মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১
করোনার বিস্তার

ঢিলেঢালা লকডাউনে সংক্রমণ বৃদ্ধি যুক্তরাষ্ট্রে : ফাউচি

কঠোরভাবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার তাগিদ তার ফাউচির ভাবমূর্তি নষ্টে মরিয়া ট্রাম্প প্রশাসন
যাযাদি ডেস্ক
  ১৫ জুলাই ২০২০, ০০:০০
ডা. অ্যান্থনি ফাউচি

পুরোপুরি না করে ঢিলেঢালাভাবে লকডাউন জারি এবং এরপর বিধিনিষেধ শিথিলে তাড়াহুড়ার কারণেই যুক্তরাষ্ট্রে ফের সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতি দেখা যাচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন দেশটির শীর্ষ সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ ডা. অ্যান্থনি ফাউচি। 'স্ট্যানফোর্ড মেডিসিন'কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি কোভিড-১৯ নির্মূলে হোয়াইট হাউস টাস্ক ফোর্সের দেওয়া নির্দেশনা কঠোরভাবে মেনে চলারও তাগিদ দিয়েছেন। সংবাদসূত্র : রয়টার্স, সিএনএন শারীরিক দূরত্ব, মাস্ক পরা, ভিড় এড়িয়ে চলা এবং হাত ধোয়ার মতো মৌলিক সুরক্ষার বিষয়গুলো মেনে চলার ওপর জোর দিয়েছেন ফাউচি। তিনি বলেন, 'এসব বিষয়, যেগুলো সহজেই করা যায়, পরিস্থিতি বদলে দিতে পারে। আমার মনে হয়, আমরা এটা পারবো। এগুলো আমাদের করতেই হবে।' এছাড়া প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের ফের ঊর্ধ্বগতিতে দৃঢ় সতর্কবার্তা জানিয়েছেন ফাউচি। হোয়াইট হাউসের করোনাভাইরাস বিশেষজ্ঞরা ধাপে ধাপে বিধিনিষেধ শিথিলের যে সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা দিয়েছিলেন, যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন রাজ্যকে আগেও তা অনুসরণ করতে বলেছিলেন তিনি। যুক্তরাষ্ট্রের 'ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব অ্যালার্জি অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিজ'র পরিচালক ফাউচি বলেন, 'আমরা পুরোপুরি শাটডাউন করতে পারিনি, এ কারণেই আমাদের সংক্রমণের হার আবার ঊর্ধ্বমুখী হয়েছে। আমাদের আক্রান্তের সংখ্যা নামতে শুরু করেছিল। কিন্তু যখন গ্রাফ খানিকটা সমতল ছিল, তখনো এ সংখ্যা তুলনামূলক বেশিই ছিল; দিনে প্রায় ২০ হাজারের মতো আক্রান্ত হচ্ছিল।' তিনি বলেন, 'এরপরই আমরা বিধিনিষেধ শিথিল করে সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতি দেখতে শুরু করি, যার ধারাবাহিকতায় আমরা এখন ক্যালিফোর্নিয়া, অ্যারিজোনা, টেক্সাস, ফ্লোরিডা ও আরও কিছু রাজ্যের বাজে অবস্থা দেখছি।' করোনাভাইরাস বিষয়ক টাস্ক ফোর্সের নির্দেশনায় থাকা শর্ত পূরণ হওয়ার আগেই অনেক রাজ্য অর্থনীতি ফের সচলে পদক্ষেপ নেওয়া শুরু করে। 'দুর্ভাগ্যজনকভাবে এটি (তাড়াহুড়া করে খুলে দেওয়া) আমাদের জন্য ভালো হয়নি,' বিভিন্ন রাজ্যের পানশালাগুলোতে তুমুল ভিড় ও নির্দেশনা অনুযায়ী মাস্ক না পরার বিষয়ে ইঙ্গিত করে বলেন ফাউচি। নির্দেশনা অনুযায়ী চললে যুক্তরাষ্ট্র যে এখনো প্রাণঘাতী এ ভাইরাস মোকাবিলায় সক্ষম হবে, তা নিয়ে কোনো সংশয় নেই এ সংক্রামক বিশেষজ্ঞের। তিনি বলেন, 'যদি আমরা পিছিয়ে যাই, ফের লকডাউন করার দরকার নেই, কেবল খানিকটা পিছিয়ে আসতে হবে, তারপর বিচক্ষণতার সঙ্গে নির্দেশনাগুলো দেখে ধাপে ধাপে অগ্রসর হতে হবে।' ফাউচির ভাবমূর্তি নষ্টে মরিয়া ট্রাম্প প্রশাসন এদিকে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সঙ্গে স্বাস্থ্যখাতে বিশেষজ্ঞদের মতবিরোধের কারণে তার প্রশাসনের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়েছেন যুক্তরাষ্ট্র তথা বিশ্বের শীর্ষ সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ এবং হোয়াইট হাউসের করোনা টাস্কফোর্সের অন্যতম সদস্য ডা. অ্যান্থনি ফাউচি। ফাউচিকে নিয়ে হোয়াইট হাউসে সমালোচনা আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে। দেশজুড়ে করোনাভাইরাসের ঊর্ধ্বমুখী সংক্রমণ নিয়ে কাজ করা নয়, বরং হোয়াইট হাউস এখন অ্যান্থনি ফাউচির মতো গোটা যুক্তরাষ্ট্রে সবচেয়ে জনপ্রিয় একজন ব্যক্তিত্বের সুনাম নষ্ট করার মতো কাজে ব্যস্ত। হোয়াইট হাউসে ফাউচির সমালোচনা বৃদ্ধির মধ্যেই রোববার ট্রাম্প প্রশাসন এক তালিকা প্রকাশ করেছে। তাতে অতীতে 'বিভ্রান্তিকর' মন্তব্যের বিস্তারিত প্রকাশ করা হয়েছে। ওই তালিকায় ফাউচির মন্তব্যও তুলে ধরেছে হোয়াইট হাউস। করোনা পরিস্থিতি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ কেন্দ্র (সিডিসি), চিকিৎসক, গণমাধ্যম এবং বিরোধীদল ডেমোক্রেট পার্টি মিথ্যা বলছে বলে দাবি ট্রাম্পের। অথচ যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বের শীর্ষ আক্রান্ত দেশ। সংক্রমণ ও মৃতু্যতে যুক্তরাষ্ট্রের ধারে কাছে নেই কোনো দেশ। ট্রাম্প করোনা নিয়ে এখন পর্যন্ত অসংখ্যবার অসংলগ্ন কথাবার্তা বলেছেন। এ কারণেই প্রেসিডেন্টের এসব মন্তব্য নিয়ে অ্যান্থনি ফাউচির সঙ্গে মতপার্থক্য দেখা গেছে অনেকবার। ট্রাম্পের দাবি, মহামারির অবস্থা ভালোর দিকে, অথচ তার মন্তব্যের সময় দেশটিতে রেকর্ড সর্বোচ্চ শনাক্তের ঘটনা ঘটছে। করোনার সংক্রমণ শুরু হলে ফাউচি হয়ে ওঠেন যুক্তরাষ্ট্রের সব মানুষের একটা ভরসার জায়গা। যুক্তরাষ্ট্র যেহেতু গবেষণা ক্ষেত্রে বিশেষ আধিপত্য দেখায়, বিশ্বজুড়েই তার ওপর এক ধরনের ভরসা তৈরি হয়েছে। তিনি এর আগে থেকেই মার্কিনিদের চোখে একজন 'হিরো' হিসেবেই পরিচিত। অথচ ফাঁস হওয়া নথি থেকে জানা যায়, ফাউচি অনেক সময় ভুল কথা বলেছেন (মূলত প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প যেসব কথা বলেছেন বিজ্ঞানকে ভিত্তি হিসেবে ধরে ফাউচি যেসব পাল্টা যুক্তি তুলে ধরেছেন) সেগুলোর জন্য হোয়াইট হাউসের অনেকেই তার ওপর নাখোশ।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে