শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

কাশ্মিরে আইএসের জায়গা করে নেয়া কঠিন হবে

কাশ্মিরের প্রধান ইমাম যেখানে শুক্রবারের খুতবা দিয়ে থাকেন, সেই মিম্বারেও তারা উঠে পড়েছিল। ওই ঘটনাটিকে কাশ্মিরের সমাজের সর্বস্তরের মানুষ নিন্দা করেছে। মানুষ এটাকে অপকর্ম আখ্যা দিয়ে বলেছে, কাশ্মিরের আজাদির আন্দোলনকে এটা ক্ষতি করেছে ...
যাযাদি ডেস্ক
  ১৩ জুলাই ২০১৯, ০০:০০
আইএসের পতাকায় মোড়ানো মুগিস মির

গুলাম হোসেন দার তার ২১ বছর বয়সী ছেলের মোবাইল ফোনের ওপর সর্বক্ষণিক নজর রাখেন। কাশ্মিরের গ্রীষ্মকালীন রাজধানী শ্রীনগরে মুদির দোকান রয়েছে দারের। এই অঞ্চলের আরও বহু বাবা-মায়ের মতো দারও সবসময় চরমপন্থি ধ্যান-ধারণার প্রসার এবং তরুণদের ওপর তার প্রভাব নিয়ে উদ্বিগ্ন থাকেন, যেগুলো এখন ইন্টারনেট আর সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। দার বলেন, 'যেসব বাবা-মা তাদের সন্তানদের ভালোবাসেন, তাদের নিজেদের কর্মকান্ডের ওপর নজর রাখা ছাড়া উপায় নেই, কারণ যেকোনো অশুভ শক্তি তাদের দখল করে নিতে পারে।'

ইসলামিক স্টেট (আইএস) গত কয়েক বছর ধরে সংঘাত-কবলিত জম্মু ও কাশ্মিরে পথ করে নেয়ার জন্য প্রবল চেষ্টা করে যাচ্ছে, যেখানে তিন দশকের জঙ্গিবাদে এক লাখের বেশি মানুষ প্রাণ হারিয়েছে। সন্ত্রাসী সংগঠনটির প্রচার শাখা 'আমাক নিউজ এজেন্সি' চলতি বছরের ১২ মে নতুন একটি প্রদেশ গঠনের ঘোষণা দিয়েছে, যেটার নাম দেয়া হয়েছে 'উইলায়াত অব হিন্দ'। তারা আরও দাবি করেছে, ভারতের একমাত্র মুসলমান-প্রধান উত্তর জম্মুর সোফিয়ান জেলার আমশিপোরাতে ভারতীয় সেনাদের হতাহত করেছে আইএস।

কাশ্মিরে আইএসের এক ক্যাডার নিহতের প্রসঙ্গে সংগঠনটি যে বিবৃতি দিয়েছে, তার সঙ্গে রাজ্য পুলিশের দেয়া বিবৃতির মিল রয়েছে। পুলিশ ১১ মে বলেছে, তারা ইশফাক আহমেদ সোফি ওরফে উমর নামের এক জঙ্গিকে এনকাউন্টারে হত্যা করেছে এবং নিহত সদস্য ইসলামিক স্টেট জম্মু ও কাশ্মিরের সদস্য।

ইরাক ও সিরিয়ার তথাকথিত 'খিলাফত' থেকে বিতাড়িত হয়ে নিজেদের অবস্থানকে সংহত করার প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে নতুন প্রদেশ ঘোষণা দিয়ে থাকতে পারে আইএস। এক সময় সিরিয়া ও ইরাকে হাজার হাজার বর্গমাইল এলাকা আইএসের নিয়ন্ত্রণে ছিল। 'সাইট ইন্টেল গ্রম্নপ'র পরিচালক রিটা কাটজ বলেন, বিশ্ব হয়তো এসব ঘটনাপ্রবাহ থেকে দৃষ্টি সরিয়ে রাখবে, কিন্তু এই স্পর্শকাতর এলাকার জিহাদিদের জন্য আইএস খিলাফতের ভিত্তি তৈরিকে সাহায্য করতে এগুলো গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার।

ভারতের স্বাধীন 'থিঙ্ক ট্যাঙ্ক' প্রতিষ্ঠান 'অবজার্ভার রিসার্চ ফাউন্ডেশন'র গত বছরের এক গবেষণায় দাবি করা হয়েছে, আইএস বিশেষভাবে ভারতের প্রতি এবং সাধারণভাবে দক্ষিণ এশিয়ার প্রতি যে হুমকি সৃষ্টি করেছে, সেটা অন্য যেকোনো অঞ্চলের মতোই অতি বাস্তব সত্য। গবেষণায় বলা হয়েছে, 'আল-বাগদাদির তথাকথিত খিলাফতের সুসংগঠিত কোনো প্যাটার্ন থেকে এটা আসেনি। বরং যে পরিবেশটা তৈরি করা হয়েছে, সেটার কারণে আইএসে যোগ দেয়াটা সহজ হয়ে গেছে, যারা এমনকি ক্ষুদ্রতম ঘটনা থেকেও আন্তর্জাতিক শিরোনাম তৈরি করার ব্যাপারে যথেষ্ট শক্তিশালী।'

ওআরএফ ইনডিয়ার অ্যাসোসিয়েট ফেলো কবির তানেজা বলেছেন, আইএসের প্রভাবের ব্যাপারে ভারতকে প্রায়ই আলাদা হিসেবে বর্ণনা করা হয়ে থাকে। তিনি বলেন, বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম মুসলমান জনসংখ্যার দেশ হিসেবে (ইন্দোনেশিয়া ও পাকিস্তানের পর) যে সংখ্যক ভারতীয় মুসলমান আইএসে কাজ করে বলে দাবি করা হচ্ছে, সেই সংখ্যাটা অনেক কম- ১০০ জনের কিছু বেশি। আরেকটু উদার হিসাবে এই সংখ্যা ২০০ থেকে ৩০০ জনের ভেতরে। এ পর্যন্ত ১১২ জন সন্দেহভাজন আইএস সদস্যকে আটক করা হয়েছে।

গত বছরের ২৩ জুন জম্মু ও কাশ্মিরের সরকার প্রথমবারের মতো আনুষ্ঠানিকভাবে কাশ্মিরে ইসলামিক স্টেটের উপস্থিতি স্বীকার করে। এর আগে সরকার ও নিরাপত্তা সংস্থাগুলো আইএসের উপস্থিতির বিষয়গুলো নাকচ করে এসেছে।

আইএসের প্রচারণা শাখা আমাক নিউজ এজেন্সি দাবি করেছে, ২০১৭ সালের নভেম্বরে কাশ্মিরে সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে প্রথম হামলা চালায় তারা। শ্রীনগরের বাইরে এই হামলা চালানো হয় এবং এতে এক পুলিশ সদস্য নিহত হয়। সেটা ছিল একটা প্রতিশোধমূলক হামলা। পুলিশ এর আগে মুগিস মির নামের এক জঙ্গিকে হত্যা করেছিল এবং আরেকজনকে আটক করেছিল। বাহিনীর ওপর হামলার সময় মুগিস কালো টি-শার্ট পরা ছিল, যেটাতে আইএসের লোগো মুদ্রিত ছিল। মুগিসের লাশ তার পরিবারের সদস্যদের কাছে জানাজার জন্য হস্তান্তর করা হয়। শ্রীনগরের পারিম্পোরা এলাকায় তাকে কবর দেয়ার সময় বিক্ষোভকারীরা তার লাশকে আইএস পতাকা দিয়ে মুড়িয়ে দেয়। তারা এ সময় আইএসপন্থি ও খিলাফতপন্থি স্স্নোগানও দেয়। কাশ্মিরে বিভিন্ন বিক্ষোভের সময় মাঝে মাঝেই আইএসের কালো পতাকা প্রদর্শনী করা এখন কার্যত স্বাভাবিক ঘটনা হয়ে গেছে।

তবে স্থানীয়দের বিশ্বাস, আইএস কাশ্মিরকে তাদের কর্মকান্ডের জন্য অতটা উর্বর জমি পাবে না। বিশিষ্ট লেখক এবং কাশ্মিরের সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটির আন্তর্জাতিক আইন বিষয়ের অধ্যাপক শওকত হুসাইন বলেছেন, কাশ্মিরের স্বাধীনতা আন্দোলনকে মূলত আইএসের একটা অংশ হিসেবে প্রদর্শনের জন্যই কাশ্মিরে আইএসের উপস্থিতির কথা বলা হচ্ছে। হুসাইন বলেন, 'এটা সত্য নয়, কারণ কাশ্মির ও ফিলিস্তিন আন্দোলনের সমস্যাটা বৈশ্বিক সন্ত্রাসবাদের জন্মেরও বহু আগের বিষয়।'

গত বছরের ডিসেম্বরে একদল তরুণ তাদের মুখ ঢেকে কাশ্মিরের গ্র্যান্ড মসজিদ- যেটা জামিয়া মসজিদ নামেও পরিচিত; সেখানে ঢুকে পড়ে এবং ইসলামিক স্টেটের পতাকা প্রদর্শনী করতে থাকে। মসজিদের যে মিম্বার থেকে কাশ্মিরের প্রধান ইমাম মিরওয়াজ উমর ফারুক তার শুক্রবারের খুতবা দিয়ে থাকেন, সেই মিম্বারেও তারা উঠে পড়েছিল। ওই ঘটনাটিকে কাশ্মিরের সমাজের সর্বস্তরের মানুষ নিন্দা করেছে। মানুষ এটাকে অপকর্ম আখ্যা দিয়ে বলেছে, কাশ্মিরের আজাদির আন্দোলনকে এটা ক্ষতি করেছে।

কাশ্মিরের প্রধান ইমাম এবং বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতা মিরওয়াজ উমর ফারুক বলেন, আইএস ইসলামী নিয়ম-নীতির বিরোধী এবং তারা কোনো অবস্থাতেই এই অঞ্চলে গ্রহণযোগ্যতা পাবে না। তবে, একজন পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, আইএস কাশ্মিরে তাদের অবস্থান মজবুত করার চেষ্টা করছে। সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে তাদের আদর্শ প্রচারের মাধ্যমে এই চেষ্টা চালাচ্ছে। তিনি বলেন, যদিও কাশ্মিরের আইএসের বাহ্যিক উপস্থিতি নেই, কিন্তু স্থানীয় তরুণদের মধ্যে তারা আদর্শ ছড়িয়ে দিতে পারে। সংবাদসূত্র : সাউথ এশিয়ান মনিটর

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<57900 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1