বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১
ইসরাইলের সঙ্গে চুক্তি

আমিরাতকে কড়া হুঁশিয়ারি তুরস্কের

সম্পর্ক ছিন্নের ইঙ্গিত এরদোয়ানের চুক্তি করে আরব আমিরাত বড় ভুল করেছে :ইরান উপসাগরীয় অঞ্চলে অস্ত্র বিক্রি বাড়বে যুক্তরাষ্ট্রের
যাযাদি ডেস্ক
  ১৬ আগস্ট ২০২০, ০০:০০
তুর্কি প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়ে্যপ এরদোয়ান

ইসরাইলের সঙ্গে কথিত চুক্তির বিষয়ে সংযুক্ত আরব আমিরাতকে হুঁশিয়ার করেছেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়ে্যপ এরদোয়ান। কূটনৈতিক সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে স্বাক্ষরিত এই চুক্তির প্রতিবাদে আমিরাতের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করার হুমকি দিয়েছেন তিনি। শুক্রবার ইস্তাম্বুলে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এই ইঙ্গিত দেন তুর্কি প্রেসিডেন্ট। সংবাদসূত্র : রয়টার্স, বিবিসি, আল-জাজিরা।

যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় বৃহস্পতিবার ইসরাইল ও আরব আমিরাত কূটনৈতিক সম্পর্ক স্বাভাবিক করা এবং নতুন বৃহত্তর সম্পর্ক গড়ে তুলতে একটি চুক্তি করেছে। মিসর ও জর্ডানের পর তৃতীয় আরব দেশ হিসেবে ইসরাইলের সঙ্গে চুক্তি করেছে আমিরাত। এমনিতেই যুক্তরাষ্ট্রের অস্ত্রের বড় ক্রেতা দেশটি।

এরই পরিপ্রেক্ষিতে শুক্রবার এরদোয়ান সাংবাদিকদের বলেন, 'আমিরাতের এই পদক্ষেপকে কোনোভাবেই মেনে নেবে না তার দেশ।' তিনি বলেন, আবুধাবির সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থগিত করা, অথবা সেখান থেকে নিজেদের রাষ্ট্রদূতকে প্রত্যাহার করার ব্যাপারে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে আলাপ করেছেন তিনি।

কয়েক দশক ধরে ইসরাইলের সঙ্গে কূটনৈতিক যোগাযোগ বজায় রাখলেও গত কয়েক বছরে ফিলিস্তিন ইসু্যতে নিজেকে 'আঞ্চলিক চ্যাম্পিয়ন' হিসেবে চিত্রিত করতে চাইছেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান। চলতি বছরের জানুয়ারিতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তার বিতর্কিত মধ্যপ্রাচ্য শান্তি পরিকল্পনা ঘোষণা করলে এরদোয়ান বলেন, তুরস্ক ওই প্রস্তাব কখনোই মেনে নেবে না। আরব রাষ্ট্রগুলো ফিলিস্তিন ইসু্যর সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করছে বলেও অভিযোগ তোলেন তিনি।

বৃহস্পতিবার ইসরাইল-সংযুক্ত আরব আমিরাত চুক্তি স্বাক্ষরের প্রতিক্রিয়ায় তুরস্কের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়, এই কুটিল আচরণের কথা ইতিহাস এবং এই অঞ্চলের মানুষের বিবেক কখনোই ভুলে যাবে না, আর ক্ষমাও করবে না। শুক্রবারের বিবৃতিতে বলা হয়, 'নিজেদের সংকীর্ণ স্বার্থে ফিলিস্তিন ইসু্যতে বিশ্বাসঘাতকতা করেও সংযুক্ত আরব আমিরাত একে ফিলিস্তিনিদের জন্য আত্মত্যাগ করার মতো কাজ হিসেবে উপস্থাপন করতে চাইছে।'

চুক্তি করে আমিরাত বিরাট ভুল করেছে : ইরান

এদিকে, সম্পর্ক স্বাভাবিক করার উদ্দেশে ইসরাইলের সঙ্গে চুক্তি করে সংযুক্ত আরব আমিরাত 'বিরাট ভুল' করেছে বলে মন্তব্য করেছেন ইরানের প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি। শনিবার টেলিভিশনে সম্প্রচারিত এক ভাষণে এ কথা বলেন তিনি।

রুহানির ভাষণের দুদিন আগে বৃহস্পতিবার সংযুক্ত আরব আমিরাত ও ইসরাইল নিজেদের মধ্যে সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে একটি 'ঐতিহাসিক চুক্তিতে' সম্মত হওয়ার কথা জানায়। ফিলিস্তিনিরা তাৎক্ষণিকভাবে একে 'বিশ্বাসঘাতকতা' অ্যাখ্যা দেয়। তারা আরব লিগ এবং অর্গানাইজেশন অব ইসলামিক কোঅপারেশনকে (ওআইসি) চুক্তিটি প্রত্যাখ্যান করে বিবৃতি দিতেও আহ্বান জানিয়েছে।

অন্যদিকে, ইসরাইল ও যুক্তরাষ্ট্র চুক্তি স্বাক্ষরের ক্ষণকে 'মধ্যপ্রাচ্যে শান্তির জন্য ঐতিহাসিক মুহূর্ত' হিসেবে অভিহিত করেছে। সংযুক্ত আরব আমিরাতের মতো উপসাগরীয় আরব অঞ্চলের অন্যান্য দেশও একই পথে হাঁটবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেছে তারা।

তবে আমিরাতের সঙ্গে এই চুক্তি ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর জন্য কূটনৈতিক দিক থেকে একটি সাফল্য হলেও এটি ডানপন্থি ইসরাইলি বসতি স্থাপনকারীদেরকে ক্ষুব্ধ করেছে। যারা পশ্চিম তীরকে ইসরাইলের দখলদারিত্বে রাখতে চায়। তবে নেতানিয়াহু পরিষ্কার করে বলে দিয়েছেন, তিনি পশ্চিম তীরে ইহুদি বসতি সম্প্রসারণসহ আরও এলাকায় ইসরাইলের সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠা করায় প্রতিশ্রম্নতিবদ্ধ হলেও এ ব্যাপারে প্রথমে ওয়াশিংটন থেকে 'সবুজ সংকেত' পাওয়া জরুরি।

ইসরাইলের সঙ্গে সংযুক্ত আরব আমিরাতের এই চুক্তি নিয়ে ওই অঞ্চলের প্রভাবশালী সুন্নি সংখ্যাগরিষ্ঠ সৌদি আরবের আনুষ্ঠানিক কোনো প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। ইসরাইল ও সৌদি আরব উভয় দেশই যুক্তরাষ্ট্রের বেশ ঘনিষ্ঠ।

ইসরাইলের সঙ্গে উপসাগরীয় আরব দেশগুলোর সরাসরি কোনো কূটনৈতিক সম্পর্ক না থাকলেও ইরানের আঞ্চলিক প্রভাব নিয়ে উদ্বিগ্ন মার্কিন মিত্র দেশগুলোর সঙ্গে তেল আবিবের অনানুষ্ঠানিক যোগাযোগ আছে।

বৃহস্পতিবার আমিরাত-ইসরাইল চুক্তির ঘোষণা আসার পরপরই ইরান এ চুক্তি প্রত্যাখ্যান করে। শনিবারের ভাষণে রুহানিও ফিলিস্তিন বিষয়ে তেহরানের আগের অবস্থানই পুনর্ব্যক্ত করেন। ইসরাইলকে 'এ অঞ্চলে পা রাখার সুযোগ' করে দেওয়ার ব্যাপারে উপসাগরীয় দেশগুলোকে সতর্কও করেছেন তিনি।

উপসাগরীয় অঞ্চলে অস্ত্র বিক্রি বাড়বে যুক্তরাষ্ট্রের

অন্যদিকে, ইসরাইলের সঙ্গে সংযুক্ত আরব আমিরাতের সম্পর্ক স্বাভাবিক হলে উপসাগরীয় আরব দেশগুলোতে যুক্তরাষ্ট্রের অস্ত্র বিক্রির সুযোগ আরও বাড়বে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

এক সাক্ষাৎকারে ইসরাইলে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত ডেভিড ফ্রেইডম্যান বলেন, 'আমিরাত যত ইসরাইল ও যুক্তরাষ্ট্রের আঞ্চলিক মিত্র ও অংশীদার হবে, আমি মনে করি এতে হুমকির মাত্রা কমবে এবং যুক্তরাষ্ট্রের অস্ত্রবিক্রিতে আমিরাত লাভবান হতে পারে।'

যুক্তরাষ্ট্র ইসরাইলকে নিশ্চয়তা দিয়েছে, আরব দেশগুলোর তুলনায় তারা অত্যাধুনিক অস্ত্র পাবে। যেমন লকহিড মার্টিনের তৈরি এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান যুদ্ধে ব্যবহার করেছে ইসরাইল। কিন্তু আমিরাত এখনো তা কিনতে পারেনি।

'নিয়ার ইস্ট পলিসি' থিংকট্যাংকের ওয়াশিংটন ইনস্টিটিউটের আরব-ইসরাইল সম্পর্ক প্রকল্পের পরিচালক ডেভিড মাকোভস্কি বলেন, এই চুক্তিটি আমিরাতের জন্য জয়। এর ফলে আমিরাত সামরিক সরঞ্জাম কিনতে পারবে, যেগুলো এখন শুধু ইসরাইলই কিনতে পারে।

ইসরাইলের বিরুদ্ধে ব্যবহার করা হবে আশঙ্কায় যুক্তরাষ্ট্র এগুলো বিক্রি করে না আরব দেশগুলোর কাছে। মে মাসে মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আমিরাতের কাছে চার হাজার ৫৬৯টি 'মাইন রেসিস্ট্যান্ট অ্যাম্বুশ প্রটেকটেড' যান বিক্রির প্রস্তাব অনুমোদন দেয়। এগুলোর দাম ৫৫৬ মিলিয়ন ডলার।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<108927 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1