শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

পাক পরমাণু অস্ত্রে ত্রস্ত উপমহাদেশ

নতুনধারা
  ২১ অক্টোবর ২০১৯, ০০:০০
পাকিস্তানের পরমাণু অস্ত্র -ফাইল ছবি

যাযাদি ডেস্ক

ইরান, চীন, ভারত ও আফগানিস্তানের চাপে পাকিস্তান নানা ধরনের নিরাপত্তা ইসু্যতে জটিল পরিবেশে বাস করছে। ফলে ঘোষিত পরমাণু অস্ত্র আছে, এমন ৯টি দেশের একটি হিসাবে পাকিস্তানের পরমাণু অস্ত্রভান্ডার তাল মিলিয়ে ক্রমাগত পরিবর্তিত হচ্ছে। কয়েক দশক ধরে পরমাণু অস্ত্রের অধিকারী হিসেবে পাকিস্তান এখন নিজস্ব ধরনের পরমাণু ত্রয়ী নির্মাণ করার প্রয়াস চালাচ্ছে, তার পরমাণু অস্ত্রভান্ডারকে খাপ খাওয়াতে সামর্থ্যপূর্ণ ও বিপর্যয়কর প্রতিশোধমূলক হামলায় সক্ষম করে গড়ে তুলতে চাইছে।

পাকিস্তানের পরমাণু কর্মসূচি শুরু হয়েছে ভারতের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতার সূচনায় ১৯৫০-এর দশকে। দেশটির সাবেক প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রী জুলফিকার আলি ভুট্টোর একটি মন্তব্য বিখ্যাত হয়ে আছে, 'ভারত যদি পরমাণু বোমা বানায়, তবে আমরা ঘাস খেয়ে থাকব, এমনকি না খেয়েও থাকব, কিন্তু আমরাও বোমা বানাব।'

১৯৭১ সালে ভারতের কাছে পরাজয়ের পর পরমাণু কর্মসূচি অনেক বেশি অগ্রাধিকার পায়। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এই লজ্জাজনক পরাজয়ের পর পাকিস্তান তার পরমাণু কর্মসূচি ত্বরান্বিত করে। ভারত ১৯৭৪ সালে 'স্মাইলিং বৌদ্ধ' নামে তার প্রথম বোমা পরীক্ষা করে। এর ফলে উপমহাদেশ পরমাণুকরণের পথ ধরে। পাকিস্তান সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম ও পস্নুটোনিয়াম তৈরির গতি বাড়িয়ে দেয়। এই কাজে সহায়তা করেন পাশ্চাত্য থেকে দেশে ফেরা বিজ্ঞানী এ কিউ খান।

দেশটি ঠিক কবে তার পরমাণু বোমা তৈরি করেছে, তা নিয়ে অস্পষ্টতা রয়ে গেছে। জুলফিকার আলি ভুট্টোর মেয়ে বেনজির ভুট্টো দাবি করেছিলেন, তার বাবা তাকে বলেছেন- প্রথম বোমা তৈরি হয়েছিল ১৯৭৭ সালে। তবে পাকিস্তান পরমাণু জ্বালানি কমিশনের এক সদস্য বলেন, তা হয়েছিল ১৯৭৮ সালে। বোমাটির সুপ্ত পরীক্ষা চালানো হয়েছিল ১৯৮৩ সালে।

বেনজির ভুট্টো পরে দাবি করেছিলেন, ১৯৯৮ সালে ভারত তিন দিনের ব্যবধানে ছয়টি বোমা পরীক্ষার আগে পাকিস্তান তার বোমাগুলোকে অসংযোজিত অবস্থায় রেখে দিয়েছিল। ভারতের পরীক্ষার তিন সপ্তাহ আগে পাকিস্তান মাত্র এক দিনেই পাঁচটি বোমার বিস্ফোরণ ঘটায়। প্রথমটি ছিল ২৫ থেকে ৩০ কিলোটনের, দ্বিতীয়টি ১২ কিলোটনের এবং বাকিগুলো সাব-কিলোটনের। এগুলো ছিল ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ বোমা।

পাকিস্তান ষষ্ট ও শেষ পরীক্ষাটি চালিয়েছিল ১২ কিলোটনের বোমা দিয়ে। মার্কিন বিমান বাহিনীর পরমাণু শনাক্তকরণ বিমান 'কনস্ট্যান্ট ফোনিক্স'র তথ্যমতে, এটি ছিল পস্নুটোনিয়াম সমৃদ্ধ বোমা। পাকিস্তানের বোমাগুলো ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ এবং একটি পস্নুটোনিয়াম হওয়ায় অনেকে মনে করেন, এটি আসলে ছিল উত্তর কোরিয়ার বোমা। উলেস্নখ্য, এ কে খানের নেটওয়ার্ক ব্যবহার করেই উত্তর কোরিয়া পরমাণু প্রযুক্তি হাসিল করেছিল। তবে এ ব্যাপারে এখনো কোনো কিছু চূড়ান্ত হয়নি।

বিশেষজ্ঞরা বিশ্বাস করেন, পাকিস্তানের পরমাণু অস্ত্রভান্ডার ক্রমেই বাড়ছে। ১৯৯৮ সালে তাদের হাতে ছিল পাঁচ থেকে ২৫টি বোমা। বর্তমানে পাকিস্তানের অস্ত্রভান্ডারে আছে ১১০ থেকে ১৩০টি। ২০১৫ সালে 'কার্নেগি এনডাওমেন্ট ফর ইন্টারন্যাশনাল পিস' এবং 'স্টিমসন সেন্টার'র হিসাব অনুযায়ী, পাকিস্তান বছরে ২০টি বোমা বানানোর সামর্থ্য রাখে। বর্তমান ধারা চলতে থাকলে পাকিস্তান অল্প সময়ের মধ্যেই বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম পরমাণু অস্ত্রধারীতে পরিণত হবে। তবে অন্য বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, পাকিস্তানের হাতে অদূর ভবিষ্যতে কেবল ৪০ থেকে ৫০টি পরমাণু বোমা থাকতে পারে।

পাকিস্তানের পরমাণু অস্ত্র রয়েছে সামরিক বাহিনীর স্ট্র্যাটেজিক পস্নানস ডিভিশনের হাতে। এগুলো মূলত মজুত রয়েছে পাঞ্জাব প্রদেশে। অস্ত্রগুলোর পাহারায় রয়েছে ১০ হাজার পাকিস্তানি সেনা ও গোয়েন্দা কর্মকর্তা। পাকিস্তান দাবি করে আসছে, একেবারে শেষ মুহূর্তে যথাযথ কোডের মাধ্যমেই বোমাগুলো প্রয়োগের জন্য তৈরি করা হবে। ফলে দুর্বৃত্তদের হাতে তা পড়ার কোনো আশঙ্কা নেই।

অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও সামরিকভাবে অনেক শক্তিশালী ভারতকে নিবৃত্ত করার ওপর ভিত্তি করেই পাকিস্তানের পরমাণু অস্ত্র তৈরি হয়েছে। দুই দেশের মধ্যে বৈরিতা বাড়লে পরমাণু যুদ্ধের আশঙ্কা বাড়বে। প্রতিবেশী ভারত বা চীনের মতো পাকিস্তানের 'প্রথম ব্যবহার নয়' ধরনের কোনো মতবাদ নেই। তারা মনে করে, তাদের এই অস্ত্র ব্যবহারের অধিকার রয়েছে। বিশেষ করে প্রচলিত অস্ত্রে ভারত সুবিধাজনক অবস্থায় থাকায় তারা স্বল্পমাত্রায় পরমাণু অস্ত্র ব্যবহারের পক্ষপাতী, যা এই উপমহাদেশকে ত্রস্ত করে রেখেছে। সংবাদসূত্র : সাউথ এশিয়ান মনিটর

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<72085 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1