শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১
সীমান্তে উত্তেজনা

পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে হঠাৎ লাদাখ সফরে মোদি

মোদির লাদাখ সফর নিয়ে কড়া বার্তা চীনের আরও ৩৩টি অত্যাধুনিক যুদ্ধবিমান কিনছে ভারত
যাযাদি ডেস্ক
  ০৪ জুলাই ২০২০, ০০:০০
আপডেট  : ০৪ জুলাই ২০২০, ১০:৩৩
লাদাখে সেনা সদস্যদের উদ্দেশে নরেন্দ্র মোদি

কাশ্মীর অঞ্চলের গালওয়ান উপত্যকা ঘিরে চীন-ভারত সংঘর্ষের দুই সপ্তাহ পর ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি হঠাৎই এক সফরে লাদাখে গিয়ে সীমান্ত রক্ষায় নিয়োজিত সেনা সদস্যদের সঙ্গে দেখা করেছেন। শুক্রবার স্থানীয় সময় ভোরে মোদি লাদাখ পৌঁছান বলে তার কার্যালয়ের দেওয়া বিবৃতিতে জানানো হয়েছে। সংবাদসূত্র : এনডিটিভি, এবিপি নিউজ, রয়টার্স লাদাখের লেহ্‌ ও সীমান্তের কাছাকাছি অবস্থিত ফরওয়ার্ড ল্যান্ডিং গ্রাউন্ড নিমুতে মোদির হেলিকপ্টার অবতরণের বিষয়টি ভারতের গণমাধ্যম নিশ্চিত করেছে। সফরে মোদির সঙ্গে ভারতের 'চিফ অব ডিফেন্স স্টাফ' জেনারেল বিপিন রাওয়াত এবং সেনাপ্রধান মনোজ মুকুন্দ নারাভানেও ছিলেন। জুনের মাঝামাঝি গালওয়ান উপত্যকায় চীন-ভারত সংঘর্ষে উভয় পক্ষই পাথর, রড ও লাঠি ব্যবহার করেছিল বলে বিভিন্ন সূত্র জানিয়েছে। লাইন অব অ্যাকচুয়াল কন্ট্রোল (এলএসি বা প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা) ঘিরে পাঁচ দশকের মধ্যে রক্তক্ষয়ী ওই সংঘর্ষের পর পারমাণবিক শক্তিধর দুই দেশের সেনা কমান্ডাররা দফায় দফায় বৈঠক করলেও সীমান্তে থমথমে ভাব কাটেনি। উভয় দেশ লাদাখের আশপাশে শক্তি বাড়াচ্ছে বলেও আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলোর খবরে বলা হয়েছে। শুক্রবার মোদি এলএসির বিভিন্ন সীমান্ত চৌকিতে গিয়ে জওয়ানদের সঙ্গে কথা বলেছেন। বৃহস্পতিবার ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংয়ের লাদাখ যাওয়ার কথা থাকলেও শেষ মুহূর্তে তা বাতিল হয়। কী কারণে রাজনাথের সফর বাতিল হয়েছে, তা নিয়ে নানা জল্পনা থাকলেও পরদিন যে খোদ ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী মোদিই সীমান্তে সেনাদের 'মনোবল চাঙা' করতে যাচ্ছেন, ঘুণাক্ষরেও তার আভাস পাওয়া যায়নি। নিরাপত্তার খাতিরেই প্রধানমন্ত্রীর এই সফরের বিষয়টি জানানো হয়নি বলে প্রাথমিকভাবে অনুমান করা হলেও মোদির হঠাৎ লাদাখ সফরকে 'চীনের জন্য বড় বার্তা' হিসেবে দেখছেন অনেক ভারতীয় পর্যবেক্ষক। পরিস্থিতি অত্যন্ত গুরুতর না হলে বা খুব বড় পদক্ষেপের কথা ভাবা না হলে, ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীকে সচরাচর সীমান্ত চৌকিতে যেতে দেখা যায় না বলে মন্তব্য করেছেন তারা। এদিন ফরওয়ার্ড পোস্টে মোতায়েন সেনা সদস্যদের সম্মান জানিয়ে মোদি বলেন, 'আপনাদের বীরত্বের জন্য দেশ সুরক্ষিত আছে। শান্তির জন্য শক্তি চাই। আপনারা সেটা দেখিয়ে দিয়েছেন।' এছাড়া চীনকে হুঙ্কার দিয়ে তিনি বলেন, 'গালওয়ান আমাদেরই'। চীনের 'আগ্রাসী' মনোভাব নিয়ে মোদি বলেন, 'এই যুগ বিকাশের। এখানে সাম্রাজ্যবাদী মানসিকতার বা চেষ্টার জায়গা নেই। সেটা সবাইকে বুঝতে হবে। বিশ্ব শান্তির জন্য বারবার বিপদ ডেকে এনেছে সাম্রাজ্যবাদী শক্তি। তবে ইতিহাস সাক্ষী, প্রত্যেকবারই তাদের পরাজিত হতে হয়েছে। ভারত শান্তির কথা বলে তবে প্রয়োজনে আমরা হাতিয়ার ধরতে জানি। গালওয়ান উপত্যকা আমাদের। লাদাখ ভারতের মুকুট।' এদিন জওয়ানদের আশ্বস্ত করে মোদি বলেন, সীমান্তে অবকাঠামো নির্মাণে খরচ তিনগুণ বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। ফলে সীমান্তে আরও দ্রম্নত সড়ক ও সেতু তৈরি হবে। পাশাপাশি চীনকে বার্তা দিয়ে তিনি বলেন, 'আমরা শান্তি চাই, তবে প্রয়োজনে দেশের সুরক্ষায় হাতিয়ার ব্যবহারেও পিছপা হব না।' ১৫ জুনের ওই সংঘর্ষে ভারত চীনকে 'উপযুক্ত জবাব দিয়েছে' বলে গত সপ্তাহে এক অনুষ্ঠানে মোদি মন্তব্য করেছিলেন। তিনি সে সময় বলেছিলেন, যারা লাদাখে ভারতীয় ভূখন্ডের দিকে তাকানোর সাহস দেখিয়েছে, তাদের যোগ্য জবাব দেওয়া হয়েছে। কীভাবে বন্ধুত্ব রাখতে হয়, সেটা যেমন ভারত জানে, তেমনই কীভাবে শত্রম্নর মোকাবিলা করতে হয় তাও আমাদের জানা রয়েছে।' মোদির লাদাখ সফর নিয়ে কড়া বার্তা চীনের এদিকে, নরেন্দ্র মোদির লাদাখ সফর নিয়ে কড়া বার্তা দিয়েছে চীন। শুক্রবার সরাসরি ভারতের নাম না করে বেইজিংয়ের প্রতিক্রিয়া, 'এই মুহূর্তে কোনো পক্ষেরই উচিত নয় উসকানিমূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করা।' এদিন চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ঝাও লিঝিয়ান বলেন, 'ভারত ও চীন আলোচনার মাধ্যমে সীমান্তে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার চেষ্টা করছে। এমন সময় কোনো পক্ষেরই উচিত নয়, এমন কিছু পদক্ষেপ নেয়া, যা পরিস্থিতি আরও জটিল করে তুলতে পারে।' সরাসরি প্রধানমন্ত্রী মোদির লাদাখ সফর নিয়ে কোনো মন্তব্য করেননি চীনা এই মুখপাত্র। কিন্তু কূটনৈতিক মহলের মতে, ১৫ জুন গালওয়ানে দুই পক্ষের সেনার রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের আবহে যে উত্তেজনা তৈরি হয়েছে, মোদির লাদাখ সফরে তা 'নতুন মাত্রা' পেতে পারে বলে ইঙ্গিত দিতে চেয়েছেন তিনি। আরও ৩৩টি অত্যাধুনিক যুদ্ধবিমান কিনছে ভারত অন্যদিকে, চীনের সঙ্গে উত্তপ্ত পরিস্থিতির মধ্যেই ৩৩টি অত্যাধুনিক যুদ্ধবিমান কেনার প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার। রাশিয়ার কাছ থেকে ১২টি 'সুখোই এসইউ-৩০ এসকেআই' এবং ২১টি 'মিগ-২৯এস' যুদ্ধবিমান কিনছে তারা। এছাড়া ভারতের হাতে থাকা ৫৯টি 'মিগ-২৯এস' যুদ্ধবিমান আরও উন্নত করা হচ্ছে। এই পুরো প্রকল্পে দেশটি খরচ করছে প্রায় ১৮ হাজার ১৪৮ কোটি রুপি। জানা গেছে, ভারতীয় বিমান ও নৌবাহিনীর জন্য ২৪৮টি 'এয়ার-টাইম এয়ার মিসাইল' কেনার ছাড়পত্র দিয়েছে দেশটির প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়। পাশাপাশি ডিফেন্স রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অরগানাইজেশনকে নতুন ক্রুজ মিসাইল (এক হাজার কিলোমিটার দূরে হামলা করতে সক্ষম) তৈরির ছাড়পত্রও দেয়া হয়েছে। লাদাখ সীমান্তে চীনের সঙ্গে সংঘর্ষের পর অত্যাধুনিক ৩৩টি যুদ্ধবিমান কেনার প্রস্তাব দেয় ভারতীয় বিমানবাহিনী। ২০১৬ সালে ৩৬টি রাফায়েল যুদ্ধবিমান কেনার চুক্তি স্বাক্ষরের পর দ্বিতীয় পর্যায়ে এই ৩৩টি যুদ্ধবিমান কিনতে যাচ্ছে ভারত।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে