শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

অ্যান্টার্কটিকায় মৃত নক্ষত্রের শরীর!

নতুনধারা
  ১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক

মাউন্ট এভারেস্টে এখনো অবিকৃতভাবেই পাওয়া যায় হারিয়ে যাওয়া পর্বতারোহী জর্জ ম্যালোরির 'আইস শু'। হদিস মেলে পাহাড়ের খাঁজে আটকে থাকা মৃত পর্বতারোহীর পচন না-ধরা দেহ। এবার পৃথিবীর দক্ষিণ মেরুতে পুরু বরফের চাদরে মোড়া অ্যান্টার্কটিকায় পাওয়া গেল এই সৌরমন্ডল থেকে অনেক দূরের কোনো মৃত নক্ষত্রের শরীরের টুকরো! আর সেটা অবিকৃতভাবেই! যে নক্ষত্রটি ছিল আমাদের সূর্যের চেয়ে বহু গুণ ভারী। যার মৃতু্য হয়েছে, খুব বেশি হলে বছর কুড়ির মধ্যেই। গল্প নয়, নয় কোনো কল্পকাহিনীও। এই গবেষণাপত্রটি প্রকাশিত হয়েছে আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান-বিষয়ক জার্নাল 'ফিজিক্যাল রিভিউ লেটার্স'-এ গত ১২ আগস্টের সংখ্যায়।

অ্যান্টার্কটিকার পুরু বরফের চাদরের নিচ থেকে বিজ্ঞানীরা পেয়েছেন অত্যন্ত তেজস্ক্রিয় লোহা। যা পৃথিবীতে পরমাণু অস্ত্রশস্ত্র ছাড়া আর কোনোভাবেই পাওয়া সম্ভব নয়। যে লোহা পৃথিবীতে আছড়ে পড়েছে ২০ বছরের মধ্যে।

ক্যানবেরার 'অস্ট্রেলিয়ান ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি'র গবেষক ডমিনিক কল জানান, তিনি ও তার সহযোগী গবেষকরা অ্যান্টার্কটিকার কোহনেন স্টেশন থেকে ২০১৫ সালে প্রায় এক হাজার ১০০ পাউন্ড ওজনের বরফ সংগ্রহ করেছিলেন। যেখান থেকে তারা ওই বিশাল বরফখন্ডটি সংগ্রহ করেছিলেন, অ্যান্টার্কটিকায় সেখানে বরফ জমা হয়েছে বছর কুড়ির মধ্যেই।

এরপর তারা সেই বরফখন্ডটি পাঠিয়েছিলেন জার্মানির এক গবেষণাগারে। তাকে গলানো ও পরিশ্রম্নত করার জন্য। এরপর গবেষকরা সেই গলানো ও পরিশ্রম্নত বরফখন্ডটিকে রেখেছিলেন একটি মাস স্পেকট্রোমিটারের নিচে। এর মধ্যে কী কী রয়েছে, সেটা জানা ও বোঝার জন্য।

ডমিনিক কলের কথায়, 'মাস স্পেকট্রোমিটারই আমাদের প্রথম জানায়, অ্যান্টার্কটিকা থেকে আনা সেই বরফখন্ডের মধ্যে রয়েছে অত্যন্ত বিরল ও পৃথিবীতে একেবারেই অস্থায়ী তেজস্ক্রিয় লোহা। যে লোহার পরমাণুর নিউক্লিয়াসে রয়েছে ২৬টি প্রোটন ও ৩৪টি নিউট্রন। লোহার এই আইসোটোপটির নাম লোহা-৬০।' ডমিনিক জানিয়েছেন, তারা অ্যান্টার্কটিকা থেকে আনা সেই বরফখন্ডটি থেকে লোহার পাঁচটি আইসোটোপ পেয়েছেন। প্রত্যেকটি আইসোটোপই অত্যন্ত তেজস্ক্রিয়। এতটাই যে, তাদের হদিস পাওয়াটা হয় অনেকটাই খড়ের গাদায় সূঁচ খোঁজার মতো।

ইনডিয়ান সেন্টার ফর স্পেস ফিজিক্স (আইসিএসপি)-র প্রধান জ্যোতির্বিজ্ঞানী সন্দীপ চক্রবর্তীর বক্তব্য, সাধারণত এ ধরনের তেজস্ক্রিয় লোহাসহ ভারী মৌলগুলোর জন্ম হয় কোনো তারার মৃতু্যর সময়। যখন ভয়ঙ্কর বিস্ফোরণ বা সুপারনোভা হয়। তবে অসম্ভব তেজস্ক্রিয় পদার্থ বলে সেই লোহা হয় খুবই ক্ষণস্থায়ী। জন্ম হয় বটে তাদের, কিন্তু খুব সামান্য সময়ের মধ্যেই সেই তেজস্ক্রিয় লোহা অন্য পদার্থে ভেঙে যায়। তাই পৃথিবীতে এর হদিস পাওয়া সত্যিই কষ্টসাধ্য।

সন্দীপের বক্তব্য, 'এই তেজস্ক্রিয় লোহা পৃথিবীতে যেটুকু রয়েছে, তা আছে মহাসাগরগুলোর একবারে নিচে। সমুদ্র খাতে। যেগুলো সেখানে জমা হয়েছিল লাখ লাখ বছর আগে। আর রয়েছে চাঁদে। চাঁদের পিঠ বা লুনার সারফেসে। যেগুলো বহু বহুদিন আগে সৌরমন্ডলের কোনো না কোনো প্রান্ত থেকে আছড়ে পড়েছিল চাঁদের পিঠে।'

ডমিনিক জানালেন, অ্যান্টার্কটিকার মতো জায়গায় এর আগে কখনই এ ধরনের তেজস্ক্রিয় লোহার হদিস মেলেনি। তাও আবার সেই অত্যন্ত তেজস্ক্রিয় লোহা উদ্ধার করা হয়েছে অ্যান্টার্কটিকার সেই কোহনেন স্টেশন এলাকা থেকে, যেখানে বরফের ওপরের স্তরটি ২০ বছরের বেশি পুরনো নয়। যা প্রমাণ করল, এখনো এ ধরনের তেজস্ক্রিয় লোহা এসে আছড়ে পড়ছে পৃথিবীর বুকে।

তবে অন্যভাবেও মিলতে পারে তেজস্ক্রিয় লোহা। পরমাণু অস্ত্রশস্ত্র বা ধূলিকণার ওপর মহাজাগতিক ধুলাবালি (কসমিক ডাস্ট) এসে আছড়ে পড়লেও এ ধরনের অত্যন্ত তেজস্ক্রিয় লোহার জন্ম হতে পারে। কিন্তু পরমাণু অস্ত্রশস্ত্র থেকে যে সেই তেজস্ক্রিয় লে?াহা অ্যান্টার্কটিকায় পৌঁছেনি, তা নিয়ে অন্তত কোনো সংশয় নেই গবেষকদের। কারণ, অ্যান্টার্কটিকায় এখন পর্যন্ত কোনো পরমাণু অস্ত্র আছড়ে পড়েনি। গবেষকরা এ ব্যাপারেও নিশ্চিত হয়েছেন, পৃথিবীর ধূলিকণার ওপর মহাজাগতিক ধুলাবালি এসে আছড়ে পড়ার ফলেও এ ধরনের অত্যন্ত তেজস্ক্রিয় লোহার জন্ম হয়নি। এটি এসেছে সৌরমন্ডল থেকে অনেক দূরের কোনো মৃত নক্ষত্রের শরীর থেকে। এরই টুকরা অংশ এটি, যার হদিস মিলেছে। সংবাদসূত্র : এবিপি নিউজ

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<66818 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1