বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

পুননির্মার্ণ সরকারের ফঁাকা বুলি!

সিরিয়ায় গৃহযুদ্ধ
যাযাদি ডেস্ক
  ২৪ জুন ২০১৮, ০০:০০
আপডেট  : ২৪ জুন ২০১৮, ২৩:৫৬
বিমান হামলায় বিধ্বস্ত কোবানের একটি বাড়ি

সিরীয় কুদির্ কতৃর্পক্ষের কাছ থেকে সাহায্যের আশা ত্যাগ করে আহমেদ সালেহ কোবানেতে তার বাড়িঘর মেরামতের জন্য এখন বিদেশে অবস্থান করা আত্মীয়দের দিকে তাকিয়ে আছেন। তিনি তাদের সহায়তায় তার ভাঙা ঘর মেরামত করবেন। জঙ্গিদের সঙ্গে লড়াইয়ে এই এলাকাটির ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।

মাকির্ন সমথির্ত কুদির্ বাহিনী তুমুল লড়াই চালিয়ে ইসলামিক স্টেট (আইএস) জঙ্গিদের উচ্ছেদ করার সময় উভয়পক্ষের সংঘষের্ তুরস্কের সীমান্তবতীর্ সিরিয়ার অধিকাংশ উত্তরাঞ্চল প্রায় ধ্বংস হয়ে গেছে। ২০১৫ সাল থেকে এলাকাটি আইএস জিহাদিদের দখলে ছিল।

যুদ্ধের প্রাথমিক পযাের্য় এর প্রচÐতা ও ভয়াবহতা থেকে রক্ষা পেতে সালেহ তুরস্কে পালিয়ে যান। এক বছর পর তিনি তার নিজ বাড়িতে ফিরে এসে দেখতে পানÑ ভয়াবহ যুদ্ধে তার বাড়ির তিনটি কামরার মধ্যে দুটি কামরাই ধ্বংস হয়ে গেছে। তিনি বলেন, ‘আমরা কোবানে ফিরে দেখতে পাই যুদ্ধ থেমে গেছে। শহরের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি ও ধ্বংসযজ্ঞ আমাদের হতবিহŸল করে ফেলে।’

তিনি একসময় জুতার কারিগর ছিলেন। তিনি আশা করেছিলেন কতৃর্পক্ষ ক্ষতিগ্রস্ত বাড়িঘর নিমাের্ণ সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেবে। কিন্তু ধীরে ধীরে তার সেই আশা ‘ক্ষীণ হয়ে আসছে।’ ৪৫ বছর বয়সী হতভাগ্য লোকটি বলেন, ‘আমাদের এই বাড়িতেই থাকতে হবে। আমরা সরকারের ফঁাকা বুলির ওপর ভরসা করে আর হাত-পা গুটিয়ে বসে থাকতে পারছি না।’

সালেহ তার পরিবারের সদস্যদের বিদেশে পাঠিয়েছেন। সেখান থেকে তারা তার জন্য অথর্ পাঠায়। তিনি বলেন, ‘আমার ছেলে জামাির্ন এবং ভাই ইরাকের কুদির্স্তানে আছে। আমি ও আমার বাচ্চারা যেন বাড়িতে ফিরে আসতে পারি, সেজন্য তারাই আমাকে সাহায্য করছে।’ এখন পযর্ন্ত বাড়ি মেরামতের জন্য সালেহ এক হাজার ১৫০ মাকির্ন ডলার খরচ করেছেন। বাকি শুধু বাড়ির রং চ‚ড়ান্ত করা। তার পূবার্ঞ্চলীয় এলাকা বুতানেও আরেকটি বাড়িও মেরামত করা হয়েছে। এখনো বাড়িটিতে গুলির গতর্ দেখা যায়। তবে দেয়ালগুলো মেরামত করে রং করা হয়েছে।

মোহাম্মদ নায়েসান কাছের মাটির্র কাওয়া জেলায় বাস করেন। তিনি তার একতলা বাড়িটি নিজ হাতে ও নিজ খরচে মেরামত করেছেন। ৭৬ বছর বয়সী এই বৃদ্ধ বলেন, ‘আইএস আমাদের বাড়িটি সম্পূণর্ ধ্বংস করে ফেলেছে।’ তিনি বলেন, ‘মিউনিসিপালিটির লোকজন এসে ভবনের ক্ষতির সব বিবরণ লিখে নিয়ে গেছে। কিন্তু ওই পযর্ন্তই। এরপর আর কিছুই করেনি। কেউ আমাদের সাহায্যও করেনি। বাড়িঘর পুনরায় মেরামত করা খুবই ব্যয়সাপেক্ষ। আমার অনেক খরচ হয়েছে।’

২০১২ সাল থেকে সিরিয়ার উত্তরাঞ্চলীয় কুদির্-প্রধান এলাকাগুলো থেকে কেন্দ্রীয় সরকারি বাহিনীর সদস্যদের প্রত্যাহার করে নেয়া হয়। এর ফলে স্থানীয় কতৃর্পক্ষ সেখানে আধা-স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলে। এরপর আইএস সিরিয়ার উত্তরাঞ্চল দখল করার সময় ২০১৪ সালে কোবান আক্রমণ করে।

নগরীর শীষর্ কমর্কতার্ আনোয়ার মুসলিম বলেন, জঙ্গিদের হটাতে চার মাসের ওই প্রচÐ যুদ্ধে নগরীর প্রায় অধের্ক এলাকাই ধ্বংস হয়ে যায়। শহরটির উত্তর ও পূবার্ঞ্চল সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। মুসলিম জানান, কোবানেতে পঁাচ হাজারের মতো বাড়িঘর ধ্বংস হয়ে গেছে। এগুলোর প্রায় ৭০ শতাংশ পুনরায় নিমার্ণ করা হয়েছে। কিন্তু কতৃর্পক্ষের এত বাড়ি নিমাের্ণর মতো অথর্ নেই। তাই বিদেশে থেকে ব্যক্তিপযাের্য় পাঠানো টাকায় বাড়ি নিমার্ণ এখন খুবই গুরুত্বপূণর্।

কতৃর্পক্ষ পানি ও বিদ্যুৎ সরবরাহের দিকে মনোনিবেশ করেছেন। তাছাড়া বেশ কয়েকটি স্কুলও পুনরায় নিমার্ণ করছে। কিন্তু তাদের এই পদক্ষেপও প্রায় ব্যথর্। এখনো অধিকাংশ স্থানেই পানি ও বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত হয়নি। কোবানের জনসংখ্যা সাত বছর আগে যুদ্ধ শুরুর সময় চার লাখ ছিল। বতর্মানে এই সংখ্যা কমে আড়াই লাখে দঁাড়িয়েছে।

৩২ বছর বয়সী কুদির্ ভাষার শিক্ষক মুসলিম নাবু বলেন, ‘আমাদের বাড়ি পুনরায় নিমাের্ণর সামথর্্য নেই।’ তাই তিনি বাধ্য হয়ে ভাড়া বাড়িতে বাস করছেন। মুসলিম বলেন, এখন পযর্ন্ত ৫০০ ক্ষতিগ্রস্ত বাড়ির মধ্যে মাত্র ২৫৮টি বাড়ির জন্য ক্ষতিপূরণ দেয়া হয়েছে। বাকিদের দিকে কবে সাহায্যের হাত বাড়ানো হবে, কেউ জানে না। সংবাদসূত্র: এএফপি অনলাইন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে