মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১
করোনা মহামারি

রাশিয়াকে টপকে বিশ্বে তৃতীয় ভারত

সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় খুলছে না তাজমহল, দিলিস্নর লালকেলস্নাও বন্ধ থাকছে লকডাউন উঠে যাওয়ায় আক্রান্ত-মৃতু্য বাড়ছে
যাযাদি ডেস্ক
  ০৭ জুলাই ২০২০, ০০:০০
আপডেট  : ০৭ জুলাই ২০২০, ১০:১২
ভারতে একজনের নমুনা সংগ্রহ করা হচ্ছে

সামনে শুধু যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রাজিল। করোনা আক্রান্তের সংখ্যার নিরিখে এবার রাশিয়াকে টপকে তৃতীয় স্থানে চলে এলো ভারত। দেশটিতে এখন করোনা রোগীর সংখ্যা সাত লাখ ছাড়িয়ে গেছে। ফ্রান্স, ইতালি, যুক্তরাজ্যের মতো দেশকে পেছনে ফেলে কয়েক সপ্তাহ ধরে চতুর্থ স্থানে ছিল ভারত। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে দ্রম্নতগতিতে সংক্রমণ বৃদ্ধির জেরে দেশটি এবার পেছনে ফেলল রাশিয়াকে। সংবাদসূত্র : ডয়চে ভেলে, পিটিআই, এএনআই, এবিপি নিউজ, এনডিটিভি ভারতের কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় দেশটিতে আক্রান্ত হয়েছে ২৪ হাজারের বেশি। ভারতের ক্ষেত্রে এটাও রেকর্ড। কারণ একদিনে এতজন আগে আক্রান্ত হয়নি। তবে আশ্বস্ত হওয়ার মতো তথ্য হলো, ভারতে করোনা সেরে যাওয়ার হার প্রায় ৬১ শতাংশ। আর সব মিলিয়ে দেশটিতে মারা গেছে ১৯ হাজার ৭১৪ জন। করোনায় এত লোকের আক্রান্ত হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে তাজমহল আপাতত বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তাজমহল, ফতেপুর সিক্রি, আগ্রা ফোর্টসহ আগ্রার কোনো ঐতিহাসিক জায়গাই আপাতত খোলা হচ্ছে না। খুলছে না দিলিস্নর লালকেলস্নাও। বর্তমান করোনা পরিস্থিতি দেখেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আগ্রাতেই ৭১টি উপদ্রম্নত এলাকা হয়েছে, যেখানে প্রবলভাবে করোনার বিস্তার ঘটছে। আর দিলিস্নর উপদ্রম্নত এলাকার সংখ্যা ৪৪৮। আগে মুম্বাই, দিলিস্ন, আহমেদাবাদের অবস্থা খারাপ ছিল। এখন ব্যাঙ্গালুরু, গুয়াহাটিসহ ভারতের অনেকগুলো শহরে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। কেরালার তিরুবনন্তপুরম সাত দিনের জন্য সম্পূর্ণ লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে। পুলিশ ও অত্যাবশ্যকীয় পেশার লোকজন ছাড়া কেউ বাইরে বেরুতে পারবে না। ব্যাঙ্গালুরু প্রতি রোববার পুরোপুরি লকডাউনে থাকছে। গুয়াহাটিতে ১৫ দিনের জন্য লকডাউন চলছে। শুরুর ধাক্কা কাটিয়ে করোনার সংক্রমণ বৃদ্ধি রুখে দিয়েছিল কেরালা। কিন্তু মহারাষ্ট্রে তা বল্গাহীনভাবেই বেড়েছে। শুরু থেকেই এই রাজ্য কার্যত সংক্রমণের শীর্ষে ছিল। তারপর সময় যত গড়িয়েছে, রাজ্যটি নিয়ে সারা ভারতে শঙ্কা বেড়েছে। গত রোববার রাজ্যটিতে আক্রান্তের সংখ্যা দুই লাখ ছাড়িয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় ছয় হাজার ৫৫৫ জন নতুন করে আক্রান্ত হয়েছে সেখানে। এ নিয়ে কেরালায় আক্রান্ত হয়েছে প্রায় দুই লাখ সাত হাজার। গত ২৪ ঘণ্টায় তামিলনাড়ুতে চার হাজারের বেশি বেড়ে মোট আক্রান্তের সংখ্যা হয়েছে এক লাখ ১১ হাজার ১৫১ জন। দিলিস্নতে আক্রান্তও প্রায় এক লাখ। গত ২৪ ঘণ্টায় প্রায় দুই হাজার ২০০ বেড়ে দিলিস্নতে মোট আক্রান্তের সংখ্যা হয়েছে ৯৯ হাজার ৪৪৪ জন। ভারতের মোট সংক্রমণের মধ্যে ৬০ শতাংশই এই তিনটি রাজ্য থেকে। দিলিস্নতে 'ডিফেন্স রিসার্চ অরগানইজেশন' বা ডিআরডিও বিমানবন্দরের কাছে ১১ দিনের মধ্যে এক হাজার শয্যার হাসপাতাল বানিয়ে দিয়েছে। সেখানে ২৫০টি আইসিইউ আছে। অক্সিজেন, ভেন্টিলেটারের ব্যবস্থা রয়েছে। প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের জমিতে অস্থায়ীভাবে এই হাসপাতাল তৈরি করা হয়েছে। দিলিস্নতে যে হারে লোক করোনায় আক্রান্ত হচ্ছে, তত হাসপাতাল নেই। সেজন্যই দ্রম্নত এই হাসপাতাল তৈরি করেছে ডিআরডিও। এদিকে, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অনুরোধে কেন্দ্রীয় বেসামরিক বিমান পরিবহণ মন্ত্রণালয় ঠিক করেছে, দিলিস্ন, মুম্বাই, পুনে, নাগপুর, চেন্নাই ও আহমদাবাদ থেকে কোনো বিমান আপাতত কলকাতায় যাবে না। এই শহরগুলোতে করোনার প্রকোপ বেশি। তাই পশ্চিমবঙ্গ সরকার এসব জায়গার সঙ্গে বিমান চলাচল বন্ধ রাখতে চাইছে। পশ্চিমবঙ্গেও করোনা রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। গত ২৪ ঘণ্টায় এই রাজ্যে করোনায় আক্রান্ত হয়েছে কমপক্ষে ৮৯৫ জন। মারা গেছে ২১ জন। কোভিডে আক্রান্ত হয়ে এ পর্যন্ত ৭৫৭ জনের মৃতু্য হয়েছে পশ্চিমবঙ্গে। লকডাউন উঠে যাওয়ার পরই মূলত পশ্চিমবঙ্গে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েছে। ভারতে এখন আগের থেকে অনেক বেশি লোকের করোনা পরীক্ষা হচ্ছে। গত ২৪ ঘণ্টায় দেশটিতে এক লাখ ৮০ হাজার ৫৯৬ জনের করোনা পরীক্ষা হয়েছে। ৫ জুলাই পর্যন্ত ৯৯ লাখের বেশি মানুষের করোনা পরীক্ষা হয়েছে। দিলিস্নতে প্রতিদিন এখন ২০ হাজার বা তার বেশি লোকের করোনা পরীক্ষা করা হচ্ছে। আক্রান্ত হচ্ছে গড়ে দুই হাজার ৫০০ জনের মতো। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ উত্তরপ্রদেশ সরকারকে আরও বেশি করে করোনা পরীক্ষা করার নির্দেশ দিয়েছেন।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে