মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১
বৈরুত বিস্ফোরণ

ক্ষোভে ফুঁসছে লেবাননের মানুষ

মৃতের সংখ্যা বেড়ে ১৫৭ আহত ৫ হাজারের বেশি ঘরহারা তিন লাখ মানুষ, মজুত খাদ্যের ৮৫ শতাংশই ধ্বংস
যাযাদি ডেস্ক
  ০৭ আগস্ট ২০২০, ০০:০০
আপডেট  : ০৭ আগস্ট ২০২০, ১০:৪০

লেবাননের রাজধানী বৈরুতে গত মঙ্গলবারের ভয়াবহ বিস্ফোরণের জন্য সরকারের অবহেলাকেই দায়ী করছে সাধারণ মানুষ। এরই মধ্যে দেশটির বন্দরের কয়েকজন কর্মকর্তাকে গৃহবন্দি করা হয়েছে। ঘটনার তদন্ত চলাকালে তাদের গৃহবন্দি করা হলো। বৈরুত কাঁপানো এই বিস্ফোরণে এখন পর্যন্ত ১৫৭ জন নিহত হয়েছে এবং আহত হয়েছে পাঁচ হাজারের বেশি মানুষ। বিস্ফোরণে বহু ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এই ঘটনার পর লেবাননে দুই সপ্তাহের জন্য জরুরি অবস্থা জারি করা হয়েছে। তবে বিস্ফোরণের জন্য সরকারকে দায়ী করে এর বিচার চাইছে লেবাননের মানুষ। সংবাদসূত্র : বিবিসি, রয়টার্স, গার্ডিয়ান গত মঙ্গলবার বিকালে বৈরুতের বন্দর এলাকার এই বিস্ফোরণে পুরো বৈরুত শহর ভূমিকম্পের মতো কেঁপে ওঠে। বুধবার উদ্ধারকারীরা আরও বেশ কিছু দেহ ধ্বংসস্তূপ থেকে টেনে বের করেছে। নিখোঁজ আরও মানুষের সন্ধান চলছে। শতাধিক মানুষ এখনো নিখোঁজ বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী হামাদ হাসান। বিস্ফোরণস্থলে ধ্বংসস্তূপ সরানোর কাজ চলতে থাকায় হতাহতের সংখ্যা আরও বাড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। অর্থনৈতিক সংকট আর করোনাভাইরাস মহামারির সঙ্গে লড়তে থাকা বৈরুতে বহু বছরের মধ্যে বিস্ফোরণে হতাহতের সবচেয়ে বড় ঘটনা এটি। যুক্তরাজ্যের শেফিল্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীরা বলেন, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় জাপানের হিরোশিমা শহরে যে পারমাণবিক বোমা ফেলা হয়েছিল, সেটির ১০ ভাগের এক ভাগ শক্তি ছিল বৈরুত বিস্ফোরণে। তারা বলছেন, বৈরুতের এই বিস্ফোরণ ইতিহাসের সবচেয়ে বড় পারমাণবিক-বহির্ভূত বিস্ফোরণ। বিস্ফোরণের আঘাতে ভূমধ্যসাগরের তীর ও বন্দরের কাছের আবাসিক জেলাগুলো সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে বাদ যায়নি আরেকটু দূরবর্তী এলাকাও। বিস্ফোরণে 'শক ওয়েভ' কয়েক মাইল দূরে পাহাড়ি এলাকার বিভিন্ন ভবনের জানালাও ভেঙে দিয়েছে। নগরের প্রাণকেন্দ্রে শহরটির গুরুত্বপূর্ণ হোটেলগুলোর জানালার দেয়াল ভেঙে গেছে, জানালার পর্দা বাতাসে ভবনের বাইরে উড়ছে। লেবাননের গৃহযুদ্ধের পর পুনর্নির্মিত শহরের উপকণ্ঠ ছিল ধ্বংসস্তূপ থেকে ঘুরে দাঁড়ানোর গর্বের চিহ্ন। সেখানকার দামি বুটিকের দোকান, রেস্তোরাঁ ধসে পড়েছে, মিশে গেছে ধুলায়। খ্রিষ্টান এলাকা গেম্মায়জেহ ঐতিহাসিক ভবন, গির্জা ও হইচইপূর্ণ রাত যাপনের জন্য পরিচিত। বিস্ফোরণে তা যুদ্ধবিধ্বস্ত এলাকাতে পরিণত হয়েছে। গাছ ভেঙে সড়ক বন্ধ হয়ে গেছে, ভাঙা কাচ নিয়ে গাড়ি উল্টে পড়ে আছে রাস্তার পাশে। শহরের সব প্রান্তেই দেখা গেছে মানুষ কাচ কুড়াচ্ছে, দোকান, বাসা ও বারান্দা থেকে ধুলা ও রক্ত পরিষ্কার করছে। কিন্তু গভীর অর্থনৈতিক সংকটে থাকা দেশটির বাসিন্দাদের কোনো ধারণা নেই, কীভাবে এসব পুনরায় সচল করবে। লেবাননের সাধারণ মানুষ বিস্ফোরণের ঘটনার জন্য রাজনীতিবিদদের দায়ী করেছে। যারা দশকের পর দশক ধরে দেশে দুর্নীতি এবং অপশাসনকে আমলে দেয়নি। এক লেবাননীর কথায়, 'বিস্ফোরণের এই ঘটনা লেবাননের পতন সুনিশ্চিত করেছে। আমি আদতেই শাসক শ্রেণিকে দায়ী করছি।' বৈরুতের অধিবাসী চাদিয়া এলউচি এই মুহূর্তে হাসপাতালে লড়ছেন। ক্ষোভ উগড়ে দিলেন তিনিও বলেন, 'আমি সবসময়ই জানতাম, কতগুলো অযোগ্য লোক আর অযোগ্য সরকার এই দেশ পরিচালনা করছে। কিন্তু আমি বলতে চাই, এখন তারা যেটা করেছে, সেটা ভয়ংকর অপরাধ।' মানুষের ক্ষোভের পরিপ্রেক্ষিতে দেশটির সুপ্রিম ডিফেন্স কাউন্সিল বলছে, দোষী ব্যক্তিদের সর্বোচ্চ সাজা দেওয়া হবে। অন্যদিকে, অ্যামনেস্টি ইন্ট্যারন্যাশনাল এবং হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বিস্ফোরণের ঘটনায় স্বতন্ত্র তদন্তের দাবি জানিয়েছে। তারা সরকারি তদন্তের স্বচ্ছতা ও বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করছে। বিস্ফোরণের শুরুতে কারণ স্পষ্ট ছিল না। তবে পরে দেশটির কর্মকর্তারা বিস্ফোরকের গুদামে বিস্ফোরণ ঘটার কথা জানান। এ ঘটনার জন্য কর্তৃপক্ষের গাফিলতিকে দায়ী করা হচ্ছে প্রাথমিক তদন্তে। ঘরহারা তিন লাখ মানুষ, মজুত খাদ্যের ৮৫ শতাংশই ধ্বংস এদিকে, বৈরুতকে তছনছ করে দেওয়া ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনায় হতাহতের পাশাপাশি প্রায় তিন লাখ মানুষ গৃহহীন হয়েছে বলে জানিয়েছেন শহরটির গভর্নর মারওয়ান আবুদ। মঙ্গলবারের ওই বিস্ফোরণে বৈরুত শহরের অর্ধেক অংশই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলেও জানিয়েছেন তিনি। বিস্ফোরণে লেবাননের মজুত খাদ্যশস্যের ৮৫ শতাংশ ধ্বংস হয়ে গেছে বলে বুধবার জানা গেছে। মধ্যপ্রাচ্যের এ দেশটি আমদানি করা খাদ্যশস্যের ওপর অনেকাংশে নির্ভরশীল। খাদ্যশস্যের এখন যা মজুত আছে, তা দিয়ে দেশটি বড় জোর আর এক মাস চলতে পারবে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে