ল্যাতিন আমেরিকার দেশ ভেনেজুয়েলায় চলমান সংকটের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের ‘মানবিক সহায়তার’ প্রশ্ন এরই মধ্যে প্রধান আলোচ্য বিষয় হয়ে উঠেছে। স্বঘোষিত প্রেসিডেন্ট হুয়ান গুইদোর ডাকে সাড়া দিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ত্রাণ পাঠালেও ভেনেজুয়েলার সেনাবাহিনী তা দেশের অভ্যন্তরে প্রবেশ করতে দিচ্ছে না। এদিকে, প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরো বলেছেন, মানবিক সহায়তার নামে সাম্রাজ্যবাদী হস্তক্ষেপের পঁায়তারা করছে যুক্তরাষ্ট্র। তার এই দাবিকে অযৌক্তিক মনে করছে না কানাডাভিত্তিক ‘গেøাবাল রিসাচর্’। তাদের এক বিশ্লেষণ অনুযায়ী, ত্রাণ পাঠানোর মধ্য দিয়ে ভেনেজুয়েলায় আগ্রাসনের পথ খুঁজছে যুক্তরাষ্ট্র।
ওই বিশ্লেষণে দাবি করা হয়েছে, ব্রাজিল ও কলম্বিয়াকে সঙ্গে নিয়ে প্রেসিডেন্ট মাদুরোকে উৎখাতের প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। তাদের উদ্দেশ্য, মানবিক সহায়তার নামে সেনা পাঠিয়ে ভেনেজুয়েলার প্রাকৃতিক সম্পদে দখলদারিত্ব প্রতিষ্ঠা। একই ধরনের ইঙ্গিত মিলেছে ‘টাইম’ ম্যাগাজিনের আরেক বিশ্লেষণে। এতে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে, ত্রাণের নামে ভেনেজুয়েলায় প্রবেশ করতে চায় যুক্তরাষ্ট্র। সেনাবাহিনীতে বিভক্তি সৃষ্টি করে বাস্তবায়ন করতে চায় আগ্রাসন বাসনা।
এদিকে, আটলান্টিক মিডিয়ার সহযোগী প্রতিষ্ঠান ‘ডিফেন্স ওয়ান’কে দেয়া সাক্ষাৎকারে টেক্সাস বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন নিরাপত্তা বিশ্লেষক বলেন, আগ্রাসনকে বাস্তব করতে সম্মতি আদায়ের চেষ্টা চালাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র।
নিবার্চনী কারচুপির অভিযোগ আর অথৈর্নতিক সংকট ভেনেজুয়েলার জনগণকে তাড়িত করেছে সরকারবিরোধী বিক্ষোভে। বিক্ষোভের সুযোগে ২৩ জানুয়ারি নিজেকে অন্তবর্র্তীর্কালীন প্রেসিডেন্ট ঘোষণা করেন বিরোধীদলীয় নেতা হুয়ান গুইদো। সে সময়ই তিনি ঘোষণা দেন, ভেনেজুয়েলাবাসীর সহায়তায় তিনি আন্তজাির্তক ‘ত্রাণ সহযোগীদের’ নেটওয়াকর্ বানাবেন। যুক্তরাষ্ট্রের দাবি, তার অনুরোধেই ভেনেজুয়েলাবাসীর জন্য ত্রাণ পাঠিয়েছে ওয়াশিংটন।
গত বৃহস্পতিবার যুক্তরাষ্ট্রের ত্রাণবাহী ট্রাকগুলো কলম্বিয়ার কুকুতা সীমান্তে পেঁৗছলেও তা ভেনেজুয়েলায় ঢুকতে দেয়নি সে দেশের সেনাবাহিনী। কেননা প্রেসিডেন্ট মাদুরো মনে করেন, ত্রাণের নামে সাম্রাজ্যবাদী হস্তক্ষেপের বাসনা বাস্তবায়ন করতে চায় পশ্চিমারা। গেøাবাল রিসাচের্র বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, কুকুতায় কলম্বিয়ার আধাসামরিক বাহিনী ও পাচারকারী চক্রের সদস্যদের সরব উপস্থিতি রয়েছে। এবং যারা গত বছর মাদুরোকে হত্যা করতে চেয়েছিল, তারা সেখানেই প্রশিক্ষণ নিয়েছিল।
দীঘের্ময়াদি অথৈর্নতিক যুদ্ধের কবলে পড়ে খাদের কিনারে এসে দঁাড়িয়েছে ভেনেজুয়েলার অথর্নীতি। মাকির্ন নিষেধাজ্ঞার কবলে পড়ে বছরে হাজার হাজার কোটি ডলার ক্ষতি হয়েছে তাদের। ওই বিশ্লেষণে আরও বলা হয়েছে, অথৈর্নতিক ক্ষতির কারণে সৃষ্ট মানবিক সংকটকে সামনে এনেই যুদ্ধের পথ সুগম করতে চাইছে ট্রাম্প প্রশাসন। এতে সাহায্য করছে তাদের মিত্র কলম্বিয়া ও ব্রাজিল। বিশ্লেষণে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে, মানবিক সহায়তা দিতে সেনা পাঠিয়ে সেখানে সংঘাত উসকে দেয়ার চেষ্টা নিতে পারে যুক্তরাষ্ট্র।
সেই ২০১৭ সালের মাঝামাঝি থেকেই ভেনেজুয়েলায় সামরিক আগ্রাসনের বাসনার কথা প্রকাশ্যে বলে আসছেন ট্রাম্প। সে কারণেই পেন্টাগন, হোয়াইট হাউস থেকে নরমপন্থিদের সরিয়ে দেয়া হয়েছে। এখন ট্রাম্পের চারপাশে যারা আছেন, তারা সবাই তার মতোই মাদুরোকে হটাতে চান। দখলে নিতে চান ওই দেশের প্রাকৃতিক সম্পদের। এক প্রতিবেদনে আশঙ্কা করা হয়েছে, গুইদোকে সমথর্ন না দেয়া সামরিক বাহিনীতে বিভক্তি সৃষ্টির মধ্য দিয়ে আগ্রাসন বাসনা সফল করার প্রচেষ্টা নিতে পারে যুক্তরাষ্ট্র। ওয়াশিংটন সেনাবাহিনীর ওপর চাপ সৃষ্টি করতে চায়, যেন মাদুরো সরকারের ঐক্য ভেঙে পড়ে।
যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে গুইদোর অনুরোধে মানবিক সহায়তা পাঠানোর কথা বলা হলেও মাকির্ন নিরাপত্তা পরামশর্ক জন বোল্টন ভেনেজুয়েলায় প্রকাশ্য সামরিক অভ্যুত্থানের ঘোষণা দেন তার আগেই। টেক্সাস বিশ্ববিদ্যালয়ের জাতীয় নিরাপত্তা বিশ্লেষক স্টিভ ভøাদেক বলেন, গুইদোকে স্বীকৃতি দেয়ার মধ্য দিয়ে মাদুরোর সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় সম্পকর্ অকাযর্কর করে রেখেছে যুক্তরাষ্ট্র। জাতিসংঘ নিরপেক্ষতা ক্ষুণœ হওয়ার ভয়ে গুইদোকে স্বীকৃতি দেয়ার প্রক্রিয়ায় সামিল হতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে। তবে স্টিভ ভøাদেক মনে করেন, মাকির্ন স্বীকৃতি পাওয়া গুইদোকে দিয়ে ভেনেজুয়েলার মাটিতে সামরিক হস্তক্ষেপের অনুমোদন নিতে পারে যুক্তরাষ্ট্র। সংবাদসূত্র : বিবিসি নিউজ