শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১
বিবিসির বিশ্লেষণ

সিরীয় যুদ্ধের নতুন মানচিত্র নির্মাণ ট্রাম্প-এরদোয়ানের হাতে

মার্কিন সেনা প্রত্যাহারকে তুরস্ক বিবেচনা করেছে হামলার 'সবুজ সংকেত' হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের ছেড়ে যাওয়ার পর কুর্দি ও বাশার বাহিনীর একাত্মতা রাশিয়া-ইরানেরও বিজয়
নতুনধারা
  ১৬ অক্টোবর ২০১৯, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং তুর্কি প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়ে্যপ এরদোয়ানের সাম্প্রতিক ভূমিকায় নতুন করে নির্মাণ হচ্ছে সিরিয়া যুদ্ধের মানচিত্র। এক সপ্তাহ আগে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সিরিয়ার উত্তরাঞ্চল থেকে যুক্তরাষ্ট্রের সেনা প্রত্যাহার করে নেয়ার ঘোষণা দেন। ট্রাম্পের সেই ঘোষণার পর থেকেই এই নির্মাণের কাজ শুরু। একে কুর্দি মিত্রদের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের 'বিশ্বাসঘাতকতা' হিসেবে দেখা হচ্ছে। ওই ঘোষণা তুরস্ককে সীমানা টপকে সিরিয়ায় ধ্বংসযজ্ঞ চালানোর সুযোগ করে দিয়েছে।

সিরিয়ার আট বছরের গৃহযুদ্ধ মধ্যপ্রাচ্যকে বদলে দিয়েছে, এসেছে পরিবর্তন। গত সপ্তাহটি ছিল আরেকটি সন্ধিক্ষণ। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের কথিত 'বিজ্ঞতা' তাকে হয়তো ভবিষ্যতের ঘটনাপ্রবাহে দূরদৃষ্টি রাখতে সহায়তা করেছে। তবে নিজ প্রবৃত্তির ওপর তার গভীর আস্থা মধ্যপ্রাচ্যের সীমাহীন জটিলতার জমিনে একটি মারাত্মক ভুল হিসেবে পরিণত হতে পারে।

বহু বছর ধরে এটা স্পষ্ট হয়ে গেছে, সিরীয়রা নয়, দেশটির ভাগ্য নির্ধারণ করবে বিদেশিরা। বারবার এই যুদ্ধে হস্তক্ষেপ স্থায়ী হয়েছে, বেড়েছে তার প্রচন্ডতা। প্রতিবার সেনা প্রবেশের অর্থ দাঁড়িয়েছে বিপর্যয় আর বেসামরিক নাগরিকদের প্রাণহানি।

সিরিয়ার নিরন্তর যুদ্ধ থেকে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সরে যাওয়ার সিদ্ধান্তকে তুরস্ক বিবেচনা করেছে সেখানে তাদের সেনা পাঠানোর 'সবুজ সংকেত' হিসেবে। তুর্কি প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান ঘোষণা করেন, তিনি কুর্দি বাহিনী সিরিয়ান ডেমোক্রেটিক ফোর্সের (এসডিএফ) বিরুদ্ধে অভিযান চালাতে চান। কারণ তারা তার দেশের কুর্দি বিদ্রোহীদের মিত্র। তার পরিকল্পনা হলো, সিরিয়ার উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সীমান্তের দুই পাশই নিয়ন্ত্রণ করা আর ৩২ মাইল ভেতর পর্যন্ত দখলকৃত এলাকা প্রতিষ্ঠা করা। ওই এলাকায় তিনি ১০ লাখ বা তারও বেশি সিরীয় শরণার্থীকে সরিয়ে রাখতে চান।

যুক্তরাষ্ট্র যখন আইএসবিরোধী লড়াইয়ে সিরিয়ার কুর্দি এবং কয়েকটি আরব গোষ্ঠীকে অস্ত্র ও প্রশিক্ষণ দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়, তখন তারা সম্ভাব্য একটি সমস্যা সম্পর্কে সচেতন ছিল। ওয়াশিংটন জানত, তাদের ন্যাটো মিত্র তুরস্ক কুর্দিদের সন্ত্রাসী বিবেচনা করে। সেই কুর্দিরাই যখন ওয়াশিংটনের মিত্র, তখন ভবিষ্যতের সমস্যা সম্পর্কে চোখ বন্ধ করে ছিল মার্কিন প্রশাসন। সেই ভবিতব্য এখন বর্তমান, যা আজ বিস্ফোরিত হয়েছে।

এক সপ্তাহ আগেও যুক্তরাষ্ট্রের সীমিতসংখ্যক সেনা উপস্থিতিকে সিরীয় কুর্দিদের নিরাপত্তা সুরক্ষা হিসেবে দেখা হচ্ছিল। আইএস (ইসলামিক স্টেট) জঙ্গিদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে গুরুত্বপূর্ণ মিত্র হয়ে উঠেছিল তারা। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও অন্যদের দেয়া বিমান সক্ষমতা ও বিশেষ বাহিনীর পাশাপাশি কুর্দিরা লড়াই করেছে মাঠে, তাদের বহু যোদ্ধা প্রাণ হারিয়েছে? যুদ্ধের ময়দানে।

আইএসের কথিত খিলাফতের পতনের পর কুর্দিরা তলস্নাশি চালিয়ে হাজার হাজার জিহাদি যোদ্ধাকে আটক করে কারাগারে পুরে রেখেছে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সাম্প্রতিক কর্মকান্ডে সিরিয়ার কুর্দিরা বুঝতে বাধ্য হয়, তাদের 'পেছনে থেকে ছুরি মারা হয়েছে'। মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী মার্ক এসপার অবশ্য 'বেঈমানির' কথা অস্বীকার করেছেন। তবে কুর্দিদের সমস্যা-সঙ্কুল ইতিহাসে আরও একবার বিদেশি শক্তি তাদের ছেড়ে গেল। সে কারণেই তারা তাদের পুরনো শত্রম্ন বাশার সরকারের সঙ্গে হাত মেলাতে বাধ্য হলো।

গত রোববার কুর্দিরা সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাসার আল-আসাদের সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষরের ঘোষণা দেয়। চুক্তিতে ২০১২ সালের পর থেকে হাতছাড়া থাকা তুর্কি সীমান্তের দিকে দামেস্কের সেনাবাহিনীকে অগ্রসর হতে দিতে একমত হয় তারা। এটা বাশারের জন্য বড় বিজয়। দ্রম্নত তার সেনাবাহিনী উত্তর-পূর্বাঞ্চলের ঘাঁটি ছেড়ে বেরিয়ে আসে। বাশার অনুগতরা সিরিয়ার পতাকা ওড়াতে শুরু করে।

যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যপ্রাচ্য-নীতির জন্য এটা এক বিপর্যয়কর মুহূর্ত। কুর্দিদের সঙ্গে মিত্রতা এবং সিরিয়ার অংশবিশেষে তাদের শাসন ক্ষমতাকে সুরক্ষা দেয়ার বাস্তবতা যুক্তরাষ্ট্রকে যুদ্ধক্ষেত্রের বাজিতে একধাপ এগিয়ে দিয়েছিল। বাশার প্রশাসনের মিত্র রাশিয়া আর ইরানকে পেছনে ঠেলে দেয়ারও একটি উপায় ছিল এটা। তবে যুদ্ধক্ষেত্র থেকে যুক্তরাষ্ট্রের সরে যাওয়া আর সিরীয় সেনাবাহিনীর সংহত অবস্থা ক্রেমলিন-তেহরানেরও বিজয়।

এদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকায় আইএসের (ইসলামিক স্টেট) জন্য নতুন সম্ভাবনার দরজা খুলে গেছে বলে মনে হচ্ছে। তারা সিরিয়ায় সহিংসতার নতুন অভিযানের ঘোষণা দিয়েছে। তারা তাদের খিলাফত হারিয়েছে। কিন্তু যারা কারাগারের বাইরে আছে, তারা পুনর্গঠিত হয়ে গেরিলা হামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে।

আইএস সাম্প্রতিক অবস্থাকে বন্দিশিবিরে আটক তাদের হাজার হাজার যোদ্ধার মুক্তির সুযোগ হিসেবে দেখছে। এরা আবার অস্ত্র হাতে তুলে নিতে পারলে কেবল সিরিয়া নয়, আরও বৃহত্তর এলাকায় মারাত্মক হুমকি হয়ে উঠতে পারে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<71292 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1