মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১
নারীদের গাড়ি চালনা

সৌদিতে নিয়ন্ত্রিত স্বাধীনতার স্বাদ!

যাযাদি ডেস্ক
  ৩০ জুন ২০১৮, ০০:০০

সৌদি আরবে নারীরা প্রথমবারের মতো গাড়ি চালানোর সুযোগ পেয়ে এখন দারুণ উচ্ছ¡সিত। এতে গাড়ির চালকের আসনে বসার জন্য তাদের দীঘর্ প্রতীক্ষার অবসান ঘটেছে। তবে নারী গাড়িচালকদের প্রতি পুরুষদের নেতিবাচক আচরণ এখনো একটি বড় বাধা হয়েই রয়েছে। এরই মধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলো চালকের আসনে নারী আর পেছনে যাত্রীর আসনে পুরুষের ভিডিও ভাইরাল হয়ে গেছে।

লিঙ্গ বৈষম্যপূণর্ পুরুষশাসিত সৌদি সমাজে একজন নারীর গাড়ি চালানোর বিষয়টি একেবারেই নতুন। নারীদের গাড়ি চালানোর ওপর গত ২৪ জুন থেকে নিষেধাজ্ঞা উঠে গেছে।

নারীরা দীঘির্দন পর গাড়ি চালানোর অধিকার পেয়ে রিয়াদে গাড়ি চালাচ্ছেন। কিন্তু সমস্যা হলোÑ তারা এখন প্রতি পদে পদে হেনস্তার শিকার হচ্ছেন। যেমন নারী গাড়িচালকদের লক্ষ্য করে পুরুষদের মন্তব্যÑ ‘দেখ দেখ! নারী গাড়িচালাক!!’ বাক্যটি ব্যাপক ব্যবহৃত হচ্ছে।

এখন সৌদির রাস্তাগুলোতে প্রায়ই নারী-পুরুষের দ্ব›দ্ব দেখা যাবে। নারীরা গাড়ি চালানোর ব্যাপারে কিছুতেই ছাড় দেবেন না। আর অধিকাংশ পুরুষই এই বিষয়টি মেনে নিতে পারছেন না। তবে তরুণরা সৌদি সরকারের এই সিদ্ধান্তকে ব্যাপকভাবে স্বাগত জানিয়েছে।

নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়ার পর প্রথম দুইদিনে প্রকাশ্যে নারীদের হয়রানি করার কোনো খবর পাওয়া যায়নি। তবে কতৃর্পক্ষের সতকর্তা সত্তে¡ও পুরুষ চালকরা তাদের সঙ্গে আক্রমণাত্মক ও বিরোধপূণর্ আচরণ করেছেন।

সৌদি আরবের এক টুইটার ব্যবহারকারী ব্যঙ্গ করে বলেছেন, ‘নারী গাড়িচালকদের গাড়ির নিচে পিষ্ট হওয়া এড়াতে আমি পুরুষদের ঘরে থাকার পরামশর্ দিচ্ছি।’ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে নারী গাড়িচালকদের দ্বারা ব্যাপক দুঘর্টনার আশঙ্কা করে বিপুল সংখ্যক মানুষ কমেন্ট করেছেন। সেই সঙ্গে প্রায়ই এসব মন্তব্যের সঙ্গে জ্বলন্ত গাড়ির ছবি জুড়ে দেয়া হচ্ছে। কোনো কোনো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারকারী নারীদের গাড়ি চালানোর সময় মেকআপ না করারও পরামশর্ দিয়েছে। এটা তাদের ব্যঙ্গ করতেই করা হয়েছে। অন্যরা নারীদের গাড়ি ও পাকির্ংলটগুলো গোলাপী রঙের হবে বলে মন্তব্য করেছে।

আরেক সৌদি পুরুষ টুইটারে লিখেছেন, তিনি চান না তার স্ত্রী গাড়ি চালাক। ওই টুইটার ব্যবহারকারী বলেন, ‘সে যদি গাড়ি চালাতে চায়, তবে সে তার বাবার কাছে ফিরে যেতে পারে এবং আল্লাহ চাইলে সে লরিও চালাবে। এ ধরনের সিদ্ধান্ত ব্যক্তিগত স্বাধীনতার ওপর নিভর্র করে। সে গাড়ি চালাবে না।’

বহু নারী সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পুরুষদের এই আক্রমণের মোক্ষম জবাবও দিয়েছেন। সৌদি আরবের একটি দৈনিক পত্রিকা জানিয়েছে, ‘নারীদের ব্যঙ্গ করে ও তাদের গাড়ি চালানোর দক্ষতাকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে করা মেসেজে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলো সয়লাব হয়ে গেছে।’ নারীদের পক্ষ থেকে সেখানে বলা হয়েছে, ‘আমরা গাড়ি চালাব এবং তোমাদের পুরুষদের চেয়েও ভালোভাবে চালাব। ‘রোড রোমিও’।

আপাতত যেসব নারীর গাড়ি চালানোর বিদেশি লাইন্সেস রয়েছে, তারাই মূলত গাড়ি চালাচ্ছেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক মুখপাত্র জানান, প্রায় এক লাখ ২০ হাজার নারী লাইসেন্সের জন্য আবেদন করেছেন। তবে কতজনকে লাইসেন্স দেয়া হয়েছে, তিনি তা জানাতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন।

এই পরিস্থিতিতে রক্ষণশীলতা ও যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের সামাজিক পরিবতের্নর মধ্যে টানাপড়েনের ডামাডোলে রাস্তায় নারীদের ওপর হয়রানি ব্যাপকভাবে বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। এতে অনেক নারী রাস্তায় নাও বের হতে পারেন। ‘দ্য ব্রো কোড অব সৌদি কালচার’-এর লেখক আবদুল আল-লিলি বলেন, ‘অনেক পুরুষ তার নারী আত্মীয়ের ব্যাপারে উদ্বিগ্ন। তারা আশঙ্কা করছেন, পুরুষ চালকরা তাদের হয়রানি, পিছু নেয়া কিংবা ভিডিও করতে পারে।’

এক সৌদি নারী বলেন, তিনি ‘রোড রোমিওদের’ ভয়ে গাড়ি চালানোর পরিকল্পনাকে বাদ দিয়েছেন। কথা বলার ওজুহাত তৈরির জন্য তারা ইচ্ছাকৃতভাবে আমার গাড়ির সঙ্গে তাদের গাড়ি ধাক্কা দিতে পারে বা আকস্মিক আমার গাড়ির সামনে এসে পড়তে পারে।’

আসলে গাড়ি চালনার নিষেধাজ্ঞাটি উঠে গেলেও সৌদি আরবে নারীদের জন্য যে কঠোর অভিভাবকত্ব ব্যবস্থা জারি আছে, তাতে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের বিষয়টি খুব একটা গুরুত্ববহ হবে না বলেই মনে করা হচ্ছে। এ ব্যবস্থার আওতায় নারীদের ভ্রমণ, স্কুলে যাওয়া, চিকিৎসাসহ জীবনের বিভিন্ন কাজের ক্ষেত্রে তাদের কাছের পুরুষ অভিভাবকদের কাছ থেকে (স্বামী, বাবা কিংবা ভাই) অনুমতি নিতে হয়। তালাকপ্রাপ্তা কিংবা বিধবা মাকে থাকতে হয় তার কিশোর সন্তানের অভিভাবকত্বের অধীনে। সৌদি অ্যাকটিভিস্টদের দাবি, নারী অধিকারের লড়াইয়ের জন্য এই অভিভাবকত্ব একটি বড় ইস্যু। পরিবার থেকে অনুমতি না পেলে নারীরা তখন আর গাড়ি চালাতে পারবেন না।

২০১১ সালে সৌদি আরবে নিজের গাড়ি চালানোর একটি ভিডিও পোস্ট করেন সৌদি মানবাধিকারকমীর্ মানাল আল-শরিফ। নারীদের গাড়ি চালানোর অধিকারের পক্ষে সোচ্চার থাকা এ নারীও খুব একটা আশাবাদী হতে পারছেন না। অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে বসবাসরত মানাল আল-শরিফ বলেন, ‘ধরুন আপনার ছেলে আপনার অভিভাবক হয়ে গেল। নারী হিসেবে আমার সক্ষমতা যাই হোক না কেন, আমি এখনো অন্য কারো দাসত্বে আছি। আমার জন্য স্বাধীনতা হলো মযার্দা নিয়ে বঁাচার বিষয়। আর আমার সম্মান ও স্বাধীনতাকে যদি পুরুষরা নিয়ন্ত্রণ করে তবে আমি কখনো মুক্ত হতে পারব না।’ সংবাদসূত্র : এএফপি অনলাইন, রয়টাসর্

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে