মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

কাশ্মীর ইসু্যতে পাকিস্তানের ক্ষমতা

ভারত সবসময় দেখাতে চায় পাকিস্তান কাশ্মীর পরিস্থিতির জন্য দায়ী। তারাই সশস্ত্র সন্ত্রাসী ঢুকিয়ে দেয় কাশ্মীরে। সুতরাং এখন এমন কিছু করা পাকিস্তানের জন্য ঠিক হবে না, যাতে ভারত কোনো অজুহাত পেতে পারে। এখন পর্যন্ত ইঙ্গিত- পাকিস্তান সেই পথেই যাচ্ছে। ইমরান খানের সাম্প্রতিক বক্তব্য এবং টুইটগুলো ইঙ্গিত দিচ্ছে, তিনি কাশ্মীরের ব্যাপারে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করার পথই নিচ্ছেন...
নতুনধারা
  ১৬ আগস্ট ২০১৯, ০০:০০
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান

যাযাদি ডেস্ক

কাশ্মীর নিয়ে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান ভারতের নরেন্দ্র মোদি সরকারকে টার্গেট করে সোশ্যাল মিডিয়ায় একের পর এক তীব্র আক্রমণ চালিয়ে যাচ্ছেন। তিনি মোদি সরকার এবং ক্ষমতাসীন দলের সঙ্গে হিটলার এবং নাৎসিদের তুলনা করছেন।

গত সোমবার টুইটারে ইমরান লিখেছেন, 'কারফিউ, কঠোর বিধিনিষেধ এবং ভারত-অধিকৃত কাশ্মীরে আসন্ন গণহত্যা আরএসএসের (রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ) আদর্শ, যে আদর্শ নাৎসিদের আদর্শ দ্বারা অনুপ্রাণিত। জাতিগত শুদ্ধির মাধ্যমে কাশ্মীরের জনসংখ্যার অনুপাত বদলের চেষ্টা চলছে। প্রশ্ন হচ্ছে, মিউনিখে হিটলারকে যেভাবে তোষণ করা হয়েছিল, বিশ্ব কি এবারও তেমনই ভূমিকা নেবে?' তার আগে আরেকটি টুইটে ইমরান খান লেখেন, 'আরএসএসের হিন্দু শ্রেষ্ঠত্ববাদের আদর্শ নিয়ে আমি শঙ্কিত, কারণ এটা নাৎসিদের আদর্শের মতো। ভারতশাসিত কাশ্মীরে এই আদর্শ প্রতিহত করতে হবে। না হলে ভারতে মুসলমান নির্যাতন বাড়বে এবং একসময় পাকিস্তানকেও টার্গেট করা হবে। হিন্দু শ্রেষ্ঠত্ববাদ হিটলারি শাসনের একটি সংস্করণ।'

বোঝাই যায়, ভারতের সরকারি দলের সঙ্গে হিটলার এবং নাৎসিবাদের সঙ্গে তুলনা করে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী কাশ্মীরের প্রতি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করছেন। এক বছর আগে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ক্ষমতা নেয়ার পর থেকে কাশ্মীর নিয়ে সংকটের মধ্যে রয়েছেন ইমরান খান। গত ফেব্রম্নয়ারিতে ভারতশাসিত কাশ্মীরের পুলওয়ামায় সন্ত্রাসী হামলার পর ভারতের সঙ্গে যুদ্ধ প্রায় বেধে গিয়েছিল। ক'মাস যেতে না যেতেই কাশ্মীরের স্বায়ত্তশাসন বিলোপের ভারতের এই অকস্মাৎ সিদ্ধান্তের প্রচন্ড এক ধাক্কা সামলাতে হচ্ছে তাকে। মিডিয়া রিপোর্ট এবং রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের বক্তব্য থেকে এটা কম-বেশি স্পষ্ট, ৫ আগস্ট যেভাবে ভারত সংবিধানের ৩৭০ ধারা বিলোপ করে জম্মু ও কাশ্মীরের স্বায়ত্তশাসন অবসান করে, তাতে অপ্রস্তুত হয়ে পড়েছিল পাকিস্তান। দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী শাহ মেহমুদ কুরেশি সেদিনই 'জিও টিভি'তে এক সাক্ষৎকারে কার্যত স্বীকার করেন, তিনি ভারতের এই পদক্ষেপে হোঁচট খেয়েছেন। পরপরই পাকিস্তানের নেতাদের কাছ থেকে একের এক ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া আসতে শুরু করে।

প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান দফায় দফায় সরকারি মন্ত্রী এবং সেনা কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলছেন। ভারতীয় হাইকমিশনারকে বহিষ্কার করা হয়েছে। একইসঙ্গে দিলিস্নতে তাদের রাষ্ট্রদূতকে ফিরিয়ে এনেছেন। পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে ৫ আগস্টই এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, কাশ্মীরের মানুষের প্রতি দায়বোধ পালনে তারা যেকোনো পথ নিতে প্রস্তুত। কিন্তু কাশ্মীর ইসু্যতে ভারতের সঙ্গে আরেকটি যুদ্ধের মতো চরম কোনো পথে যাওয়ার সম্ভাবনা কতটা পাকিস্তানের?

এখন পর্যন্ত পাকিস্তানের ক্ষমতাসীন মহল থেকে কার্যত সেই সম্ভাবনা নাকচ করে দেয়া হচ্ছে। সামরিক পথে যাওয়ার সম্ভাবনা পুরোপুরি নাকচ করে দিয়েছেন জাতিসংঘে পাকিস্তানের দূত মালিহা লোধি। গত শুক্রবার 'সিএনএন'কে তিনি বলেন, কূটনৈতিক এবং রাজনৈতিক পথে এগোনোর বহু রাস্তা পাকিস্তানের সামনে খোলা, এবং সেই পথেই তারা এগোবে।

দক্ষিণ এশিয়া নিরাপত্তা বিষয়ের বিশ্লেষক ড. সৈয়দ মাহমুদ আলি বলেন, কাশ্মীরের সর্ব-সাম্প্রতিক এই ইসু্যটি নিয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে যাওয়া ছাড়া পাকিস্তানের সামনে এখন তেমন কোনো বিকল্প নেই। জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের তিনটি প্রস্তাব রয়েছে। ভারতের সিদ্ধান্তে ওই সব প্রস্তাব অকার্যকর হয়ে যায়নি। জাতিসংঘ এবং একইসঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে যেতে হবে পাকিস্তানকে। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র পাকিস্তানকে কতটা গুরুত্ব দিতে পারে?

ড. সৈয়দ মাহমুদ আলি মনে করেন, যুক্তরাষ্ট্র আফগানিস্তান থেকে সেনা প্রত্যাহারের জন্য উন্মুখ এবং সেজন্য তালেবানের সঙ্গে তারা একটি মীমাংসা করছে। এই প্রচেষ্টায় সাফল্যের পাকিস্তানের সহযোগিতা যুক্তরাষ্ট্রের কাছে এখন গুরুত্বপূর্ণ। ড. আলি বলেন, ইমরান খান এবং ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যে ব্যক্তিগত বোঝাপড়া ভালো- যেটা হয়তো পাকিস্তান কাজে লাগানোর চেষ্টা করবে। ট্রাম্প ও ইমরানের সম্পর্ক বহুদিনের, ২৫ বছর ধরে তারা পরস্পরকে চেনেন, যোগাযোগ আছে।

পাকিস্তানের ইংরেজি দৈনিক 'দ্য ডেইল টাইমস' পত্রিকা এক সম্পাদকীয়তে লিখেছে, যুক্তরাষ্ট্র এবং ন্যাটো যদি জাতিসংঘ প্রস্তাব মেনে চলার জন্য ভারতের ওপর চাপ তৈরি না করে, তাহলে পাকিস্তানের উচিত আফগানিস্তানে শান্তি প্রতিষ্ঠায় সাহায্য বন্ধ করে দেয়া। আফগানিস্তান-ভারতের বাণিজ্যপথ এবং পাকিস্তানের আকাশ ভারতের জন্য বন্ধ করে দেয়ার সুপারিশ করছেন পাকিস্তানের অনেকে। চীনের ওপরও চাপ তৈরির কথা লিখেছে ডেইলি টাইমস- 'চীন যদি চায় বেইজিং-ইসলামাবাদ অর্থনৈতিক করিডর বা সিপিইসি নিরবিচ্ছিনভাবে চলুক, তাহলে তাদের পাকিস্তানের সঙ্গে কাঁধ মেলাতে হবে।'

পাক সাবেক কূটনীতিক এবং সাবেক পররাষ্ট্র সচিব শামসাদ আহমেদ বলেছেন, পাকিস্তান সরকারের উচিত, প্রভাবশালী দেশেগুলোতে গিয়ে বলা যে, ভারতের এই পদক্ষেপের ফলে পারমাণবিক অস্ত্রধারী দুই দেশের মধ্যে সংঘাতের কত বড় হুমকি তৈরি হয়েছে। তিনি বলেন, 'প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প যখন কাশ্মীর প্রসঙ্গে মধ্যস্থতা করার প্রস্তাব করলেন, পরপরই ভারত কাশ্মীরে এই কান্ড করল... এখানে পাকিস্তানের কোনো ভূমিকাই নেই। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে পাকিস্তানকে এই বিষয়টিই বোঝাতে হবে।'

আরেক সাবেক পররাষ্ট্র সচিব নাজমুদ্দিন শেখ বলেন, আফগানিস্তানের শান্তিপ্রক্রিয়াকে কাজে লাগাতে পারে পাকিস্তান, তবে কোনোভাবেই পাকিস্তানের উচিত হবে না, যুক্তরাষ্ট্রের কাছে বিষয়টিকে শর্ত হিসেবে তুলে ধরা। তার মতে, পাকিস্তানের এখন উচিত হবে যুক্তরাষ্ট্র এবং মিত্রদের কাছে গিয়ে বলা, আঞ্চলিক শান্তি এবং স্থিতিশীলতার স্বার্থে পাকিস্তান এবং ভারতের সংঘাতের সমাধান হওয়া প্রয়োজন। কিন্তু আফগান শান্তিপ্রক্রিয়া নষ্ট করে দেয়ার চেষ্টা করা একবারেই ঠিক হবে না।' কাশ্মীরে বিদ্রোহে অস্ত্র বা অন্য কোনো উপায়ে সরাসরি মাথা গলানোর কোনো চেষ্টা থেকেও পাকিস্তানের বিরত থাকা উচিত বলেও মনে করেন নাজিমুদ্দিন শেখ। তিনি বলেন, ভারত সবসময় দেখাতে চায় পাকিস্তান কাশ্মীর পরিস্থিতির জন্য দায়ী। তারাই সশস্ত্র সন্ত্রাসী ঢুকিয়ে দেয় কাশ্মীরে। সুতরাং এখন এমন কিছু করা পাকিস্তানের জন্য ঠিক হবে না, যাতে ভারত কোনো অজুহাত পেতে পারে।'

এখন পর্যন্ত ইঙ্গিত- পাকিস্তান সেই পথেই যাচ্ছে। ইমরান খানের সাম্প্রতিক বক্তব্য এবং টুইটগুলো ইঙ্গিত দিচ্ছে, তিনি কাশ্মীরের ব্যাপারে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করার পথই নিচ্ছেন। পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী শাহ মেহমুদ কুরেশি জেদ্দায় গিয়ে ইসলামী ঐক্য সংস্থা বা ওআইসির কাছে পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করেছেন। গত শুক্রবার তিনি চীনেও গেছেন। শুক্রবার বেইজিংয়ে চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে পাক পররাষ্ট্রমন্ত্রীর আড়াই ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে বৈঠক হয়েছে। পরে পাকিস্তানের মন্ত্রী বলেন, কাশ্মীর প্রশ্নে ইসলামাবাদের সঙ্গে রয়েছে চীন।

লাদাখের কিছু এলাকার মালিকানা দাবি করে চীন। ফলে এরই মধ্যে তারা লাদাখকে ভারতের কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল করার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করে বিবৃতি দিয়েছে। চীনা বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ভারতের এই পদক্ষেপ তাদের সার্বভৌমত্বের জন্য হুমকি।

তবে ঝিনজিয়াং প্রদেশে মুসলমানদের বিচ্ছিন্নতাবাদী তৎপরতা সামলাতে হচ্ছে বেইজিংকে। ফলে কাশ্মীরিদের ব্যাপারে তারা পাকিস্তানকে কতটা জোরালো সমর্থন জোগাবে, তা নিয়ে অনেক বিশেষজ্ঞেরই সন্দেহ রয়েছে। নিরাপত্তা পরিষদের অন্য স্থায়ী সদস্যদের পক্ষ থেকেও ভারতের এই পদক্ষেপের বিরুদ্ধে তেমন কোনো প্রতিক্রিয়া দিতে শোনা যায়নি। শুধু রাশিয়া কূটনৈতিকভাবে ভারতের পক্ষে কিছুটা অবস্থান নিয়েছে। সংবাদসূত্র : বিবিসি নিউজ

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<62425 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1