ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মিরে গত বৃহস্পতিবারের আত্মঘাতী জঙ্গি হামলায় কেন্দ্রীয় রিজাভর্ বাহিনীর (সিআরপিএফ) সেনা হতাহতের ঘটনায় তীব্র উত্তেজনা চলছে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে। এ নিয়ে স্পষ্ট মেরুকরণ সৃষ্টি হয়েছে বিশ্বজুড়েও। ঘটনার পর যথারীতি দুই মেরুতে অবস্থান করছে চীন ও যুক্তরাষ্ট্র। উল্লেখ্য, কয়েক দশকের মধ্যে ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মিরে জঙ্গিরা যত হামলা চালিয়েছে, গত বৃহস্পতিবারের হামলাটিই তার মধ্যে সবচেয়ে প্রাণঘাতী। সেদিন জম্মু-কাশ্মিরের পুলওয়ামায় সিআরপিএফের গাড়িবহরে বিস্ফোরকবোঝাই একটি গাড়ি হামলায় অন্তত ৪৯ জন আধাসামরিক সেনা নিহত হয়। পাকিস্তানভিত্তিক জঙ্গি সংগঠন জইশ-ই-মোহম্মদ হামলার দায় স্বীকার করেছে। সংবাদসূত্র : বিবিসি, রয়টাসর্, এনডিটিভি
বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরাইল এই হামলার ঘটনায় স্পষ্টভাবে ভারতের পক্ষে থাকার ঘোষণা দিয়েছে। অন্যদিকে, চীন আনুষ্ঠানিকভাবে হামলার নিন্দা জানালেও ঘটনার দায় স্বীকারকারী পাকিস্তানভিত্তিক জঙ্গি সংগঠন জইশ-ই-মোহাম্মদের নেতাকে সন্ত্রাসী হিসেবে চিহ্নিত করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে। হামলার পর চীনের পক্ষ থেকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র জেন শং ঘটনার নিন্দা প্রকাশ করে বলেন, ‘যেকোনো ধরনের সন্ত্রাসবাদী কাযর্কলাপকে আমরা ধিক্কার জানাই।’ শান্তি স্থাপনের জন্য সব দেশকে সহযোগিতার আহŸানও জানায় চীন। মাসুদ আজহারের বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, এই ইস্যুতে নিয়ম মেনে কাজ করবে চীন। সন্ত্রাসী সংগঠন তালিকাভুক্তির বিষয়ে নিরাপত্তা পরিষদের সংশ্লিষ্ট কমিটির নিজস্ব সনদ রয়েছে। অথার্ৎ, এ ব্যাপারে আদৌ সমথর্ন আছে কিনা সেটা স্পষ্ট করা হয়নি।
এদিকে শুক্রবার ভারতের নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভালকে ফোন করেন মাকির্ন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জন বোল্টন। কাশ্মির হামলা নিয়ে আলোচনার পর তিনি দোভালকে বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র ভারতের আত্মরক্ষার অধিকার ও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে লড়াইকে পূণর্ সমথর্ন করে।’ ঘটনার খেঁাজ নিতে দোভালকে দুই বার ফোন দেন বলেও উল্লেখ করেন জন বোল্টন। প্রাণঘাতী এ হামলার জন্য দায়ীদের বিচারের মুখোমুখি করতে যুক্তরাষ্ট্র পাশে থাকবে বলেও বোল্টন প্রতিশ্রæতি দিয়েছেন। শনিবার ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে এই ফোনালাপের কথা জানিয়েছে।
মাকির্ন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা বোল্টন জানিয়েছেন, ‘আমি অজিত দোভালের সঙ্গে দুইবার কথা বলেছি। যুক্তরাষ্ট্র জঙ্গি হামলায় আক্রান্তদের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছে। আমরা জানিয়েছি, ওয়াশিংটন দিল্লির আত্মরক্ষার অধিকারকে সমথর্ন করে।’ পাকিস্তানের মাটিতে জঙ্গিদের অবাধ বিচরণের ঘটনাকেও একহাত নেন মাকির্ন নিরাপত্তা উপদেষ্টা। তিনি বলেন, ‘ভারত সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে লড়ছে। আমরা ভারতের পাশে আছি। পাকিস্তানকে অবশ্যই জঙ্গিদের মদদ দেয়া বন্ধ করতে হবে। জঙ্গিদের জন্য স্বগর্রাজ্যের ব্যবস্থা করে দিতে পারে না ইসলামাবাদ। মাকির্ন নিরাপত্তা উপদেষ্টা হুশিয়ারি দিয়ে বলেন, ‘সন্ত্রাসের অঁাতুড় ঘর হয়ে উঠেছে পাকিস্তান। আর সেই সন্ত্রাসীদের মদদ জুগিয়ে যাচ্ছে তারা। পাকিস্তান যদি এখনই জঙ্গিদের মদদ দেয়া বন্ধ না করে, তা হলে এর ফল ভুগতে হবে তাদের।’ এ বিষয়ে তিনি আরও বলেন, বেশ কিছুদিন ধরেই পাকিস্তানের সঙ্গে আমাদের কথাবাতার্ চলছে, এবং আগামীদিনেও চলবে।’
পাকিস্তান তার দেশে ক্রিয়াশীল জঙ্গিগোষ্ঠী জইশ-ই-মোহাম্মদকে নিয়ন্ত্রণে ব্যথর্ বলে দীঘির্দন ধরেই দাবি করে আসছে দিল্লি। সংগঠনটির ওপর আন্তজাির্তক নিষেধাজ্ঞাও চেয়ে আসছে তারা। জঙ্গিগোষ্ঠীটির নেতা মাসুদ আজহারকে সন্ত্রাসীর তালিকায় রাখতেও ভারত অনেক দিন ধরেই জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদকে চাপ দিয়ে আসছে। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ভারত, যুক্তরাষ্ট্র এবং এ অঞ্চলের অন্যদের ওপর হামলা চালানো জইশ-ই-মোহাম্মদ ও বিভিন্ন সন্ত্রাসীগোষ্ঠী পাকিস্তানে যে নিরাপদ আশ্রয় পেয়ে আসছে, তা নিমূের্ল একসঙ্গে কাজ করার প্রতিশ্রæতি দিয়েছেন দুই জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা। তবে পাকিস্তান বৃহস্পতিবারের হামলার কোনো ধরনের দায় নিতে অস্বীকার করেছে। কিন্তু হামলার ঘটনায় তেতে থাকা ভারত পাকিস্তানকেই দায়ী করেছে। তারা পাকিস্তানকে দেয়া ‘মোস্ট ফেভারড নেশনের’ (সবচেয়ে সুবিধাপ্রাপ্ত রাষ্ট্র) তকমাও তুলে নিয়েছে। সেইসঙ্গে পাকিস্তানকে একঘরে করারও হুমকি দিয়েছে ভারত।
হামলার পর ভারতীয় নেতারা যেকোনো সময় পাকিস্তানে বড় ধরনের আক্রমণ চালানোর ইঙ্গিত দিচ্ছেন। প্রতিশোধ নিতে ভারতীয় সেনাবাহিনীকে স্বাধীনতা দেয়ার ঘোষণাও দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। অন্যদিকে, পাকিস্তান বলছে, আক্রান্ত হলে পারমাণবিক হামলা করতে পিছপা হবে না তারা।