শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১
বৈরুত বিস্ফোরণ

খাদের কিনারে লেবাননের ভবিষ্যৎ

সহায়তায় দ্রম্নত এগিয়ে আসা বিশ্ব নেতাদের দায়িত্ব :ম্যাখোঁ চার মন্ত্রীর পদত্যাগের পর ৯ এমপিও একই পথে
যাযাদি ডেস্ক
  ১১ আগস্ট ২০২০, ০০:০০
ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাখোঁ

ভয়াবহ বিস্ফোরণে লেবাননের ভবিষ্যৎ ভয়াবহ ঝুঁকির মধ্যে পড়ে গেছে। এ অবস্থায় দেশটির সহায়তায় দ্রম্নত এগিয়ে আসা বিশ্বনেতাদের দায়িত্ব বলে মনে করেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাখোঁ। বৈরুতের পাশে দাঁড়াতে রোববার আয়োজিত জরুরি দাতা সম্মেলনে ভিডিও লিংকের মাধ্যমে ম্যাখোঁ বলেন, 'আজ আমাদের কাজ হলো, যত দ্রম্নত এবং কার্যকরভাবে সম্ভব মাঠ পর্যায়ে আমাদের সাহায্যের সমন্বয় করা। যাতে যথাসম্ভব শিগগিরই তা লেবাননের জনগণের কাছে পৌঁছানো যায়।' এদিকে, এক টুইটে ট্রাম্প জানান, তিনি বৈরুতের বিপর্যয় নিয়ে ম্যাখোঁর সঙ্গে কথা বলেছেন। তার টুইট, 'সবাই সাহায্য করতে চায়।' সংবাদসূত্র : রয়টার্স, বিবিসি, আল-জাজিরা, এএফপি গত কয়েক বছর ধরে চরম রাজনৈতিক বিশৃঙ্খলা এবং বিশাল অংকের ঋণের বোঝার চাপে লেবাননের অর্থনীতি বিধ্বস্ত অবস্থায় রয়েছে। তার মধ্যেই গত মঙ্গলবার রাজধানী বৈরুতের বন্দর এলাকায় ভয়াবহ বিস্ফোরণ দেশটিকে খাদের কিনারে নিয়ে দাঁড় করিয়েছে। বিস্ফোরণে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ২২০ হয়েছে। আহত হয়েছেন ছয় হাজারের বেশি মানুষ। আড়াই লাখ মানুষের বাড়িঘর ধ্বংস হয়ে গেছে। বিস্ফোরণের ?দুইদিন পর গত বৃহস্পতিবার বৈরুত সফরে যান ম্যাখোঁ। সেখানকার পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের পর দ্রম্নত দেশটির দিকে সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিতে বিশ্বনেতাদের সঙ্গে রোববার অনলাইনে জরুরি সম্মেলন আয়োজন করেন তিনি। উদ্বোধনী বক্তব্যে ম্যাখোঁ বলেন, জাতিসংঘের মাধ্যমে লেবাননের জন্য আন্তর্জাতিক সহায়তার সমন্বয় হওয়া উচিত। বৈরুত বন্দরের গুদামে গত প্রায় ছয় বছর ধরে অবহেলায়-অনিরাপদ অবস্থায় পড়ে থাকা দুই হাজার ৭৫০ টন অ্যামোনিয়াম নাইট্রেটকে মঙ্গলবারের ভয়াবহ ওই বিস্ফোরণের কারণ বলা হচ্ছে। যাতে কেঁপে উঠেছিল পুরো নগরী। অথচ প্রচন্ড দাহ্য ওই পদার্থগুলো লেবাননে যাওয়ারই কথা ছিল না। এ নিয়ে ক্ষোভে ফেটে পড়েছে দেশটির জনগণ। তারা সরকারের কাছে এ অবহেলার জাবাবদিহিতা চেয়ে আন্দোলন শুরু করেছে। দীর্ঘদিন ধরেই লেবাননের বর্তমান সরকারের ওপর জনগণের আস্থা নেই। প্রশাসনের রন্ধ্রে রন্ধ্রে দুর্নীতি ছড়িয়ে পড়েছে। এ ?অবস্থায় আন্তর্জাতিক নেতারা তাদের পাঠানো সাহায্য কতটা দেশটির জনগণের হাতে পৌঁছাবে না নিয়েও উদ্বিগ্ন। এ বিষয়ে ম্যাখোঁ বলেন, 'আমি আপনাদের নিশ্চয়তা দিচ্ছি, লেবাননের পুনর্গঠনের জন্য দেওয়া সহায়তা দুর্নীতিবাজদের হাতে যাবে না।' ভয়াবহ বিস্ফোরণ ও তার ধ্বংসলীলার কারণে গত কয়েকদিন ধরে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলোতে খবরের শিরোনাম হচ্ছে বৈরুত। ?অনেক দেশ লেবাননে চিকিৎসা সরঞ্জামের মতো জরুরি সহায়তা পাঠানোর আগ্রহ প্রকাশ করেছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনো দেশ আর্থিক সহায়তার প্রতিশ্রম্নতি দেয়নি। ম্যাখোঁ বলেন, 'আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দায়িত্ব সহায়তা করা। আমাদের উচিত তাদের পাশে দাঁড়ানো। লেবাননের ভবিষ্যত মারাত্মক ঝুঁকিতে।' চার মন্ত্রীর পদত্যাগের পর ৯ এমপিও একই পথে লেবাননে চার মন্ত্রীর পর আরও ৯ এমপি পদত্যাগ করেছেন। আল-জাজিরার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পার্লামেন্টের নয় সদস্য এবং দুই মন্ত্রী তাদের পদ থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন। গত মঙ্গলবারের ভয়াবহ বিস্ফোরণের পর সরকারের ওপর বড় ধরনের চাপ তৈরি হয়েছে। এর মধ্যেই একের পর এক মন্ত্রী, এমপি পদত্যাগ করছেন। রোববার তথ্যমন্ত্রী মানাল আবদেল সামাদ এবং পরিবেশমন্ত্রী দামিয়ানোস কাত্তার পদত্যাগ করেন। এরপরই বাকি ৯ এমপি পদত্যাগ করেন। তবে ওই ৯ এমপি কারা, সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানানো হয়নি। এদিকে, লেবাননের স্থানীয় সংবাদমাধ্যমের তথ্যমতে, লেবাননের প্রধানমন্ত্রী তার ঘনিষ্ঠ সহযোগী দামিয়ানোস কাত্তারকে পরিবেশমন্ত্রী পদে ধরে রাখার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু পদত্যাগের সিদ্ধান্ত বদলাননি কাত্তার। তার আগে সরকারের ব্যর্থতার দায় কাঁধে নিয়ে পদত্যাগের ঘোষণা দেন তথ্যমন্ত্রী মানাল আবদেল সামাদ। টেলিভিশনে দেয়া এক সংক্ষিপ্ত ভাষণে তিনি বলেন, 'বৈরুতে বিশাল বিপর্যয়ের পর আমি সরকার থেকে পদত্যাগ করেছি। আমি লেবানিজদের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করছি। আমরা তাদের প্রত্যাশা পূরণ করতে পারিনি।' বৈরুতে বিস্ফোরণের জন্য সরকারের অবহেলা এবং দুর্নীতিকে দায়ী করে গত কয়েকদিন ধরেই লেবাননের রাস্তায় বিক্ষোভ করছে হাজার হাজার মানুষ। গত শনিবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ বেশ কয়েকটি সরকারি অফিসে হামলা চালায় সরকারবিরোধী বিক্ষোভকারীরা। এদিকে, রেডক্রস বলছে, পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে আহত অন্তত ৬৫ জনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এছাড়া ঘটনাস্থলে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে আরও ১৮৫ জনকে। শনিবারের ওই সংঘর্ষে পুলিশের অন্তত এক কর্মকর্তা নিহত হয়েছেন।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে