আক্ষরিক অর্থেই পাকিস্তানিদের মন জিতে নিলেন সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান। কারণ কথা ছিল পাকিস্তানের সঙ্গে সৌদি যুবরাজ ১০ বিলিয়ন বা এক হাজার কোটি মার্কিন ডলার চুক্তি করবেন। কিন্তু সবাইকে অবাক করে ২০ বিলিয়ন বা দুই হাজার কোটি ডলারের বিনিয়োগ চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছে সৌদি আরব। এর মাধ্যমে পাকিস্তানের দুর্বল অর্থনীতি চাঙ্গা হবে বলে আশা করছে ইমরান খানের সরকার। এর পাশাপাশি সৌদি আরবে আটক তিন হাজার কারাবন্দির মধ্যে দুই হাজার বন্দির মুক্তি দেয়ার ঘোষণায় সাধারণ পাকিস্তানিরাও বেজায় খুশি। রোববার দুই দিনের রাষ্ট্রীয় সফরে পাকিস্তান পৌঁছান সৌদি যুবরাজ সালমান। এরপর রাতেই দুই দেশের মধ্যে এ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। পাকিস্তানের অর্থনীতি বর্তমানে বেশ নাজুক। এই অর্থনীতিকে সবল করতে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সমর্থন খুঁজছে দেশটির সরকার। সংবাদসূত্র : বিবিসি, রয়টার্স
রোববার সম্পাদনকৃত চুক্তির মধ্যে আট বিলিয়ন ডলার বন্দরনগরী গোয়াদরে তেল পরিশোধনাগার স্থাপনে বিনিয়োগ করা হবে। এছাড়া, বিদু্যৎ, পেট্রকেমিক্যাল ও খনি খাতেও বিনিয়োগের ব্যাপারে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করেছে দুই দেশ।
সৌদি যুবরাজ বলেন, 'এবার অনেক বড় চুক্তি হলো। তবে এটি কেবল প্রথম ধাপ। এটি প্রতি মাসে ও প্রতি বছর বাড়বে। উভয় দেশই এ থেকে লাভবান হবে।' তিনি আরও বলেন, ২০ বিলিয়ন ডলার অঙ্কটির মাধ্যমে শুধুমাত্র একটি অথনৈতিক সম্পর্কের শুরু প্রতিফলিত হয়েছে, এর মধ্য দিয়ে সৌদি আরব ও পাকিস্তানের মধ্যে বিদ্যমান ঐতিহাসিক মিত্রতা আরও গভীর হবে। তার মতে, 'আমরা পাকিস্তানের ভাইয়ের মতো, বন্ধুর মতো। ভালো সময় থেকে শুরু করে কঠিন সময়েও আমরা এক সঙ্গে চলেছি এবং চলবো।'
সেখানে যুবরাজ নিজের দেশের বিষয়ে তার পরিকল্পনার কথাও তুলে ধরেন। তেলনির্ভরতা কমিয়ে সৌদি আরবের অর্থনীতিকে বহুমুখীকরণের ক্ষেত্রে তিনি পর্যটন শিল্প বিকাশের পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন। যুবরাজের ভাষ্য, সৌদি আরবের লক্ষ্য ১০ কোটি পর্যটক পাওয়া। ২০৩০ সালের মধ্যে না হলেও ক্রমেই সেই লক্ষ্যে পৌঁছানোর বিষয়ে তিনি আশাবাদী।
সংবাদ মাধ্যমগুলো জানিয়েছে, দুই দেশের মধ্যে হওয়া সমঝোতা চুক্তিগুলোর অধিকাংশই জ্বালানি প্রকল্পগুলোকে ঘিরে। এর মধ্যে উপকূলীয় শহর গয়েদরে একটি তেল শোধনাগার ও পেট্রকেমিক্যাল কমপেস্নক্স প্রকল্পের জন্য ১০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করা হবে। এর পাশাপাশি খনি ও কৃষিতে বিনিয়োগের বিষয়েও সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছে বলে জানিয়েছেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান।
রোববার সৌদি যুবরাজকে বহনকারী উড়োজাহাজ পাকিস্তানের আকাশসীমায় প্রবেশের পর দেশটির বিমান বাহিনীর যুদ্ধবিমানগুলো ওই উড়োজাহাজটিকে পাহারা দিয়ে নিয়ে আসে। পাকিস্তানের সেনাশহর রাওয়ালপিন্ডির একটি সামরিক বিমানবন্দরে যুবরাজকে বহনকারী বিমানটি অবতরণ করে। বিমানবন্দরেই লাল গালিচা সংবর্ধনা দিয়ে তাকে স্বাগত জানান পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান ও সেনাপ্রধান কামার জাভেদ বাজওয়া। সেখান থেকে নিজে গাড়ি চালিয়ে 'ক্রাউন প্রিন্স' সালমানকে রাজধানী ইসলামাবাদে নিয়ে যান প্রধানমন্ত্রী ইমরান।
\হআমাদের দুঃসময়ে যেভাবে আপনারা আমাদের সাহায্য করলেন, তার জন্য আমি আপনাদের ধন্যবাদ দিচ্ছি।' সাম্প্রতিক মাসগুলোতে সৌদি সহায়তাই সংকটে থাকা পাকিস্তানের অর্থনীতিকে ধরে রেখেছে। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের সঙ্গে 'বেইল আউট' নিয়ে ইসলামাবাদের মধ্যস্থতা চলছে। এর মধ্যে রিয়াদের ৬০০ কোটি ডলার ঋণ ইসলামাবাদকে খানিকটা স্বস্তি দেয়। আর ২০ বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ চুক্তি পাকিস্তানকে চিন্তমুক্ত করবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
এদিকে, দুইদিনের পাকিস্তান সফরের কথা থাকলেও মাত্র একদিন থেকে সোমবার ভারত সফরে গেছেন সৌদি যুবরাজ। তার 'ঐতিহাসিক এশিয়া সফরের' দ্বিতীয় দেশ গতকাল দিলিস্নর পৌঁছান। তার ইন্দোনেশিয়া ও মালয়েশিয়া যাওয়ার কথা থাকলেও শনিবার কোনো কারণ না দেখিয়েই তা বাতিল করা হয়। ভারত থেকে মোহাম্মদ বিন সালমান যাবেন চীনে। সেখানে দুই দিনের সফর শেষে দেশে ফিরবেন তিনি।