যাযাদি ডেস্ক
তিনটি 'মহারাক্ষস'র মধ্যে ধুন্ধুমার লড়াই বেধেছে ব্রহ্মান্ডে। খাবারদাবার নিয়ে চলছে কাড়াকাড়ি, কামড়াকামড়ি! চলছে তুমুল লড়াই। সেই লড়াইটা হয়ে উঠেছে আক্ষরিক অর্থেই ত্রিপক্ষীয়। একটা মহারাক্ষস গিয়ে সজোরে ধাক্কা মারছে আরেকটা মহারাক্ষসের গায়ে। আর সেটা গিয়ে ধাক্কা মারছে আরও দুটি মহারাক্ষসকে। তিনটি মহারাক্ষসই একে অন্যের খাবারদাবার কেড়ে নিচ্ছে। গিলে খাচ্ছে। খাবারদাবারের বখরা, ভাগ-বাঁটোয়ারা নিয়েই সেই ধুন্ধুমার লড়াই। যা নিয়ে আপাতত তোলপাড় ব্রহ্মান্ড।
পৃথিবী থেকে ১০০ কোটি আলোকবর্ষ দূরে এই অবাক করা ঘটনা দেখল মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসার 'স্স্নোয়ান ডিজিটাল স্কাই সার্ভে' (এসডিএসএস) টেলিস্কোপ। গবেষণাপত্রটি বেরিয়েছে আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান বিষয়ক জার্নাল 'দি অ্যাস্ট্রোফিজিক্যাল জার্নালে'।
সেই তিনটি মহারাক্ষস আসলে তিনটি দানবাকৃতি বস্ন্যাক হোল বা কৃষ্ণগহ্বর। যাদের কারও ব্যাসার্ধই ২২ কোটি কিলোমিটারের কম নয়। আরও অনেক বেশি হওয়ারও জোরালো সম্ভাবনা রয়েছে।
গবেষকদলের অন্যতম সদস্য, ভার্জিনিয়ার ফেয়ারফ্যাক্সে জর্জ ম্যাসন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সবিতা সত্যপাল জানিয়েছেন, ব্রহ্মান্ডের যে এলাকায় তিন মহারাক্ষসের মধ্যে ধুন্ধুমার লড়াই চলতে দেখা গেছে, সেই 'সিস্টেম' বা এলাকার নাম- 'এসডিএসএস জে০৮৪৯০৫+১১১৪৭.২'। সংক্ষেপে, সেই সিস্টেমটিকে বলা হয়, 'এসডিএসএস জে০৮৪৯+১১১৪'।
নাসার এই বিজ্ঞানী বলেন, 'দুটি বা তিনটি সুপারম্যাসিভ বস্ন্যাক হোলের মধ্যে ধাক্কাধাক্কি, লড়াই চট করে দেখা সম্ভব হয় না। কারণ, ওই বস্ন্যাক হোলগুলো থাকে বিশাল কোনো গ্যালাক্সির (ছায়াপথ) কেন্দ্রস্থলে। দুটি গ্যালাস্কির মধ্যে তুমুল সংঘর্ষ হলেই একমাত্র দুটি দানবাকৃতি বস্ন্যাক হোলের এমন ধাকাধাক্কি দেখা যায়। আর তিনটি গ্যালাক্সির মধ্যে ধাক্কাধাক্কির ঘটনা তো আরও বিরল ঘটনা। তাই তিনটি সুপারম্যাসিভ বস্ন্যাক হোলের ধাক্কাধাক্কি এর আগে দেখা আর সম্ভব হয়নি।'
ব্রহ্মান্ডে আমাদের ঠিকানা 'মিল্কি ওয়ে গ্যালাক্সি'র মতো ছোট, বড়, মাঝারি সব গ্যালাক্সিরই কেন্দ্রস্থলে থাকে একটি দানবাকৃতি বস্ন্যাক হোল। যাকে জ্যোতির্বিজ্ঞানের পরিভাষায় বলা হয়, 'সুপারম্যাসিভ' বা 'জায়ান্ট বস্ন্যাক হোল'। আমাদের গ্যালাক্সির সেই দানবাকৃতি বস্ন্যাক হোলটির নাম 'স্যাজিটেরিয়াস-এ'। যা রয়েছে আমাদের থেকে প্রায় ২৬ হাজার আলোকবর্ষ দূরে। আর তার ব্যাসার্ধটা খুব কম নয়। কমপক্ষে ২২ কোটি কিলোমিটার।
আমরা জানি, কোনো গ্যালাক্সির কেন্দ্রে থাকা সেই দানবাকৃতি বস্ন্যাক হোলটি তার কাছে চলে আসা গ্যাস, ধুলাবালির মেঘ, তারা, গ্রহ, উপগ্রহ সব কিছুই গপগপ করে গিলে খায়। সবিতা জানিয়েছেন, এই নিয়েই ধুন্ধুমার লড়াই চলছে তিনটি গ্যালাক্সির কেন্দ্রে থাকা ওই তিনটি মহারাক্ষস বা সুপারম্যাসিভ বস্ন্যাক হোলের মধ্যে।
নাসার এই বিজ্ঞানীর কথায়, 'আমরা এটাও দেখেছি, দুটি সুপারম্যাসিভ বস্ন্যাক হোলের মধ্যে ধাক্কাধাক্কির চেয়েও তিনটি বস্ন্যাক হোলের মধ্যে ধাক্কার ঘটনার গতি অনেকটাই বেশি। তা অনেক দ্রম্নত হয়। বলতে পারেন, খাবারদাবার নিয়ে কামড়াকামড়িটা একেবারে রণক্ষেত্র বাধিয়ে দেয় ব্রহ্মান্ডে। এ রকম ঘটনা সত্যিই বিরল।' সংবাদসূত্র : এবিপি নিউজ