সিরিয়ার উত্তর-পূর্বাঞ্চলে অভিযান চালানো তুর্কি বাহিনীর সঙ্গে কুর্দি গেরিলাদের মধ্যস্থতার প্রস্তাব দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। বৃহস্পতিবার হোয়াইট হাউসে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, 'আমাদের কাছে তিনটি পথ খোলা আছে। হাজার হাজার সেনা পাঠিয়ে সামরিকভাবে জয়, তুরস্ককে চরম অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞায় ফেলা অথবা তাদের মধ্যে মধ্যস্থতা করা। আমরা আশাবাদী যে সুষ্ঠুভাবেই মধ্যস্থতা করতে পারব।' এদিকে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তুরস্কের এ অভিযান নিয়ে সমালোচনা বাড়ছে। লড়াই-সহিংসতার মাত্রা বাড়তে থাকায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস। সংবাদসূত্র : রয়টার্স, আনাদোলু এজেন্সি
তুর্কি অভিযানের পর সিরিয়ার সীমান্তবর্তী শহরগুলোর ৬০ হাজারের বেশি মানুষ ঘরবাড়ি ছেড়ে পালিয়েছে বলে জানিয়েছে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা। মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক জঙ্গিগোষ্ঠী ইসলামিক স্টেটবিরোধী (আইএস) লড়াইয়ে সিরিয়ান ডেমোক্রেটিক ফোর্সেস বা এসডিএফ যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র ছিল। সিরিয়া থেকে আইএস উৎখাতে কুর্দি গেরিলাদের বীরত্বপূর্ণ অবদানের কথা জানিয়েছে গণমাধ্যম।
অন্যদিকে আঙ্কারা এই কুর্দি ওয়াইপিজি গেরিলাদের তুরস্কে নিষিদ্ধ কুর্দিস্তান ওয়ার্কার্স পার্টির (পিকেকে) সহযোগী মনে করে। ট্রাম্প সিরিয়ার উত্তর-পূর্বাঞ্চল থেকে সেনা সরিয়ে নেয়ার ঘোষণা দেয়ার পরপরই তুরস্ক ওই এলাকায় কুর্দিবিরোধী অভিযান শুরু করে। সিরীয় শরণার্থীদের ফেরাতে সীমান্তে 'নিরাপদ অঞ্চল' প্রতিষ্ঠায় এ অভিযান হচ্ছে বলে জানিয়েছেন তুর্কি প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়ে্যপ এরদোয়ান।
গত সপ্তাহে তার সঙ্গে এক ফোনালাপের পরপরই ট্রাম্প কুর্দি অধু্যষিত অঞ্চল থেকে সেনা সরিয়ে নেয়ার সিদ্ধান্ত জানিয়েছিলেন। মিত্রদের এভাবে 'ঝুঁকির মুখে ফেলায়' দেশে-বিদেশে তুমুল সমালোচনার মুখে পড়েন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। প্রভাবশালী রিপাবলিকানরাও এ সিদ্ধান্তের কঠোর বিরোধিতা করছেন। এর মাধ্যমে ট্রাম্প সিরিয়ায় রাশিয়া, ইরান ও তুরস্কের প্রভাব বাড়ানোর সুযোগ করে দিলেন বলেও মত তাদের।
তুর্কি অভিযানে ওই অঞ্চলে আইএসের পুনরুত্থানের আশঙ্কাও করছেন অনেকে। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও অবশ্য ওই আশঙ্কাকে উড়িয়ে দিয়েছেন। ট্রাম্প শুরু থেকেই সেনা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্তকে যৌক্তিক বলে দাবি করে আসছেন। আঙ্কারা 'সীমা ছাড়ালে' তাদের অর্থনীতি গুঁড়িয়ে দেয়ারও হুঁশিয়ারি আছে তার।
সিরিয়ায় আটক আইএস যোদ্ধারা যে কারাগারগুলোতে আছে, সেগুলো এখনো কুর্দিদের নিয়ন্ত্রণে। এই আইএস যোদ্ধাদের দায়িত্ব নেয়ার ব্যাপারে তুরস্কের শীর্ষপর্যায় থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে প্রতিশ্রম্নতি দেয়া হলেও তা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়নি বলে জানিয়েছেন মার্কিন প্রশাসনের কর্মকর্তারা।
মার্কিন আইনপ্রণেতা ও গণমাধ্যমগুলো উত্তর-পূর্ব সিরিয়ায় তুর্কি অভিযান ট্রাম্পের 'সবুজ সংকেতে' হয়েছে বলে ধারণা করলেও কর্মকর্তারা তা অস্বীকার করেছেন। এক কর্মকর্তা বলেন, 'আমরা একটি স্পষ্ট লাল দাগ টেনে দিয়েছি। ওই লাল দাগের সঙ্গে আমিও সংশ্লিষ্ট ছিলাম; আমি জানি প্রেসিডেন্ট রোববারই তা স্পষ্ট করে বলে দিয়েছিলেন।'
তুর্কি অভিযানে হতাহতের সংখ্যা বাড়ছে
এদিকে সিরিয়ার উত্তর-পূর্বাঞ্চলে কুর্দি-নিয়ন্ত্রিত অঞ্চলে তুরস্কের যুদ্ধবিমান ও গোলা হামলায় হতাহতের সংখ্যা বাড়ছে। অন্তত ১১ বেসামরিক নাগরিকসহ কুর্দি-নেতৃত্বাধীন সিরিয়ান ডেমোক্রেটিক ফোর্সেস (এসডিএফ) এবং তুরস্কপন্থি সিরীয় বিদ্রোহী দলের বেশ কয়েকজন যোদ্ধা নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
তুরস্কের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের হিসাব মতে, সেনাবাহিনী এবং তাদের মিত্র সিরীয় বিদ্রোহী বাহিনী মিলে বৃহস্পতিবার রাতভর লড়াইয়ে ৪৯ জন কুর্দি মিলিশিয়াকে হত্যা করেছে। এ নিয়ে এ পর্যন্ত নিহত হয়েছে মোট ২৭৭ কুর্দি গেরিলা। শুক্রবার সকালে সিরিয়ার সীমান্ত শহর রাস আল-আইনে হামলা চালিয়েছে তুরস্ক। তাছাড়াও, এদিন রাস আল-আইনের দিকে অগ্রসর হয়েছে তুর্কি-মিত্র সিরীয় বিদ্রোহীদের ২০টি সাঁজোয়া যানের বহর। তুর্কি সেনারা সিরিয়ার রাস আল-আইন এবং তাল আবিয়াদ সীমান্ত শহর আংশিক ঘিরে ফেলেছে। কুর্দি রেড ক্রিসেন্ট সেখানে হামলায় ১১ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত এবং ২৮ জন আহত হওয়ার কথা নিশ্চিত করে জানিয়েছে। এদের মধ্যে কয়েকজন শিশুও রয়েছে।
অন্যদিকে তুরস্কের সীমান্ত শহরগুলোতেও গোলার আঘাতে এক সিরীয় শিশুসহ অন্তত পাঁচ নিহত হয়েছে। সিরিয়ায় যুদ্ধ পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ সংগঠন 'দ্য সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটস' জানিয়েছে, তুরস্কের অভিযানে কুর্দি নেতৃত্বাধীন এসডিএফের অন্তত ২৯ যোদ্ধা এবং তুর্কি মিত্র সিরীয় বিদ্রোহী গ্রম্নপের ১৭ যোদ্ধা নিহত হয়েছে।