শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

চোরের দুই দিনের নবাবি

যাযাদি ডেস্ক
  ১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ০০:০০
সোনার টিফিন বাক্স হাতে হায়দরাবাদের পুলিশ কমিশনার

সোনার টিফিন বাক্স থেকে ভারতের হায়দরাবাদের নিজামরা কখনো খেয়েছেন কি-না জানা নেই। তবে ওই শহরের এক দাগি চোর প্রতিদিন তা থেকে আয়েশ করে খাবার খেত! নিজামের জাদুঘর থেকে ওই টিফিন বাক্সসহ অন্যান্য মূল্যবান সামগ্রী হাতিয়ে সে এবং তার সঙ্গী সটান গিয়ে ওঠে মুম্বাইয়ের একটি পঁাচতারা হোটেলে। আর প্রতি দিনই ওই হীরা-রুবি-পান্নাখচিত সোনার টিফিন বাক্সে খাবার খেত সে। সেখানে বসেই নবাবি চালে দিন দুয়েক কাটিয়েও ছিল তারা। তবে ভাগ্য সুপ্রসন্ন না থাকায় শেষমেশ পুলিশের জালে ধরা পড়ে গেল চোররা।

এ যেন ‘মিশন ইমপসিবল’ ফিল্মের দৃশ্য! তবে হায়দরাবাদের ওই দাগি চোর ও তার সঙ্গী কম্পিউটারের কোনো ডিস্ক গায়েব করতে নিজামের জাদুঘরে যায়নি। তাদের নজর ছিল জাদুঘরের সোনার টিফিন বাক্সসহ অন্যান্য মূল্যবান জিনিসপত্রের দিকে। চুরি যাওয়া সোনার টিফিন বাক্স উদ্ধারের পর এমন তথ্য জানিয়েছে হায়দরাবাদ পুলিশ। চুরির সপ্তাহখানেকের মধ্যে পুলিশের হাতে ধরা পড়েছে দু’জন।

গত ২ সেপ্টেম্বর গভীর রাতে ওই দু’জন ঢুকেছিল নিজামের জাদুঘরে। পুলিশ জানিয়েছে, মাস দুয়েক আগে চুরির ফন্দি অঁাটার সময় পযর্টক সেজে গোটা মিউজিয়াম ঘুরে এসেছিল তারা। পঁাচ-ছয়বার সেখানে চক্কর দিয়েছিল। ওই রাতে জাদুঘরের একটি ভেন্টিলেটরের ঢাকনা সরিয়ে প্রায় হলিউডি কায়দায় অনেকটা সংকীণর্ পথ দিয়ে এগিয়ে যায় তারা। এরপর নেমে পড়ে জাদুঘরের ভেতরে। সেখান থেকে একটি আলমারি খুলে সোনার ঢাকনা দেয়া কোরআন হাতে তুলে নেয় তারা। হায়দরাবাদের পুলিশ কমিশনার অঞ্জনি কুমার জানিয়েছেন, ওই চোরদের জেরা করে জানা গেছে, সে সময় ফজরের আজানের শব্দ ভেসে আসছিল। অঞ্জনি কুমারের কথায়, ‘এটা ঈশ্বরিক হস্তক্ষেপ কি-না জানি না, তবে সম্ভবত ভয় পেয়েই কোরআনটি রেখে দেয় দুই চোর।’

কোরআন না নিলেও আশপাশ থেকে হীরা-পান্না-রতœখচিত চার কেজি ওজনের একটি সোনার টিফিন বাক্স তুলে নেয় তারা। সেই সঙ্গে ঝুলিভতির্ করে রুবি-পান্নাখচিত সোনার কাপ-প্লেট, একটি চামচ এবং একটি ট্রে দিয়ে।

অঞ্জনি কুমার জানিয়েছেন, প্রাথমিকভাবে জানা গেছে, দুবাইয়ের বাজারে ওই তিন কৌটোযুক্ত সোনার টিফিন বাক্স-সহ অন্যান্য সামগ্রীর দাম ৩০-৪০ কোটি রুপি। তবে এ বিষয়ে আরও খেঁাজখবর করার পর তারা নিশ্চিত, শুধুমাত্র ঐতিহাসিক মূল্যের কারণেই আন্তজাির্তক বাজারে ওইসব জিনিসগুলোর মূল্য ১০০-১২০ কোটি রুপি হবে।

চুরির খবর প্রকাশ্যে আসতে নড়েচড়ে বসে পুলিশ। এরপর এমন সব দাগি চোরদের তথ্যানুসন্ধান করতে শুরু করে, যারা ভেন্টিলেটর সংকীণর্ পথ ধরে যাওয়ার মতো রোগা। তবে চোরদের ধরা অত সহজ ছিল না। তদন্তে নেমে জাদুঘরের ভেতরে ৩২টি সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজে চোরদের কোনো ছবি দেখতে পায়নি। সবকটি ক্যামেরার মুখই অন্য দিকে ঘুরিয়ে রেখেছিল দুই চোর।

চুরির পর একটি মোটরবাইকে চড়ে সেখান থেকে চম্পট দেয় তারা। জাদুঘরের গেটের বাইরে একটি ক্যামেরায় তা ধরা পড়ে। তবে মাফলার জড়ানো থাকায় তাদের মুখ দেখা যায়নি। বেরোনোর সময় দেখা যায়, তারা মোবাইল ফোনে কথা বলছে। সেই সূত্র ধরে আশপাশের ৩০০টি মোবাইল টাওয়ারের তথ্য যাচাই করে পুলিশ। তাতেও চোরদের সন্ধান মেলেনি। তদন্তে জানা যায়, পুলিশকে ধেঁাকা দেয়ার জন্যই একটি সিমকাডর্-বিহীন মোবাইলে কথা বলছিল চোররা। এরপর চারমিনার এলাকায় ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, একটি মোটরবাইকের রেডিয়েটরে পাথরে ধাক্কা লাগলে তা থামিয়ে দিচ্ছে দু’জন আরোহী। সেই সূত্র ধরেই এরপর এগোতে থাকে পুলিশ। জহিরাবাদ জেলায় একটি পরিত্যক্ত বাইক উদ্ধার হয়, যার রেডিয়েটরে সমস্যা রয়েছে। সেই সূত্র ধরে তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পারে, হায়দরাবাদ থেকে সোজা মুম্বাইয়ের একটি পঁাচতারা হোটেলে চলে গেছে দুই চোর। সেখানেই পুলিশের হাতে ধরা পড়ে তারা।

পুলিশ জানিয়েছে, ঘটনায় মূল অভিযুক্তের বিরুদ্ধে ২৬টি মামলা ঝুলছে। তবে তার সঙ্গীই আসলে চুরির ফন্দি এঁটেছিল। পযর্টক হিসেবে নিজামের জাদুঘরে ঘোরার সময়ই চুরির ‘আইডিয়াটা’ মাথায় এসেছিল তার! সংবাদসূত্র : এবিপি নিউজ, পিটিআই

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<12351 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1