শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

মন্দিরে ঢুকে ইতিহাস গড়া নারী বাড়ি থেকে বিতাড়িত

যাযাদি ডেস্ক
  ২৪ জানুয়ারি ২০১৯, ০০:০০

দক্ষিণ ভারতের প্রাচীন শবরীমালা মন্দিরে প্রবেশ করে ইতিহাস গড়েছিলেন যে দুই নারী, তাদেরই একজনকে বাড়িতে ঢুকতে দিচ্ছে না পরিবার। কনকদুগার্ নামের বছর চল্লিশের ওই নারী এ মাসের গোড়ায় শবরীমালা মন্দির থেকে বাড়ি ফেরার পর তার শাশুড়ি কাঠ দিয়ে মেরে মাথা ফাটিয়ে দিয়েছিলেন। সংবাদসূত্র: বিবিসি নিউজ

১০-৫০ বছর বয়সী নারীদের শবরীমালা মন্দিরে প্রবেশ না করতে দেয়ার যে শতাব্দী প্রাচীন প্রথা রয়েছে, সেই প্রথা বাড়ির বউ হয়ে কেন তিনি ভেঙেছেন- এটাই ছিল কনকদুগার্র শাশুড়ির রাগের কারণ। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকার পর মিজ কনকদুগার্ বাড়ি ফিরে দেখেন, স্বামীসহ শ্বশুরবাড়ির কেউ সেখানে নেই। বাড়ি তালাবন্ধ। সমাজকমীর্ থাঙ্কাচান ভিথায়াতিল বলছিলেন, তিনি হাসপাতাল থেকে বাড়ি ফিরে দেখেন যে, সেখানে কেউ নেই। স্বামী বা শ্বশুরবাড়ির কেউ তার সঙ্গে কথা পযর্ন্ত বলতে চায়নি। কনকদুগার্র সঙ্গে পুলিশও গিয়েছিল। বাড়িতে ঢুকতে পারছেন না দেখে পুলিশই নারীদের জন্য তৈরি আশ্রয় শিবিরে নিয়ে যায়। থানায় গিয়ে কনকদুগার্ জানতে পারেন, শ্বশুরবাড়ির লোকেরা চান না যে, তিনি বাড়িতে ফিরে আসুক। মালাপ্পুরাম জেলার পুলিশ সুপারিন্টেনডেন্ট প্রতীশ কুমার জানিয়েছেন, তার স্বামী থানায় এসেছিলেন, কিন্তু কনকদুগাের্ক বাড়িতে ফিরিয়ে নিতে তিনি রাজি হননি। তবে ওই নারী বার বার বলতে থাকেন যে, তার স্বামী যেখানে থাকবেন, সেখানেই তিনি যেতে চান। তখন স্বামী বলেন, তিনি থানাতেই থেকে যাবেন। আমরা দুইজনকে বোঝানোর চেষ্টা করেছিলাম। পুলিশ কমর্কতার্ বলছেন, এখন বিষয়টি পারিবারিক সহিংসতার পযাের্য় চলে গেছে। কারণ, কনকদুগার্ থানায় অভিযোগও দায়ের করেছেন। এখন বিষয়টি আদালত পযর্ন্ত গড়াবে।

সুপ্রিম কোটর্ যে রায় দিয়ে সব বয়সের নারীদের ভগবান আয়াপ্পার মন্দিরে প্রবেশ করার অনুমতি দিয়েছিল, সেই রায় কাযর্কর করাটাই ওই দুই নারীর উদ্দেশ্য ছিল বলে জানা গেছে। তাদের আগে বেশ কয়েকজন নারী ওই রায়কে হাতিয়ার করে মন্দিরে প্রবেশ করার চেষ্টা করেছিলেন, কিন্তু প্রাচীন প্রথা ভাঙার বিরোধী হাজার হাজার মানুষের বিক্ষোভে আগের সেসব প্রচেষ্টাই ব্যথর্ হয়ে গিয়েছিল। সেখানে হাজির তথাকথিত ভক্তরা বুঝতেই পারেননি, দুইজন নারী মন্দিরে ঢুকেছেন, তাই বাধাও দিতে পারেনি কেউ। তবে এ বয়সের দুই নারী মন্দিরে প্রবেশ করেছেন এই ভিডিও ছড়িয়ে পড়ার পরই কেরালাজুড়ে বিক্ষোভ শুরু হয়ে যায়। হিন্দুত্ববাদী সংগঠনগুলো এবং প্রাচীন প্রথা টিকিয়ে রাখার পক্ষে হাজার হাজার মানুষ হরতাল পালন করেন। কিন্তু এখন সেই ইতিহাস গড়া নারী নিজের বাড়িতেই এখন ঢুকতে পারছেন না, আর তাকে পর করে দিতে চাইছেন স্বামীসহ শ্বশুরবাড়ির মানুষ। উল্লেখ্য, ভারতের সুপ্রিম কোটের্র পঁাচ সদস্যের বেঞ্চ যেদিন কেরালার সবরীমালা মন্দিরে শতাব্দীর প্রাচীন প্রথা ভেঙ্গে সব বয়সের নারীদের প্রবেশাধিকার দিয়ে রায় দিয়েছিল, তখনই কেরালার বাসিন্দা এক নারী বলেছিলেন, দেখবেন, আমরা মেয়েরাই এই প্রথা ভাঙ্গতে পারব না, যতই সুপ্রিম কোটর্ রায় দিক। এটা আমাদের বিশ্বাস যে ১০-৫০ বছর বয়সী মেয়েদের ওই মন্দিরে যাওয়া উচিত নয়। সংখ্যালঘু রায় দিতে গিয়ে বেঞ্চের একমাত্র নারী বিচারপতি ইন্দু মালহোত্রাও সুর মিলিয়ে বলেছিলেন যে, ব্যক্তিগত ধমির্বশ্বাসে আদালতের হস্তক্ষেপ অনুচিত। ওই মন্দিরে ১০-৫০ বছর বয়সী নারীদের এতদিন প্রবেশ করার অধিকার ছিল না, কারণ ওই বয়সটি নারীদের ঋতুমতী হওয়ার সময়। সবরীমালায় যে আয়াপ্পার পুজা করা হয়, তিনি আজীবন ব্রহ্মচারী বলেই বিশ্বাস করেন তাঁর ভক্তরা। সেরকম মন্দিরে রজঃস্বলা নারীরা প্রবেশ করলে ঈশ্বর রাগ করবেন বলে বিশ্বাস করেন হিন্দুদের একটা বড় অংশ।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<33659 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1