শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১
বিশেষ প্রতিবেদন

তিন পৃথিবীর হদিস পেল নাসা

যাযাদি ডেস্ক
  ১৭ আগস্ট ২০১৯, ০০:০০

ঠিক যেমনটি চাইছিল, দীর্ঘ প্রায় তিন দশক পর ঠিক তেমনটিই পেল নাসা। একটা নয়, তিন-তিনটি পৃথিবীর সমান গ্রহের হদিস পেয়েছে সংস্থাটি। যা পৃথিবী থেকে মোটামুটি কাছেরই একটি নক্ষত্রমন্ডলে। মেরেকেটে ৭৩ আলোকবর্ষ দূরে। এত কাছে, এত 'মনের মতো' ভিনগ্রহ এর আগে আর পাওয়া যায়নি, এমনটাই দাবি তাদের। মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থার ট্রানজিটিং এক্সোপ্যানেট সার্ভে স্যাটেলাইট'র (টেস) নজরদারিতেই ধরা দিয়েছে ওই তিনটি ভিনগ্রহ।

সেই তিন 'আগন্তুক' আপাদমস্তক পৃথিবীর মতোই কি না, তাদেরও আমাদের মতোই পুরো বায়ুমন্ডল রয়েছে কি না, সেই মুলস্নুকেও তরল পানি বা শ্বাসের বাতাস রয়েছে কি না, সেইসব এখনো জানা যায়নি ঠিকই। কিন্তু প্রাণের সহায়ক পরিবেশ মিলতে পারে, এই আবিষ্কারে এমন আশা জোরালো হয়ে উঠেছে বিজ্ঞানীদের। আবিষ্কারের গবেষণাপত্রটি গত ২৯ জুলাই প্রকাশিত হয়েছে আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান-জার্নাল 'নেচার অ্যাস্ট্রোনমি'তে।

গবেষকরা জানিয়েছেন, এই তিনটি ভিনগ্রহের মধ্যে একটি পৃথিবীর চেয়ে আকারে সামান্য বড়। ওজনেও কিছুটা বেশি হবে। বাকি দুটি এমন ধরনের, যার মতো কোনো গ্রহের হদিস এখন পর্যন্ত মেলেনি আমাদের সৌরমন্ডলে। আমাদের থেকে মাত্র ৭৩ আলোকবর্ষ দূরে থাকা ওই নক্ষত্রমন্ডলটির নাম দেয়া হয়েছে, 'টিওআই-২৭০'। 'টিওআই' শব্দটির অর্থ 'টেস অবজেক্ট অফ ইন্টারেস্ট'। তার মানে, নাসার 'টেস' উপগ্রহ প্রাণের সহায়ক পরিবেশের সন্ধানে যে ধরনের ভিনগ্রহ বা নক্ষত্রমন্ডলগুলোকে খুঁজে চলেছে, সদ্য আবিষ্কৃত তারামন্ডলটি তাদেরই মধ্যে পড়ে।

এই নক্ষত্রমন্ডলের অভিনবত্ত্বটা হলো, তার 'সূর্য' বা নক্ষত্রের চেহারা ও চরিত্রে। গোত্রের নিরিখে এই নক্ষত্রগুলো পড়ে 'এম-৩'-তে। যা আমাদের সূর্যের চেহারা ও ওজনের ৪০ শতাংশ মাত্র। তার মানে, আমাদের চেহারায় আমাদের সূর্যের কাছে তো নস্যিই, ওজনেও আমাদের সূর্যের মতো ভারী নয় 'টিওআই-২৭০' নক্ষত্র। শুধু তাই নয়, ওই নক্ষত্র সূর্যের মতো অতটা তেতেপুড়েও নেই। বরং অনেকটাই ঠান্ডা। সূর্যের মতো পুরোদস্তুর তারা হয়ে উঠতে পারেনি বলেই 'টিওআই-২৭০' আদতে বামন নক্ষত্র (ডোয়ার্ফ স্টার)। তাই আমাদের সূর্যের পিঠ যতটা গরম, এই নক্ষত্রটির পিঠের তাপমাত্রা তার তিন ভাগের এক ভাগ।

তিনটি ভিনগ্রহের মধ্যে অন্তত দুটি দৃষ্টি কেড়ে নিয়েছে গবেষকদের। তাদের একটির নাম- 'টিওআই-২৭০-বি'। অন্যটি- 'টিওআই-২৭০-ডি'। তিনটি ভিনগ্রহের মধ্যে নক্ষত্রের (টিওআই-২৭০) সবচেয়ে কাছে রয়েছে যে ভিনগ্রহটি, তার নাম- টিওআই-২৭০-বি। এই গ্রহটি পৃথিবীর চেয়ে আকারে ২৫ শতাংশ বড়। জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের অনুমান, এই গ্রহটিরই আমাদের পৃথিবী বা মঙ্গলের মতো পাথুরে হওয়ার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি।

বুধ গ্রহটি যতটা দূরত্বে কক্ষপথে প্রদক্ষিণ করে সূর্যকে, তার চেয়ে ১৩ গুণ কম দূরত্বে এই টিওআই-২৭০-বি ভিনগ্রহটি পাক মারে তার নক্ষত্র টিওআই-২৭০-এর চারপাশে। তার জন্য পৃথিবীর চেয়ে সময়ও নেয় অনেকটাই কম। সূর্যকে প্রদক্ষিণ করতে পৃথিবী সময় নেয় ৩৬৫ দিন। আর এই ভিনগ্রহটি তার নক্ষত্রকে প্রদক্ষিণ করতে সময় নেয় তিন দিন চার ঘণ্টা। বিজ্ঞানীদের অনুমান, এই গ্রহটির ওজন হতে পারে পৃথিবীর প্রায় দু'গুণ (১.৯ গুণ)।

তবে এই গ্রহে প্রাণের সহায়ক পরিবেশ পাওয়ার সম্ভাবনা কতটা রয়েছে, তা নিয়ে কিছুটা সংশয় রয়েছে খোদ গবেষকদেরই। কারণ, যতই মিইয়ে পড়া তারা হোক টিওআই-২৭০, গ্রহটি তার এতটাই কাছে রয়েছে যে, তার গা পুড়ে যাচ্ছে। তার ফলে, তার বায়ুমন্ডল রয়েছে কি না, থাকলেও তা কেমন জানতে হবে।

গবেষকরা জানিয়েছেন, বাকি দুটি গ্রহের অন্যতম টিওআই-২৭০-সি পৃথিবীর আকারের প্রায় আড়াই গুণ। যা তার নক্ষত্রটিকে প্রদক্ষিণ করতে সময় নেয় পাঁচ দিন সাত ঘণ্টা। আর অন্য গ্রহ টিওআই-২৭০-ডি ২.১ গুণ বড় পৃথিবীর চেয়ে। টিওআই-২৭০ নক্ষত্রটিকে প্রদক্ষিণ করতে ওই ভিনগ্রহটি সময় নেয় ১১ দিন চার ঘণ্টা। টিওআই-২৭০-সি এবং টিওআই-২৭০-ডি, এই দুটি গ্রহই নেপচুনের ছোটখাটো সংস্করণের মতো। সেক্ষেত্রে সেগুলো হয়তো পাথুরে না হয়ে হবে গ্যাসে ভরা গ্রহ। ওজনে হতে পারে পৃথিবীর সাত বা পাঁচ গুণ বেশি। চাঁদের যেমন একটা পিঠ সবসময় থাকে পৃথিবীর দিকে, ঠিক তেমনই এই তিনটি গ্রহেরও একটি পিঠ সবসময় থাকে তাদের নক্ষত্রের দিকে। সংবাদসূত্র : ইনডিপেনডেন্ট ইউকে

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<62611 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1