শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

অভিবাসন নীতি : বিক্ষোভে উত্তাল যুক্তরাষ্ট্র

‘আমাদের দেশে কখনোই এই ধরনের নীতির বাস্তবায়ন হতে পারে না’ জ্জ ‘ট্রাম্পের উদ্দেশে পরিষ্কার বাতার্ দিতে চাই, সবাই মিলে আমেরিকা গড়ে তুলব’
যাযাদি ডেস্ক
  ০২ জুলাই ২০১৮, ০০:০০
মাকির্ন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের অভিবাসন ক্ষেত্রে ‘জিরো টলারেন্স নীতির’ কারণে গত মে থেকে এখন পযর্ন্ত পরিবার-বিচ্ছিন্ন দুই হাজারের বেশি শিশু। ওই শিশুদের প্রতিনিধি হিসেবে শনিবার বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে ‘আমরা সবাই অভিবাসী’ লেখা প্ল্যাকাডর্ হাতে দঁাড়ায় এক মাকির্ন শিশু। এদিন হাজার হাজার মাকিির্ন যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন শহরে বিক্ষোভ করেন Ñব্যাংকক পোস্ট

অভিবাসীদের বিষয়ে মাকির্ন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শূন্য সংবেদনশীলতা বা ‘জিরো টলারেন্স’ নীতির প্রতিবাদে শনিবার ব্যাপক বিক্ষোভ হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রে। শনিবার দেশটির ৫০টিরও বেশি শহরে বিক্ষোভে ফেটে পড়েন কয়েক লাখ মানুষ। তারা প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের অভিবাসন নীতির কড়া সমালোচনা করেছেন। পাশাপাশি বন্দিশালায় আটক অভিবাসী শিশুদের পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দেয়ারও দাবি জানান বিক্ষোভকারীরা। সংবাদসূত্র : বিবিসি, রয়টাসর্

ট্রাম্পের বিতকির্ত অভিবাসী নীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে হোয়াইট হাউসের সামনে জড়ো হন ১০ হাজারের বেশি মানুষ। এতে সামাজিক এবং সাংস্কৃতিক সংগঠনের পাশাপাশি সাধারণ মাকিির্নরাও অংশ নেন। তারা প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের কঠোর সমালোচনা করেন। একই সঙ্গে ট্রাম্পের পদত্যাগেও দাবি করেন আন্দোলনকারীরা। প্রতিবাদে শিশুদের উপস্থিতি ছিল লক্ষণীয়। বিক্ষোভে অংশ নেয়া বেশিরভাগই ছিলেন নারী। এর আগে শুক্রবার কংগ্রেসের উচ্চকক্ষ সিনেট ভবন তথা ক্যাপিটাল ভবনে অবস্থান নেন নারীরা। সেখান থেকে প্রায় ৬০০ জনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে শনিবার বিক্ষোভের আয়োজন করে ‘আমেরিকান সিভিল লিবাটির্জ ইউনিয়ন’, ‘দ্য লিডারশিপ কনফারেন্স অন সিভিল রাইটস’ এবং ‘দ্য ন্যাশনাল ডমেস্টিক ওয়াকার্সর্ অ্যালায়েন্স’। বিক্ষোভে সমথর্ন জানিয়েছেন অনেক রাজনীতিক ছাড়াও হলিউডের জুলিয়ানা মুর, অ্যামেরিকা ফেরেরা এবং লিন ম্যানুয়েল মিরেন্দাসহ অনেকে।

বিক্ষোভকারীদের ¯েøাগান ছিল, ‘পরিবারের সদস্যরা একত্র হওয়ার অধিকার রাখে’। তারা সম্প্রতি সুপ্রিম কোটের্র রায় সম্পকের্ বলেন, এই রায় যথেষ্ট নয়। সুপ্রিম কোটের্র উচিত রায় পরিবতর্ন করা। তারা অভিবাসীদের আটককেন্দ্র বন্ধ করার দাবি জানান। তারা বলেন, আমরা এর মাধ্যমে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে একটি বাতার্ দিতে চাই।’ আয়োজকরা সবাইকে সাদা পোশাকে আসতে এবং শান্তিপূণর্ বিক্ষোভের আহŸান জানান।

একজন আন্দোলনকারী বলেন, ‘কোনোভাবেই বিশ্বাস করতে পারছি না, আমি আমেরিকায় বাস করছি। আমাদের দেশে কখনোই এই ধরনের নীতির বাস্তবায়ন হতে পারে না। আমি আশা করি, আটক সব শিশু মুক্তি পেয়ে দ্রæত তাদের পরিবারের কাছে গিয়ে ফিরে যেতে পারবে। বিশ্বাস করি, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প তাদের দুদর্শা বুঝতে পারবেন।’

ওয়াশিংটন ছাড়াও বড় ধরনের বিক্ষোভ-সমাবেশ হয়েছে নিউইয়কের্ও। একটি মানবাধিকার সংগঠনের আয়োজনে এতে অংশ নেন বহু প্রতিবাদকারী। তারা ট্রাম্পের অভিবাসন নীতিকে লজ্জাজনক আখ্যা দিয়ে, তা বাতিলের দাবি জানান। বিক্ষোভকারীরা বলেন, ‘দায়িত্ববোধ থেকেই আমরা এখানে সবাই একত্রিত হয়েছি। যুক্তরাষ্ট্রে যা হচ্ছে, তা কোনোভাবেই মেনে নেয়া যায় না। এই সমস্যা আমি একা সমাধান করতে পারবো না। সবাইকে এর বিরুদ্ধে সরব হতে হবে।’

মানবাধিকারকমীর্ শাপর্টন বলেন, ‘ট্রাম্পের উদ্দেশ্যে পরিষ্কার বাতার্ দিতে চাই, আমরা সবাই মিলে আমেরিকা গড়ে তুলবো। অভিবাসীদের রক্ষা করা আমাদের দায়িত্ব। এই আন্দোলনে যোগ দেয়ার জন্য সবার প্রতি আহŸান জানাবো।’

এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের অন্য শহরগুলোতেও বিক্ষোভ-সমাবেশ করেছেন কয়েক হাজার মানুষ। তারা প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ও তার প্রশাসনের বিরুদ্ধে নানা ধরনের ¯েøাগান দেন। শনিবার যুক্তরাষ্ট্র এবং সারা বিশ্বে প্রায় ৭০০-এর মতো স্থানে যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসী বিলের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ-সমাবেশের আয়োজন করা হয়।

উল্লেখ্য, অবৈধ অভিবাসীদের প্রবেশ ঠেকাতে সম্প্রতি অভিবাসী নীতি ঘোষণা করেন মাকির্ন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। ওই নীতি বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে মেক্সিকো সীমান্ত দিয়ে প্রবেশ করা অভিবাসীদের সন্তানদের পরিবার থেকে আলাদা করে বন্দি রাখে মাকির্ন কতৃর্পক্ষ। এরপর থেকেই যুক্তরাষ্ট্রসহ সারাবিশ্বে তীব্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়।

মেক্সিকো সীমান্তে আটক হওয়া মা-বাবাদের থেকে শিশুদের আলাদা করে রাখছে ট্রাম্প প্রশাসন। যদিও সমালোচনার মুখে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এক নিবার্হী আদেশে সেই প্রক্রিয়া স্থগিত করেন। আদালতে জমা দেয়া এক নথিতে জানা গেছে, শিশুদের মা-বাবার সঙ্গে রাখা হবে। তবে তাদের আটকে রাখা হবে। অভিবাসন মামলা চলাকালীন তাদের আটকে রাখা হবে। সমালোচকরা বলছেন, আলাদা হওয়া ২ হাজার ৩৪২ শিশুর ক্ষেত্রে ট্রাম্পের বতর্মান নিদের্শনা কাযর্কর হবে কি-না, সেই বিষয়টি উল্লেখ নেই। গত ৫ মে থেকে ৯ জুন পযর্ন্ত এদের আটক করে আলাদা রাখা হয়। গত সপ্তাহে ক্যালিফোনির্য়ার তিনজন বিচারপতি শিশুদের একত্র রাখার নিদের্শ দেন।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে