শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১
বিশ্লেষণ

তালেবানে হেলেছে রাশিয়া

যাযাদি ডেস্ক
  ১৮ জুলাই ২০১৮, ০০:০০

প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিনের রাশিয়া নীতি অন্তমুর্খী নয়, বরং অনেকটাই বহিমুর্খী এবং আশপাশের দেশগুলোতে জড়িত হওয়ার আগ্রহও তার রয়েছে। যেমন আফগানিস্তান। রাশিয়ার প্রভাব বলয়ের প্রতিবেশী দেশগুলোর পরেই রয়েছে এই দেশটি। ঐতিহাসিকভাবে এই দেশের ওপর প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করে এসেছে রাশিয়া। এমনকি এই দেশকে নিজের প্রভাব বলয়ের বধির্ত অংশ হিসেবেও মনে করে রাশিয়া।

২০১৫ সালের সেপ্টেম্বরে সাবেক তালেবান নেতা মোল্লা আখতার মনসুর এবং রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিনের মধ্যে সম্ভাব্য সহযোগিতার বিষয়ে বৈঠক হয়েছিল। তাজিকিস্তানের এক সামরিক ঘঁাটিতে অনানুষ্ঠানিকভাবে মোল্লা আখতার মানসুরের সঙ্গে বৈঠক করেছিলেন পুতিন। মূলত, আফগানিস্তানে ইসলামিক স্টেট (আইএস) বা দায়েশের বিস্তার রোধে সহযোগিতার বিষয়েই ওই বৈঠক হয়েছিল।

১৭ বছর ধরে দেশটিতে মাকির্ন সামরিক উপস্থিতির পরও তালেবানের বিস্তার রোধ করা যায়নি। ২০০১ সালের পর তালেবানের এখন দখলে রয়েছে সবচেয়ে বেশি এলাকা। মাকির্ন উপস্থিতি দিয়ে দায়েশের আগমন ও শক্তি বৃদ্ধিও ঠেকানো যায়নি। আফগানিস্তানে চোরাবালির প্রসঙ্গে বলা যায়, এখানে যুক্তরাষ্ট্রের একক কোনো ভালো উপায় নেই। একদিকে সেনা ক্ষয় হচ্ছে, অন্যদিকে যুদ্ধের লাগামছাড়া খরচ। এক হিসাবে দেখা গেছে, আফগানিস্তানে প্রতি এক ঘণ্টায় সেখানে চার মিলিয়ন ডলার ব্যয় হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের। যুক্তরাষ্ট্রের জন্য অপ্রিয় সত্যিটা হলোÑ আফগানিস্তানে থেকে যাওয়া বা ফিরে যাওয়া দুটোই সমস্যাজনক। তাই রাশিয়া তার প্রভাব বাড়াতে তালেবানের সঙ্গে সম্পকর্ বাড়ানোর পথকেই বেছে নিয়েছে। এর লক্ষ্যও সুদূরপ্রসরী। বিশ্লেষকরা বলছেন, তালেবানের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন বা তাদের দিকে হেলে পড়ার মাধ্যমে যে লক্ষ্যগুলো অজর্ন করতে চায় রাশিয়া, সেগুলো হলোÑ

এক. তালেবানদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষার মাধ্যমে রাশিয়া পশ্চিমাদের জানিয়ে দিতে চায় যে, আফগানিস্তানে রাশিয়ার স্বাথের্র বিষয়টি অবজ্ঞা করছে তারা। ২০১৬ সালের জানুয়ারিতে আফগানিস্তানের শান্তিপ্রক্রিয়া এগিয়ে নিতে চার দেশীয় গ্রæপ গঠন করা হয়। যেখানে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, চীন, পাকিস্তান ও আফগানিস্তান। শান্তি প্রতিষ্ঠায় ওই গ্রæপ সফল হয়নি। কিন্তু রাশিয়া তারপরও নিজেকে বঞ্চিত মনে করেছে।

দুই. তালেবানের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষার মাধ্যমে রাশিয়া এ অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্র ও ন্যাটোর প্রভাব ঠেকাতে চেয়েছে। ২০০১ সাল থেকে তিন হাজারের বেশি মাকির্ন সেনা আফগানিস্তানে তালেবান ও আল-কায়েদার বিরুদ্ধে যুদ্ধে নিহত হয়েছে। মধ্যপ্রাচ্যের ঘটনাপ্রবাহে অংশগ্রহণের মাধ্যমে রাশিয়া তার প্রভাব এই অঞ্চল থেকে আরও বিস্তৃত করতে চায়।

তিন. আফগানিস্তানে দায়েশের দিক থেকে আসা হুমকির বিষয়টি রাশিয়া গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করছে। ২০১৪ সাল থেকে দায়েশ এ অঞ্চলে প্রভাব বিস্তার করছে। ক্রেমলিনের আশঙ্কা, এই প্রভাব বাড়তে থাকলে তা এক পযাের্য় মধ্য এশিয়া হয়ে রাশিয়া পযর্ন্ত পেঁৗছে যেতে পারে। তালেবানও দায়েশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছে, তাই তাদের (তালেবান) সঙ্গে সম্পকর্ রাখাটা গুরুত্বপূণর্ মনে করেছে রাশিয়া।

২০১৭ সালের ডিসেম্বরে রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ্যে জানান, তালেবানের সঙ্গে দায়েশবিরোধী সামরিক অভিযানের ব্যাপারে গোয়েন্দা তথ্য লেনদেন করছে মস্কো। সিরিয়ায় ইরান ও তুরস্কের সঙ্গে মিলিতভাবে যে পদক্ষেপ নিয়েছে রাশিয়া, সেটা অনেকটা সফল হওয়ায় একই ধরনের পদক্ষেপ আফগানিস্তানেও নেয়ার ব্যাপারে ভাবছে রাশিয়া।

চার, আফগানিস্তানের আফিম রাশিয়ার জন্য আরেকটি মাথা ব্যথার বিষয়। বিশ্বের অবৈধ মাদকের ৯০ শতাংশই আসে আফগানিস্তান থেকে। বিশেষ করে তালেবান নিয়ন্ত্রিত এলাকাগুলোতে এই আফিমের চাষ হচ্ছে। আফগানিস্তানের মাদক উৎপাদনকারীরা রাশিয়াকে তাদের বৃহত্তম বাজার হিসেবে বিবেচনা করে। প্রতি বছর অবৈধ মাদকের ব্যবহারে রাশিয়ায় ৭০ হাজার মানুষের মৃত্যু হচ্ছে। রাশিয়ার নেতারা তাই মনে করেন, মাদকের বিরুদ্ধে লড়তে হলে আফগানিস্তানের সরকারের চেয়ে তালেবানই বেশি উপযুক্ত হবে।

তালেবানের প্রতি রাশিয়ার সমথের্ন অনেক ধরনের প্রভাব পড়বে আফগানিস্তানে। কাবুলের কেন্দ্রীয় সরকারের শক্তি এতে কমে আসবে। এতে করে সিরিয়ায় যে অবস্থা বিরাজ করছে, সেদিকে ধাবিত হতে পারে আফগানিস্তান। সিরিয়ায় রাশিয়া বাশার আল-আসাদকে সমথর্ন দিলেও আফগানিস্তানে তারা সহায়তা দিচ্ছে তালেবানকে। এর মাধ্যমে মস্কো কাবুলের মাকির্ন মদদপুষ্ট সরকারের ক্ষমতাকে সীমিত রাখতে

চায়। সংবাদসূত্র : সাউথ এশিয়ান মনিটর

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<3987 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1