বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১
বিশ্লেষণ

সালমান শেষ পযর্ন্ত টিকে যাবেন!

যুবরাজ সালমানকে সরিয়ে দেয়া বা তাকে সংযত করাই এখন স্বাভাবিক বিকল্প। কিন্তু সৌদি আরবের রক্ষণশীল রাজপরিবার ঝুঁকি নিতে অনাগ্রহী। তারা চাইবে এ রকম কিছু না করতে। তাই এমবিএসের দিন কি শেষ হয়ে গেছে? এ পযাের্য় এটা বলা খুবই কঠিন...
যাযাদি ডেস্ক
  ১০ নভেম্বর ২০১৮, ০০:০০
সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান

‘তিনি শেষ হয়ে হয়ে গেছেন’, ‘তিনি খুবই বিপজ্জনক’, ‘আমরা তাকে ভালোবাসি’, ‘তিনি আমার হিরো’Ñ সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান (এমবিএস) সম্পকের্ এসব কথা থেকে বোঝা যায়, তাকে নিয়ে জনমত একেবারেই বিভক্ত।

তুরস্কের ইস্তাম্বুলের সৌদি কনস্যুলেটের ভেতর সাংবাদিক জামাল খাশোগি খুন হওয়ার পর পশ্চিমা দেশগুলোতে ‘এমবিএস ব্র্যান্ড’ এখন আরও বিপজ্জনক হয়ে গেছে। যদিও সৌদি আরব বার বার বলছে, ওই খুনের ঘটনার সঙ্গে যুবরাজ (ক্রাউন প্রিন্স) সালমানের কোনো যোগাযোগ ছিল না। কিন্তু এই অস্বীকৃতি দেখা হচ্ছে গভীর সন্দেহের চোখে। কারণ কী? এক কথায়- যে দেশে ওপরের নিদের্শ ছাড়া প্রায় কিছুই হয় না, সেখানে কিছু নিয়মভঙ্গকারী এজেন্ট মিলে জামাল খাশোগিকে খুন করেছেÑ এটা শুনতে প্রায় অসম্ভব মনে হয়।

আরব দেশগুলোতে একটা ‘তত্ত¡’ বেশ চলছে। সেটা হলোÑ খাশোগি সৌদি সরকারের কড়া সমালোচক ছিলেন এবং তাই এমবিএস চেয়েছিলেন তার ব্যাপারে ‘কিছু একটা করা হোক’। কিন্তু তিনি কখনো খুনের অনুমতি দেননি। বরং তার অফিস যিনি চালান, সেই সাউদ আল-কাহতানি এমবিএসের নিদেের্শর বাইরে গিয়ে হত্যাকারীদের বলেছিলেন, ‘যুবরাজ সবকিছুরই অনুমোদন দিয়েছেন’।

সমস্যা হলো, সৌদি আরবের বাইরে প্রায় কেউই এ কথা বিশ্বাস করে না। কারণ, এই খুনের ঘটনা নিয়ে প্রথম থেকেই সৌদি আরবের দিক থেকে একেক বার একেক রকম কথা বলা হচ্ছিল। তাই এটাই অনুমান করে নেয়া যায়, যুবরাজ সালমান তার মোটা বেতন পাওয়া মিডিয়া উপদেষ্টাদের কথা কানে শুনলেও পাত্তা দেননি। ফলে অবস্থা এমন হয়েছে, এমবিএস এখন বিশ্বজনমতের কাঠগড়ায় এবং পশ্চিমা দেশগুলোর সরকার এবং বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানগুলোর যে তার সঙ্গে কোনো সংস্রব রয়েছে, এটা আর তারা দেখাতে চাইছে না। কিছু পশ্চিমা সংস্থা এবং মাকির্ন কংগ্রেসম্যান এখন দাবি করছেন, সৌদি আরবের বিরুদ্ধে অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হোক।

এখন সৌদি আরব দঁাড়িয়ে আছে এক মোড় বদলকারী মুহ‚তের্। কী করতে পারে দেশটি? এখন কি সৌদি রাজপরিবারের সিনিয়র যুবরাজরা মিলে এমবিএসের ক্ষমতা কিছু কমিয়ে দেবেন, যাতে এই বিক্ষুব্ধরা খুশি হয়? নাকি তাকে যুবরাজের (ক্রাউন প্রিন্স) পদ থেকে পুরোপুরি সরিয়ে দিয়ে একটা নামমাত্র এবং অথর্হীন পদোন্নতি দেয়া হবে? নাকি তারা এই ঝড় কেটে যাওয়ার জন্য অপেক্ষা করবেন?

সৌদি রাজপরিবারের অন্দরমহলে, বন্ধ দরজার ওপাশে এখন- এই প্রশ্নগুলো নিয়ে ‘অত্যন্ত গুরুতর’ আলোচনা চলছে। ব্যাপারটা কত গুরুতর, এর একটা আভাস পাওয়া যায় একটি ঘটনা থেকে। ৮২ বছর বয়সী সৌদি বাদশাহ সালমানের একমাত্র জীবিত ভাই যুবরাজ আহমেদ বিন আবদেল আজিজ হঠাৎ করেই গত মঙ্গলবার রিয়াদে ফিরে এসেছেন। তিনি এতদিন লন্ডনে ছিলেন। কারণ, তিনি ছিলেন এমবিএসের বিরোধীদের মধ্যে ‘গুরুস্থানীয়’ একজন ব্যক্তি, যিনি ইয়েমেনে যুদ্ধের বিরুদ্ধে কথা বলেছিলেন এবং এর জন্য সম্পূণর্ দায়ী করেছিলেন যুবরাজ সালমান এবং তার বাবাকে। তার ভয় ছিল, দেশে ফিরলেই তাকে গৃহবন্দি করা হবে।

গভীর রাতে রিয়াদে নামার পর আহমেদ বিন আবদেল আজিজকে আগরবাতির ধেঁায়া এবং অন্য যুবরাজদের উষ্ণ আলিঙ্গন দিয়ে অভ্যথর্না জানানো হয়। অভ্যথর্নাকারীদের মধ্যে এমবিএসও ছিলেন। আহমেদ এখন চেষ্টা করছেন, পুরো রাজপরিবারকে একসঙ্গে করতে। কিন্তু এমবিএসের ভবিষ্যৎ নিয়ে কী ধরনের আলোচনা করছেন তারা?

প্রথম কথা- ৩৩ বছর বয়সী সালমানকে চ্যালেঞ্জ করার মতো কেউ এখন নেই। যুবরাজ অনেক আগেই সব চ্যালেঞ্জারদের সরিয়ে দিয়েছেন। তিনি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় নিয়ন্ত্রণ করেন, রাজপরিবারের রক্ষক বাহিনী ন্যাশনাল গাডের্ক নিয়ন্ত্রণ করেন। প্রতিরক্ষামন্ত্রীও তিনি, তাই সৌদি সশস্ত্র বাহিনীও তার নিয়ন্ত্রণে। যদিও বাদশাহ হচ্ছেন তার অসুস্থ বাবা, কিন্তু রাজকীয় আদালত, অথৈর্নতিক নীতিমালা প্রণয়ন এবং দেশ পরিচালনার প্রকৃত কতৃর্ত্বÑ এগুলোও এমবিএসের হাতে।

বেশ কিছুদিন ধরে এটা স্পষ্ট হচ্ছিল, এমবিএস কোনো গণতান্ত্রিক নেতা নন। তাকে জানেন এমন একজন বণর্না করেছেনÑ লোকটি আসলে ‘একজন বেপরোয়া, নিয়ন্ত্রণহীন গুÐা।’ কিন্তু তার অনেক বাড়াবাড়িই সৌদি আরবের মানুষ এতদিন ধরে মেনে নিচ্ছিল। লাখ লাখ তরুণ সৌদির কাছে যুবরাজ সালমান তাদের ভবিষ্যতের আশার প্রতীক, একজন সাহসী, আকষর্ণীয় ব্যক্তিত্বের অধিকারী নেতা, দূরদৃষ্টিসম্পন্ন সংস্কারকÑ যিনি ধমীর্য় নেতাদের ক্ষমতা কমিয়ে দিয়েছেন, মেয়েদের গাড়ি চালানোর অনুমতি দিয়েছেন, সৌদি সমাজে বিনোদনের সুযোগ খুলে দিয়েছেন। তেলভিত্তিক সৌদি অথর্নীতিরও সংস্কার করছেন তিনি।

ওয়াশিংটন, লন্ডন বা প্যারিসের ক‚টনীতিক বা নীতিনিধার্রকদের কাছে মনে হতে পারে, যুবরাজ সালমানকে সরিয়ে দেয়া বা তাকে সংযত করাই এখন স্বাভাবিক বিকল্প। কিন্তু সৌদি আরবের রক্ষণশীল রাজপরিবার ঝুঁকি নিতে অনাগ্রহী। তারা চাইবে এ রকম কিছু না করতে। তাই এমবিএসের দিন কি শেষ হয়ে গেছে? এ পযাের্য় এটা বলা খুবই কঠিন। কারণ, ২০১১ সালের মাঝামাঝি ‘আরব বসন্তের’ সময় প্রায় সবাই ভেবেছিলেন, সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদ কয়েক মাসের মধ্যেই ক্ষমতাচ্যুত হবেন। এরপর সাত বছর পেরিয়ে গেছে। আজও ক্ষমতায় রয়েছেন তিনি। সংবাদসূত্র : বিবিসি নিউজ

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<21731 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1