বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১
করোনা সংক্রমণ

বিশ্ব মানচিত্রে নতুন 'হটস্পট' হয়ে উঠছে ভারত

প্রকৃত আক্রান্ত তিন থেকে চার কোটির মতো হতে পারে : বিশেষজ্ঞ তবে দেশটিতে সুস্থতার হার মৃতু্যর চেয়ে বেশি
যাযাদি ডেস্ক
  ১২ জুলাই ২০২০, ০০:০০

ভারতে করোনার সংক্রমণ শুরুর দিকে ধীর গতিতে হয়েছিল। কিন্তু প্রথম সংক্রমণ শনাক্ত হওয়ার ছয় মাস পর, এখন রাশিয়াকে টপকে সবচেয়ে সংক্রমিত দেশগুলোর তালিকায় তৃতীয় স্থানে উঠে এসেছে বিশ্বের দ্বিতীয় সবচেয়ে জনবহুল দেশ ভারত। দেশটির জনসংখ্যার বিশাল অংশ বাস করে জনাকীর্ণ শহরগুলোতে।

করোনার ছোবলে বিশ্বের 'হটস্পট' হয়ে উঠবে ভারত, এটা প্রথম থেকেই আশঙ্কা করা হচ্ছিল। আর দেশটিতে করোনাভাইরাসের পরিসংখ্যান নিয়ে শুরু থেকেই নানা প্রশ্ন ছিল। কারণ ভারতে যথেষ্ট পরীক্ষা হচ্ছে না এবং দেশটিতে অস্বাভাবিক কম মৃতের হারে বিজ্ঞানীরাও বিভ্রান্ত।

ভারতে আক্রান্ত দ্রম্নত বাড়ছে

ভারতে সম্প্রতি টানা বেশ কয়েকদিন আক্রান্তের সংখ্যা চূড়ায় পৌঁছানোর রেকর্ড হয়েছে। সর্বশেষ শুক্রবার পর্যন্ত ভারতে নিশ্চিত কোভিড শনাক্তের সংখ্যা ৮ লাখের গন্ডি ছাড়িয়েছে। কিন্তু দেশটির জনগোষ্ঠীর মধ্যে সংক্রমণের হারের প্রকৃত চিত্র এটা নয় বলেই মনে করছেন ভাইরাসতত্ত্ববিদ শাহীদ জামিল।

গত মে মাসে ভারত সরকার সাধারণ মানুষের কাছ থেকে ২৬ হাজার নমুনা নেয়, যার মধ্যে ০.৭৩ শতাংশ নমুনায় ভাইরাস পাওয়া যায়। কিছু বিশেষজ্ঞ নমুনার সংখ্যা নিয়ে সন্তুষ্ট নন। কিন্তু ড. জামিলের মতো অন্য আরও কয়েকজন বিশেষজ্ঞ বলছেন, সারা দেশ থেকে সংগ্রহ করা এই নমুনাগুলোই দেশব্যাপী সংক্রমণের সার্বিক চিত্র তৈরি করার একমাত্র ভিত্তি।

ড. জামিল বলেন, 'এই নমুনার ফল যদি সারা দেশের জনগোষ্ঠীর ক্ষেত্রে প্রয়োগ করা হয়, তাহলে বলতে হবে, মে মাসের মাঝামাঝি ভারতে মোট সংক্রমিতের সংখ্যা ছিল এক কোটি। শনাক্ত রোগীর সংখ্যা যেহেতু প্রতি ২০ দিনে বেড়ে দ্বিগুণ হচ্ছে, সেই হিসাব ধরলে এই মুহূর্তে আক্রান্তের সংখ্যা দেশটিতে দাঁড়ায় তিন থেকে চার কোটির মধ্যে। তিনি আরও বলেন, 'নিশ্চিত বলে শনাক্ত এবং সত্যিকার সংক্রমিতের মধ্যে হিসাবের যে ফারাক, তা প্রত্যেক দেশেই আছে- তবে তা বেশি-কম। এর ফারাক কমানোর একমাত্র পথ হলো টেস্টিং। আপনি যত বেশি টেস্ট করবেন, তত বেশি লোক শনাক্ত হবে।'

ভারতে সাম্প্রতিক কয়েক সপ্তাহে সেটাই হয়েছে- সরকার টেস্ট বাড়িয়ে দিয়েছে এবং আক্রান্তের সংখ্যাও হঠাৎ লাফিয়ে বেড়েছে। ভারতে ১৩ মার্চ থেকে এ পর্যন্ত মোট টেস্ট হয়েছে এক কোটির বেশি।

ভারত যথেষ্ট টেস্ট করছে না

ভারতে আক্রান্ত রোগী সংখ্যার হিসাবে খুবই বেশি, কিন্তু মাথাপিছু হিসাবে দেখলে তা অপেক্ষাকৃত কমই। বিশ্বে আক্রান্তের যে সংখ্যা তা মাথাপিছু হিসাবে ভারতের চেয়ে গড়ে তিন গুণ বেশি।

তবে ড. জামিল বলেন, ভারতে আক্রান্তের মাথাপিছু হিসাব কম। তার কারণ ভারতে টেস্টের সংখ্যা খুবই কম। এছাড়া সুস্থ হওয়ার হার মৃতু্য হারের থেকে বেশি। অন্য যেসব দেশে মাথাপিছু শনাক্তের হার বেশি, তার সঙ্গে তুলনা করলে দেখা যাবে, তারা পরীক্ষা করছে অনেক বেশি।

প্রথম দিকে ভারত জোর দিয়েছিল শুধু তাদেরই মধ্যে টেস্ট সীমিত রাখতে, যাদের আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি এবং তাদের সংস্পর্শে যারা এসেছে। এর বাইরের জনগোষ্ঠীকে তারা টেস্টের আওতায় আনেনি।

সংক্রমণ যখন দ্রম্নত ছড়াতে শুরু করে, তখন টেস্ট এবং ট্রেস আর কাজ করে না বলে জানান হিমাংশু তেয়াগি এবং আদিত্য গোপাল, যারা কোভিড-১৯ এর পরীক্ষা কৌশল নিয়ে কাজ করেছেন। তারা বলছেন, এই পর্যায়ে টেস্টিং ভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে সাহায্য করে। কিন্তু যাদের মধ্যে ভাইরাস থাকলেও শনাক্ত হয়নি, তাদের আর খুঁজে বের করা যায় না।

বিজ্ঞানীরা একজন শনাক্ত ব্যক্তিকে খুঁজে বের করতে কত টেস্ট করা হয়েছে, সেটার হিসাবের ওপর জোর দিতে চান। টেস্টের পরিসর যত ব্যাপক করা যাবে, তত পজিটিভ শনাক্তের হার কমবে। সে কারণে নিউজিল্যান্ড এবং তাইওয়ানে এই হার এক শতাংশের অনেক কম।

ভারতের পজিটিভ রোগীর হার এপ্রিলে ছিল ৩.৮ শতাংশ। জুলাইয়ে সেই হার বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬.৪। এটা ক্রমেই বাড়ছে। এর কারণ টেস্ট এখন ব্যাপক পরিসরে হচ্ছে না। টেস্ট হচ্ছে শুধু সীমিত পরিসরে উচ্চঝুঁকির জনগোষ্ঠীর এবং তাদের সংস্পর্শে আসা কিছু লোকের।

সুস্থতার হার সন্তোষজনক

তথ্য উপাত্তে দেখা যাচ্ছে, ভারতে যাদের ভাইরাসের শনাক্ত হচ্ছে, তারা সেরে উঠছে দ্রম্নত। সুস্থ হওয়ার হার মৃতু্য হারের থেকে বেশি। এটা গুরুত্বপূর্ণ বলছেন ড. জামিল। কারণ এতে বোঝা যায়, স্বাস্থ্য ব্যবস্থার ওপর কতটা চাপ পড়ছে।

বর্তমানে সেরে ওঠার হার শনাক্ত ও মৃতু্য হারের থেকে অনেক ওপরে। আর বেশি মানুষের সেরে ওঠার অর্থ স্বাস্থ্য পরিষেবার ওপর বেশি চাপ। টেস্টিং কম হওয়ার একটা অর্থ হলো, নতুন সংক্রমণ নথিভুক্ত হচ্ছে কম এবং ধীরে। আর নতুন সংক্রমণ নথিভুক্ত কম হলে স্বভাবতই সুস্থ হওয়ার হার বেড়ে যাবে।

বিশ্বের যেসব দেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা বেশি, সেসব দেশের তুলনায় ভারতে সুস্থ হয়ে ওঠার গ্রাফের ঊর্ধ্বমুখী চিত্র অনেক ইতিবাচক। এটা ধারণা দেয়, যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রাজিলের তুলনায় ভারতে কোভিড রোগীরা সুস্থ হচ্ছে সংখ্যায় বেশি এবং দ্রম্নত। যুক্তরাষ্ট্রে যেখানে এই হার ২৭ শতাংশ, ভারতের ক্ষেত্রে সেই হার ৬০।

মৃতের হার কম ভারতে

ভারতে কোভিড-১৯-এ এ পর্যন্ত মারা গেছে প্রায় ২০ হাজার ১৬০। সংখ্যা দিয়ে হিসাব করলে ভারতের স্থান আসবে বিশ্ব মানচিত্রে ৮ নম্বরে। কিন্তু জনসংখ্যার প্রতি ১০ লাখের হিসাবে এই হার আসলে কম। 'ব্রম্নকিংস ইনস্টিটিউশন'র অর্থনীতিবিদ শামিকা রাভি বলেন, 'এটা পশ্চিম ইউরোপে মৃতের হারের তুলনায় খুবই নগণ্য।' তবে ভারতে মৃতের হার নিয়ে অনেক প্রশ্ন রয়েছে।

বেশিরভাগ বিশেষজ্ঞ মনে করেন, ভারত এই সংখ্যা সম্ভবত কমিয়ে বলছে। তবে ড. রাভি মনে করেন, সেটা সম্ভব নয়। তিনি বলেন, 'ভারতে মৃতের হার যদি বেশি হতো, কোনো তথ্য দিয়ে তা গোপন রাখা সম্ভব হতো না। কারণ ইউরোপ আর ভারতের মধ্যে মৃতের হারের তফাৎটা ব্যাপক।' ভারতে মৃতের হার ওই এলাকার অন্যান্য দেশের সঙ্গেও সামঞ্জস্যপূর্ণ, যেমন পাকিস্তান বা ইন্দোনেশিয়া।

ভারতের প্রত্যেক রাজ্য আলাদা

যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের মতোই করোনাভাইরাসের পরিসংখ্যান ভারতের একেক রাজ্যে একেক রকম। ভারতের শনাক্ত রোগীর ৬০ শতাংশই দিলিস্ন, মহারাষ্ট্র এবং তামিলনাডুতে। ভারতের এক রাজ্যে আক্রান্তের হার যখন কমে, তখন আবার দেখা যায় অন্য রাজ্যে তা ঊর্ধ্বমুখী। দক্ষিণে কর্ণাটক এবং তেলেঙ্গানায় আক্রান্ত সম্প্রতি বেড়েছে। দক্ষিণেরই অন্ধ্রপ্রদেশে আক্রান্তের সংখ্যা বরাবরই ওপরের দিকে। সংবাদসূত্র :বিবিসি নিউজ

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<105605 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1