শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

সৌদি আরবে হামলার ঝুঁকি কেন নেবে ইরান?

পারস্য উপসাগরীয় অঞ্চলে মার্কিন সেনা, বিমান এবং নৌবহর মোতায়েন থাকলেও প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প কোনো দীর্ঘস্থায়ী যুদ্ধে জড়িয়ে পড়তে নারাজ। কারণ লড়াই শুরু হলে মার্কিন সেনাঘাঁটি এবং নৌবহরগুলো ইরানি হামলার ঝুঁকিতে পড়ে যাবে...
নতুনধারা
  ২৮ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক

সৌদি তেলক্ষেত্রের ওপর ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পেছনে যে ইরান রয়েছে, সেই প্রমাণ তাদের হাতেই রয়েছে বলে দাবি করেছে মধ্যপ্রাচ্যের ক্ষমতাধর এই দেশটি। ইরানের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেয়ার জন্য তারা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতিও আহ্বান জানিয়েছে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, এ নিয়ে কী এই দুই দেশের মধ্যে যুদ্ধ বেধে যেতে পারে? যে মাত্রায় হামলার ঘটনাটি ঘটেছে, সৌদি আরব তা কোনোমতেই এড়িয়ে যেতে পারবে না এবং ইরানই যে ওই হামলার জন্য দায়ী, সেই সিদ্ধান্তে পৌঁছানোর পর তাদেরকে একটা পাল্টা জবাব দিতেই হবে।

হামলার ঘটনাটি জাতিসংঘ এখন তদন্ত করে দেখছে। সেই তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত সৌদি সরকার সম্ভবত অপেক্ষা করবে। এর ফলে যেকোনো পদক্ষেপ নেয়ার আগে সৌদি সরকার কিছুটা সময় হাতে পাবে। যদিও বিশেষজ্ঞরা সবাই একমত, ইরানের বস্তুগত সাহায্য এবং নির্দেশনা ছাড়া ওই হামলার ঘটনা ঘটানো অসম্ভব।

বাজির খেলায় ইরান

ইরান হামলার দায়দায়িত্ব শুধু অস্বীকার করলেই যথেষ্ট হবে না। সৌদি আরব এবং তার মিত্র দেশগুলো বিশ্বাস করে ইরান এই বিষয়ে তাদের বাজির মাত্রা বাড়াতে চায় এই লক্ষ্যে যে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যেন ইরানের বিরুদ্ধে মার্কিন নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করতে বাধ্য হন। গত বছর ইরানের সঙ্গে ট্রাম্প একটি পরমাণু চুক্তি একতরফাভাবে প্রত্যাহার করেন এবং নতুন করে ইরানের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেন। ইরানের নেতারা আশা করছেন, পারস্য উপসাগরে যুদ্ধের সম্ভাবনা বাড়লে বিশ্বনেতারা টের পাবেন, ইরানের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা কতটা বিপজ্জনক হতে পারে।

ইরানের নেতারা আশা করছিলেন, পরমাণু চুক্তি মেনে চলার মধ্য দিয়ে এবং ওই অঞ্চলের স্থিতিশীলতা ক্ষুণ্ন না করার শর্তে, ইরান ফ্রান্সের কাছ থেকে ১৫০০ কোটি ডলার ঋণ সুবিধা পাবে। কিন্তু প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সেই পরিকল্পনায় সায় দেননি। শুধু তাই নয়, সম্প্রতি ট্রাম্প মার্কিন অর্থমন্ত্রীকে ইরানের ওপর নিষেধাজ্ঞার মাত্রা আরও বাড়িয়ে দেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। ফলে, এই বাজিতে ইরান দৃশ্যত হেরে গেছে বলেই মনে হচ্ছে।

সৌদি আরবের ওপর যে মাত্রায় আঘাত হানা হয়েছে, তা ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুলস্নাহ খামেনির অনুমোদন ছাড়া ঘটা অসম্ভব ছিল। গত সপ্তাহে তিনি যে ভাষণ দিয়েছেন, তাতে সৌদি আরবের সবচেয়ে বড় তেল শোধনাগারে হামলার কোনো কথা কিংবা ওই অঞ্চলে যেকোনো মুহূর্তে লড়াই বেঁধে যাওয়ার সম্ভাবনার কথার লেশমাত্র ছিল না। এর বদলে, ওই ভাষণে মার্কিন নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার না করা পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে যেকোনো পর্যায়ে আলোচনাকে তিনি খারিজ করে দেন। তবে আজ বা কাল হোক, আয়াতুলস্নাহ খামেনিকে হয়তো তার অবস্থান পরিবর্তন করতে হতে পারে এবং আলোচনার টেবিলে ফিরে যেতে হতে পারে, ইরানের নরমপন্থি নেতারা যেটা আশা করছেন।

ইরানের ভঙ্গুর অর্থনীতি

ইরানের তেল রপ্তানি এখন শূন্যের কোঠায়। এর অর্থের মজুদ দ্রম্নত ফুরিয়ে আসছে। এখন যা বৈদেশিক মুদ্রা রয়েছে, তা দিয়ে মাত্র কয়েক মাস চলবে। ইরানি মুদ্রার মান কমে আসার ফলে মুদ্রাস্ফীতি বেড়েছে ৪০ শতাংশ। এর ফলে ইরানিদের ক্রয়ক্ষমতা প্রায় অর্ধেক হয়ে গেছে। তাই, অনেক ইরানির জীবনযাত্রাই এখন কষ্টকর হয়ে পড়েছে।

সৌদি সামরিক পদক্ষেপের বিপদ

ইরানকে হঠিয়ে দিতে সৌদি আরব কি সামরিক ব্যবস্থা নেয়ার সম্ভাবনা কম বলেই মনে হচ্ছে। ইরানের জনসংখ্যা এখন আট কোটি। অন্যদিকে, সৌদি আরবের জনসংখ্যা ৩.৩ কোটি। ইরান তার অস্ত্রভান্ডারে হাজার হাজার ক্ষেপণাস্ত্র মজুদ রেখেছে। সৌদি তেলক্ষেত্রে, শোধনাগার, সামরিক ঘাঁটি এবং জনবহুল শহরগুলো এর লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হতে পারে। তুলনামূলকভাবে সৌদি আরবের অস্ত্রভান্ডারে শত শত চীনা মিসাইল থাকলেও তাদের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা বেশ দুর্বল।

সৌদি বিমানবাহিনীতে যুদ্ধবিমানের সংখ্যা ইরানের প্রায় সমান। তবে সৌদি বিমানগুলো বেশ আধুনিক এবং কার্যকর। অন্যদিকে, ইরানের যুদ্ধবিমানগুলো বেশ পুরনো এবং অদক্ষ। মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে ইরানের মিত্ররা ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। সৌদি আরবের শিয়া জনগোষ্ঠীর সমর্থনও ইরান পাবে।

ইয়েমেনে ইরান-সমর্থিত হুতি বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে সৌদি আরব এরই মধ্যে দীর্ঘস্থায়ী যুদ্ধে জড়িয়ে পড়েছে। এই যুদ্ধের জন্য তার প্রচুর অর্থ ব্যয় হচ্ছে। তবে যদি সৌদি আরব এবং ইরানের মধ্যে কোনো সরাসরি লড়াই শুরু হয়, তাহলে দু'পক্ষকেই নির্ভর করতে হবে বিমানবাহিনী এবং ক্ষেপণাস্ত্র শক্তির ওপর। কিন্তু ওই যুদ্ধে কোনো পক্ষেরই নিরঙ্কুশ জয় হবে না।

উত্তপ্ত উপসাগর

পারস্য উপসাগরীয় অঞ্চলে মার্কিন সেনা, বিমান এবং নৌবহর মোতায়েন থাকলেও প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প কোনো দীর্ঘস্থায়ী যুদ্ধে জড়িয়ে পড়তে নারাজ। কারণ লড়াই শুরু হলে মার্কিন সেনাঘাঁটি এবং নৌবহরগুলো ইরানি হামলার ঝুঁকিতে পড়ে যাবে। এ ছাড়া বিশ্বের সর্বমোট তেল চাহিদার এক পঞ্চমাংশ হরমুজ প্রণালি দিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। সেটিও তখন যুদ্ধের জন্য বন্ধ হয়ে যাবে।

যুদ্ধের পটভূমিতে মার্কিন নির্বাচন

যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের দিনক্ষণ ঘনিয়ে আসছে। এ পরিস্থিতিতে মার্কিন পেট্রলপাম্পগুলোতে তেলের দাম হঠাৎ করে আকাশ-ছোঁয়া হয়ে গেলে ট্রাম্পের আবার নির্বাচনে জেতার আশা কঠিন হয়ে পড়বে। সৌদি আরবের জন্য মার্কিন সমর্থন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু ট্রাম্প চাইছেন, এই যুদ্ধে নেতৃত্ব দিতে হবে সৌদি আরবকে এবং তাকে সাহায্য করার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের যে ব্যয় হবে, সৌদি সরকার সেটি পুষিয়ে দিলেই তিনি খুশি।

ইরানের বিরুদ্ধে পাল্টা ব্যবস্থা নেয়ার প্রশ্নে সৌদি আরব তার দুই প্রতিবেশী সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং বাহরাইনকেও পাশে চায়। ইরানের সঙ্গে সৌদি যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র তার ইউরোপীয় মিত্র দেশগুলোর কাছ থেকে রাজনৈতিক এবং কূটনৈতিক সমর্থন চাইতে পারে। কিন্তু সমস্যা হলো, ইউরোপীয় দেশগুলো মনে করে, এখন ইরানকে ঘিরে যে পরিস্থিতি, তার সূত্রপাত ইরানের পরমাণু চুক্তি থেকে ট্রাম্পের সরে আসার একক সিদ্ধান্ত থেকে।

এছাড়া ইরানের ভেতরে যারা কট্টরপন্থি রয়েছেন, তাদের এখনকার ভাবনা, নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের প্রশ্নে পদক্ষেপ না নিয়ে দেশকে আরেকটা যুদ্ধের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার কৌশল আসলে কতটা সুবিবেচকের কাজ হবে? তা হয়তো সময়ই বলে দেবে। সংবাদসূত্র : বিবিসি নিউজ

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<68668 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1