লাল গ্রহ নামে খ্যাত মঙ্গলের বুকে কি ‘হৃদস্পন্দন’ থেমে গেছে নাসার পাঠানো রোভার মহাকাশযান ‘অপরচুনিটি’র? সে কি আর নাড়াচাড়া করতে পারছে না? হারিয়েছে তার ‘বাক্শক্তি’? ১০০ দিনের বেশি সময় ধরে অপরচুনিটির কোনো সাড়াশব্দ পায়নি নাসা। ফলে, সে ‘জীবিত’ নাকি ‘মৃত’, তা নিয়ে সন্দেহ, সংশয় উত্তরোত্তর জোরালো হচ্ছে। রোভার অপরচুনিটি আবার কখনো জেগে উঠতে না পারলে হয়তো এখানেই তার মিশন শেষ হবে।
গত জুলাইয়ে মঙ্গলের বুকে তুমুল ধুলিঝড় উঠেছিল। সেটা চলেছিল অনেক দিন ধরে। অপরচুনিটি সে সময় মঙ্গল ঘুরে বেড়াচ্ছিল। গ্রহ প্রদক্ষিণ শেষে নামছিল মঙ্গলের পারসিভেরেন্স ভ্যালি ধরে। ওই ভয়ঙ্কর ধুলিঝড়ের সময় গ্রহের এক চতুথার্ংশ পরিমাণ ঝড় রোভার অপরচুনিটির ওপর আছড়ে পড়ছিল। যার কারণে রোভারটি ধুলিতে আচ্ছাদিত থাকায় পযার্প্ত সূযের্র আলোর দেখা পায়নি।
রোভার মহাকাশযানটি চলার ক্ষমতা পায় সূযের্র আলো থেকে সংগ্রহ করা অ্যানাজির্ দিয়েই। ঝড়ের কারণে মহাকাশযানটি তার ব্যাটারি চাজর্ করতে পারেনি। ফলে কাযর্ত রোভারটির সব সিস্টেমই নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েছে। যার কারণে জুলাইয়ের পর থেকে বার বার সংকেত পাঠিয়েও পাসাডেনায় নাসার জেট প্রোপালসন ল্যাবরেটরির (জেপিএল) বিজ্ঞানীরা আর কোনো সাড়াশব্দ পাননি রোভার অপরচুনিটির।
অবশেষে নাসার পক্ষ থেকে গত বুধবার জানানো হয়েছে, কোনো সাড়াশব্দ না মেলায় অপরচুনিটি ‘জীবিত’ না ‘মৃত’Ñ এখন পযর্ন্ত সেটা বোঝা যাচ্ছে না বটে। তবে, টানা ১০০ দিন পর এই প্রথম রোভারটিকে দেখা গেছে মঙ্গলের বুকে ওই পারসিভেরেন্স ভ্যালিতেই। তার হদিশ মিলেছে, এখন এটুকুই শুধু বলা যায়।
এতদিন পর গত ২০ সেপ্টেম্বর অপরচুনিটির হদিস পাওয়া সেই ছবিটি তুলেছে নাসার পাঠানো মহাকাশযান ‘এমআরও’র ‘হাইরাইজ’ ক্যামেরা। ছবিতে যে এলাকাটিকে সাদা চতুভ‚র্জ দিয়ে ঘিরে রাখা আছে, অপরচুনিটি এখন রয়েছে সেখানেই। এলাকাটি ৪৭ মিটার বা ১৫৪ ফুট চওড়া। ছবিটি মঙ্গলের পিঠ থেকে ২৬৭ কিলোমিটার বা ১৬৬ মাইল ওপর থেকে তোলা হয়েছে।
তবে নাসা এটাও জানিয়েছে, কোনো সিগন্যাল আসছে না অপরচুনিটির কাছ থেকে। জেপিএল থেকে সিগন্যাল পাঠালে আগে পলক ফেলতে না ফেলতেই সেই ‘কম্যান্ডে’ সাড়া দিত অপরচুনিটি। কিন্তু ওই ধুলিঝড়ের পর টানা ১০০ দিন ধরে আর কোনো সাড়াও দিচ্ছে না নাসার ওই ১৪ বছর বয়সী রোভার। সূযের্র আলোয় চলে অপরচুনিটি। কিন্তু তুমুল ধুলিঝড়ে সব কিছু ঢেকে যাওয়ায় স্তব্ধ হয়ে আছে সেটি। আগে যেখানে তাকে ‘কম্যান্ড’ পাঠানো হতো দিনে একবার করে। এখন ‘কোমায়’ থাকা অপরচুনিটিকে জাগিয়ে তোলার জন্য দিনে বেশ কয়েকবার করে ‘কম্যান্ড’ পাঠানো হচ্ছে। কিন্তু কোনো কম্যান্ডেরই উত্তর আসছে না। তবে এখনো সাড়া আসতে পারে একটি মাত্র উপায়ে, তা হলো রোভার অপরচুনিটিতে থাকা একটি ইমাজেির্ন্স মিশন ঘড়ি। যেটা মহাকাশযানটিকে জাগিয়ে তুলতে সাহায্য করতে পারে। সেই অপেক্ষাতেই নাসার বিজ্ঞানীরা এখন প্রহর গুনছেন। সংবাদসূত্র : এবিপি নিউজ, ইনডিপেনডেন্ট ইউকে