কাশ্মিরের পুলওয়ামায় আত্মঘাতী হামলার ঘটনায় বাড়তে থাকা উত্তেজনার মধ্যেই পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান মঙ্গলবার ভারতকে কড়া হুশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, পুলওয়ামার ঘটনায় দিলিস্ন যদি পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সামরিক পদক্ষেপ নেয়, তবে ইসলামাবাদও পাল্টা জবাব দেবে। তিনি আরও বলেন, পাকিস্তান এ ঘটনায় জড়িত, এমন প্রমাণ ভারতের কাছে থাকলে তারা তা হাজির করুক। সংবাদসূত্র : বিবিসি
ভারত নিয়ন্ত্রিত জম্মু-কাশ্মিরের পুলওয়ামা জেলায় গত ১৪ ফেব্রম্নয়ারি দেশটির সেন্ট্রাল রিজার্ভ পুলিশ ফোর্সের (সিআরপিএফ) ওপর সন্ত্রাসী হামলা হয়। সেদিন আত্মঘাতী হামলায় সিআরপিএফের অন্তত ৪৯ জন জওয়ান নিহত হন। আহত হন ৪১ জন। সন্ত্রাসবাদী সংগঠন জইশ-ই-মোহাম্মদ (জেইএম) এই হামলার দায় স্বীকার করেছে। এ ঘটনার পর হামলার মাশুল পাকিস্তানকে দিতে হবে বলে হুশিয়ারি দেয় ভারত। জঙ্গি হামলার জেরে পাকিস্তানকে দেয়া 'মোস্ট ফেভারড নেশন'র (এমএফএন) মর্যাদা প্রত্যাহার করে ভারত। শুধু তাই নয়, পাকিস্তান থেকে আসা সব পণ্যের ওপর ২০০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে ভারত।
ওই ঘটনার পর এই প্রথম মুখ খুললেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। তিনি বলেন, 'কোনো প্রমাণ ছাড়া বারবার পাকিস্তানের ওপর দোষারোপ করা বন্ধ করুন।' পাকিস্তানের সার্বভৌমত্ব হুমকির মুখে পড়ে, ভারতের এমন যেকোনো দুঃসাহসিকতার জবাব দেয়া হবে। অবশ্য ভারতের সঙ্গে সংলাপের আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, তার সরকার হামলার ঘটনার তদন্তে দিলিস্নকে সহযোগিতা করতে প্রস্তুত। পুলওয়ামা হামলার দায় অস্বীকার করে আলোচনার এ আহ্বান জানান তিনি। এমনকি, ইসলামাবাদ যে সন্ত্রাস নিয়েও আলোচনায় রাজি, এবার সে কথাও স্পষ্ট করে দিলেন পাক প্রধানমন্ত্রী।
যদিও ভারতের পক্ষ থেকে এর তীব্র প্রতিক্রিয়া জানানো হয়েছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্রে বলা হয়েছে, পুলওয়ামা হামলার পেছনে যে জইশ-ই-মোহাম্মদ জঙ্গিরা রয়েছে, সেটা স্পষ্ট। আর এই জঙ্গিরা যে পাকিস্তানের মদদপুষ্ট, ইমরান সে কথা অস্বীকার করবেন বা ভুলে যাবেন কী করে? এ ছাড়া ভারত বরাবরই বলে এসেছে, পাকিস্তান আগে সন্ত্রাস বন্ধ করুক, তারপর আলোচনা হবে। ওই সূত্রের বক্তব্য, ইমরান কি সন্ত্রাস বন্ধ করার আশ্বাস দিতে পারবেন?
ভারতের ভাষায় পুলওয়ামায় জঙ্গি হামলায় পাকিস্তান যোগ কার্যত স্পষ্ট। পাকিস্তানের মদদে জঙ্গিরা হামলা চালিয়েছে, প্রাথমিক তদন্তে সেই তথ্যপ্রমাণও উঠে এসেছে। তাই পাকিস্তানের ওপর চাপ ক্রমেই বাড়ছে। এই পরিস্থিতিতে মঙ্গলবার জাতির উদ্দেশে ভাষণে ইমরান খান আরও বলেন, 'ভারত প্রমাণ ছাড়াই অভিযোগ তুলছে। পাকিস্তান কেন হামলা করতে যাবে? পাকিস্তান স্থিরতা চায়। যখন ধীরে ধীরে সেই স্থিতাবস্থা আসছে, তখন ভারত এই অভিযোগ তুলে সেটা নষ্ট করতে চাইছে। আমরা যেখানে শান্তি চাই, সেখানে এই হামলা করে পাকিস্তানের কী লাভ হবে? এ দিন তিনি বলেন, প্রমাণ থাকলে আমাকে দিন, কথা দিচ্ছি, পরের দিনই ব্যবস্থা নেয়া হবে।'
পুলওয়ামায় পাক যোগ উড়িয়ে ভারতের সঙ্গে আলোচনার প্রস্তাব দিয়ে এদিন তাৎপর্যপূর্ণ বার্তা দিয়েছেন ইমরান। সেই সঙ্গে প্রয়োজনে তার সরকার যে সন্ত্রাস নিয়ে আলোচনাতেও রাজি, তাও সুনির্দিষ্ট করে দিয়েছেন পাক প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, 'আলোচনার প্রসঙ্গ উঠলেই ভারত সন্ত্রাসের প্রসঙ্গ টেনে আনে। এবার তাই প্রয়োজনে সন্ত্রাস নিয়েও আমি আলোচনায় রাজি।'
ওই হামলার পর থেকেই পাকিস্তানে পাল্টা হামলার দাবি উঠেছে ভারতের নানা প্রান্ত থেকে। ইসলামাবাদও সে বিষয়ে ওয়াকিবহাল। সেই আঁচ পেয়েই এদিন পাল্টা হামলার হুশিয়ারি দিয়েছেন ইমরান। তিনি বলেন, ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এবং রাজনৈতিক নেতাদের মুখে শোনা যাচ্ছে ভারত হামলা চালাতে পারে। সেটা হলে পাকিস্তান শুধু পাল্টা হামলার কথাই ভাববে না, সঙ্গে সঙ্গে যোগ্য জবাবও দেবে। এ ছাড়া আর কোনো বিকল্প থাকবে না।
এর আগে গত শুক্রবার পাকিস্তানকে আন্তর্জাতিক অঙ্গন থেকে 'সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন' বা একঘরে করে দেয়ার হুমকি দিয়েছিল দিলিস্ন। পাকিস্তানকে 'একলা করে দিতে' কূটনীতিকভাবে যা যা করার দরকার তার সবই করার কথা জোর গলায় বলা হচ্ছিল। এ ছাড়া পাকিস্তান তার দেশে ক্রিয়াশীল এ জঙ্গিগোষ্ঠীকে নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ বলে দীর্ঘদিন ধরেই অভিযোগ ছিল ভারতের। জইশ-ই-মোহাম্মদের ওপর আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞাও চেয়ে আসছে তারা। জঙ্গিগোষ্ঠীটির নেতা মাসুদ আজহারকে সন্ত্রাসীর তালিকায় রাখতেও ভারত অনেক দিন ধরেই নিরাপত্তা পরিষদকে চাপ দিয়ে আসছে। তবে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে দিলিস্নর যেকোনো ধরনের পদক্ষেপে সব সময়ই বাধা দিয়ে আসছে চীন। জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যে কোনো ধরনের নিষেধাজ্ঞার চেষ্টাতেই সাধারণত বেইজিং ভেটো ক্ষমতা প্রয়োগ করে।