত্যাশিত বিষয়গুলো বাস্তবায়নে ব্যর্থ হয়েছেন তিনি। এর বদলে বারবার হাতুড়ে চিকিৎসা, ভোটদান পদ্ধতি, এমনকি যে হত্যাকান্ড কখনোই ঘটেনি, তার জন্য এক টেলিভিশিন উপস্থাপককে দায়ী করায় ব্যস্ত ছিলেন এ রিপাবলিকান নেতা। তার এসব আচরণের জন্য বড় মূল্য দিতে হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রকে। তারপরও, দেশজুড়ে করোনা সংক্রমণের দোষ শুধু প্রেসিডেন্টের ঘাড়ে দেয়া কঠিন। কারণ বাস্তবতা বেশ জটিল। এখানেই উঠে আসে দ্বিতীয় বিষয়টি। করোনাভাইরাস সবসময়ই দরিদ্র ব্যক্তি, স্থূলতা-ডায়বেটিসের মতো অসুখে আক্রান্ত, বিশেষ করে সংখ্যালঘুদের মধ্যেই বেশি সংক্রমিত হয়েছে। তবে আশার কথা, যে কাজ প্রেসিডেন্টের করার কথা ছিল, স্থানীয় সরকারগুলো তার অনেকটাই করে দিয়েছে। এর জন্য অবশ্যই অকেন্দ্রীভূত শাসন ব্যবস্থাকে ধন্যবাদ দিতে হয়। বিভিন্ন অঙ্গরাজ্য, শহর ও কাউন্টিতে লকডাউনের ভিন্নতা রয়েছে। ক্যালিফোর্নিয়া সংক্রমণ শুরুর সঙ্গে সঙ্গেই ব্যবস্থা নিয়েছে। হোয়াইট হাউসকে অনেকটা বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় গভর্নররা কড়াকড়ি আরোপ করেছেন। এতে ম্যারিল্যান্ড ও ম্যাসাচুসেটসের গভর্নররা ট্রাম্পের বিরাগভাজন হলেও তাদের প্রতি সমর্থন বেড়েছে অনেকেরই। ফ্লোরিডায় গভর্নর না বললেও কাউন্টি কর্মকর্তারা ঠিকই লকডাউন জারি করেছেন। দেশব্যাপী আইনপ্রয়োগের এই ভিন্নতা দেশের দুর্বলতা নয়, বরং শক্তির দিক। আর মহামারির সময় এটি আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দেখা দিয়েছে। সুসংগঠিত অঙ্গরাজ্যগুলো প্রয়োজন অনুসারে তাদের পরীক্ষা (টেস্ট) করার সক্ষমতা ও ব্যবস্থা নির্ধারণ করেছে। এতে আক্রান্ত ব্যক্তি বা এলাকা দ্রম্নত শনাক্ত করে প্রয়োজন অনুসারে ব্যবস্থা নেয়া সহজ হয়েছে। কারণ প্রতিটি অঞ্চলই আলাদা, তাদের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাও আলাদা হওয়া উচিত। দেশব্যাপী উদ্যোগের চেয়ে এক্ষেত্রে আঞ্চলিক উদ্যোগই বেশি কার্যকর। মার্কিনিরা প্রেসিডেন্ট বা ফেডারেল সরকারের চেয়ে তাদের স্থানীয় কর্মকর্তাদেরই বেশি বিশ্বাস করে। আর যখন প্রশ্ন জনস্বাস্থ্যের, তখন প্রকৃত ক্ষমতা চলে আসে স্থানীয় কর্মকর্তাদের হাতেই। এই ধরনের ব্যবস্থা না থাকলে আজ যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থা হতো ব্রাজিলের মতো। সেখানকার প্রেসিডেন্টেরও হাইড্রোক্সিক্লোরোকুইনপ্রীতি ও মাস্কের ওপর অরুচি রয়েছে। এদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের জনস্বাস্থ্য ব্যবস্থা যদি ইউরোপের মতো হয়, তবে তাদের অর্থনৈতিক ব্যবস্থা আরও ভালো হওয়ার কথা। আর এটাই সত্য। তবে যুক্তরাষ্ট্রকে এখনো বহুপথ যেতে হবে। দেশটিতে এখনো যে হারে মানুষ মারা যাচ্ছে তাতে বছর শেষে আরও এক লাখ মৃতু্য দেখতে হতে পারে। এটি থেকে বাঁচতে দেশটিতে বর্তমানে যে ব্যবস্থা রয়েছে, তা নিয়েই এগিয়ে যেতে হবে। লকডাউন শেষে সব চালু করা ও সংক্রমণের ঝুঁকির মধ্যে ভারসাম্য আনতে স্থানীয় রাজনীতিবিদদের প্রতি আস্থা রাখতে হবে। সংবাদসূত্র : দি ইকোনমিস্ট

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে